আল্লাহ কি আমাকে কোনদিন মাফ করবেন?
আল্লাহ কি আমাকে কোনদিন মাফ করবেন?
--------------- * ---------------- * ------------------আমি চাই না কেউ অনুশোচনায় দগ্ধ এক জীবন যাপন করুক। আল্লাহ আমাদেরকে এ ধর্ম এ জন্য দান করেননি যে, আমরা অতীতের ভুল নিয়েই পড়ে থাকবো। কুরআনের অন্যতম মহান একটি লক্ষ্য হলো...আল্লাহ বলেন— اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَذِکۡرٰی لِمَنۡ کَانَ لَهٗ قَلۡبٌ اَوۡ اَلۡقَی السَّمۡعَ وَ هُوَ شَهِیۡدٌ - নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যার রয়েছে অন্তর অথবা যে নিবিষ্টচিত্তে শ্রবণ করে। (৫০:৩৭) তাই হৃদয় সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়, সবচেয়ে বিস্তীর্ণ উত্তর, যে আপনার হৃদয়ের অনুভূতি কেমন হওয়া উচিত, তা কুরআনে আছে। কুরআনের মতে— কেউ যদি সমগ্র জীবন পাপ-পঙ্কিলতায় কাটিয়ে দেয়, বিস্মৃতিতে কাটিয়ে দেয়, ভুল-ত্রুটিতে কাটিয়ে দেয়, উপেক্ষায় কাটিয়ে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি...আল্লাহ কি বলেছেন যে, এখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাকি জীবনটা তোমাকে অতীত জীবনের অনুশোচনায় জ্বলে পুড়ে কাটাতে হবে? কুরআন কি কখনো এমনটি বলেছে? আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির অন্তঃকরণের সুরক্ষায় বেশি সংরক্ষণশীল সৃষ্টির নিজের চেয়েও। আমি নিজের অন্তরের প্রতি যতটা যত্নশীল আল্লাহ আমার অন্তরের প্রতি তার চেয়েও বেশি যত্নশীল। এটা তো বুঝেন, তাই না? এখন, আল্লাহ যদি আমার অতীতের কেয়ারলেস আচরণ এবং ভুলগুলো নিয়ে আমাকে লজ্জা না দিয়ে থাকেন, আমাকে অনুতপ্ত না করেন...তিনি শুধু চান একটি জিনিস। কী সেটা? তাওবা করো এবং নিজেকে ঠিক করো। নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নাও। এখন থেকে আর ঐ ভুলগুলো করো না। কিন্তু এরপরেও তুমি হয়তো আবারো কোনো ভুল করে ফেলতে পারো। যদি এমনটি হয় তখন কী করবে? আবার তাওবা করবে এবং নিজেকে ঠিক করে নিবে। যদি এটা করতে পারো তাহলে তোমাকে কিসের বোঝা আর বহন করে বেড়াতে হবে না? লজ্জা বা অপরাধবোধের বোঝা। তোমাকে অনুশোচনায় দগ্ধ এক জীবন যাপন করতে হবে না। আল্লাহ মানুষকে সহজে ক্ষমা করে দেন। বস্তুত তিনি ক্ষমা করে দিতে দারুণ আগ্রহী। কিন্তু মানুষ সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করতে পারে না বা আপনার কৃত অপরাধের কথা ভুলে যেতে পারে না। যদি আপনার মায়ের মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তিনি আপনাকে জড়িয়ে ধরলেও কিছু একটা তাঁর মনে কষ্ট দিয়ে যাবে। তিনি আসলে এ কষ্টের কিছু অংশ পুরোপুরি মুছে ফেলতে অক্ষম। কারণ, আমরা মানুষ আমাদের এ সামর্থ্য নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াহ্শীর দিকে তাকাতে পারতেন না। ওয়াহ্শী ওহুদের যুদ্ধের সময় রাসূলের চাচা হামজা (রা) কে হত্যা করেছিল। মক্কা বিজয়ের পরে ওয়াহ্শী ইসলাম গ্রহণ করে কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দিকে তাকাতে পারতেন না। তাই, তিনি ওয়াহ্শীকে তাঁর চোখের সামনে আসতে নিষেধ করে দেন। আমরা ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কী জানি? ইসলাম গ্রহণ করলে অতীতের সকল পাপ মুছে দেওয়া হয়। কে মুছে দেয়? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। বস্তুতঃ ইসলাম গ্রহণ এক ধরণের তাওবা। আর তাওবা মানে আপনার অতীতের সকল পাপকে পুণ্যে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়। মানুষের তাওবাকে আল্লাহ এতটা ভালোবাসেন!! কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো একজন মানুষ। ওয়াহ্শীকে দেখলেই তিনি দেখতে পান তাঁর অতি প্রিয় চাচার খুনিকে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তিনি তাকে মাফ করতে পারছেন না। তিনি তাকে মাফ করেছেন কিন্তু আল্লাহর মত করে নয়। অন্যদিকে, আমরা কী করি? আমরা মানুষকে ছোটো করতে খুবই ভালোবাসি। সর্বদা মানুষকে হেয় করি। মানুষের মাঝে অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলতে পছন্দ করি। এরপর ইসলাম শেখার পরে কী করি? এখন অন্যের অন্তরে অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলতে আমরা ইসলামকে ব্যবহার করি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই সে যেনো কখনো নিজেকে নিয়ে ভালো অনুভব না করে, সবসময় যেন অনুতাপে জর্জরিত এক জীবন যাপন করে। আর কুরআন কী করে? তাওবা করো এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাও। আর মানুষ কী করে? না, আমি তোমাকে এগুতে দিতে পারি না। না, না, না। তুমি সামনে আগাতে পারবে না। যেখানে আছো সেখানেই পড়ে থাকো। ভাবতে পারেন? আমাদের সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইলাম কিন্তু সে মাফ চাওয়াটা যদি যথেষ্ট না হতো, তাহলে কী হতো? তাহলে তো আমরা কখনো সেজদা থেকে মাথা উঠাতে পারতাম না। তো, আমরা কি আমাদের কৃত পাপের জন্য অনুতাপ অনুশোচনা ফিল করবো না? অবশ্যই করবো। আমরা কি আমাদের কৃত পাপের জন্য মাফ চাইবো না? অবশ্যই মাফ চাইবো। আস্তাগফিরুল্লাহ কি পড়বো না? অবশ্যই পড়বো। কিন্তু এরপর আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের জীবনের অন্যান্য বাধ্যবাধকতাগুলো সম্পন্ন করা উচিত। অন্যান্য কাজকর্মগুলো সম্পন্ন করা উচিত। অন্যান্য দায়-দায়িত্বগুলো পালন করা উচিত। জানেন? মূসা আলাইহিস সালাম ভুলক্রমে একজনকে হত্যা করে ফেলেন। পরে তিনি যখন ফেরাউনকে চ্যালেঞ্জ করতে গেলেন তখন ফেরাউন বলতে পারতো- "তুমি আমাকে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল শেখাতে এসেছ? তুমি? জানো তুমি কী করেছ? কোন সাহসে তুমি মুখ খোল? এক খুনি এখন আমাকে শেখাবে? ওহ! খুনি এখন নবী!! সত্যিই? সঠিক ভুল শেখানোর মত কোনো নৈতিক অবস্থান তোমার তো নেই। কারণ তুমি অতীতে একজনকে হত্যা করেছ।" এটাই তো যুক্তি হওয়ার কথা। জানেন? ফেরাউন কিন্তু এমন যুক্তি দেখিয়েছিল। সে বলেছিল-"তুমি তোমার কর্ম যা করার করেছ (আমাদের একজন লোককে হত্যা করে), তুমি বড় অকৃতজ্ঞ।" (২৬:১৯) এমন কৌশল কিন্তু অনেক শক্তিশালী। একজন মানুষের মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দিতে পারে। তখন মূসা আলাইহিস সালাম বলতে পারতেন—আমার বিশাল এক অন্যায় আছে। আমার আসলে কিছু বলা উচিত না। মুখ খোলার মত অবস্থানে আমি নেই। কিন্তু তিনি এমনটি বলেননি। তিনি তার অন্যায় স্বীকার করে নিলেন। কিন্তু শেষে বললেন— "অতঃপর আমার রব আমাকে প্রজ্ঞা দান করলেন, আর আমাকে করলেন রসূলদের একজন।" মানুষ কিন্তু এমন করে। তারা মনে করে পুণ্যবান মানুষের মনোভাব এমনই হওয়া উচিত। "কোন কিছু সম্পর্কে আমি কিছু বলার কে? আমার সবসময় মুখ বন্ধ রাখা উচিত।" এ যুক্তিতে তো সবারই মুখ বন্ধ রাখা উচিত। কারণ সবার জীবনেই ভুল আছে। কারোই সত্য বলা উচিত নয়। দুনিয়াতে এমন কারো কি অস্তিত্ব আছে যার জীবনে কোনো পাপ নেই? তো আমাদের সবার চুপ থাকা উচিত। কারো কোনোদিন সঠিক কথা বলা উচিত না। এটা কি কোনো যুক্তি হলো? অতএব, অন্যায় হয়ে গেলে অন্যায় স্বীকার করে নিন। তাওবা করুন। নিজেকে ঠিক করে নিন। তারপর সামনে এগিয়ে যান। —নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন