শান্তি এবং আপস-মীমাংসা
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। কুরআন থেকে প্রাপ্ত আজকের শিক্ষাটি হলো সূরা নিসার আয়াত ১২৮। দুটি শব্দ, খুবই সহজ, মুখস্ত করুন। وَالصُّلْحُ خَيْرٌ - ওয়াসসুলহু খায়র, অর্থাৎ শান্তি এবং আপস-মীমাংসাই সর্বোত্তম। وَالصُّلْحُ خَيْرٌ - ওয়াসসুলহু খায়র। এমন দুজন মানুষ যারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে, স্বামী এবং স্ত্রী যাদের মধ্যে মিল হচ্ছে না, দুটি জাতি অথবা গোত্র যারা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত, তাদের জন্য আল্লাহ আমাদেরকে একটি সাধারণ নীতি, একটি বিধান প্রদান করেছেন - وَالصُّلْحُ خَيْرٌ - ওয়াসসুলহু খায়র। একটি শান্তি চুক্তিতে মিলিত হওয়া, আপস-মীমাংসায় আসা, এটা সর্বদাই সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ ! আমাদের প্রতিপক্ষরা বলে, ইসলাম হলো যুদ্ধ, ইসলাম হলো সহিংসতা; আর কুরআনের বার্তা এবং সীরাতের বার্তা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহ সর্বদা মীমাংসা এবং শান্তির প্রতি উৎসাহিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে কুরাইশদের ব্যাপারেও আল্লাহ বলেছেন, وَإِن جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ - ওয়াইন জানাহু লিসসালমি ফাজনাহ লাহা ওয়াতাওয়াক্কাল ‘আলাল্লাহ, অর্থাৎ তারা যদি শান্তির প্রতি ঝুঁকে, তখন তুমিও শান্তির প্রতি ঝুঁকে যাও এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। আর রাসূল (স) যখন হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি করছিলেন, তিনি বলেছিলেন, আমি শপথ করে বলছি, তারা আমার উপর যে শর্তই দিবে, সেটা যদি হালাল হয় এবং ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, আমি তাতে সম্মত হবো এবং তা গ্রহণ করবো। যে শর্তই তারা আমার উপর দিবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা একটা আপস-মীমাংসায় পৌঁছুবো এবং আল্লাহর দ্বীনকে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, আমি সেই চুক্তি করতে সম্মত। আর সেজন্যই হুদায়বিয়ার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিলো, আর প্রকৃতপক্ষে এটা একটা সফলতা ছিলো। তো, এই নীতিটি কী, এই বিজ্ঞতাটি কী ? وَالصُّلْحُ خَيْرٌ - ওয়াসসুলহু খায়র। আসুন প্রথমে বিষয়টাকে এই আয়াতের প্রেক্ষাপটে দেখি; আর তারপর বরাবরের মতোই আয়াতটি থেকে অন্য আরো কল্যাণ আহরণের চেষ্টা করবো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তালাকের সম্ভাবনাময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। তো কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, যদি তারা দুজন সংঘাতরত অবস্থায় থাকে, তারা যদি মনে করে যে বিবাহটি বিচ্ছেদে রূপ নিবে, তাহলে তাদের প্রত্যেককে একজন করে মনোনীত ব্যক্তি নির্ধারণ করতে হবে। তাদের প্রত্যেকে নির্ধারণ করবে কোনো চাচাতো ভাই, আত্মীয় বা বন্ধুকে যিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন; তারা তাঁকে নিয়ে আসবে। উভয়ে একজন করে ব্যক্তি নিয়ে আসবে, যিনি তাঁর পক্ষের মানুষটির প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল। স্বামী একজন আত্মীয়, ভাই বা বন্ধুকে নিয়ে আসবে, স্ত্রীও একজন আত্মীয়, ভাই বা বন্ধুকে নিয়ে আসবে। তাদের সকলকে একসাথে মিলিত হতে হবে এবং একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করতে হবে। তারপর আল্লাহ বললেন, وَالصُّلْحُ خَيْرٌ - ওয়াসসুলহু খায়র। তিনি বলছেন, যদি তোমরা এটা সমাধান করতে পারো, সেটাই হবে সর্বোত্তম। আল্লাহ চান যে এই ধরণের পরিস্থিতির একটা সমাধান হোক। আল্লাহ যদি চান, দুইজন মানুষ যারা তালাকের অবস্থায় চলে গিয়েছিলো, তারাও পুণরায় এক হয়ে যেতে পারে। তাহলে যুদ্ধরত দুটি জাতির ক্ষেত্রেও এটা কতোটা প্রাসঙ্গিক ! সংঘাতরত গোত্রগুলোর মধ্যে এটা কতোটা প্রয়োজনীয় ! আমাদের ধর্ম আদেশ করেছে, আমাদের ধর্ম উৎসাহিত করেছে - যতোটা সম্ভব শান্তির পথ অবলম্বন করার জন্য। আর সেজন্যই আমাদের রাসূল (স) মুসলিমদেরকে তাদের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের মাঝে শান্তি বিধানের জন্য সক্রিয়ভাবে জড়িত হতে উৎসাহিত করেছেন। একবার একটি সমাবেশে তিন উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলবো না, যা নামাজ, দান-সদকা এবং রোযার চেয়েও আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয় এবং বেশী বরকতময় ? তারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, কোন জিনিসটা নামাজ, দান-সদকা এবং রোযার চেয়েও আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয় এবং বেশী বরকতময় ? কোন জিনিসটা নামাজ, দান-সদকা এবং রোযার চেয়েও উত্তম হতে পারে ? তিনি বললেন, الصُّلْحُ ذَاتِ الْبَيْن - আস-সুলহু যাতিল বাইন, অর্থাৎ বিবাদমান দুই ব্যক্তিকে পুণরায় মিলিয়ে দেয়া। সক্রিয়ভাবে সমাজে জড়িত থাকা। আর আল্লাহর শপথ, প্রিয় ভাইয়েরা, আমি আপনাদেরকে দ্বিধাহীন চিত্তে বলছি যে, এটা এমন বিষয় যা আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাঝে নিজেকে নিয়ে থাকার মনোভাব চলে এসেছে। আর সন্দেহ নেই যে আপনি যদি মানুষের সাথে তেমন একটা জড়িত কেউ না হয়ে থাকেন, তখন নিজেকে নিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আপনার নিজের বন্ধুরা পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ করছে। আপনার চাচাতো ভাইরা পরস্পর কথা বলে না। আপনি যদি মানুষের সাথে জড়িত কেউ হন, তখন এটাও আপনার দায়িত্বের অংশ। এখানে আপনি বাইরের কেউ না। যদি আপনার দুই বন্ধুতে ঝগড়া হয়, যদি আপনার দুইজন আত্মীয় পরস্পর কথা না বলে, সেখানে আপনি বাইরের কেউ না। এখানে নিজেকে নিয়ে থাকলে চলবে না। আপনি যদি বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ হন যিনি সম্মানিত, আপনি যদি নিরপেক্ষ পক্ষ হয়ে থাকেন যাকে উভয় পক্ষই সম্মান করে এবং পছন্দ করে, তাহলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করাটা এক ধরণের ফরজে কিফায়া, এটা হবে উঁচু মানের একটি সদাকা। হ্যাঁ, এটা একটা সদাকা, এটা একটা দানশীলতা। আপনি আপনার সময়, আপনার সম্মান এবং আপনার মনোযোগ প্রদান করছেন। তাই রাসূল (স) বলছেন, আল্লাহ এজন্য আপনাকে আপনার নামাজ, আপনার দান-সদকা এবং আপনার রোযার চেয়েও বেশি পুরষ্কৃত করবেন। প্রকৃতপক্ষে এক্ষেত্রে আল্লাহ এবং রাসূল (স) স্পষ্টভাবেই এমন কৌশলকে উৎসাহিত করেছেন, যা অন্যথায় উৎসাহিত নয়। এমনকি যেসকল কৌশল উৎসাহিত না, সেগুলোও উৎসাহিত করা হয়েছে যখন লক্ষ্য থাকে মানুষদেরকে মিলিয়ে দেয়া। উদাহরণস্বরূপ কুরআন বলেছে, لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ - লা খইরা ফি কাসিরিম মিন নাজওয়াহুম অর্থাৎ তাদের অধিকাংশ গোপন বৈঠকের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। আপনারা জানেন যখন মানুষ গোপনে বৈঠক করে, “এই আমরা যে এখানে মিলিত হয়েছি, এটা কাউকে বলবে না।” নিরানব্বই পারসেন্ট ক্ষেত্রেই এতে অনিষ্টকর কোনো উদ্দেশ্য থাকে; তাই না ? যখনই গোপনে কোনো বৈঠক করা হয়, নিরানব্বই পারসেন্ট ক্ষেত্রেই এর ফলস্বরূপ খারাপ কিছু ঘটে যায়। “এই আমরা একটা গোপন পরামর্শ করছি। অমুক যেনো এই বিষয়ে না জানতে পারে। অমুক যেনো এটাতে না আসে। সেই ব্যক্তির বিষয়ে আমরা কথা বলবো।” এর ফলস্বরূপ অনিষ্টকর কিছু ঘটে যায়। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন যে, এর কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। এরকম কিছু ব্যতিক্রম হলো - إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلاحٍ بَيْنَ النَّاسِ - ইল্লা মান আমারা বিছদাক্বাতিন আও মা’রুফিন আও ইছলাহিন বাইনান নাস। এর মধ্যে একটি ক্ষেত্রে গোপন বৈঠককে উৎসাহিত করা হয়েছে; তা হলো - যখন আপনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে একত্র করেন একটি কৌশল উদ্ভাবন করার জন্য যাতে বিবাদমান দুটি পক্ষকে আবারো মিলিয়ে দেয়া যায়। আপনি দূর সম্পর্কের আত্মীয় এবং বন্ধুদেরকে আমন্ত্রণ জানান। দুই চাচাতো ভাই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে, এক্ষেত্রে বাকী চাচাতো ভাইদেরকে আমন্ত্রণ জানান। আর এক্ষেত্রে লক্ষ্য সুষ্পষ্ট - “ভাইয়েরা, আমরা গোপন একটি বৈঠক করছি। সেই দুইজন আসছে না। কারণ উদ্দেশ্য হলো, আমরা সকলে মিলে একটি ভালো কাজ করতে চাই। আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করে দেখতে চাই যে, কিভাবে এই দুইজনকে আবারো মিলিয়ে দেয়া যায়।” আর রাসূল (স) বলেছেন, لَيْسَ بِالْكَذِبْ - লাইসা বিল-কাযিব, অর্থাৎ এটা মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে না। এটা মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে না, যদি দুই ব্যক্তিকে মিলিয়ে দেয়ার জন্য আপনি বানিয়ে কিছু বলেন যা দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা তৈরী করবে। এমনকি এই যাতীয় কিছুও বলা যাবে যা প্রকৃতপক্ষে অসত্য। এমনকি এই ক্ষেত্রে এটা প্রতিদানের যোগ্য বলে গণ্য হবে! তবে এক্ষেত্রে আপনার বিচক্ষণতাকে কাজে লাগাবেন; এমন কিছু বলবেন না যাতে নিজে বোকা বনে যেতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের চিন্তাবিদগণ কিছু উদাহরণ প্রদান করেছেন, আর এই উদাহরণগুলোর উদ্দেশ্য কপি-পেস্ট করা না। এর উদ্দেশ্য হলো আপনি যাতে আপনার বিচক্ষণতাকে কাজে লাগান, এবং অবস্থাভেদে তা প্রয়োগ করেন। ধরুন আপনার দুই বন্ধু, দুই ভাই বা দুইজন আত্মীয়ের মাঝে একটি বিশ্রী ঝগড়া আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন। কয়েক দিন চলে গেলো, কয়েক সপ্তাহ চলে গেলো। আপনি তাদের একজনের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি অমুকের সাথে ছিলাম, আর সে অনুতপ্ত বোধ করছে এজন্য যে সে কঠোরতাপূর্ণ কথা বলে ফেলেছিলো।” “ও, আসলেই, তাই নাকি ?” আর তারপর আপনি অপর ব্যক্তিটির কাছে গেলেন। “আমি অমুক ব্যক্তির কাছে গিয়েছিলাম। সে অনুতপ্ত হয়েছে এজন্য যে সে কঠোরতাপূর্ণ কথা বলে ফেলেছিলো এবং দ্রুত রেগে গিয়েছিলো।” উভয়ের হৃদয়ই এতে কোমল হয়ে উঠলো। তারপর পরবর্তি পর্যায়ে গেলেন। বাকী চাচাতো ভাইদের নিয়ে আপনার একটি পরিকল্পনা ছিলো, তাই না ? তো প্রত্যেক চাচাতো ভাই এখানে সেখানে কিছু কথা বলবে। এরকম কৌশলের আশ্রয় নেয়াটা হালাল। আর এমন কিছু বলাটাও হালাল যা প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ সত্য নয়; কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি চরম কোনো মিথ্যাও উদ্ভাবন করছেন না। বরং আপনি এখানে কিছুটা বিচক্ষণতার ব্যবহার করছেন। লক্ষ্য হলো দুটি পক্ষকে আবারো মিলিয়ে দেয়া। আর সিরাত থেকে আমরা শিখতে পাই যে, দুটি পক্ষকে মিলিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের রাসূল (স) নিজে সম্পৃক্ত হতেন । প্রতিটি পর্যায়ে তিনি সম্পৃক্ত হতেন। কয়েক মাস আগে আমি একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছিলাম দুজন দম্পতির ব্যাপারে - একজন ছিলেন আযাদকৃত দাসী আর অন্য জন্য ছিলেন দাস। তাঁদের তালাক হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। তখন রাসূল (স) সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এবং বারীরা ও তাঁর স্বামীকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ ঘটনাটি আমি এখানেই বলেছিলাম। একবার তাঁর নিজের কন্যা ফাতেমা এবং আলী (রা) এর মাঝে মনোমালিন্য হয়েছিলো; স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এমনটা প্রায়ই ঘটে থাকে। আর তিনি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে। আমি এখানেই এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম, আর দেখিয়েছিলাম যে, যদিও বিষয়টাতে তাঁর কন্যা জড়িত ছিলেন, তিনি খুঁটিনাটি বিষয়ের ভিতরে ঢুকে যুক্তি খন্ডন করেননি। বরং তিনি স্বামী-স্ত্রীকে পুণরায় মিলিত হওয়ার পথ তৈরী করে দিয়েছিলেন; একজন আদর্শ শ্বশুরের যেমনটি করা উচিৎ।
গোটা মাদানী জীবনের দশ বছর সময়ে শুধু একবার তিনি মদিনায় অবস্থান করা সত্ত্বেও নামাজের ইমামতি করতে পারেননি। অন্যথায়, যদি তিনি মদিনাতে না থাকতেন অন্য কেউ নামাজের ইমামতি করতো; আর তিনি যদি মদিনায় থাকতেন, তখন তিনিই ইমামতি করতেন। মাত্র একবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছিলো যে, তিনি মদিনায় ছিলেন, কিন্তু যোহরের নামাজে ইমামতি করতে পারেননি। আর এটা ঘটেছিলো যখন কুবার বাইরে দুটি গোত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিলো। তাঁরা আক্ষরিকভাবেই এটা-সেটা বলা শুরু করলেন, একজন আরেকজনকে আঘাত করলেন, একজন আরেকজনের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ করলেন; আর তাঁরা আক্ষরিকভাবেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এমনকি সাহাবীদের সময়ও এমনটা ঘটেছিলো; তাঁরাও তো মানুষই ছিলেন। তো তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং দুইজন আহত হয়েছিলো।
রাসূল (স) আবু বকরকে বললেন, “আসো, আমরা গিয়ে এই দুটি গোত্রকে মিলিয়ে দেই।” তাঁরা আনুমানিক সকাল নয়টা বা দশটার দিকে সেখানে গেলেন আর লক্ষ্য ছিলো যোহরের আগেই ফিরে আসা। যোহরের সময় এসে পড়লো, কিন্তু তাঁকে আর দেখা গেলো না। আপনারা জানেন দুটি পক্ষকে মিলিয়ে দিতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। আর সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে; প্রায় আসরের সময় হয়ে গেলো। তখন তো কোনো মোবাইল ফোন ছিলো না, তাই কোনো খবর আসছিলো না। তো তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন, অপেক্ষা করছিলেন, অপেক্ষা করছিলেন। একসময় তাঁরা বললেন যে, আমাদেরকে যোহরের নামাজ পড়তে হবে যদিও নবীজী এখানে নেই। তো তাঁরা আব্দুর রহমান ইবনে আউফকে ইমাম নির্ধারণ করলেন, আর রাসূল (স) আসলেন একেবারে শেষ রাকাতে। এটা কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছিলো যে, তিনি এসেছেন, আর অন্য কেউ নামাজের ইমামতি করছে। তো এটা ছিলো অনন্য এক ঘটনা।
মূল কথা হলো, এমনকি যোহরের নামাজকে বিলম্বিত করা হয়েছিলো, গোটা সীরাতের মাঝে একবার; কেনো ? إِصْلَاحْ ذَاتِ الْبَيْن - (ইছলাহ যাতিল বাইন।) দুটি সংঘাতরত গোত্রকে মিলিয়ে দেয়া এবং এটা নিশ্চিত করা যে শান্তি এবং সমঝোতা বিরাজ করছে। আর বিখ্যাত সেই ঘটনায়ও রাসূল (স) খুতবার মাঝখানে তাঁর ক্রন্দনরত নাতী হাসানকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। খুতবা থামিয়ে তিনি নেমে আসলেন, তাঁকে তুলে নিলেন, তাঁকে নিয়ে মিম্বরের উপর উঠলেন। আর তারপর তাঁর নাতীর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “আমার এই ছেলে, অর্থাৎ এই নাতী, একদিন সে একজন মহান নেতায় পরিণত হবে।” কেনো ? “কারণ সে মুসলিমদের যদ্ধরত দুটি পক্ষকে পুণরায় মিলিয়ে দিবে। সে উম্মার মাঝে মৈত্রীবন্ধন স্থাপন করবে।”
আর এটাই ঘটেছিলো হাসান (রা) এর সময়ে। তিনি মৈত্রীবন্ধন স্থাপন করেছিলেন। তিনি নেতায় পরিণত হলেন, নিজের নেতৃত্ব ত্যাগ করার মাধ্যমে। রাসূল (স) তাঁকে নেতা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি তাঁর নেতৃত্বকে উৎসর্গ করেছিলেন, কারণ রক্তপাত কল্যাণকর নয়, সংঘাত কল্যাণকর নয়। তো তিনি অন্য পক্ষকে বললেন, “আপনি নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। আমি নিজের জন্য আর কোনো রক্তপাত হতে দিবো না।” তিনি সমঝোতা করেছিলেন নিজের খিলাফাহ ত্যাগ করার মাধ্যমে। আর আমাদের রাসূল (স) বলেছেন যে, এটাই প্রকৃত নেতৃত্ব, একেই বলে সাইয়্যেদ। আর এটা মানুষকে পুণরায় মিলিয়ে দেয়ার গুরুত্ব প্রদর্শন করছে।
তো মূল কথা হলো, আমি নিজেকে এবং আপনাদের সকলকে উৎসাহিত করছি, এ বিষয়ে নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। যখন আপনার কাছের বন্ধু, আপনার নিকট আত্মীয় কোনো বিবাদে লিপ্ত হয়, তখন সমাধানকারী পক্ষ হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। وَالصُّلْحُ خَيْرٌ - ওয়াসসুলহু খায়র। সুলহ প্রতিষ্ঠা করুন; এর ফলে আল্লাহও আমাদের হৃদয়কে সলেহ বানিয়ে দিবেন। সলেহ শব্দটি এসেছে সুলহ থেকে। শব্দদুটির শব্দমূল একই। আপনি সলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন, যখন মানুষের মাঝে মৈত্রীবন্ধন স্থাপন করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে সলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
- ইয়াসির কাদি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন