যখন কোনো আলেমের মৃত্যু হয়

 


যখন কোনো আলেমের মৃত্যু হয়

--------------------------- আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- "আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা মানুষের বুক থেকে জ্ঞান কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে তা উঠিয়ে নেন না। কিন্তু আল্লাহ জ্ঞান উঠিয়ে নেন ওলামাদের মৃত্যুর মাধ্যমে। এভাবে যখন কোনো আলেম আর বাকি থাকবে না মানুষ তখন আহাম্মকদেরকে তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করে নিবে। তারপর এসব আহাম্মকদের প্রশ্ন করবে, আর তারা কোনো ধরণের জ্ঞান ছাড়াই ফতওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেদের পথভ্রষ্ট করবে এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।" এটি একটি দুঃখজনক বাস্তবতা যে, আমরা শেষ বিচারের দিনের যত কাছাকাছি হবো দেশে ওলামাদের সংখ্যা এবং তাদের গুণমান ততটা হ্রাস পাবে। নতুন প্রজন্ম পূর্বের প্রজন্মের প্রভাবশালী আলেমদের মত আলেম আর পাবে না। এভাবে অল্প অল্প করে জ্ঞান কমতে থাকবে। একজন আলেম একটি জাতির প্রতিরক্ষক। একজন আলেম একটি জাতির জাগরণ ঘটান এবং সম্মুখপানে এগিয়ে নিয়ে যান। একজন আলেম সমগ্র একটি জাতিকে সত্যের উপর টিকিয়ে রাখেন। যদিও সে জাতি তা উপলব্ধি করতে পারে না। মনোযোগ দিয়ে শুনুন, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের আলামতগুলোর মাঝে একটি হলো ফিতনা বৃদ্ধি পাবে। (ফিতনা মানে সবধরনের কষ্ট ক্লেশ, সব ধরণের বিপদাপদ, সবধরণের বিপর্যয়।) দুই, হারাজ বা রক্তপাত ঘটতে থাকবে। এবং তিন নম্বর: জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে। এই তিনটি একটি আরেকটির সাথে কার্যকারণের দিক থেকে সম্পর্কযুক্ত। কারণ, যখন জ্ঞান থাকে ফিতনা থাকে না, আর যখন ফিতনা থাকে না তখন রক্তপাতও হয় না। যখন ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) মৃত্যুবরণ করেন তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, আমার ভয় হচ্ছে যে জ্ঞানের দশ ভাগের নয় ভাগ হারিয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ নিজেই ছিলেন প্রকাণ্ড এক আলেম। তবু তিনি ওমর (রা) এর মৃত্যুর সময় বলেন, আমার ভয় হচ্ছে যে উম্মার জ্ঞানের নব্বই ভাগ আমাদের থেকে চলে গেছে। আবার যখন ইবনে মাসউদের মৃত্যু হলো তখন তাঁর ছাত্ররাও একই কথা বলেছিলো। আগের প্রজন্মের জ্ঞান আমাদের থেকে চিরতরে চলে গেছে। এটাই জ্ঞানের বাস্তবতা। আপনি একজন মানুষের সত্যিকারের অভাব বোধ করেন না, যতক্ষণ না তিনি ওপারে চলে যান। একথা সবার ক্ষেত্রে সত্য। বিশেষ করে ওলামাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি সত্য। ওলামাদের জীবিত থাকাকালে আপনি তাদেরকে মানুষ হিসেবে দেখেন। তাদের সাথে কৌতুক করেন, কথা-বার্তা বলেন। তাঁদের কিছু কিছু ভুল ত্রুটিও আপনার চোখে পড়তে পারে। মনে করেন তাঁরা তো আমাদের মতই মানুষ। কিন্তু তাঁরা ওপারে চলে গেলে তাঁদের মানবীয় ত্রুটিগুলো আপনার কাছে আর বড় হয়ে দেখা দেয় না। আপনি তখন উপলব্ধি করেন- কি এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি! কি এক রত্ন ছিলেন তিনি! কি এক মণি-মুক্তা ছিলেন তিনি! কি অগণিত পরিমাণ ভালো কাজ করে গেছেন তিনি!! উপলব্ধি করেন তাঁরা তো আমাদের মত ছিলেন না। তাঁরা আমাদের চেয়ে অনেক অনেক উঁচু স্তরের মানুষ ছিলেন। তাঁদের প্রভাব এবং উপকার পরিমাপ করার মত নয়। সত্যিকারের আলেম সে নয় যে শুধু আপনাকে তথ্য উপাত্য প্রদান করে। সত্যিকারের আলেম হলো উনি যার উপস্থিতিতে আপনি আল্লাহকে ভয় করা শেখেন। যিনি আপনাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেন। আপনি আধ্যাত্মিকতা অন্তর দিয়ে অনুভব করেন। উনিই হলেন সত্যিকারের আলেম। একজন সত্যিকারের আলেমের কাছে গেলে আপনি হয়তো কি কি নোট লিখেছেন তা ভুলে যাবেন কিন্তু আপনি একটি জিনিস মনে রাখবেন তা হলো তার উপস্থিতি আপনার অন্তরে কি ধরণের প্রভাব রেখেছিলো। [শেষে এই একটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیۡهِ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ قَضٰی نَحۡبَهٗ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّنۡتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوۡا تَبۡدِیۡلًا - মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের কেহ কেহ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেহ কেহ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। (৩৩:২৩)] - ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে - বছর দুয়েক আগে দক্ষিণ আফ্রিকার এক বিখ্যাত আলেমের মৃত্যু হলে তিনি এ বক্তব্যটি প্রদান করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে