শত্রুর প্রতি বিনয় ও উদারতা

  


ইসলামের বিজয় ইতিহাসের অন্যতম বীরযোদ্ধা ছিলেন সালাউদ্দিন আইয়ুবি। তিনি হাত্তিনের যুদ্ধে খ্রিষ্টানদের সমন্বিত ক্রুসেড বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন। তার এই বিজয় জেরুজালেমকে দ্বিতীয়বারের মতো মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

দিনটি ছিল ১১৯৩ সালের ৪ মার্চ। জেরুজালেমের শাসক গিদুসিলিয়ন অনুধাবন করেছিলেন খ্রিষ্টানরা যেভাবে দিনের পর দিন মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও বর্বরতা চালিয়েছে, আজ তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। সালাহউদ্দিন গিদুসিলিয়নের কাছে চিঠি পাঠালেন। চিঠিতে লেখা, ‘একজন রাজা হওয়ার কারণে আপনাকে হত্যা করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। তবে রেনল্ডের ক্ষেত্রে ভিন্ন। তাঁকে তার কর্মফল ভোগ করতে হবে।’

গিদুসিলিয়ন জানতেন, এর আগে খ্রিষ্টানরা সিরিয়া দখল করে একই ধরনের বার্তা মুসলিমদেরও দিয়েছিল। খ্রিষ্টানরা তাদের কথা রাখেনি। তারা নির্বিচার মুসলিমদের হত্যা করেছে। তবে সালাহউদ্দিন তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘ভয় নেই। আমরা আপনার পূর্বপুরুষদের মতো আচরণ করব না।’সে সময় ক্রুসেডদের অধীনে অনেক নারী ছিলেন, যাঁরা মুসলিমদের বিজয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এত দিন খ্রিষ্টানরা যা করেছে, আজ মুসলিমরাও তা–ই করবে তাঁদের সঙ্গে। অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। কেউ কেউ নিজের চুল ছোট করে ফেললেন, যাতে তাঁদের চেনা না যায়। অনেক নারী নিজের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন এই ভয়ে যে তাঁদের দাস বানিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু সালাহউদ্দিন তাঁদের কিছুই করলেন না। তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এমনকি ক্রুসেডদের মধ্যে যারা জীবিত ছিল, তাদেরও তিনি মুক্তিপণ আদায়ের সুযোগ দিয়েছিলেন।

যেদিন প্রথমবারের মতো তিনি জেরুজালেমের মাটিতে পা রেখেছিলেন, সেদিন তাঁর অন্তরে ছিল আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, মুখে ছিল কেবল একটি আয়াত।সালাহউদ্দিন আইয়ুবির জেরুজালেম বিজয়ের আগে, মক্কা বিজয়ের দিন আমাদের প্রিয় নবী (সা.) একই আয়াত উচ্চারণ করেছিলেন। যাঁরা দীর্ঘদিন তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করেছিল, তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

তারও হাজার বছর আগে হজরত ইউসুফ (আ.) তাঁর ভাইদের উদ্দেশে একই বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। যেই ভাইয়েরা তাঁকে ছোটবেলা কুয়ায় ফেলে দিয়েছিল। তাঁকে তাঁর প্রিয় পিতা–মাতা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। তাঁকে দাস হিসেবে বিক্রি হতে হয়েছিল। পরে তিনি হয়েছিলেন মিসরের ক্ষমতাবানদের একজন। তিনিও তাঁর ভাইদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি মেহেরবানদের চেয়েও অধিক মেহেরবান।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৯২)

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ


ইসলাম নিয়ে গর্ব করুন


সময়টা ছিল হজরত ওমর (রা.)–এর খিলাফত। মুসলিমরা ছিল বিশ্বের পরাশক্তি। ওমর (রা.)–কে বলা হলো অর্ধজাহানের খলিফা। তার সময় ইসলামি সাম্রাজ্যের সীমানা দক্ষিণে ভারত থেকে উত্তরে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

তখন ‘বায়তুল মাল’ তথা সরকারি কোষাগার ছিল সম্পদে পরিপূর্ণ। এখান থেকে সব সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হতো। বিশাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উট, বকরি, ভেড়া বোঝাই করে ধনসম্পদ আসতে লাগল। ওমর (রা.) এগুলো দেখে চিন্তিত বোধ করছিলেন।

তার ভেতর যেন সম্পদের লোভ না জাগে, তিনি যেন বড় অনুভব না করেন, তাই মানুষকে কাজের দায়িত্ব না দিয়ে নিজেই এই পশুগুলো পরিষ্কার করতেন।হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ওমর (রা.) এত সময় ধরে পশুর ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করতেন যে মাঝেমধ্যে তার তোয়ালে পুরোপুরি কালো হয়ে যেত। এরপর তিনি নিজের জামা খুলে তা দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার করতেন।’

বিষয়টা ভেবে দেখলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। অর্ধেক পৃথিবীর সাম্রাজ্য যার হাতে, তিনি কিনা আবর্জনা পরিষ্কার করতেন নিজের কাপড় দিয়ে।

একবার ইরাক থেকে একজন প্রতিনিধি এলেন ওমর (রা.)–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। তিনি ওমর (রা.)–কে এ অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে গেলেন। প্রতিনিধি বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আপনি এসব কাজ করছেন কেন, এগুলো তো অন্যরাও করতে পারে।’কথা শেষ হওয়ার আগেই ওমর (রা.) তাঁর দিকে তোয়ালে ছুড়ে মারলেন। প্রতিনিধিকে বললেন, ‘এদিকে আসো। বেশি কথা না বলে, আমার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করো।’

তখন শত শত উট প্রতিদিন বায়তুল মালে জমা হচ্ছিল। তাঁরা দুজন মিলেও উট গুনে শেষ করতে পারলেন না। ওমর (রা.) একটি করে উট গুনছিলেন আর বলছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ তাআলা, আলহামদুলিল্লাহ তাআলা’। অর্থাৎ সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য।

এই কথা শুনে প্রতিনিধি বললেন, এগুলো হলো আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি আমাদের দান করেছেন। এরপর তিনি সুরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াত পড়লেন, ‘বলো, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভে তাদের আনন্দ করতে দাও। এটি তার চেয়ে উত্তম যা তারা জমা করে।’অর্থাৎ তিনি এখানে বায়তুল মালের ধন-সম্পদগুলোকে আল্লাহর রহমত হিসেবে বিবেচনা করছিলেন।

ওমর (রা.) বললেন, ‘তুমি ভুল বুঝেছ। এই আয়াতে অনুগ্রহ বলতে দুনিয়ার সম্পদকে বোঝানো হয়নি, বরং ইসলাম ও ইমানকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমরা যেন ইমান এনে এবং ইসলাম অনুযায়ী চলে গর্বিত বোধ করি। দুনিয়ায় তুচ্ছ বিষয়ের চেয়ে ইসলাম ও ইমানের মূল্য বেশি।’

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

written by dr omar

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট