সূরা কাহাফ পরিচিতি
সূরা কাহাফ পরিচিতি —নোমান আলী খান আজ আমি আশা করছি যে, আমরা সকলে সূরা কাহাফ সম্পর্কে কিছু শিখবো। এটি কুরআনের ১৮ তম সূরা। আমি সূরাটি সম্পর্কে বিখ্যাত কিছু বর্ণনা দিয়ে শুরু করবো। عَنْ أَبِيْ الدَّرْدَاءْ أَنَّ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمْ قَالَ مَن حَفِظَ عَشْرَ آياتٍ مِن أوَّلِ سُورَةِ الكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ অর্থাৎ, আবু দারদা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (স) বলেছেন, সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত যে মুখস্ত করে, সে দাজ্জালের ফিতনা, অথবা দাজ্জালের পরীক্ষা, অথবা স্বয়ং দাজ্জাল বা ভন্ড মাসীহ থেকে সুরক্ষিত। عَنْ أَبِيْ سَعِيْد الخُدْرِيْ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمْ قَالَ مَنْ قَرَأَ سُوْرَةَ الْكَهْفِ فِيْ يَوْمِ الْجُمْعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّوْرِ مَا بَيْنَ الجمُعَتَين অর্থাৎ, আবু সাঈদ আল-খুদরি বলেন, যে ব্যক্তি শুক্রবারে সূরা কাহাফ পাঠ করে, এটা তার জন্য নূর তৈরী করে যা এক জুম’আ থেকে পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সূরাটির উদ্দেশ্য হলো, মানবজাতি সর্ববৃহৎ যে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তা থেকে সুরক্ষা দেয়া। আর এ সম্পর্কে স্বয়ং রাসূল (স) সতর্ক করেছেন। সূরাটি নিজেও সেই কঠিন পরীক্ষাকে بَأْسًا شَدِيدًا مِنْ لَدُنْهُ , বা’সান শাদীদান মিললাদুনহু—বলে উল্লেখ করেছে। যার অর্থ স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। আর ঈমানদারদেরকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে এই বলে যে, তাঁদের সৎকাজগুলো বিফলে যাবে না। এটি একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ সূরা, অত্যন্ত অনন্যভাবে বিন্যস্ত। আমি এ সম্পর্কেও আপনাদেরকে কিছুটা ধারণা দিবো। ইনশাআল্লাহ। আমরা জানি যে, সূরাটি চারটি ঘটনায় বিভক্ত। কিন্তু ব্যাপারটা তার চেয়েও বেশ কিছুটা জটিল। এতে রয়েছে চারটি অনুচ্ছেদ এবং চারটি ঘটনা। এভাবে চিন্তা করুন... যেন সূরাটির বিষয়বস্তুকে নিজের মস্তিষ্কে সাজাতে পারেন। আর তা হলো, আপনি এটাকে দুইটি খন্ডে চিন্তা করতে পারেন। তো সূরাটির প্রথম খন্ডের শুরুতে রয়েছে একটি অনুচ্ছেদ। যা আল্লাহর দেয়া খুতবা, যা আমাদেরকে এই জীবনের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি সম্পর্কে শেখায়। এর পর রয়েছে প্রথম ঘটনাটি। এর পরে রয়েছে আরেকটি খুতবা, যার পরে রয়েছে আরেকটি ঘটনা। সুতরাং এই সূরাটিতে দুই ধরণের উপাদান রয়েছেঃ খুতবা এবং ঘটনা। খুতবা অর্থ, আয়াতের সমষ্টি যা আপনাকে শিক্ষা দেয় গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কোনো বাস্তবতা সম্পর্কে। যেমন, এই জীবনের স্বল্পস্থায়ী প্রকৃতি অথবা বিচার দিবস কেমন হবে অথবা কী ধরণের মানুষেরা সফল এবং কী ধরণের মানুষেরা ব্যর্থ— এগুলো সবই একেকটি খুতবা। তারপর ঘটনাও রয়েছে; যেমন, আসহাবে কাহাফের ঘটনা, বাগানের মালিকদের ঘটনা, মূসা (আ) এর ভ্রমণের ঘটনা এবং যুলক্বারনাইনের ঘটনা; এগুলো একেকটি ঘটনা। কিন্তু যেভাবে এটাকে সাজানো হয়েছে, যেমনটি আমি বলেছি যে সূরাটি মূলত দুইভাগে বিভক্ত; প্রথম ভাগে আপনি পাবেন খুতবা, এর পরে ঘটনা, এর পরে খুতবা, এর পরে ঘটনা। আচ্ছা, প্রথমে কোন খুতবাটি পাবেন ? বস্তুবাদের ধরণ-প্রকৃতি এবং কেনো এই পৃথিবীর সৌন্দর্যে আমাদের আচ্ছন্ন হওয়া উচিৎ না। إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا , ইন্না জা’আলনা মা ‘আলাল আরদি যিনাতান লাহা লিনাবলুয়াহুম আইয়্যুহুম আহসানু ‘আমালা, وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا , ওয়া ইন্না লাজা’ইলুনা মা ‘আলাইহা ছঈদান জুরুযা, অর্থাৎ, এই পৃথিবীর সকল কিছুকে আমরা সৌন্দর্যের উপকরণ বানিয়েছি যাতে মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে তাদের মধ্যে কে সৎকর্মশীল। তো এটা হলো প্রথম খুতবা। এর ঠিক পরেই রয়েছে সেই তরুণদের ঘটনা যারা অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার মধ্যেও টিকে ছিলেন এবং তাঁদের ঈমানকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। তাঁরা শুধু এটুকুই জানতেন যে একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা উচিৎ। আর আল্লাহ অলৌকিকভাবে তাঁদেরকে দীর্ঘ সময় ধরে জীবিত রেখেছিলেন। কয়েকশো বছর যাবৎ তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখেছিলেন। একটি গুহার মধ্যে যা অন্য কেউ জানতো না। এরপর তিনি তাঁদেরকে জাগিয়ে তোলেন। ঘটনাটি খুবই বিখ্যাত। তো এই হলো প্রথম খুতবা এবং প্রথম ঘটনা। সূরাটির প্রথম অর্ধেক সম্পর্কে যা আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই তা হলো, খুতবাগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। ইনশা আল্লাহ, আমার করা সূরা কাহাফ সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত আলোচনাতে আপনারা দেখতে পাবেন যে, আসলে প্রথম খুতবা এবং দ্বিতীয় খুতবাটি একে অপরকে পূর্ণতা প্রদান করে। আর ঘটনাগুলোও একে অপরকে পূর্ণতা প্রদান করে। তো আসহাবে কাহাফের এই ঘটনাটি হলো প্রথম ঘটনা। দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো দুই বাগানের মালিক সম্পর্কে। তাদের একজনের ছিলো প্রচুর সম্পত্তি। তার ছিলো অনেক বড় বাগান যার মাঝখানে নদী প্রবাহিত ছিলো। তার এরকম বাগান ছিলো দুইটি। যেগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী একশোভাগ ফসল উৎপাদন করতো। وَلَمْ تَظْلِمْ مِنْهُ شَيْئًا , ওয়ালা তাযলিম মিনহু শাইআ; সেখানে ত্রুটিপূর্ণ কিছু ছিলো না। একটি আঙুরও গাছ থেকে পড়েনি, সেটা এরকম জায়গা। আর অন্য ব্যক্তিটি তার সম্পদের বিবেচনায় এতটাই নগণ্য ছিলো যে, এমনকি তার সম্পত্তির কথা কুরআনে উল্লেখই করা হয়নি। তাদের একজন অন্য জনকে তুচ্ছ করে কথা বলেছে এবং এজন্য আল্লাহ তাকে একটি শিক্ষা প্রদান করেছিলেন তার সকল সম্পত্তি কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে। তার গোটা বাগানই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেলো। এখন এই দুটি ঘটনা অর্থাৎ, গুহার অধিবাসীদের ঘটনা এবং বাগানের মালিকদের ঘটনা, এই ঘটনাদুটির অসাধারণ দিকগুলো হলো— একদিকে আপনি এমন তরুণদের সামর্থকে উপেক্ষা করছেন যাদের কোনো বস্তুগত উপায়-উপকরণ নেই। বস্তুবাদ শুধুমাত্র অর্থ-প্রীতি, সম্পদ-প্রীতি এবং মর্যাদার আকাঙ্ক্ষাই না, বরং এই ধারণাও বস্তুবাদ যে, আপনি বিশ্বাস করেন শুধুমাত্র বস্তুগত উপায়-উপকরণই আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম। এরকম যে, আপনার সামর্থের একমাত্র উৎস হলো দৃশ্যমান বস্তুগত উপায়-উপকরণ। আল্লাহ একদিকে এর অপনোদন করেছেন, তরুণদের সামর্থের ব্যাপারে আমাদের অবমূল্যায়নের দ্বারা - “যদি তারা গুহায় লুকিয়ে থাকে, কতদিনইবা তারা বেঁচে থাকবে ? না খেয়ে মারা যাবে অথবা, বের হয়ে এসে ধরা পড়বে। শুধুমাত্র এই দুটি সম্ভাবনাই রয়েছে।” কিন্তু আল্লাহ বস্তুগত বিজ্ঞানকে ব্যর্থ করে দিলেন, এই তরুণদের জন্য প্রকৃতির নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালেন এবং তাঁদেরকে রক্ষা করলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সম্ভাবনা রয়েছে সেটাকে আমাদের অবমূল্যায়ন করা উচিৎ না; আর এটা মনে রাখা উচিৎ যে, বস্তুগত জগৎ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। পরের ঘটনায় অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে না, বরং অতিমূল্যায় করা হচ্ছে। বিত্তবান বাগানের মালিক তার সম্পত্তিকে অতিমূল্যায়ন করছে। لَنْ تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا , লান তাবিদা হাযিহি আবাদা; এটা কখনো ধ্বংস হবে না। বস্তুগত সম্পত্তিকে কখনো অতিমূল্যায়ন করবেন না; আল্লাহ এটা যে কোনো সময় নিয়ে যেতে পারেন। তো আপনার যদি কিছুই না থাকে, এটা মনে করবেন না যে আপনি নিঃস্ব; আপনার এখনো আল্লাহ আছেন। আর আপনার যদি সকল কিছু থাকে, এটা মনে করবেন না যে আপনার সব কিছু রয়েছে। আল্লাহ এই সকল কিছু নিয়ে যেতে পারেন। তাই এটা মনে রাখবেন যে প্রকৃতপক্ষে আপনার কিছুই নেই। إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ , ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। তো এভাবেই এই দুটি ঘটনা এবং দুটি অনুচ্ছেদ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। আর এভাবেই তারা বিন্যস্ত হয়েছে - অনুচ্ছেদ, ঘটনা, অনুচ্ছেদ, ঘটনা। সূরাটির দ্বিতীয় অর্ধেকে রয়েছে ভিন্ন ধরণের বিন্যাস; যেখানে রয়েছে— অনুচ্ছেদ, প্রথম ঘটনা, দ্বিতীয় ঘটনা, এরপর অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদ, ঘটনা, ঘটনা, অনুচ্ছেদ। এটা সিমেট্রি ধরণের বিন্যাস। এখানে, সূরাটির দ্বিতীয় অর্ধেকের প্রথম অনুচ্ছেদ এবং শেষের অনুচ্ছেদ উভয়টিরই বিষয়বস্তু হলো বিচার দিবস। উভয় অনুচ্ছেদই পুণরুত্থান নিয়ে। উভয় অনুচ্ছেদেই রয়েছে সেই দিবসে কোন সত্য প্রতীয়মান হবে তা নিয়ে। আর উভয় অনুচ্ছেদই খুবই শক্তিশালী, গভীর তাৎপর্যপূর্ণ যেখানে একটির সাথে অপরটির বেশ কিছু সম্পর্ক রয়েছে। আপনি যদি সতর্কতার সাথে এগুলোকে অধ্যয়ন করেন, তাহলে লক্ষ করবেন যে, তাদের একটির সাথে অপরটি খুবই কাছাকাছিভাবে সম্পর্কযুক্ত। এগুলোর মাঝখানে আপনি যা পাচ্ছেন তা হলো, আরো দুটি ঘটনা। এই ঘটনাগুলো হলো মুসা (আ) ও খিজির এর ঘটনা এবং জ্ঞানের পথে তাঁর সেই যাত্রা; আর তাঁর তিনটি যাত্রাবিরতি। আর তারপর রয়েছে যুলক্বারনাইনের ঘটনা যিনি পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন এবং তিনিও তিনটি যাত্রাবিরতি নিয়েছিলেন। তো এই ঘটনার সামঞ্জস্য রয়েচে মুসা এবং খিজিরের ঘটনার সাথে। উভয় ঘটনাতেই তাঁরা যাত্রা করেছিলেন, তারা উভয়েই ভ্রমণ করেছিলেন এবং তাঁরা উভয়েই কিছু সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন।
এখানে কিছু অমিলের বিষয়ও এসেছে। প্রথম দুটি ঘটনায় অমিলের বিষয় ছিলো, তরুণদের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতার অবমূল্যায়ন এবং বাগানের মালিকদের ক্ষেত্রে সম্পত্তির অতিমূল্যায়ন। এখানে আল্লাহ আমাদেরকে ভিন্ন কিছু বিষয় শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনি আমাদেরকে মুসা (আ) সম্পর্কে শিক্ষা দিচ্ছেন, যিনি ন্যায়বিচারের মূর্ত প্রতীক; আর যুলক্বারনাইনও একই রকম। তাঁরা ন্যায্য কাজ করতে চেয়েছেন। তাঁরা উভয়েই ন্যায্য কাজ করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের একজন তাঁর চারপাশের পরিস্থিত পরিবর্তনে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাহীন; তাঁর কাছে যা সঠিক মনে হয়েছিলো তা তিনি করতে পারছিলেন না, কারণ তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না, তুমি সমালোচনা করতে পারবে না।
নৌকাটি যখন ভেঙে দেয়া হলো, অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অথবা যখন একটি শিশুকে আপনার চোখের সামনে হত্যা করা হয়, অথবা কোনো প্রতিদান ছাড়াই আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করে একটি দেয়াল নির্মান করতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস করতে পারবেন না। খালি চোখে দেখলে এটা অন্যায়।
অন্য দিকে রয়েছেন যুলক্বারনাইন, যিনি অন্যায় দেখেন এবং এর সমাধান করেন। যেখানেই তিনি যান, তিনি সমস্যার সমাধান করেন। মানুষ তাঁর কাছে সমস্যা নিয়ে আসে, আর তিনি তা সমাধান করেন। এখানে আল্লাহ এই অমিলটির মাধ্যমে যা বোঝাচ্ছেন তা হলো, কখনো বস্তুগতভাবে আপনার ক্ষমতা থাকবে পরিবর্তন আনার জন্য এবং কখনো কখনো আপনার তা থাকবে না। কখনো বৃহত্তর পরিকল্পনা চলমান থাকবে, বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নরত থাকবে। আর ঈমানদারদেরকে অনুধাবন করতে হবে যে, কখনো তাদের নাগালের মধ্যে বস্তুগত উপায়-উপকরণ থাকবে; এবং অন্য সময় তাদের নাগালের মধ্যে বস্তুগত উপায়-উপকরণ থাকবে না— সঠিক কাজটি করার জন্য, ন্যয়বিচারকে কার্যকর করার জন্য। আর আমাদের অবস্থা এই দুটির মধ্যে যেকোনোটি হতে পারে।
আর এই সবগুলো ঘটনার সারাংশ হিসেবে আল্লাহ বিষ্ময়কর এই সূরাতে আমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা হলো, পার্থিব জীবনের প্রতি আমাদের কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গি। ক্ষমতা থাকাটা আশির্বাদ নয়, ক্ষমতা বঞ্চিত হওয়াটাও আশির্বাদ নয়। আপনার যদি ক্ষমতা থাকে, এটাকে সঠিক পথে ব্যবহার করুন। যখন আপনার ক্ষমতা না থাকে, অনুধাবন করুন যে, আপনার এখনো অনেক কিছু করার আছে, আপনার এখনো অনেক কিছু শিখার আছে, এবং আপনার কাছে ক্ষমতা না থাকার পেছনেও কারণ রয়েছে।
যখন আপনার কোনো উপায়-উপকরণ থাকে না, সেক্ষেত্রে হয়তো সেই তরুণদের মতো কোনো মহা-পরিকল্পনা বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ যেকোনো উপায়ে আপনাকে সহায়তা করবেন। আর যখন আপনার প্রচুর বস্তুগত উপায়-উপকরণ থাকে—অর্থ, মিডিয়া, ক্ষমতা, খ্যাতি, ইত্যাদি, ইত্যাদি— এগুলো কোনোটারই মূল্য নেই। আল্লাহ সেগুলো কেড়ে নিতে পারেন যখন তিনি ইচ্ছা করেন।
তো সূরাটির শেষে এসে আমাদের নির্ভরতা সম্পূর্ণরূপে চলে যাবে আল্লাহর কাছে। আমরা এখন সমাপ্তির দিকে যাচ্ছি। দাজ্জালের ধারণাটি হলো আসলে এমন কেউ যে বস্তুগতভাবে, বাহ্যিকভাবে, পার্থিবভাবে অবিশ্বাস্য জিনিস তৈরী করতে পারে। সে এমন জমিতে শস্য উৎপন্ন করতে পারে যেখানে কোনো ফসল হয় না; সে এমন গতিতে ভ্রমণ করতে পারে যা অন্য কেউ পারে না; সে মৃতকে জীবিত করতে পারে এবং এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারে যেনো মৃত ব্যক্তি জীবিত ফিরে এসেছে। সে এই সকল বিষ্ময়কর পার্থিব, বস্তুগত কাজ করবে। আর মানুষ এতে সম্মোহিত হয়ে যাবে এবং তার উপাসনায় লিপ্ত হবে। ঈমানদারদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, এই সূরাটি তোমাদেরকে উজ্জীবিত করে রাখবে; কারণ, এই সূরাটির কারণে, তুমি যা দেখো তার দ্বারা সম্মোহিত হয়ে পড়বে না।
বুঝতে পারবেন যে, আপনি যা দেখতে পান, এর একটি বাস্তবতা রয়েছে; কিন্তু এর চেয়েও অনেক বেশী বাস্তবতা রয়েছে, যা আপনি-আমি দেখতে পাই না এবং উপলব্ধি করতে পারি না। আর এটাই আল্লাহ ‘আল্লাহ ‘আয্যা ওয়াজালের ক্ষমতা যা সর্বদা কার্যকর। যা আমরা দেখতে পাই তার উপর আমাদের নির্ভর করা উচিৎ না, বরং যাকে আমরা দেখতে পাই না সেই সত্ত্বার উপর আমাদের নির্ভর করা উচিৎ। তিনি আল্লাহ ‘আয্যা ওয়াজাল। এই বলে আমি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং চমৎকার এই সূরাটির সারসংক্ষেপের এই আলোচনার উপসংহার টানছি।
প্রতি শুক্রবার এটি পাঠ করার চেষ্টা করুন; এটা আপনার জন্য খুবই খুবই উপকারী। আবারো বলছি, যদিও আমি এটা আগেও বলেছি, সূরা পাঠ করা চমৎকার একটি কাজ; রাসূল (স)-এর পক্ষ থেকে এই সংক্রান্ত উপদেশের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো মূলত গভীর মনোনিবেশ সহকারে, মনোযোগ সহকারে কুরআন পাঠ করা। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন নিয়ে গভীর মনোনিবেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন