প্রকৃত স্বাধীনতা এবং তার পুরস্কার
প্রকৃত স্বাধীনতা এবং তার পুরস্কার-------------------------------------- একবার যখন আল্লাহকে ভয় করতে শুরু করবেন তখন আর অন্য কাউকে ভয় করতে হবে না। আল্লাহর ভয় আপনাকে অন্য সবার ভয় থেকে মুক্ত করে দেয়। যখন আল্লাহর আনুগত্য করবেন, এটা আপনাকে অন্য সবার আনুগত্য করার চাপ থেকে স্বাধীন করে দিবে। আপনাকে আর অন্য দশজনের মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হবে না। যখন বলেন আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাই, এর ফলে আপনাকে আর অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করতে হবে না। অন্যদের সন্তুষ্ট করার চাপ থেকে এটা আপনাকে মুক্ত করে দিবে। এখন আপনাকে অন্যদের খুশি করার জন্য পোশাক পরতে হবে না। অন্যদের মত করে কথা বলতে হবে না। আপনার কাউকে আর ইমপ্রেস করতে হবে না। আপনি এখন কোনো কিছুর পরোয়া করেন না। এটা আপনাকে সকল শৃঙ্খল থেকে একেবারে মুক্ত করে দেয়। সবগুলো রশি কেটে আপনাকে একেবারে স্বাধীন করে দেয়। যখন আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে তাঁর নিকট দাসত্বের প্রস্তাব দিলেন, তিনি আমাদেরকে ভিন্ন ধরণের এক দাসত্ব উপহার দিচ্ছেন। এই প্রকারের দাসত্ব আপনাকে অন্য সব ধরণের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিবে। বস্তুত, এই পৃথিবীতে সত্যিকারের ফ্রিডম হলো আল্লাহর দাসত্ব। কারণ, কেউ যখন আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করে নেয়, তখন সে আর ফ্যাশনের দাস নয়, সে সমাজের অন্য সবার মতো হতে চাওয়ার দাস নয়, সে টাকার দাস নয়, সে তার চাকরির দাস নয়, সে তার সম্পর্কে সমাজের অভিমতের দাস নয়, সে এর কোনো কিছুর কোনো পরোয়া করে না। সে সব ধরণের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত, সব ধরণের বোঝা থেকে মুক্ত, যে দাসত্বগুলো মানুষকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলছে। জানেন তো? বহু মানুষ তাদের জীবন ধ্বংস করে ফেলে সামাজিক চাপের কারণে। মানুষ এমন বাড়ি ক্রয় করে যার সাধ্য তার নেই, সামাজিক চাপের কারণে। মানুষ এমন গাড়ি ক্রয় করে যার সাধ্য তার নেই, সামাজিক চাপের কারণে। মানুষ এমনকি সামাজিক চাপের কারণে এমন একজনকে বিয়ে করে যাকে সে পছন্দ করে না। তারা স্বাধীন নয়। তারা স্বাধীন নয়। আমাদের দীনে এলে আপনাকে শুধু একজনকে খুশি করতে হবে। আর তিনি হলেন, আল্লাহ। যদি এটা করতে পারেন তাহলে আপনি ফ্রি। মানুষ আসলে তাদের স্বাধীনতা উপভোগ করে। আমরা আসলেই স্বাধীন থাকতে ভালোবাসি। এই দুনিয়াতে একমাত্র যে ধরণের স্বাধীনতা উপভোগ করবেন তা হলো, আল্লাহর দাসত্বের মাধ্যেম পাওয়া স্বাধীনতা। অন্য সবকিছুকে বাহির থেকে স্বাধীনতা মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে সেগুলো দাসত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর দাস হওয়ার মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পুরষ্কারও অপরিসীম। একবার যখন মনে মনে এই সংকল্প করবেন– আমি শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাই। আমি শুধু আমার রবকে খুশি করতে চাই। আল্লাহকে খুশি করতে গিয়ে কে আমার প্রতি সন্তুষ্ট হলো আর কে অসন্তুষ্ট হলো আমি তার কোনো পরোয়া করি না। আমি শুধু জান্নাতে আমার রবের কাছ থেকে এ কথা শুনতে চাই। وَّ کَانَ سَعۡیُکُمۡ مَّشۡکُوۡرًا - "আর তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা ছিল প্রশংসাযোগ্য।" তিনি আমাদের কৃত আমলগুলোর প্রশংসা করবেন। তিনি কখন এ কথা বলবেন? জান্নাতে আমাদেরকে একটি বিশেষ উপলক্ষে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা রেশমের অসাধারণ সুন্দর পোশাক পরানো হবে এবং অলংকৃত করা হবে রৌপ্য নির্মিত কঙ্কণে। আর সেই উপলক্ষটি হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাক্ষাৎ। অতঃপর আল্লাহর সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হবে। সেই সাক্ষাতে তিনি আমাদের সুস্বাদু পবিত্র ড্রিঙ্কস পান করতে দিবেন। وَ سَقٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابًا طَهُوۡرًا - "আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানীয়।" (৭৬:২১) আর যখন পবিত্র পানীয় আমাদের দিচ্ছেন তিনি তখন আমাদের সাথে কথা বলছেন, আর কী বলছেন তিনি তখন? তিনি বলছেন- اِنَّ هٰذَا کَانَ لَکُمۡ جَزَآءً وَّ کَانَ سَعۡیُکُمۡ مَّشۡکُوۡرًا - এটিই তোমাদের বেতন, এটিই তোমাদের পুরস্কার, আর তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা ছিল প্রশংসাযোগ্য। তোমাদের চেষ্টাগুলো স্বীকার করে নেয়া হলো। তাই, আমি শুধু এসব মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। আমি শুধু জান্নাতে আমার রবের কাছ থেকে এ কথা শুনতে চাই। وَّ کَانَ سَعۡیُکُمۡ مَّشۡکُوۡرًا - "আর তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা ছিল প্রশংসাযোগ্য।" (৭৬:২২) তাই, আমি পরোয়া করি না কে আমার প্রতি সন্তুষ্ট হলো আর অসন্তুষ্ট হলো। আমি শুধু আমার রবের সন্তুষ্টি চাই। -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে
ইয়া আল্লাহ! অতীতে আপনি অসংখ্যবার দেখিয়েছেন যে, ছোট্ট একটি নির্যাতিত দল মহাক্ষমতাধর শক্তির উপর বিজয় লাভ করেছে; ইয়া আল্লাহ! আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের বিজয় দান করুন। ইয়া রাব্বাল আলামিন। ইয়া আল্লাহ! তাদেরকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীন করে দিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন! তাদেরকে দখলদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করে দিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন! তাদেরকে অকুপেশন থেকে আজাদ করে দিন।
ইয়া রাব্বাল আলামিন! আমাদের জীবদ্দশায় আমাদেরকে স্বাধীন মসজিদে আকসা দেখার সুযোগ দান করুন। ইয়া আল্লাহ! আমাদের জীবদ্দশাতেই মসজিদে আকসাকে মুক্ত করে দিন।
ইয়া আল্লাহ! আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের জন্য আমাদেরকে একত্রিত করে দিন। ইয়া আল্লাহ! আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের জন্য আমাদেরকে একতা দান করুন। ইয়া আল্লাহ! আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের জন্য আমাদেরকে ঐক্য দান করুন।
ইয়া আল্লাহ! এই বর্বরতায় যারাই প্রাণ হারিয়েছেন ইয়া আল্লাহ! আমরা দোয়া করছি আপনি তাদের সবাইকে শহীদ হিসবে কবুল করে নিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি যত শিশুকে এই দুনিয়াতে এনেছেন যারা জীবনে কখনো শান্তি দেখেনি, যারা গাজার বাইরের পৃথিবী দেখেনি, ইয়া আল্লাহ! যারা দুনিয়ার এই জেলখানা থেকে কখনো বের হতে পারেনি, আপনার এই সুন্দর দুনিয়া দেখতে পায়নি, ইয়া আল্লাহ! তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। ইয়া আল্লাহ! তাদেরকে ফিরদাউস দান করুন। এবং ইয়া আল্লাহ! তাদের পিতামাতাদেরকেও জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। এবং ইয়া আল্লাহ! তাদের দাদা-দাদিদেরকেও জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন।
ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ! আমরা এমনসব ছবি এবং ভিডিও দেখেছি যা আমাদের হৃদয়ে স্থায়ী ক্ষত রেখে গেছে, ইয়া আল্লাহ! আমরা আবারো আপনার উপর আমাদের বিশ্বাসের নবায়ন করলাম। ইয়া রাব্বাল আলামিন! তাদেরকে জান্নাতে মেহমান বানিয়ে নিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন! তাদের দুঃখ কষ্টগুলোকে সুখ এবং আনন্দ দিয়ে পূর্ণ করে দিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন!
তারা দুনিয়াতে যে নিষ্ঠুরতার সম্মুখীন হয়েছে, দ্রুত তাদের কষ্টগুলো দূর করে দিন। ইয়া আল্লাহ! তাদেরকে চিরস্থায়ী সুখ দান করুন। ইয়া রাব্বাল আলামিন!
ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ! দ্বিধা দ্বন্দ্বের সময়ে, কঠোরতার সময়ে, আমরা জানি ফিতনা মানুষকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দিতে পারে। ইয়া আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট দোয়া করছি এই সময়ে আমাদেরকে আপনার দ্বীনের উপর অটুট রাখুন। আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন। ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে এবং আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের এমন সময়ে মৃত্যু দান করুন যখন আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।
ইয়া আল্লাহ! আমরা জানি আপনি আমাদের দোয়া শ্রবণ করেন। আমরা আরও জানি আপনি আন্তরিক দোয়া কবুল করে থাকেন। ইয়া আল্লাহ! এই দোয়াটিকে আন্তরিক বানিয়ে দিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন! এই দোয়ার মাধ্যমে আপনি আমাদের ভাই-বোনদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দিন।
ইয়া আল্লাহ! আমরা এই দোয়া আপনার নিকট প্রেরণ করছি এটা জেনে যে, আপনিই তাদের ব্যাপারগুলোর নিয়ন্ত্রক। ইয়া রাব্বাল আলামিন! আমাদের ব্যাপারগুলো আমাদের হাতে ছেড়ে দিবেন না। ইয়া রাব্বাল আলামিন! তাদের ব্যাপারগুলোও তাদের হাতে ছেড়ে দিবেন না। এক পলকের জন্যেও না। ইয়া রাব্বাল আলামিন!
ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম! বিরাহমাতিকা নাস্তাগিইস।
ইয়া আল্লাহ! উম্মতে মুহাম্মাদের উপর রহম করুন। ইয়া আল্লাহ! উম্মতে মুহাম্মাদের উপর রহম করুন। ইয়া আল্লাহ! উম্মতে মুহাম্মাদের উপর রহম করুন।
--ড. ওমর সুলেইমান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন