আল্লাহর পথে ফিরে আসুন

 


আল্লাহ মুসলিমদের সাথে কীভাবে ডিল করেন তা একেবারেই সুস্পষ্ট। ব্যাপারটা বুঝতে আপনাদের একটু পেছনে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আগের উম্মাহ ছিল বনী ইসরাইল। বনী ইসরাইলের সাথে আমাদের অনেক মিল রয়েছে। বনী ইসরাইলের প্রধান রাসূল ছিলেন মূসা আলাইহিস সালাম। কুরআনে সর্বাধিক উল্লেখিত রাসূল। আল্লাহ কুরআনে মূসা আলাইহিস সালামের নাম এতবার উল্লেখ করেছেন কার জন্য? ইসরাইলীদের জন্য নাকি আমাদের জন্য? আমাদের জন্য। আল্লাহ ইসরাইলীদের সম্পর্কে আমাদের জানাচ্ছেন, وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡکِتٰبَ وَ الۡحُکۡمَ وَ النُّبُوَّۃَ وَ رَزَقۡنٰهُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَ فَضَّلۡنٰهُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ -- আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়াত দিয়েছিলাম আর তাদেরকে দিয়েছিলাম উত্তম রিযক, আর তাদেরকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। (৪৫:১৬)

কিন্তু তারা আল্লাহর অবাধ্য হলো। আর আল্লাহর নবীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। তারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলো বহু সংখ্যক বার। আল্লাহ তায়ালা বলেন- لُعِنَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ عَلٰی لِسَانِ دَاوٗدَ وَ عِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ- বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তাদেরকে দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখে (উচ্চারিত কথার দ্বারা) অভিশাপ দেয়া হয়েছে। এই লানত এ কারণে করা হয়েছিল যে, তারা অবাধ্য ছিল এবং সীমালংঘন করত। (৫:৭৮) کَانُوۡا لَا یَتَنَاهَوۡنَ عَنۡ مُّنۡکَرٍ فَعَلُوۡهُ ؕ لَبِئۡسَ مَا کَانُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ - তারা যে সব অসৎকর্ম করত তাত্থেকে একে অন্যকে নিষেধ করত না। তারা যা করত তা কতই না নিকৃষ্ট! (৫:৭৯) আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکَ لَیَبۡعَثَنَّ عَلَیۡهِمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ مَنۡ یَّسُوۡمُهُمۡ سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ ؕ اِنَّ رَبَّکَ لَسَرِیۡعُ الۡعِقَابِ ۚۖ وَ اِنَّهٗ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ - তোমার রাব্ব ঘোষণা করলেন যে, তিনি তাদের (ইয়াহুদীদের) উপর কিয়ামাত পর্যন্ত এমন সব লোককে শক্তিশালী করে প্রেরণ করতে থাকবেন যারা তাদেরকে কঠিনতর শাস্তি দিতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব শাস্তি দানে ক্ষিপ্র হস্ত, আর নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহশীল। (৭:১৬৭) আল্লাহর আইনের কোনো পরিবর্তন নেই। আমরা মুসলিম উম্মাহ যদি তাদের মত আল্লাহর অবাধ্য হই, তাহলে আমাদের উপরেও একই শাস্তি নেমে আসবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের নীতি-পদ্ধতি পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করবে, বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে, এমনকি তারা যদি সাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে তাহলেও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! পূর্ববর্তী উম্মাত বলতে তো ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরাই উদ্দেশ্য? তিনি বললেন, তবে আর কারা?" সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন): ৬৫৩৯ ইসলাম তার শ্রেষ্ঠত্ব কিছুকাল ধরে রেখেছিল। এরপর শত শত বছর ধরে আমাদের শুধু অধঃপতন হতে থাকলো। অবশেষে বর্তমান অবস্থায় এসে আমরা উপনীত হয়েছি। আমাদের উম্মায় ভালো যা কিছু আছে, ভালো যত মানুষ আছে তথাপি হারামের ছড়াছড়ি সর্বত্র। পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন, হারামগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন পাপ হয়ে আল্লাহর কাছে উঠে যাচ্ছে। এতো বেশি পাপ করার পরে আমরা রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে কী আশা করতে পারি? সাহায্য, রাহমা, ইজ্জত, সম্মান? যদি এভাবে চিন্তা করেন আপনার মাথা ঠিক নেই। উম্মাহকে পৃথিবীর সর্বত্র শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কাশ্মীর, আরাকান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন গাজা এই লিস্টের যেন শেষ নেই। এই উম্মতকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। নতুবা এই নিষ্পেষণ চলতেই থাকবে। পরের কথাটি মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এটি আমার কথা নয়। এটি আল্লাহর রাসূলের কথা। "যদি তোমরা ঈনা বিক্রি কর, (অর্থাৎ সুদে লেনদেন করো) ষাড়ের লেজ ধরে থাক এবং কৃষিকাজে লিপ্ত থাকার কারণে আল্লাহর পথে সংগ্রাম পরিত্যাগ কর, তবে আল্লাহ তোমাদের উপর এমন অপমান প্রবল করে দেবেন যে, যতক্ষণ না তোমরা দীনের উপর পূর্ণরুপে প্রত্যাবর্তন করবে, ততক্ষণ আল্লাহ তোমাদের থেকে ঐ অপমান দূর করবেন না।" সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৩৪২৬ যতদিন পর্যন্ত আমাদের উম্মাহর বৃহত্তর অংশ আল্লাহর দ্বীনের পথে ফিরে না আসবে, ততদিন উম্মাহর কোনো উন্নতি হবে না। কোনো তড়িৎ সমাধান নেই। কেউ যদি বলে আমি এখন গাজার জন্য কী করতে পারি? কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান নেই। উম্মাহকে নতুন করে গড়তে হবে। উম্মাহকে সামগ্রিকভাবে আল্লাহর দ্বীনে ফিরে আসতে হবে। যদি তারা না আসে, আপনার যা খুশি করুন। যত ব্যান্ডেজই লাগান না কেন এতে কাজ হবে না। কারণ, উম্মাহর রক্ত আজ বিষাক্ত। এটি নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়। এর আগে ইরাক, সিরিয়াতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সমগ্র দুনিয়ার সর্বত্র আজ হারামে সয়লাব হয়ে আছে। ক্বাবা থেকে মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে ওরা পাশ্চাত্যের নর্তকীদের এনে গান বাজনার আয়োজন করছে। একমাত্র যে উপায়ে এই বালা-মুসিবত দূরীভূত হবে তা হলো--মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উম্মতকে আল্লাহর দ্বীনে ফেরত আসতে হবে। কীভাবে আল্লাহর দ্বীনে ফেরত আসবেন? পাপ করা বন্ধ করতে হবে। এখানে হারাম ঘটছে, ওখানে ঘটছে। উম্মাহর ঈমানের লেভেল শুধু নিচেই নামছে। এরপর একটা পর্যায়ে আসার পর, আল্লাহর পক্ষ থেকে বালা-মুসিবত, শাস্তি নেমে আসে। পৃথিবীর কোন দেশে আসে, এটা কোনো বিষয় না। এটাই আল্লাহর ডিজাইন। আমরা সবাই এক উম্মাহর সদস্য। যখনই আমাদের পাপ পঙ্কিলতা বৃদ্ধি পাবে, বালা-মুসিবত এসে হাজির হবে। যে কোনো মুসলিম পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই হোক না কেন, যখনি কোনো মুসলিম দ্বীনের পথে ফিরে আসে এবং তার আশে পাশের লোকজনকেও আল্লাহর পথে ফিরে আসতে সাহায্য করে--সে তখন আসলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতকে আবার জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করছে। পক্ষান্তরে, যখন কোনো এক মুসলিম যুবক সবার অগোচরে রাতে ইন্টারনেটে খারাপ কিছু দেখছে, আপনার পাপ আকাশে উঠে, আর আল্লাহর কদর অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহর কোথাও বালা মুসিবত নেমে আসে। একদিন ইরাকে, একদিন আফগানিস্তানে আরেকদিন ফিলিস্তিনে, অন্য একদিন হয়তো আপনার নিজের ভূমিতে। যদি আপনি এই উম্মাহকে সাহায্য করতে চান, তাহলে আল্লাহর পথে ফিরে আসুন এবং অন্যদেরও ফিরে আসতে সাহায্য করুন। যত বেশি এটা করতে পারবেন উম্মাহর পুনর্জাগরণে এটা তত বেশি সাহায্য করবে। -- শায়েখ ওমর আল বান্নার আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট