বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারীদের কাজ

 


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। কুরআন থেকে প্রাপ্ত আজকের শিক্ষাটি হলো সূরা ইউনুসের আয়াত ৮১। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এখানে মুসা (আ) এর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। মুসা যখন ফেরাউনের বাহিনীর সম্মুখীন হয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, إِنَّ اللَّهَ لا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - ইন্নাল্লাহা লা ইউসলিহু ‘আমালাল মুফসিদিন। إِنَّ اللَّهَ لا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - ইন্নাল্লাহা লা ইউসলিহু ‘আমালাল মুফসিদিন, অর্থাৎ আল্লাহ কখনোই বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারীদের কাজকে সফল হতে দিবেন না। এটা কুরআনে বর্ণিত একটি বিধান। এটা কুরআনে বর্ণিত একটি বিচক্ষণতা। এটা এমন একটা মূলনীতি এবং নিয়ম, যার উপর ভিত্তি করে গোটা পৃথিবী চলছে। আল্লাহ কখনোই খারাপ মানুষের কাজকে সফল হতে দিবেন না। আল্লাহ কখনোই ফাসাদকে বিজয়ী হতে দিবেন না। إِنَّ اللَّهَ لا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - ইন্নাল্লাহা লা ইউসলিহু ‘আমালাল মুফসিদিন।

তো কখন মুসা এটা বলেছিলেন ? মুসা (আ) এটা বলেছিনে যখন তিনি ফেরাউনের রাজদরবারে গিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। আর ফেরাউনকে তিনি বলেছিলেন যে, “আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন।” ফেরাউন বললো, “তোমার যা আছে তা নিয়ে এসো। এরপর আমার যাদুকরদের সাথে তোমার মোকাবেলা হবে।” তো সে সময় এবং স্থান নির্ধারণ করলো। মিশরের সকল মানুষ একত্রিত হলো, ফেরাউনও তার সিংহাসনে আসীন। ফেরাউনের সামনে রয়েছে সেরা সব জাদুকর। সকল মানুষ ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলো। মুসা মঞ্চের একপাশে একাকী দাঁড়িয়ে ছিলেন। অন্য পাশে ছিলো সবচেয়ে পারদর্শি অনিষ্টকর জাদুকরের দল। আর ফেরাউন মাঝখান থেকে এটা প্রত্যক্ষ করছে।  যখন জাদুকররা তাদের জাদু নিক্ষেপ করলো, আর তাদের লাঠিগুলো সাপের মতো নড়াচড়া শুরু করলো, মুসা কিছুটা শঙ্কা অনুভব করলেন। এটা মানবিক শঙ্কা। فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُّوسَىٰ - ফাআওজাসা ফি নাফসিহি খিইফাতাম মুসা। (তখন মূসা তার অন্তরে কিছুটা ভীতি অনুভব করল।) মাঝে মাঝে আত্মবিশ্বাসের কিছুটা কমতি সমস্যাজনক নয়। এরকম মনে করায় দোষ নেই যে, “ও আল্লাহ, এটা কি হচ্ছে !” মানব প্রকৃতি এরকমই। فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُّوسَىٰ - ফাআওজাসা ফি নাফসিহি খিফাতাম মুসা। আল্লাহ মুসাকে বললেন, لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنتَ الْأَعْلَىٰ - লা তাখাফ, ইন্নাকা আনতাল আ’লা। আল্লাহ মুসাকে বললেন, “চিন্তা করো না। তুমিই বিজয়ী হবে।”  তো আল্লাহ যখন তাঁকে এই আত্মবিশ্বাস দিলেন, মুসা ফেরাউনকে বললেন, “তুমি যা উপস্থিত করেছো, তা হলো জাদু। আর আল্লাহ এটাকে ধ্বংস করবেন - إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ - ইন্নাল্লাহা সাইউবতিলুহু। إِنَّ اللَّهَ لا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - ইন্নাল্লাহা লা ইউসলিহু ‘আমালাল মুফসিদিন। আল্লাহ তোমার অন্যায়কে ধ্বংস করবেন। কেনো ? কারণ আল্লাহ কখনোই মুফসিদের কার্যকলাপ, অনিষ্টকারীদের কার্যকলাপকে সফল হতে দেন না। তো মুসা তাঁর লাঠিটি নিক্ষেপ করলেন এবং একটি মুজেযা সংঘটিত হলো।  কিন্তু কুরআনের এই মূলনীতি, কুরআনের এই বিচক্ষণতার ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র উপলক্ষ না যখন একই ধরণের ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে। এই একই ধারণা সমগ্র কুরআন জুড়েই ক্রমাগত আলোচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ বলেছেন যে, إِنَّهُ لا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ - ইন্নাহু লা ইউফলিহুয যলিমুন, অর্থাৎ আল্লাহ কখনোই যালিমদেরকে সফলতা অর্জন করতে দিবেন না। إِنَّهُ لا يُفْلِحُ الْمُجْرِمُونَ - ইন্নাহু লা ইউফলিহুল মুজরিমুন, অর্থাৎ আল্লাহ কখনোই অপরাধীদেরকে সফলতা অর্জন করতে দিবেন না। আল্লাহ বলেছেন, وَلا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى - ওয়ালা ইউফলিহুস সাহিরু হাইসু আতা, অর্থাৎ জাদুকর কখনোই সফল হবে না, যেখানেই এবং যা-ই সে উপস্থিত করুক। লক্ষ করুন, কোনো ফালাহ, কোনো বিজয়, কোনো কল্যাণ আসবে না—যালেমের কাছ থেকে, মুফসিদের কাছ থেকে, অপরাধীদের কাছ থেকে, জাদুকরদের কাছে থেকে। একাধিক স্থানে আল্লাহ বলছেন - খারাপ মানুষকে আমি সফল হতে দিবো না। এমন মানুষের হৃদয় দূষণে পরিপূর্ণ।  ফাসাদ অর্থ কী ? ফাসাদ অর্থ আপনি অনিষ্ট ঘটাতে চান। ফাসাদ অর্থ আপনি সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান, আপনি অকল্যাণ ঘটাতে চান, আপনি রক্তপাত করতে চান, আপনি নোংরামি ছড়াতে চান। এটাই হলো ফাসাদ। আর আল্লাহ বলছেন, যাদের হৃদয় কলুষিত, তাদের খারাপ কাজগুলোকে আমি কখনোই সফল হতে দিবো না। এটা অসম্ভব যে, দীর্ঘমেয়াদে কলুষতা সমৃদ্ধি লাভ করবে। হ্যাঁ, হয়তো ছোট একটা বিজয় পেতে পারে। হ্যাঁ, হয়তো অল্প সময়ের জন্য এমন ব্যক্তিকে কর্তৃত্বের অধিকারী মনে হতে পারে। কিন্তু অকল্যাণের উপর ভিত্তি করে কোনো কিছুই কখনোই সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে না। لَا يُفْلِح - লা ইউফলিহ। এই ফালাহ বা সমৃদ্ধির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এই পৃথিবী এবং পরকাল। তো অপরাধী, যালিম, ফাসিক কখনোই চিরন্তন সাফল্য অর্জন করতে পারবে না - এই পৃথিবীতেও না, পরকালেও না।  তারা হয়তো এই পৃথিবীতে আংশিক সাফল্য অর্জন করতে পারে। সীমিত সময়ের জন্য অপরাধীরা হয়তো ছাড় পেতে পারে। অল্প সময়ের জন্য খারাপ মানুষরা হয়তো চিন্তা করতে পারে যে তারা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার নিজের জীবন হবে ভিতর থেকে সম্পূর্ণ কলুষিত এবং আল্লাহর আশীর্বাদ-বঞ্চিত। অন্য কথায়, যদি অপরাধী স্বৈরাচারী ব্যক্তিটি বাইরের জগতের বিবেচনায় ছাড় পেয়েছে বলেও মনে হয়, অন্তর্নিহিতভাবে সে তার হৃদয়ে নিরেট ব্যর্থতা অনুভব করবে। لَا يُفْلِح - লা ইউফলিহ, সে কখনোই সফল হবে না, সে কখনোই প্রশান্তি পাবে না, সে কখনোই পরিতৃপ্তি পাবে না। কারণ আল্লাহ বলেছেন, “এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে যালেম, অপরাধী এবং ফাসেক, আমি তোমাদেরকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, সে কখনোই সফল হতে পারবে না।” এটা কুরআনের মূলনীতি।  এর বিপরীতটাও সত্য। এর বিপরীতটা কি ? إِنَّا لا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ - ইন্না লা নুদিউ আজরাল মুসলিহিন, অর্থাৎ আল্লাহ বলেছেন, যে ভালো কাজ করতে চায়, এমন ব্যক্তির প্রতিদান আমি কখনোই বিনষ্ট হতে দিবো না। আমি কখনোই তার প্রতিদান বিনষ্ট হতে দিবো না যে ভালো কাজ করতে চায়। যে ব্যক্তি ভালো কাজ করতে চায়, সে অবশ্যই সফল হবে। আর যে খারাপ কাজ করতে চায়, সে কখনোই সফল হতে পারবে না। কুরআনের এই মূলনীতিগুলো, যদিও এধরণের অনেকগুলো মূলনীতি রয়েছে, কিন্তু মূলকথা একই। আপনি যদি কলুষতা সৃষ্টি করতে চান, আপনি যদি অনিষ্ট ঘটাতে চান, আপনি যদি ক্ষতি করতে চান, আপনার হৃদয় যদি অসততায় পরিপূর্ণ থাকে, আল্লাহ বারংবার বলেছেন যে, আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। এখন এখানে একটু থামুন।  সফলতা আসলে কী ? সফলতা অর্থ এটা না যে, কোনো ডাকাত যদি ডাকাতি করতে চায়, সে তা করতে পারবে না। সে হয়তো ডাকাতি করতে সক্ষম হবে, হয়তো হত্যা করতে সক্ষম হবে। একজন স্বৈরাচারী হয়তো তার হাজার হাজার জনতাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে। স্বৈরাচারী সরকারগুলো এরকম করে থাকে। কিন্তু সেই ব্যক্তি কখনোই ফালাহ অর্জন করতে পারবে না। ফালাহ আসলে কি ? ফালাহ হলো এই পৃথিবীর এবং পরকালের সফলতা। ফালাহ অর্থ এই পৃথিবীতে আপনি চরম প্রশান্তি এবং পরিতৃপ্তি অর্জন করেছেন, পাশাপাশি আপনি মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন; আর আখিরাতে ফালাহ হলো আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন। আর আল্লাহ অপরাধীদের, যালেমদের এবং ফাসেকদের জন্য ফালাহ অর্জনকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। এর বিপরীতে, আল্লাহ নিশ্চয়তা দিয়েছেন; যারা ভালো কাজ করে, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, তাদের প্রতিদান হবে পরিপূর্ণ, আর তারা পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে।এখন এখানে অত্যন্ত টেকনিক্যাল একটি বিষয় লক্ষ করুন। সৎকর্মশীলদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেননি যে তাঁরা এই পৃথিবীতে ফালাহ অর্জন করবে। আল্লাহ বলেছেন যে, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, পরকালে সে পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে। কারণ এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা ভালো কাজ করতে চায়, কিন্তু এই পৃথিবীতে অশুভ শক্তি তাদেরকে থামিয়ে দেয়। এই পৃথিবীতে তাঁরা এটা পরিপূর্ণ করতে পারেন না। তাঁরা ভালো কাজ করতে চান, কিন্তু এই পৃথিবীতে তাঁরা এটা অর্জন করতে পারেন না। আল্লাহ বলেছেন, “চিন্তা কোরো না। এই পৃথিবীতে যদি তুমি সফল হতে না-ও পারো, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, তোমার প্রতিদান যা তোমার জন্য লিপিবদ্ধ রয়েছে, এর তিল পরিমাণও, এর অনু পরিমাণও নষ্ট হবে না। তোমার নেক মনোবাসনার পূর্ণ প্রতিদান তুমি পাবে। কুরআনের ভাষাগত নির্ভুলতা লক্ষ করুন। আপনি কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা করতে পারেন; কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত নাও হতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, চিন্তা কোরো না। তুমি বিনিময়ে তা-ই পাবে যার আকাঙ্ক্ষা তুমি করেছো। আপনি অকল্যাণের আকাঙ্ক্ষা করতে পারেন, আর তা ঘটতেও পারে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ বলছেন, তুমি ফালাহ অর্জন করতে পারবে না। তুমি সেই সফলতা অর্জন করতে পারবে না যা সকলে প্রত্যাশা করে। কুরআনের ভাষাগত ব্যবহার অত্যন্ত নির্ভুল। তো এই সবকিছু থেকে আমরা কয়েকটি বিষয় শিখতে পারি। প্রথমত এবং প্রধানত, ও মুসলিম, আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আপনার এবং আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্ক। এক্ষেত্রে আপনার অন্তঃকরণ, আপনার অন্তর, আপনার নিয়ত— এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যা-কিছু করছেন, সেগুলো কেনো করছেন ? আপনি কি ইসলাহ চান, নাকি ফাসাদ চান ? আপনি কি কল্যাণ চান, নাকি অকল্যাণ চান ? এই প্রশ্ন আপনার নিজেকে প্রতিনিয়ত করতে হবে। আমি যা করছি তা কেনো করছি ? আমি যদি ভালো কাজ করতে চাই, আল্লাহ বলছেন, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে তুমি পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে। কিন্তু আল্লাহ না করুন, আপনি যদি খারাপ কাজ করতে চান, তাহলে আল্লাহ এই নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, لَا يُفْلِح - লা ইউফলিহু, আপনি কখনোই সফল হতে পারবেন না। তাই আপনার নিয়তকে পর্যবেক্ষণে রাখুন। সর্বদা চিন্তা করুন, আপনি কী করতে যাচ্ছেন।  এখানে আরেকটি বিষয় আমরা শিখতে পারছি। আর তা হলো, আপনি কার সাথে মিশছেন সে বিষয়ে সতর্ক হোন। আপনি যদি যালেমদের সাথে, ফাসেকদের সাথে, অপরাধীদের সাথে চলাফেরা করেন, যদি আপনি খারাপ মানুষদের সাথে চলাফেরা করেন, সেক্ষেত্রে আল্লাহ বলছেন, খারাপ মানুষদের কাজগুলো কখনোই সফল হবে না। তাহলে কি ঘটবে যদি আপনি খারাপ মানুষদের সাথেই চলাফেরা করেন ? এর ফলস্বরূপ, আপনি নিজেও সফলতা অর্জন করবেন না। খেয়াল রাখুন যে আপনার সঙ্গী-সাথী কারা। রাসূল (স) আমাদেরকে সতর্ক করেছেন তাদের ব্যাপারে যারা শুধুমাত্র খারাপ মানুষের মজলিশে অবস্থান করে খারাপকে সমর্থন করে। খারাপ মানুষদের সংস্পর্ষে থাকবেন না। ভালো মানুষদের সাহচর্যে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। প্রিয় ভাইয়েরা, এক্ষেত্রে এর পাশাপাশি একটা বিষয়ে আমাদেরকে অত্যন্ত পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। আল্লাহ যে এই বিধানগুলো বর্ণনা করছেন, তার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো, আমরা যাতে আশাবাদী হয়ে থাকতে পারি যখন চারপাশ অতিমাত্রায় অকল্যাণে পূর্ণ হয়ে যায়। মুসা নবীর অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করুন। যখন তিনি ছিলেন একাকী, তাঁর চারপাশে ছিলো ফেরাউনের বাহিনী; স্বয়ং ফেরাউনই সেখানে উপস্থিত ছিলো। কল্পনা করতে পারেন, টুটান-খামেন অথবা তার নাম যা-ই হোক, সেই ফেরাউন তার ঐশ্বর্যময় সিংহাসনে আসীন রয়েছে - চিত্রটি আপনার মাথায় কল্পনা করুন। চারপাশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত। তারা সকলে রয়েছে ফেরাউনের পক্ষে। কল্পনা করুন যে, ফেরাউনের সভাসদরা সকলেই সেখানে উপস্থিত। সেখানে মুসা ছিলেন সম্পূর্ণ একাকী। কিন্তু চরম আত্মবিশ্বাস সহকারে তিনি বলেছিলেন যে, “আমি জানি, অনিষ্টকারীদের কার্যফল কখনোই সফল হবে না।” মুসার সেই আত্মবিশ্বাস ছিলো অত্যন্ত উঁচু স্তরের।  আমি এবং আপনিও আমাদের স্ব-স্ব পরিসরে এটা অর্জন করতে পারি; তবে শর্ত একটাই। আপনাকে সত্যের পক্ষে থাকতে হবে, আপনাকে আল্লাহর পক্ষে থাকতে হবে, আপনাকে সৎকর্মশীলতা এবং ধার্মিকতার পক্ষে থাকতে হবে। পরবর্তিতে কেউ যখন আপনার সাথে অন্যায় করতে চাইবে, কেউ যখন আপনার সরলতার সুযোগ গ্রহণ করতে চাইবে, কেউ যখন আপনার উপর যুলুম করতে চাইবে, তখন এই আয়াতটি মনে রাখবেন; এবং আপনার হৃদয়ে সেই আত্মবিশ্বাস ধারণ করবেন যা মুসার ছিলো। আল্লাহ কখনোই স্বৈরাচারী, অন্যায়কারী এবং অনিষ্টকারীদের সফল হতে দিবেন না।  কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। যখনই আপনি এমন পরিস্থিতিতে থাকবেন যেখানে যুলুম সংঘটিত হচ্ছে, তখন এটা লক্ষ রাখবেন যাতে যালেম না হয়ে আপনি মজলুমদের অন্তর্ভুক্ত হন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন যদি আপনি যালেম না হয়ে মজলুম হয়ে থাকেন। অবশ্যই সর্বোত্তম হলো আপনি যালেম এবং মজলুম কোনোটাই না। এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি বলছি যে, আপনি যদি এমন পরিস্থিতেতে থাকেন যেখানে যুলুম হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনি যালেম নয়, বরং মজলুমের কাতারেই থাকুন। কারণ আল্লাহ কখনোই যালেমকে সফল হতে দিবেন না।আল্লাহ কখনোই অনিষ্টকারী এবং স্বৈরাচারী ব্যক্তিকে নিজ আশির্বাদে ধন্য করবেন না। আর যে সৎকর্মশীল এবং কল্যাণকামী, আল্লাহ প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, সে তার পূর্ণ প্রতিদান পাবে। নিজের হৃদয়কে পর্যবেক্ষণে রাখুন। সৎকর্মশীলদের সঙ্গে থাকুন। ভালো কাজ করার আকাঙ্ক্ষা করুন। প্রতিদানে আল্লাহর আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবেন। অপরপক্ষে, আপনি যদি খারাপ কাজ করার আকাঙ্ক্ষা করেন, আল্লাহ কখনোই তাদেরকে সফল হতে দিবেন না যারা খারাপ কাজ করতে চায়। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।        —শাইখ ইয়াসির কাদি

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে