একজন মুসলিম যুবককে যদি আপনি পাঁচটি পরামর্শ দিতে চান?

 


The Thinking Muslim: একজন মুসলিম যুবককে যদি আপনি পাঁচটি পরামর্শ দিতে চান, কি কি হবে সেগুলো?

হামজা জর্জিস: প্রথম যে বিষয়টি আমি বলবো, আকিদা। আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। প্রায়োগিক আকিদা সম্পর্কে জানুন। কি রকম সেটা? একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। এলজিবিটিকিউর প্রচারকেরা মনে করে তারা তাদের শরীরের মালিক; তাই তারা তাদের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। কিন্তু ইসলামী আকিদা অনুযায়ী আমরা বিশ্বাস করি- আল্লাহ হলেন রব। তিনি সবকিছুর মালিক। তিনি আমাদের শরীরেরও মালিক। তাই আমরা আমাদের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না। এ জন্যে আমাদের যুবকদের প্রায়োগিক আকিদা সম্পর্কে শিখতে হবে এবং আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যখন শিখবেন আল্লাহ হলেন আর-রাহমান, যিনি অসীম দয়ালু; তখন আমাকেও একজন মানুষের সামর্থ অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব দয়ালু হতে হবে। আল্লাহ হলেন আল-মুতাকাব্বির। অর্থাৎ তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং গৌরবান্বিত। আমি যেহেতু তাঁর একজন দাস মাত্র, তাই আমাকে এখন তাঁর সামনে একেবারে বিনম্র এবং বিনয়ী হতে যেতে হবে। এভাবে আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীগুলোর আলোকে নিজ জীবনকে সৌন্দর্যময় করে তুলুন। দুই নম্বর: অন্তরের পরিশুদ্ধি। সন্দেহাতীতভাবে এটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আগে যেমন আমি বলেছিলাম, পাথরের ভেতরে তো আপনি কোনো বীজ বপন করতে পারবেন না। আমাদের অন্তরে আছে শাহওয়াত এবং সুবাহাত। মন্দ ইচ্ছা এবং ধ্বংসাত্মক সন্দেহ। অন্তরে আরো আছে বিভিন্নরকম রোগ বালাই। অহংকার, হিংসা, রিয়া ইত্যাদি। কুরআন সুন্নাহ থেকে শিক্ষা নিয়ে এ রোগগুলো দূর করুন। আর এটা করতেই হবে। কারণ, এটা সবকিছুকে প্রভাবিত করে। ইসলামে আপনি যা কিছুই করেন না কেন তা আপনার অন্তরের অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। বুদ্ধির অবস্থাকে নয়। আপনার ইবাদাত, মানুষের সাথে আচার-ব্যবহার, কিভাবে মানুষকে ক্ষমা করেন, কোনো ঘটনায় আত্ম-অহংকারমূলক প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করেন কিনা এগুলো সব আপনার হৃদয়ের অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। অন্তরের ভেতর কী হচ্ছে। এর প্রতি খেয়াল রাখা খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিন নম্বর: ইখলাস। আন্তরিকতা। খাঁটি নিয়ত। আপনার কোনো কাজ আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত পূরণ হতে হবে- এক, কাজটি আল্লাহর জন্যে হতে হবে এবং দুই, কাজটি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দেখানো নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। নিয়ত খাঁটি রাখার এ প্রচেষ্টা আমৃত্যু চলবে। চার নম্বর: ইবাদাত। ইবাদাত বলতে আমি শুধু ফরজ নামাজগুলো এবং রামাদানের রোজা পালনের কথা বলছি না। একজন মুসলিম ছেলে এবং মেয়েকে একটি রুটিনবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে। বিশেষ করে আধ্যাত্মিক কাজের একটি রুটিন থাকতে হবে। সকাল বিকালের জিকির আজকারগুলো করতে হবে এবং সকাল বিকালের দুআগুলো করতে হবে। কখনো এটা বাদ যেতে পারবে না। মনে করুন এটা আপনার অক্সিজেন। কোনো দিন মিস হলে নিজের কাছে যেন এমন মনে হয় যে, আপনার কোনো একটি অংশের মৃত্যু ঘটেছে। এটাকেএতোটা সিরিয়াসলি নিবেন। কারণ, এটা আপনার অন্তরকে নিরাপত্তা দিবে, মনের মাঝে এক ধরণের নিশ্চয়তা দান করবে, হৃদয়কে প্রশান্তি দান করবে, এটা আপনাকে ফিতনা থেকে রক্ষা করবে, বিপদ-আপদ থেকে বাঁচাবে। নিয়মিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন, আপনার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দিবেন। এটা খুবই খুবই প্রয়োজন। প্রাত্যহিক ফরজ নামাজ, সুন্নত নামাজ, জিকির আজকার, দুআ দুরুদ একজন তরুণ মুসলিম এবং মুসলিমার ডেইলি রুটিনের অত্যাবশ্যকীয় অংশ হতে হবে। সকাল বিকালের জিকির এবং দুআগুলো আপনাকে প্রতিরক্ষা দিবে, সুরক্ষা দিবে, শক্তিশালী করবে, মর্যাদা বাড়াবে, পরিশুদ্ধ করবে। আরো একটা কাজ করবেন, দৈনিক কমপক্ষে একশোবার আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন। পাঁচ নম্বর: কুরআনের তাদাব্বুর করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কেন তারা কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা পড়ে গেছে?" অর্থটাকে যদি ঘুরিয়ে দিই তাহলে একটি ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে উঠে: আপনি যত বেশি তাদাব্বুর করবেন ততো বেশি আপনার অন্তর আল্লাহর হেদায়েত গ্রহণের জন্যে উন্মুক্ত হয়ে পড়বে। তাদাব্বুর মানে- কুরআন নিয়ে চিন্তা করা। [ প্রথমে একটি সূরা বা আয়াত নিয়ে কিছু তাফসীর অধ্যয়ন করুন। আয়াতটিকে আগের যুগের ওলামারা কিভাবে বুঝেছেন তা জানার চেষ্টা করুন। তারপর নিজ জীবনে এর প্রায়োগিক দিক নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করুন। আগে তাফসীর পড়ুন তারপর তাদাব্বুর করুন।]  তিলাওয়াত করাও ভালো। কিন্তু আমি তিলাওয়াতের উপর তাদাব্বুরকে প্রাধান্য দিবো। কারণ, আল্লাহ চান আপনি যেন তাঁর মেসেজটি বুঝতে পারেন। শেষ একটি কাজ করুন, রাতের শেষ প্রহরে জেগে উঠুন। আমরা শেষ রাতের গুরুত্ব নিয়ে বহু আলোচনা শুনেছি। আল্লাহ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন কখন আমরা জেগে উঠবো। আমার সাথে কানেক্ট হও, তাওবা করো, নিজের পাপের জন্যে ক্ষমা চাও। শেষ রাতের দুআ হলো এমন এক তীর যা মিস হয় না। যদি তাহাজ্জুদ পড়তে না পারেন তবু ফজরের কিছু আগে জেগে উঠুন। আর আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকুন। অভ্যাসটি গড়ে তুলুন। কিছু কিছু জিনিস প্রতিদিন করতে হবে। কুরআন তিলাওয়াত, কুরআনের তাদাব্বুর এবং সকাল সন্ধ্যার দুয়াগুলো। আরও বেশি সিরিয়াস স্টুডেন্ট হতে চাইলে কুরআনের ভাষা শেখা শুরু করুন। কুরআন যেন আরবিতেই বুঝতে পারেন। [মূল বক্তব্যের কিছুটা সংক্ষিপ্ত রূপ]

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট