কিশোর কিশোরীদের প্রতি সহানুভূতি

 কিশোর কিশোরীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করুন

-------------- * -------------------

আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন কিশোর কিশোরীদের মাঝে ব্যাপক পরিমাণে হতাশা দেখা যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে গিয়ে আমরা একটি ভুল করি। আমরা মনে করি বাচ্চাদের সাথে কঠোর আচরণ করলে বাচ্চারা ভালো থাকবে। কঠোরতার নিজস্ব স্থান আছে এবং তার ভূমিকাও আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু একই সময়ে বাচ্চার প্রতি সহমর্মিতাও প্রদর্শন করতে হবে। কারণ, সহমর্মিতা প্রদর্শনের ধারণাটা কুরআনিক। মক্কায় কুরাইশদের ক্রমাগত প্রত্যাখ্যানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হৃদয়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করতেন। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যথিত হৃদয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَ لَقَدۡ نَعۡلَمُ اَنَّکَ یَضِیۡقُ صَدۡرُکَ بِمَا یَقُوۡلُوۡنَ - "আমি জানি, তারা যে সব কথা-বার্তা বলে তাতে তোমার মন সংকুচিত হয়।" (১৫:৯৭) আল্লাহ আরও বলেন- قَدۡ نَعۡلَمُ اِنَّهٗ لَیَحۡزُنُکَ الَّذِیۡ یَقُوۡلُوۡنَ فَاِنَّهُمۡ لَا یُکَذِّبُوۡنَکَ وَ لٰکِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ یَجۡحَدُوۡنَ - "আমি অবশ্যই জানি যে, তারা যা বলে তা তোমাকে দুঃখ দেয়। কিন্তু তারা তো তোমাকে অস্বীকার করে না, বরং যালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।" (৬:৩৩) মক্কায় কিছুকাল ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকায় আবু লাহাবের স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুবই কটু কিছু কথা বলে। ঐ মহিলা উপহাস করে বলত- "ওহ! তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে বুঝি!" চিন্তা করে দেখুন, নিজের চাচীর কাছ থেকে যদি আপনি এসব কথা শুনেন মনে কতটা কষ্ট পাবেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম দারুণ মনঃকষ্ট পান। তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা আদ-দুহা নাজিল করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। আল্লাহ বলেন- "তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি। আর অবশ্যই তোমার জন্য পরবর্তী সময় পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে উত্তম। শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক তোমাকে (এত নিয়ামাত) দিবেন যার ফলে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।" এখান থেকে আমরা সহমর্মিতা প্রদর্শনের শিক্ষা অর্জন করতে পারি। তাই, শিশুদের ব্যথাগুলোকে বৈধতা দিন, তাদের হতাশাকে সমর্থন দিন--অগ্রাহ্য করার পরিবর্তে। যা অনেকেই করে থাকেন। "আমি জানি না তুমি কেন হতাশ। তোমার সবই আছে। আমি যখন তোমার মত বাচ্চা ছিলাম, আমার কিছুই ছিল না। কেন তুমি দুশ্চিন্তা ফিল করছো? তোমার এটা আছে, ঐটা আছে।" না। তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করুন। একবার একজন আমাকে বলে- "আমার মা কষ্ট পাবেন ভেবে আমি আত্মহত্যা করছি না। আমার মা আমাকে ভালোবাসেন বলে আমি এটা করছি না।" দেখুন, সে এখানে একটি উপায় বলে দিয়েছে কিন্তু যে, কিভাবে এই ডিপ্রেশনের মোকাবেলা করবেন। ভালোবাসা এবং সহানুভূতি প্রদর্শন। আমি আপনাদের বলি, আমি বুঝি না কেন পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে এতো হতাশা। কিন্তু আমার 'না বুঝতে পারা' পরিসংখ্যানে কোনো পরিবর্তন আনবে না। আমার 'না বুঝতে পারা' মৃত্যুর হারে কোনো পরিবর্তন আনবে না। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, পিতামাতা এবং শিক্ষকদের এ সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে হবে। যদি পরবর্তী প্রজন্মের সাথে কোনোভাবে যুক্ত থাকেন তাহলে এ সমস্যাগুলো শনাক্ত করা আপনার জন্য অত্যাবশ্যক। কয়েকটি স্তরে অবশ্যই প্রতিহত এবং ভারসাম্য রক্ষা করার উপায় বর্তমান থাকতে হবে। - ড. ইয়াসির এবং নোমান আলী খানের বক্তব্য অবলম্বনে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে