যখন মানুষ ব্যর্থ হয়

 


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেনঃ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوۡعًا ۙ "সে (মানুষ) বিপদগ্রস্থ হলে হা-হুতাশ করতে থাকে।" (৭০:২০)

অর্থাৎ, যখন মানুষ ব্যর্থ হয় কিংবা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তারা খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে পড়ে আর হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি আল্লাহর নির্দেশ না মেনে পাপ কাজে লিপ্ত হয় বা অসংযত আচরণ করে। এর পরের আয়াতে আল্লাহ্‌ উল্লেখ করেছেন - وَاِذَا مَسَّهُ الۡخَيۡرُ مَنُوۡعًا ۙ‏ " আবার যখন (সে) ঐশ্বর্যশালী হয় তখন কৃপণ হয়ে যায়।"(৭০:২১) তার মানে—যখন আল্লাহ্‌ তাআলা মানুষের উপর কোন রহমত দান করেন তখন তারা এতটাই কৃপণ আর ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে যে, সবকিছু একাই গ্রাস করতে চায়। এর প্রতিকার কী? আল্লাহ্‌ তায়ালা ঘোষণা করেনঃ إِلَّا الْمُصَلِّينَ - الَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ "কেবল তারা ব্যতীত যারা নামাজ কায়েম করে।(আর) যারা নামাজে সর্বদা নিষ্ঠাবান থাকে।" (আল মা'য়ারিজ ২২-২৩) এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা এমন না যে একবার নামাজে দাঁড়ালাম আর মনের এই দুর্বলতা পুরাপুরি চলে গেলো। কেবলমাত্র নিয়মিত সালাত আদায়ের মাধ্যমেই মানসিক অস্থিরতা দূর করা সম্ভব। এর দ্বারা আমরা অনেক বেশি ধৈর্যশীল হতে পারব। হয়তো সাথে সাথেই প্রকৃত সমস্যা বা দুর্বলতার অবসান হবে না, কিন্তু আরও বেশি মানসিক দৃঢ়তা বাড়বে যা জীবনের কঠিন সময়ে নিজেকে আত্মসংবরণ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আরও কিছু আমল বা জনহিতকর কাজের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ এই সূরার পরবর্তী আয়াতগুলোতে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সম্পর্কে তিনি এরশাদ করেন –وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ "(এবং)তাদের সম্পদের মধ্যে (গরীব দুঃখীদের)একটি অংশ নির্ধারিত হয়েছে।" (২৪) দুনিয়ায় আমরা সবাই নানা রকম সমস্যার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, তা সত্তেও আমরা যেন ভুলে না যাই অনেকেই প্রতিনিয়ত আমাদের থেকেও আরো কঠিন পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করছে। তাই আমরা যদি তাদের প্রতি সাহায্যর হাত বাড়াই বা তাদের অবস্থা বুঝার করার চেষ্টা করি তাহলে নিজেদের সমস্যাগুলো অনেক সহজ মনে হবে। এভাবে আমাদের মনের সহিষ্ণুতা বাড়বে এবং যেকোন পরিস্থিতিতে আমরা অনেক বেশি ধৈর্যশীল থাকব। কেননা তখন মনে হবে, ‘আমরা আর কি কষ্টের মধ্যে আছি, কত মানুষ এর থেকেও বিপন্ন অবস্থায় আছে’। এই আত্মতৃপ্ত মানষিকতার কারণে আমরা আল্লাহর প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ থাকব যেহেতু আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ঐসকল মানুষগুলোর মতো আমাদের কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেননি। ঠিক একই ধারণা সূরা হুদেও তুলে ধরা হয়েছে। সূরা হুদের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন- وَ لَئِنۡ اَذَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنَّا رَحۡمَۃً ثُمَّ نَزَعۡنٰهَا مِنۡهُ ۚ اِنَّهٗ لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ - "আমি যদি মানুষকে আমার পক্ষ থেকে রহমত আস্বাদন করাই অতঃপর তা তার থেকে ছিনিয়ে নেই, তখন সে অবশ্যই হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।" আমি মানুষকে কোনো বিলাসিতা দান করলে সে এটাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এটাকে সে আর বিলাসী উপকরণ মনে করে না। মনে করে এটা জীবনের অংশ। এটা তাদের অর্জন। অতঃপর যখন আল্লাহ তার এ অভ্যস্ত জিনিসটি উৎপাটন করে নিয়ে আসেন, সুম্মা নাযা'না হা মিনহু'-- তারপর তার কী হয়? اِنَّهٗ لَیَـُٔوۡسٌ - সে ইয়াউস হয়ে যায়। ইয়াউস মানে কী? হতাশ হওয়া। ইয়াউস ব্যাকরণের কোন নিয়মে এসেছে? এটি মুবালাগা। সে মারাত্মক হতাশ হয়ে পড়ে। এক্সট্রিমলি হোপলেস। সে ভাবে- আমার জীবনে আর ভালো কিছু অবশিষ্ট নেই। তার জীবনে কিছু দুঃসময় আসে। আর সে এতে চরম হতাশ হয়ে পড়ে। এরপর کَفُوۡرٌ-কাফুর। ধর্ম অস্বীকার করে। আল্লাহকে অস্বীকার করা শুরু করে। এর সমাধান কী? আমাদের ধর্ম এ ব্যাপারে আমাদের কী শিক্ষা দেয়। সমাধান হলো- সময় ভালো গেলে আপনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন। আর সময় কঠিন হয়ে গেলে আপনি ধৈর্য প্রদর্শন করেন। আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নেন। পরের সূরাতে আপনি শিখবেন ধৈর্য কেমন হতে হয়? সূরা ইউসুফে। ইয়াকুব (আ) যখন তাঁর সবচেয়ে আনন্দের বস্তু ইউসুফকে হারিয়ে ফেললেন, তখন পরিস্থিতি কেমন হয়ে পড়ে? খুবই কুৎসিত। আর তিনি কী বলেছিলেন। 'সাবরুন জামিল।' তিনি সুন্দর এক ধৈর্য প্রদর্শন করবেন। তিনি সবচেয়ে কুৎসিত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সুন্দর ধৈর্য দেখাবেন। আপনাকেও এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ভালো দিকগুলোর উপর নজর দিতে হবে। কুৎসিৎ পরিস্থিতির মাঝে সৌন্দর্য্য খুঁজে পেতে হবে। তাহলে অকৃতজ্ঞতা এবং হতাশা থেকে বাঁচতে হলে তিনটি কাজ করতে হবে। ১। নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হবে। ২। গরিব দুঃখীদের সাহায্য করতে হবে। (তাদের অবস্থা দেখে নিজের মাঝে সান্ত্বনা খুঁজে পেতে হবে) ৩। ধৈর্য প্রদর্শন করতে হবে। -- উস্তাদ নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে