মৃত্যুর মুহূর্ত থেকেই ভালো কাজের পুরস্কার
মৃত্যুর মুহূর্ত থেকেই ঈমানদার ব্যক্তি তার ভালো কাজের পুরস্কার পাওয়া শুরু করে- নোমান আলী খান -----------------------------*------------------------- আপনি একটি ভালো জীবন অতিবাহিত করেছেন, এখন মৃত্যু শয্যায়...। আজ হউক কাল হউক আমরা একদিন এই মৃত্যু শয্যায় শায়িত হব। আপনি শুয়ে আছেন আর চারপাশে পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছে, আপনি কথা বলতে পারছেন না, কারণ ''বালাগাতিত তারাকি'' (প্রাণ কণ্ঠাগত ৭৫ঃ ২৬) রুহ ইতোমধ্যে গলায় পৌঁছে গেছে। আপনি আমি এই ক্ষণস্থায়ী বাসস্থান ছেড়ে চিরবিদায়ের পথে... এই শরীরটাও আমাদের রুহের জন্য ক্ষণকালের বাসস্থান, আমরা এই শরীর ছেড়ে দেয়ার পথে। আপনার মা পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ভাই, বোনেরা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছে, তারা সবাই কাঁদছে। ঠিক সে সময় আপনার চোখ খুলে গেল এমন কিছু দেখতে পাচ্ছেন যা অন্য কেউ দেখছে না, দেখতে পেলেন ফেরেশতারা নেমে আসছে। আশে পাশের কেউ এই দৃশ্য দেখতে পারছে না, কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন। (কারণ, অদৃশ্যের পর্দা আপনার সামনে থেকে সরে গেছে।) আর যখন মানুষ ফেরেশতাদের দেখতে পায়, তখন তারা শুধু দুই দলের ফেরেশতাদের মাঝে যে কোন এক দলের দেখা পায়। এক ধরনের ফেরেশতা হল এমন ফেরেশতা, যাদের দেখে এমন ভয় পাবেন যা জীবনে কখনো পান নি। আর অন্যদল হল, যাদের দেখে এতো আনন্দিত হবেন যে জীবনে কখনো এতোটা আনন্দিত হননি। এই আয়াতে যে ফেরেশতাদের কথা বলা হয়েছে তারা হলেন দ্বিতীয় দলের ফেরেশতা। তাঁরা আপনার জন্য আনন্দ বার্তা নিয়ে আসবে এবং বলবে - أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا- "ভয় পেয়ো না, দুঃখ করো না।" (41:30) আলেমরা এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা নিয়েও অনেক আলোচনা করেছেন। ভয়ের ব্যাপারটা বুঝলাম, আপনি মারা যাচ্ছেন, তাই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। এখানে ''লা তাহজানু (দুঃখ পেয়ো না) '' কেন বলা হল? দুঃখ এবং মনোবেদনা আসে পূর্বে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা থেকে। যা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। তাহলে এখানে কেন ''লা তাহজানু'' উল্লেখ করা হল? কারণ একজন বিশ্বাসীর ভাবনাটা তখন এমন থাকে - "হায় হায়, ফেরেশতারা চলে এসেছে! আমার তো আরো তাওবাহ করার দরকার ছিল। আমার আরো কিছু দোয়া করার দরকার ছিল। আমি তো এই বছর ইতিকাফ করার প্ল্যান করেছিলাম। আমি আরো কুরআন তিলাওয়াত করতে চেয়েছিলাম। আমার মায়ের সাথে আরো কিছু সময় ব্যয় করতে চেয়েছিলাম। আমার ভাইকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি অমুক অমুক ব্যক্তিকে টাকা দিতে চেয়েছিলাম। আমি আরো কিছু সাদকা করতে চেয়েছিলাম। আমি বেহুশ হওয়ার পূর্বে চেকটা সই করতে চেয়েছিলাম, এখন আমি হাসপাতালে আর আপনারা চলে এসেছেন। আপনারা আমাকে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে একটু চেকটা লেখার সুযোগ দিবেন?" তখন ফেরেশতারা বলবেন, চিন্তা করো না। তোমার কোনো সমস্যা নেই। তুমি যথেষ্ট ক্রেডিট অর্জন করেছো এবং সফলতার সাথে উত্তীর্ন হয়েছো। "লা তাহজানু, ও আবশিরু বিল জান্নাহ" দুঃখ করো না এবং জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। "আল্লাতি কুন্তুম তুওআদুন" যার প্রতিশ্রুতি তোমাকে সবসময় দেয়া হতো। চিন্তা করে দেখুন, মানুষটি মৃত্যু শয্যায়, তাঁর আশে পাশে সবাই কাঁদছে, তাঁর সে সময় এক ফোটা চোখের পানি ফেলার শক্তি পর্যন্ত থাকে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি এমন চরম আনন্দিত যে জীবনে কখনো এমন আনন্দিত হননি। কারণ তিনি মাত্র জান্নাতের গ্যারান্টি পেলেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার চাইতে কে আমার আপনার বেশি যত্ন নেয়? কেউ না। কে সবসময় আমাদের সাথেই ছিলেন যখন বিভিন্ন মানুষ আমাদের জীবনে এসেছে এবং চলে গেছে? যখন কিছু মানুষ আমাদের সাথে ভালো আচরণ করেছিল আর কেউ কেউ করেছিল খারাপ আচরণ; সে সময়গুলোতে কে সর্বদা আমার সাথে ছিলেন, আমার ভালো চেয়েছেন এবং আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে গেছেন। পরীক্ষা যেমনই হোক না কেন কে সারাক্ষণ আমার সাথে ছিলেন কখনই আমাকে পরিত্যাগ করেননি। দুনিয়ার মানুষগুলোর যত্ন এবং ভালোবাসা ছেড়ে আমরা যখন কবরের জীবনে প্রবেশ করবো, তখন আসলে কার যত্ন এবং ভালোবাসার ছায়ায় আমরা প্রবেশ করবো? চিন্তা করে দেখুন। আমরা মানুষের যত্ন পরিত্যাগ করে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর যত্নে প্রবেশ করবো। এখন আর অন্য কোনো মানুষ আপনার আমার যত্ন নিতে পারবে না। আর আল্লাহ হলেন এমন এক সত্তা যিনি দুনিয়াতে আমি যত মানুষের ভালোবাসা এবং যত্ন পেয়েছি সবার সমন্বিত যত্নের চেয়েও বেশি যত্ন নিতে পারবেন এবং ভালোবাসা দেখাতে পারবেন। [হাদিসে এসেছে- ঈমানদার ব্যক্তি কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর আকাশ থেকে একজন ঘোষক বলবেন (অর্থাৎ আল্লাহ বলবেন), আমার বান্দা যথাযথ বলেছে, সুতরাং তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সুতরাং তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া ও তার সুগন্ধি বইতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ঐ দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হয়।]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন