যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে

 


যদিও আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের হতাহতের ঘটনা পশ্চিমা মিডিয়াতে আলোচিত হচ্ছে না, যখন মনে হচ্ছে বিশ্ববাসী তাদেরকে পরিত্যাগ করেছে, আমি চাই আপনারা জেনে রাখুন, যে মানুষগুলো ধ্বংস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে, বোমার আঘাতে যাদের কবর দেওয়া হচ্ছে, তারা হচ্ছে 'আকরামু আহলিল আরদ।' এই মুহূর্তে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট তারা সকল দুনিয়াবাসীর মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত।

আমাদের কষ্টগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আমাদের অন্য কাউকে দরকার নেই। আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলোকে সম্মান দেওয়ার জন্য আমাদের অন্য কাউকে দরকার নেই। আমাদের শহীদদের সম্মান দেওয়ার জন্য আমাদের অন্য কাউকে দরকার নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। -- ওমর সুলেইমান আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন, وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتًا - "যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না।" এমনকি তারা মৃত এমনটা কল্পনাও করবে না। কুরআনের এই স্থানে আল্লাহ এমনকি নির্দিষ্ট কিছু চিন্তারও সমালোচনা করেছেন। আমরা জানি, নির্দিষ্ট ধরণের কিছু কথা আছে, বক্তব্য আছে ইসলাম যার অনুমোদন দেয় না। এখানে আমরা দেখছি, এমন নির্দিষ্ট কিছু চিন্তাও আছে, যা আপনি কোনোদিন মুখ ফুটে বলেননি, ব্যাপারটা আপনার মাথায় ছিল আপনি এ সম্পর্কে কিছু করেননি বা বলেননি— এমনকি কখনো কখনো সেটারও অনুমতি নেই। এটা সেরকম একটা বিষয়। আল্লাহর পথে যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা মৃত এমনটি চিন্তাও করো না। بَلۡ اَحۡیَآءٌ - "বরং তারা জীবিত।" عِنۡدَ رَبِّهِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ - "তাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে থেকে তারা রিযকপ্রাপ্ত হচ্ছে।" এই বাক্যাংশের সবচেয়ে সুন্দর অংশ হলো, ইনদা রব্বিহিম- তাদের রবের নিকট। যদি বলা হতো, বাল আহইয়াহুম ইউরযাকুন- তারা জীবিত থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হচ্ছে, তাহলেও বাক্য সম্পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, ইনদা রব্বিহিম- তাদের প্রভুর সান্নিধ্যে। আর এ কথা এসেছে 'ইউরযাকুন' এর পূর্বে। অর্থাৎ, তাদেরকে যে রিজিক দেওয়া হচ্ছে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা আল্লাহর সান্নিধ্যে রয়েছে। প্রত্যাশিত ব্যাকরণগত পর্যায়ক্রম হলো, ইউরযাকুওনা ইনদা রব্বিহিম - তাদেরকে রিজিক দেওয়া হচ্ছে তাদের প্রভুর সান্নিধ্যে। কিন্তু আয়াতে বলা হয়েছে, ইনদা রব্বিহিম ইউরযাকুন। তাদের প্রভুর সান্নিধ্যে রেখে তাদেরকে রিজিক দেওয়া হচ্ছে। প্রভুর সান্নিধ্যে থাকার কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আল্লাহ বলেন, فَرِحِیۡنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ - "আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা লাভ করে তারা পরম আনন্দিত।" কোথায় থেকে তারা পরম আনন্দিত? আল্লাহর সান্নিধ্যে। আমরা জানি, এই দুনিয়াতে কোন কোন জিনিসগুলো আমাদের উৎফুল্ল করে তোলে। কিন্তু আল্লাহর কাছে স্পেশাল এমন কিছু জিনিস আছে যা শুধু জান্নাতে পাওয়া যাবে। এটা আমাদের পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। এই অর্থটা বুঝা যায়, আয়াতের 'মিন ফাদলিহি- 'তাঁর নিজ অনুগ্রহে' অংশ থেকে। তারপর তিনি বলেন, وَ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِالَّذِیۡنَ لَمۡ یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ ۙ اَلَّا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ - "আর যে সব ঈমানদার লোক তাদের পেছনে (পৃথিবীতে) রয়ে গেছে, এখনও তাদের সাথে এসে মিলিত হয়নি, তাদের কোন ভয় ও চিন্তা নেই জেনে তারা আনন্দিত।" অর্থাৎ, যে সব মানুষ এখনো পৃথিবীতে রয়ে গেছে এবং যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টারত আছে, তারা এখনো কবরে যায়নি, এখনো আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেনি, শহীদেরা জান্নাতে থেকে যে ধরণের আনন্দ উপভোগ করছে, দুনিয়ার মুমিনেরা এখনো তা উপভোগ করার সুযোগ পায়নি...জান্নাতে থেকে তাঁরা আমাদেরকে দেখছে আর আশা করছে আমরাও একসময় তাঁদের সাথে মিলিত হবো। "তারা আসছে, তারা আসছে। সে কি এখনো শহীদ হয়নি? ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ...সেও আসছে, তার জন্য দুআ করো। " যারা এখনো দুনিয়াতে রয়ে গেছে তাদের সাথে এখনো যোগ দিতে পারেনি, জান্নাতি শহীদেরা তাদের জন্য প্রফুল্লিত। এখানে থেকে আমরা তাদের জন্য কান্নাকাটি করছি- "তাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।" 😢 😢 আর অন্যদিকে, তারা আমাদের নিয়ে প্রফুল্লিত যে একসময় আমরা তাদের সাথে যোগ দিবো। সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্যামেরা এঙ্গেল। সমীকরণ পুরো উল্টো করে ফেলা হলো। وَ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِالَّذِیۡنَ لَمۡ یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ বলার মাধ্যমে। তারা আমাদের জন্য কেন এতো খুশি? পরে একসময় আমরা তাদের সাথে যোগ দিবো এইজন্য। সাহাবীরা ওহুদের সত্তর জন শহীদের জন্য কান্নাকাটি করছে। আর আল্লাহ বলছেন তোমাদের একটি কথা বলছি, তারা তোমাদের চেয়ে বহুগুণে সুখী। তোমরা তাদের শহীদ হওয়া নিয়ে দুঃখিত? আর তারা জান্নাতে পরমানন্দে রয়েছে। আর তোমাদের বলছি তারা তোমাদের কোন ব্যাপারটা নিয়ে চরম খুশি। একসময় এই দুনিয়াবী সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার অবসান হবে। তারপর, একদিন তোমরা সবাই আল্লাহর সান্নিধ্যে একত্রিত হবে জান্নাতে। তখন اَلَّا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ - তাদের কোনো ভয় এবং দুঃখ থাকবে না। গাজার এই ঈমানদার মানুষেরা আর কখনো কোনোদিন কোনো ধরণের ভয় অনুভব করবে না, দুনিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম জেলে থাকার কষ্ট আর ভোগ করবে না, মিসাইলের আঘাতে দালানের নিচে চাপা পড়ার আতঙ্ক আর অনুভব করবে না, ভবিষ্যত নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা অনুভব করবে না, এটা হলো খাউফ। অতীতের কোনো সুযোগ মিস হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত হবে না। অতীতের কোনো ভুল কাজের জন্য অনুতাপ-অনুশোচনা অনুভব করবে না, এগুলো সব ইয়াহজানুন এর অন্তর্ভুক্ত। لَّا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ - তাদের কোনো খাওফ অর্থাৎ ভয় থাকবে না। وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ - আর তারা কখনো আর দুঃখভারাক্রান্ত হবে না। এই অনুভূতিগুলো আমাদের জীবনকে কালো মেঘের মত ঢেকে রাখে। সেদিন এগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে, যখন আমরা আল্লাহর সান্নিধ্যে যাবো। (আলোচিত আয়াত আলে ইমরান, ১৬৯ এবং ১৭০) -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে -- 89. Ali ' Imran Aayah 169-174 -- bayyinah tv

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট