মা খাদিজা (রা)


 আমরা আমাদের মা খাদিজা (রা) এর জীবনী থেকে জানি--নবুয়তের প্রথম দিকের কঠিন সময়গুলোতে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কতই না চমৎকারিত্ব এবং দৃঢ়তার সাথে সমর্থন দিয়ে গেছেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনি কত যে মূল্য দিতেন! কত যে কদর করতেন! ওহী নাযিল হওয়ার পূর্বে তাঁরা নিরেট পনেরটি বছর একত্রে কাটিয়েছিলেন। যে সময়টাতে জীবন মোটামুটি সহজ ছিল।

এরপর যখন দাওয়াতি কাজ শুরু হলো, নির্যাতনও শুরু হয়ে গেলো। চারদিক থেকে বিপদাপদের তুফান শুরু হয়ে গেলো। সেসময়টাতে আমাদের মা খাদিজা (রা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমর্থনের মূল স্তম্ভ। বিপদাপদ দেখে তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তিনি এভাবে বলেননি-- "সময় এখন অনেক বেশি কঠিন আমি এখন আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো।" না। তিনি এমনটি করেননি। তবুও তিনি তাঁর সাথে কঠোর বন্ধনে আবদ্ধ থাকলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও খাদিজার এই ত্যাগ স্বীকারকে যথাযথ মূল্য দিয়ে গেছেন, প্রশংসা করে গেছেন। তিনি আমৃত্যু খাদিজাকে স্মরণে রেখেছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রাসূলুল্লাহ (স) নিজেই বলেছেন—আল্লাহ তায়ালা খাদিজার চেয়ে উত্তম স্ত্রী আমাকে দান করেননি। সেই প্রথম আমাকে বিশ্বাস করে যখন সবাই আমাকে অবিশ্বাস করেছিল। সেই আমাকে তার অর্থ সম্পদ দিয়েছিলো যখন সবাই আমাকে পরিত্যাগ করেছিল। যখন সমগ্র মক্কা আমার বিরোধীতা করেছিল সেই আমাকে সমর্থন দিয়েছিলো। আর আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে আমাকে সন্তান দান করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা খাদিজা (রা)কে একটি বিশেষ প্রাসাদ প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সহিহ বুখারির একটি বিখ্যাত হাদিস। আমি সিরাতের আলোচনায় এটি নিয়ে কয়েকবার আলোচনা করেছি। আমাদের রাসূল (স) তখন মক্কায় ছিলেন, খাদিজা (রা) এর বাড়িতে। খাদিজা (রা) কোনো কাজে বাড়ির বাহিরে ছিলেন। জিব্রিল (আ) বাড়িতে এলেন। জিব্রিল (আ) রাসূল (স) এর সাথে কথা বলছিলেন। জিব্রিল রাসূল (স)কে বললেন, "ও আল্লাহর রাসূল! খাদিজা আসছে।" খাদিজা তখন বাড়ির ভেতরে ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাড়ির বাহিরে। তো জিব্রিল রাসূল (স) কে জানাচ্ছেন যে, কিছুক্ষণের মধ্যে খাদিজা বাড়িতে এসে পৌঁছবেন। তাঁর সাথে ছিল কিছু খাদ্য এবং সেই খাদ্য চুবিয়ে আহার করার জন্য কিছু একটা। মানে, রুটি এবং সসের মত কিছু একটা। "তিনি এসে পৌঁছালে তাকে তার রবের সালাম প্রদান করুন এবং তাকে আমার সালামও প্রদান করুন।" সুবহানাল্লাহ! চিন্তা করে দেখুন, ব্যাপারটা কতইনা চমৎকার! জিব্রিল (আ) কে পাঠানো হয়েছিল খাদিজা (রা)কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সালাম পৌঁছানোর জন্য এবং জিব্রিল (আ) এর সালামও। এরপর জিব্রিল (আ) রাসূল (স) কে বলেন— তাঁকে জান্নাতের একটি বিশেষ প্রাসাদের সুসংবাদ প্রদান করুন। যা মুক্তোর তৈরি। 'কাসাব' মানে মুক্তো। কেউ কেউ বলেছেন, বিশাল মুক্তোর ভেতরটা ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে। তো, প্রাসাদের বাহিরের দিকটা হবে মুক্তোর তৈরি। সুতরাং, তাঁকে এমন এক বাড়ির সুসংবাদ প্রদান করুন যা মুক্তো দিয়ে তৈরি। "লা সাখাব ফিইহি ওয়া লা নাসাব- সেখানে থাকবে না কোনো কোলাহল, থাকবে না কোনো ক্লান্তি।" খাদিজা (রা) মক্কার খুব জনাকীর্ণ অংশে বাস করতেন। বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব বেশি ছিল না। তাই গোলমাল, হট্টগোল, চিৎকার, হই হুল্লোড় মোটকথা শহরের সব কোলাহল রাসূল (স) এর বাড়ি বা খাদিজার বাড়ি থেকে শোনা যেত। সুতরাং, জিব্রিল আকাশ থেকে নেমে এলেন এবং রাসূল (স)কে বললেন আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন খাদিজাকে সালাম প্রদানের জন্য। আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে সুসংবাদ জানানোর জন্য যে, পরকালে তাঁকে একটি বিশেষ বাড়ি প্রদান করা হবে যা তৈরি করা হবে মুক্তো দিয়ে। আর সেই বাড়িতে কোনো 'সাখব এবং নাসব' থাকবে না। সাখব মানে কোলাহল বা ঠাস-ঠুস বিরক্তিকর আওয়াজ। আর 'নাসব' মানে ক্লান্তি। কারণ, আমাদের মা খাদিজা (রা) কাজ করতে করতে খুবই ক্লান্ত হয়ে যেতেন। তিনি রাসূল (স) এর সন্তানদের মাতা ছিলেন। তিনি রাসূল (স)এরও সেবা করতেন। এর উপরে তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী নারী। তো, তাঁকে খুবই কর্মক্লান্ত সময় কাটাতে হত। আর তাইতো জিব্রিল (আ) এসে তাঁকে জানালেন এই কষ্টটা শুধু অল্প কিছু সময়ের জন্য। ইনশাআল্লাহ, যে ভবিষ্যৎ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে আপনি ঐশ্বর্যশালী এক বিশেষ প্রাসাদ পাবেন। যা তৈরি করা হবে মুক্তো দিয়ে। আর সেই প্রাসাদে থাকবে না কোনো বিরক্তিকর কোলাহল। এটা হবে প্রশান্তময় এবং তৃপ্তিকর। এবং সেখানে আপনি কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না। জান্নাতে কোনো ঘরের কাজ নেই। জান্নাতে আপনাকে কোনো কাজই করতে হবে না। অতএব, জিব্রিল (আ) খাদিজা (রা) কে এই সুসংবাদ প্রদান করেন। (সকল কর্মক্লান্ত মা বোনেরা এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন) -- শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে