মৃত্যুর বাস্তবতা
আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। কুরআন থেকে প্রাপ্ত আজকের শিক্ষাটি হলো সূরা যুমারের আয়াত নাম্বার ৩০। إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ - ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম মাইয়্যিতুন। ইন্নাকা মাইয়্যিত, ওয়া ইন্নাহুম মাইয়্যিতুন। অর্থাৎ, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মৃত্যুবরণ করবেন আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে। إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ - ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম মাইয়্যিতুন। মৃত্যুর বাস্তবতা কুরআনের অনেকগুলো আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আর প্রসঙ্গক্রমে, সুবহানাল্লাহ, এটা আল্লাহর তাক্বদীরের অংশ যে, যখন আমি রমজান মাসের জন্য ৩০ টি শিক্ষার তালিকা তৈরী করেছিলাম, এই আয়াতটি সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। আর যেকোনো কারণেই হোক, আজকে যখন আমি এই আলোচনাগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করছিলাম, তখন মনে হলো যে, কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে, আর এই আয়াটিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাই আমি পুনরায় সাজালাম এবং এই আয়াতটিকে আক্ষরিকভাবেই আজকে তালিকায় যুক্ত করলাম। আর এই মাত্রই আমরা জানতে পারলাম যে, আমাদের উসমান ভাই, যিনি আমাদের সাথে একইসাথে নামাজ পড়তেন, তিনি আজকেই সরক দুর্ঘনটায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইল্লা লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন। গত কয়েক মাসে আমরা আকস্মিকভাবে বেশ কিছু তরুণ ভাইকে হারিয়েছি। আর অবশ্যই মৃত্যুর বাস্তবতাটি সর্বদা আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। তো আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি হবে একটি স্মরণিকা, শুধু সূরা যুমারের উপরেই না বরং এমন একটি বাস্তবতা নিয়ে যা কোনো মানুষই অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ, মানুষ সব কিছুকে অস্বীকার করতে পারে। তারা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করতে পারে, তারা বিচার দিবসকে অস্বীকার করতে পারে, তারা রাসূলদেরকে অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু জীবনের এই অপরিহার্য অবসানকে তারা অস্বীকার করতে পারবে না। এই একটি বাস্তবাতাকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। আর এখানেই ধর্ম, দ্বীন এবং ধার্মিকতার প্রসঙ্গটি চলে আসে। আর এটা আমাদের জন্য প্রধানতম উদ্দীপকগুলোর একটি, যার কারণে আমরা গভীর এবং দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনা করতে পারি এই বিষয়ে যে, পৃথিবীতে আমরা কী করছি। কারণ কত দিন আমরা পালিয়ে বাঁচবো ? আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, أَفَرَأَيْتَ إِنْ مَتَّعْنَاهُمْ سِنِينَ - আফা রআইতা ইমমাত্তা’নাহুম সিনিন - যদি আমরা তাদেরকে উপভোগ করার জন্য বছরের পর বছর সময় দিতাম, ثُمَّ جَاءَهُمْ مَا كَانُوا يُوعَدُونَ - সুম্মা জাআহুম মা কানু ইউ’আদুন - তারপর যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছিলো তা তাদের কাছে আসবে, مَا أَغْنَى عَنْهُمْ مَا كَانُوا يُمَتَّعُونَ - মা আগনা ‘আনহুম মা কানু ইউমাত্তা’উন - তখন তাদের সকল উপভোগ এবং খেল-তামাশা তাদের কোনো কাজে আসবে না। কতদিন আপনি পালিয়ে বাঁচবেন ? وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيدُ - ওয়াজাআ সাকরাতুল মাউতি বিলহাক্ব, যালিকা মা কুনতা মিনহু তাহিদ, অর্থাৎ মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে, আর এটা থেকেই তুমি পালিয়ে বেড়াতে এবং অস্বীকার করতে। কখনোই চিন্তা করেননি যে এটা আপনার সাথে ঘটবে। কখনো চিন্তা করেননি যে আপনি এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। কিন্তু সেটাই ঘটবে। আমরা মৃত্যুর এই বাস্তবতাটি শুধুমাত্র কুরআন থেকেই জানতে পারি না বরং আমাদের যাপিত বাস্তবতাও এটা শেখায়। কতো যে আয়াতে আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ! الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ - আল্লাযি খলাক্বাল মাউতা ওয়াল হায়াতা, অর্থাৎ তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি জীবন মৃত্যুর এই চক্র সৃষ্টি করেছেন। كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ - কুল্লু নাফসিন যাইক্বাতুল মাউত। (প্রতিটি প্রাণ মৃত্যু বরণ করবে)। কুল্লু নাফস বা প্রতিটি প্রাণ এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ - ওয়াইন্নামা তুওয়াফ্ফাওনা উজুরাকুম ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ, অর্থাৎ বিচার দিবসে তোমাদের নিজেদের কৃতকর্মগুলো তোমাদেরকে ফিরেয়ে দেয়া হবে। وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ - ওয়ামা জা’আলনা লিবাশারিম মিন ক্ববলিকাল খুলদ, অর্থাৎ ইয়া রসূলাল্লাহ, আমরা আপনার আগে কোনো মানুষকে চিরন্তন জীবন দান করিনি। (আল্লাহ রাজকীয়তা বুঝাতে নিজের জন্য আমরা বহুবচন ব্যবহার করেছেন।) أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ - আফাইম মিততা ফাহুমুল খলিদুন ? অর্থাৎ, আপনি যদি মৃত্যুবরণ করেন, তারা কি ভেবেছে যে তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে ? লক্ষ করুন, কুরআন আসলে মৃত্যুর বাস্তবতাটিকে সেই একজন ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সম্পর্কযুক্ত করছে যাকে আল্লাহ বলেছেন, যদি কাউকে দীর্ঘ জীবন প্রদান করা হতো, সেটা হতেন আপনি। কিন্তু তিনবার কুরআনে এসেছে; তিন বার আল্লাহ স্পষ্টভাবে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, এমনকি সেই নবী, সেই রসূল, সেই মুস্তফা, সেই মুজতাবা, সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এমনকি তিনিও চিরকাল বেঁচে থাকবেন না। أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ - আফাইম মিততা ফাহুমুল খলিদুন ? অর্থাৎ আপনিও যদি মারা যান তারা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে ? إِنَّكَ مَيِّتٌ - ইন্নাকা মাইয়্যিত; যখন এই আয়াতগুলো নাযিল হয়, তখন সাহাবীরা এমন কোনো পৃথিবীর কল্পনাও করতে পারতেন না যেখানে রাসূল (স) থাকবে না। যখন এই আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিলো, সেগুলো আবৃত্তি করা হতো ঠিকই, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি। কেনো ? আমরা জানি তা কেনো, প্রিয় ভাইয়েরা। আমরা কখনো মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা কখনো এটা নিয়ে চিন্তা করি না নিজেদের জন্য। আমরা কখনো এটা নিয়ে চিন্তা করি না আমাদের প্রিয় মানুষদের জন্য। আমরা তা চিন্তা করি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আমাদের ছেড়ে চলে যায়; যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা না ফেরার দেশে চলে যায়। ঠিক তখনই মৃত্যু আমাদের চিন্তায় আসে। এছাড়া, সেটা ঘটার আগে আমরা অমনোযোগী অবস্থায় থাকি। আর এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য, আমাদের ধর্মের উদ্দেশ্য হলো সেই অমনোযোগীতাকে দূর করা। এর উদ্দেশ্য আমাদের সেই অসচেতনতা দূর করা। কারণ আমরা মৃত্যুকে পরিবর্তন করতে পারবো না। কিন্তু আমরা আমাদের জীবন পরিবর্তন করতে পারবো যেন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়। আমরা মৃত্যুকে পরিবর্তন করতে পারবো না। আর কেউ জানে না যে কখন মৃত্যু আসবে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ - আইনামা তাকুনু ইউদরিককুমুল মাউতু, ওয়ালাও কুনতুম ফি বুরুজিম মুশাইয়্যাদা, অর্থাৎ তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর। যদি সবচেয়ে নিরাপদ স্থানেও আশ্রয় গ্রহণ করেন, নিজেকে মালাকুল মাউত থেকে রক্ষা করতে পারবেন না। আমরা এটা জানি। কারণ, জন্ম থেকে এই পর্যন্ত আমরা হারিয়েছি পরিবার, আমরা হারিয়েছি বন্ধু-বান্ধব, আমরা হারিয়েছি পরিচিত জন। এমন একটা দিনও অতিক্রম হয় না, যেদিন এই পৃথিবীতে কেউ মারা যায় না। এটাই বাস্তবতা। একটা সময় আসবে যখন আমিও চলে যাবো, আর আপনিও চলে যাবেন। এটাই এই বাস্তবতা। তো কুরআনের উদ্দেশ্য, ধর্মের উদ্দেশ্য, দ্বীনের উদ্দেশ্য হলো মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানো নয়, বরং এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। মৃত্যুকে এড়িয়ে না গিয়ে বরং এটা নিয়ে আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। হতাশাগ্রস্ত এবং বিমর্ষ না হয়ে আরো গঠনমূলক জীবন যাপন করতে হবে, যাতে আমরা চিরন্তন জীবনের অধিকারী হতে পারি। কারণ মূল বিষয়টি হলো, মৃত্যু মানে শেষ নয়, মৃত্যু হলো আসল জীবনের শুরু। মৃত্যু হলো চিরন্তন জীবনের শুরু। আর সেই জীবনটাই হলো প্রকৃত জীবন। পরকালের জীবনটাই হলো প্রকৃত জীবন। وَإِنَّ الدَّارَ الآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ - ওয়া ইন্নাদ দারাল আখিরাতা লাহিয়াল হাইআওয়ান। প্রকৃত হায়াত, এখানে হাইআওয়ান অর্থ প্রকৃত হায়াত। প্রকৃত হায়াত হলো আখিরাত। তো আমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং রাসূল (স)-কে স্মরণ করিয়ে দেয়া, আর তাঁর মাধ্যমে আমাদের সকলকে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, আমরা মৃত্যুবরণ করবো, এটা এজন্য যে, যাতে আমরা আরো সৃষ্টিশীল জীবন যাপন করতে পারি। যখন আমরা মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করি, যখন আমরা মৃত্যু নিয়ে ভাবি, আকস্মিকভাবেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রথমত এবং প্রধানত, তুচ্ছ এই পৃথিবী আমাদের আর চিন্তিত করে না। এই বিবাদ এবং ঘটমান এই অসুবিধাজনক ও বিরক্তিকর বিষয়গুলোতে কি আসে যায়। আপনি এটা ভুলে যাবেন, অন্য ব্যক্তিটিও তা ভুলে যাবে। জীবন এগিয়ে চলবে। তো পৃথিবীর এই সমস্যাগুলো, আমাদের এই দুশ্চিন্তাগুলো, আপনি যখন এগুলোকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এভাবে দেখবেন যে, “এখন থেকে একশো বছর পরে আমি এখানে থাকবো না। কেউ এই দুঃখ এবং দুর্দশাগুলোর কথা মনেও রাখবে না।” তো আপনার চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন আপনি চিরন্তন জীবনের আলোকে চিন্তা করতে থাকেন। দ্বিতীয়ত, আপনি উত্তম একটি আদর্শ রেখে যাওয়ার চিন্তা করতে থাকেন। কী সঞ্চয় করেছেন, কতো সুবিশাল বাড়ি, কতো চমৎকার গাড়ি অর্জন করেছন, তা চিন্তা করার পরিবর্তে আপনি চিন্তা করতে থাকেন যে, আমি পেছনে কী রেখে যাচ্ছি। আর আপনি চিন্তা করতে থাকেন যে, আমার সন্তানেরা আমাকে নিয়ে কী ভাববে যখন আমি চলে যাবো। আমার পরিচিত মানুষদের মনে আমার সম্পর্কে কী স্মৃতি থেকে যাবে। আপনি একটি আদর্শ রেখে যাবার কথা চিন্তা করতে থাকেন। পার্থিব সম্পদ নয়, জামাকাপড় নয়, কারণ এগুলো তো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যা থেকে যাবে তা হলো, কিভাবে আপনি অন্য মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছেন; একটি শিশুর মুখে যে হাসি আপনি ফুটিয়েছেন, যে সদাকা জারিয়া আপনি রেখে গেছেন। (সেগুলো আপনার আমলনামায় থেকে যাবে। জান্নাতে সেগুলোর উপকার অনন্তকাল ধরে ভোগ করতে থাকবেন।) তো যখন মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করেন, আপনি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে জীবন যাপন করেন। আর অবশ্যই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-- মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলে আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত হয়ে যায়। কারণ উপলব্ধি করেন যে, আল্লাহই সেই সত্ত্বা, যিনি আপনাকে নিয়ে যাবেন। আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাবেন। ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ - সুম্মা তুরাদ্দুনা ইলা ‘আলিমিল গইবি ওয়াশ শাহাদাহ। আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে অদৃশ্য জগতে। আর সেই জগতে একমাত্র যে উপায়ে আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারবেন তা হলো, রক্ষাকারী সেই সত্ত্বার সাথে একটি সুসম্পর্ক। তো যখন মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন, এটা এরকম না যে আপনি বিষাদগ্রস্ত, মনমরা এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকবেন। না; আপনি একজন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আশাবাদী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। কেন ? কারণ আপনি আসল জীবনের পথ চেয়ে আছেন। আর এই পৃথিবীটা তখন গৌণ হয়ে যাবে, এটা স্থানাত্তরের একটি উপায়ে পরিণত হবে। যতক্ষণ এখানে আছেন, সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করবেন। হবেন সবচেয়ে নীতিবান, হবেন সর্বোত্তম মানুষ। তাই এজন্যই মৃত্যু আপনাকে উত্তম মানুষে পরিণত করে। মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এমনকি যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না, তারাও অনেক সময় ধ্যান করে থাকে। আর তারা এই বিষয়ে ক্লাসও করে থাকে। তারা তো আখিরাতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু তাদেরকেও সীমিত এই জীবন নিয়ে ধ্যানমগ্ন হওয়ার উপকারীতাগুলো শিক্ষা দেয়া হয়। আর সেই শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটি হলো, আপনি শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করবেন। আরেকটি শিক্ষা হলো, আপনি বিদ্বেষ লালন করবেন না। আরেকটি শিক্ষা হলো, সম্পদের অধিকারের চেয়ে অভিজ্ঞতা আপনার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞতা বলতে বুঝায়, মানুষের জন্য কিছু করা, মানুষকে সাহায্য করা। এগুলো সম্পদ অর্জনের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না, সেই অমুসলিমরা যদি মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে, ভাবতে পারেন? মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য এটা আরও কতো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ! সেজন্যই কুরআনে আল্লাহ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে মৃত্যুর বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। ও মুসলিম, মৃত্যু অবধারিত। কোনো সন্দেহ নেই যে, মৃত্যু আমার এবং আপনার কাছে আসবে। আমাদের যে ভাই আজকে মারা গেলেন, এটা ছিলো তার শেষ রমজান মাস। তিনি আমাদের সাথে নামাজ পড়তেন, আর তিনি ঈদটাও করে যেতে পারলেন না। তাঁকেসহ আরও যাদেরকে আমরা গত কয়েক বছরে হারিয়েছি তাঁদের সকলকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। কিন্তু প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা জানি না যে কোন রমজানটি আমাদের শেষ রমজান হবে। আমরা জানি না যে, কোন রাতটি আমাদের জীবনের শেষ ক্বদরের রাত হবে। তো যখন আমরা মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করবো, এর ফলে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জীবন যাপন করতে পারবো। এটাই ইসলামী চিন্তাপদ্ধতি। যখন আমরা মৃত্যুর বিষয়ে চিন্তা করি, জীবন অর্থবহ হয়ে ওঠে এই অর্থ যে, আমরা গঠনমূলক কিছু করতে উদ্বুদ্ধ হই। আমরা সর্বোচ্চ সদাকা এবং সর্বোচ্চ আদর্শ রেখে যেতে চাই। তো আমাদের আজকের শিক্ষাটি হলো, (আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে বলেন) ইয়া রসূলাল্লাহ, আপনি যদি মৃত্যুবরণ করেন, তারাও মারা যাবে। إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ - ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম মাইয়্যিতুন। كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ - কুল্লু মান ‘আলাইহা ফান। অর্থাৎ, এই পৃথিবীতে অবস্থিত প্রত্যেকটি প্রাণী বিলীন হয়ে যাবে। وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلالِ وَالإِكْرَام - ওয়াইয়াবক্বা ওয়াজহু রব্বিকা যুল জালালি ওয়াল ইকরাম। অর্থাৎ, শুধু আল্লাহ এবং আল্লাহর মুখমন্ডলই থেকে যাবে। তাই আপনার এই সীমিত এবং ধ্বংসপ্রায় অস্তিত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। ফলশ্রুতিতে যখন আপনি ‘আলামুল গাইবে প্রবেশ করবেন, চিরন্তন জীবনে প্রবেশ করবেন, সেটাই হবে আপনার প্রকৃত জীবন যা আপনি পাবেন এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের কর্মফল হিসেবে। আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। -- শায়েখ ইয়াসির কাদি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন