এক রাতেই তিনি প্রায় ৭০ কোটি টাকা দান করেন

 


তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.) তাঁর সম্পদ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন। তাঁকে চিন্তিত দেখে একদিন একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে? আপনাকে এমন মনমরা দেখা যাচ্ছে কেন? পারিবারিক সমস্যা?’

তালহা (রা.) বললেন, ‘না, পারিবারিক সমস্যা না। আমার চিন্তা সম্পদ নিয়ে।’

তালহা (রা.)–র দাদি বললেন, ‘তাহলে সম্পদ দান করে দাও। এই সম্পদই যেহেতু তোমার চিন্তার কারণ, এটা দান করে দিলেই তো তুমি চিন্তামুক্ত হয়ে যাবে।’

তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ দাদির কথা আমলে নিলেন। তিনি তাঁর দাসীকে ডেকে বললেন তাঁর সম্পদ জড়ো করতে এবং গরিবদের খবর দিতে। তাঁর কথামতো সম্পদ জড়ো করা হলো।হিসেব করে দেখা গেল তাঁর সম্পদ ৪ লাখ দিরহাম, বর্তমানে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ!

সেই সম্পদ ছিলো তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.) জীবনের সমস্ত উপার্জন। সেগুলো তিনি দান করে দিলেন!

আল্লাহর রাস্তায় যিনি সম্পদ দান করেন, আল্লাহ তাঁকে আরও সম্পদ দান করেন। নবিজী (সা.) বলেন, দান করলে সম্পদ কমে না (বরং বাড়ে)।

সাহাবিদের জীবনী পড়লে দেখা যায়, এই কথাটি শতভাগ সত্য। তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় বিপুল সম্পদ দান করা সত্ত্বেও তাঁদের সম্পদ কমেনি।

তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.) একবার তাঁর সমস্ত সম্পদ দান করার পর পরেরবার আল্লাহ তাঁকে কয়েকগুণ বেশি সম্পদ দান করেন। এই সম্পদ লাভ করেন মূলত ইরাকে কৃষিখেত ও ব্যবসা থেকে। তাঁর অর্থোপার্জনের উৎস ছিলো ইরাক–কেন্দ্রিক।একবার তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.) তাঁর একটি জমি বিক্রি করেন উসমান ইবনে আফফান (রা.)–র কাছে। জমির দাম ছিল ৭ লাখ দিরহাম, আমাদের সময়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার সমপরিমাণ!

তালহা (রা.) এতো টাকা দেখে টাকার লোভে পড়েননি। তিনি ওই দিন মনে মনে বলেন, ‘একজন মানুষ এত টাকা ঘরে রেখে সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না।’

তাই বলে এমন না যে এগুলো তিনি ঘরে না রেখে নিরাপদ জায়গায় রাখবেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সমস্ত টাকা মানুষকে দান করে দেবেন। খাদিমকে জানিয়ে দিলেন, রাতের মধ্যেই যেন সবগুলো দিরহাম মদিনার মানুষকে বণ্টন করা হয়।

ভোর হবার আগেই তাঁর খাদিম এসে জানাল, তাঁর কাছে আর একটি দিরহামও অবশিষ্ট নেই। মদিনার রাস্তায় যাঁকে পাওয়া গেছে, তাঁকে দান করা হয়েছে।

তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.) এত দানশীল ছিলেন যে তাঁর দান করা দেখে মানুষজন অবাক হয়ে যেত কাবিসা ইবনে জাবির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি তালহার মতো কাউকে এত সম্পদ দান করতে দেখিনি!’তালহা (রা.) খোঁজ নিতেন, তাঁর আত্মীয়দের মধ্যে কেউ ঋণগ্রস্ত কিনা। আশেপাশের কোনো ঋণগ্রস্ত পেলে তিনি তাদের ঋণ পরিশোধ করতেন।

সুবাইহা আত-তাইমী ছিলেন ঋণগ্রস্ত মানুষ। তাঁর ধারের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার দিরহাম। তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.) জানতে পেরে সুবাইহার পক্ষে ঋণ পরিশোধ করে দিলেন।

প্রতিবছর তালহা (রা.) কাছে তাঁর বার্ষিক উপার্জন থেকে ১০,০০০ দিরহাম আলাদা করে উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে উপহার দিতেন।

তালহা (রা.) কোটি কোটি টাকা দান করতেন, কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে যেতেন, সাহাবিদেরকে উপহার দিতেন। তাঁর উপার্জন কেমন ছিল?

তালহা (রা.)–র জীবনীকার উল্লেখ করেন, তিনি দৈনিক ১,০০০ দিরহাম উপার্জন করতেন, মানে অন্তত আট লাখ টাকা। সেই সম্পদ দিয়ে দিনে ৮৩টি ভেড়া কেনা যেত!

এত সম্পদ উপার্জন, দান করা সত্ত্বেও তালহা (রা.) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর অঢেল সম্পদ থেকে যায়। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন, তাঁর সম্পদ গণনা করা হয়। দেখা যায় তাঁর নগদ সম্পদ হিসেবে রয়ে গেছে ২০ লাখ দিনার এবং ৩ কোটি দিরহাম।

তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি টাকার হিসেবে গণনা না করে চিন্তা করুন, একজন ব্যক্তি ৪০ লাখ ভেড়ার মালিক! একেকটি ভেড়ার দাম গড়ে ১০,০০০ টাকা।

তালহা (রা.)–র এত সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও হাত খুলে দান করতে পেরেছিলেন। সম্পদের দুশ্চিন্তায় তাঁর ঘুম হতো না। দুশ্চিন্তা করতে করতে এমন অবস্থা হতো, তিনি ঘেমে যেতেন!

দুনিয়ার আর দশজন সম্পদশালীর মতো তাঁর দুশ্চিন্তা সম্পদ হারানোর ভয়ে ছিল না। তাঁর দুশ্চিন্তা ছিল, কেন তাঁর এত সম্পদ? আল্লাহর কাছে তিনি এর কী জবাব দেবেন! আরিফুল ইসলাম

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট