জান্নাতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন হবে?
জান্নাতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন হবে? ---------------------------- সূরা কাহাফের তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেন-- مَّاکِثِیۡنَ فِیۡهِ اَبَدًا -- এখানে 'মা-কিসিনা' দ্বারা বুঝানো হচ্ছে সেখানে (জান্নাতে) তারা সবসময় নতুন কিছু পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকবে। আপনি জান্নাতে সারাক্ষণ আরো নতুন নতুন জিনিস পাওয়ার আশায় থাকবেন। আর এটা অনন্তকাল ধরে ঘটতে থাকবে। ব্যাপারটা আসলে সুখের মনস্তত্ত্বের (psychology of happiness) গহীনে লুকায়িত একটি ব্যাপার। পুরস্কারের মনস্তত্বের সাথে জড়িত একটি ব্যাপার। কোনো পুরস্কারের আসল আনন্দ পাওয়া যায় আসলে পুরস্কার পাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে। একজন ছাত্র সবচে সুখী থাকে তার হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে। বিয়ে হওয়ার ঠিক আগের দিন ছেলেটা খুব খুশি থাকে। বিশেষ করে মেয়েটি। সে অবশ্যই বিয়ের ঠিক আগের দিন সবচেয়ে সুখী থাকে। ভালো কিছু পাওয়ার প্রতীক্ষার মাঝে কি যেন এক অদ্ভুত আনন্দ লুকিয়ে আছে। বাচ্চার জন্ম হবে! অমুক তারিখে বিয়ে হবে! অমুক দিন বোনাস পাওয়া যাবে! ঈদ উপলক্ষে অনেক দিন ছুটি পাওয়া যাবে! ভ্রমণের দিন এগিয়ে আসছে! বহুদিন পর আমার প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা হবে! এই যে অপেক্ষা, এই অপেক্ষার মাঝেই আসলে এক ধরনের আনন্দ। এমনটা দুনিয়াতেই ঘটে। আর আল্লাহ বলছেন সত্যিকারের প্রত্যাশা কাকে বলে তোমরা তা জানোই না। কারণ দুনিয়ার প্রতীক্ষা অনেক সময় হতাশ করে দেয়। কিন্তু জান্নাতে কোনো কিছুই আপনাকে হতাশ করবে না। সবকিছু হবে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। চলুন, ব্যাপারটাকে ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে আসি। তার মানে, স্বামী/স্ত্রীরও পরস্পরের জন্য সবসময় প্রবল আগ্রহ বর্তমান থাকবে। আমি এভাবে উদাহরণ দিয়ে থাকি। আপনারা যারা বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগের এক সপ্তাহ...আচ্ছা বিয়ের পরের এক সপ্তাহও যোগ করে দিলাম। ওই সময়টা। শুধু ঐ সময়টার কথা মনে হলেই মুখে লাজুক হাসি ফুটে উঠে। তখন থাকে এন্টিসিপেশন, থাকে প্রবল আগ্রহ। স্ত্রী এমনকি চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জ্বা পায়। কেউ স্ত্রীর নাম নিলেই স্বামীর মুখে লজ্জ্বাজনক হাসি ফুটে উঠে। আবার স্ত্রীর সামনে কেউ স্বামীর নাম নিলে সেও লজ্জ্বায় মুখ নামিয়ে নেয়। মানুষটাকে আবিষ্কার করার অদ্ভুত ধরণের প্রবল একটা টান মনের মাঝে সবসময় কাজ করে। এক ধরণের মোহাচ্ছন্নতায় মনটা কেমন ভেসে বেড়ায়। ১০-১৫ বছর পার হওয়ার পর...স্ত্রীর সামনে কেউ স্বামীর নাম নিলো। "ওয়াক থু! আমি খেতে বসেছি।" হা হা হা। এন্টিসিপেশন হারিয়ে যায়। প্রবল আগ্রহের সেই প্রতীক্ষাটা হারিয়ে যায়। তাই না? সুরাতুর রাহমানে আল্লাহ বলেন--কাসিরাতুর তারফি...আপনি জান্নাতে যখন আপনার স্ত্রীর দিকে তাকাবেন সে লজ্জ্বায় চোখ নামিয়ে নিবে। আনতনয়না। কারণ, দৃষ্টি সংযোগ করতে সে লজ্জ্বা পায়। বিয়ের বিশ বছর পরে স্ত্রী কি এমনটি করে? না। আপনার বাবা-মা কি এমনটি করে এখন? না। করে না। কিন্তু নববিবাহিতরা কি এমনটি করে? হ্যাঁ করে। আল্লাহ জান্নাতে এটাকে চিরস্থায়ী করে দিবেন। জান্নাতে আপনার বিয়ের প্রতিটি দিন হবে যেন বিয়ের প্রথম দিন। ব্যাপারটা মাথা নষ্ট করার মত! অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়! দুনিয়াতে এটা অসম্ভব। কুরআনে অঙ্কিত জান্নাতের চিত্রটা এমনই। জান্নাতের প্রতিটি আনন্দ টেকসই। দিন দিন আনন্দের মাত্রা শুধু বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে আর বাড়তেই থাকবে। জান্নাতের ফল-ফলাদি খেতে খেতে কখনো একঘেয়েমি এসে যাবে না। জান্নাতের পানীয় পানেও কখনো বিরক্তি এসে যাবে না। কারণ, এগুলো কখনো একরকম থাকবে না। সবসময় আগেরবারের চেয়ে উত্তম হবে। আবার খেলে আগের চেয়ে সুস্বাদু লাগবে। দুনিয়াতে সবকিছুর একটা সীমা আছে। একটা পর্যায়ে আসার পর আর ভাল্লাগে না। কিন্তু, জান্নাতে প্রতিটি আনন্দ সবসময় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এটাই হলো মা-কিসিন। দুনিয়ার আনন্দের মাত্রাটা খুবই সীমিত। সকল আনন্দের একটা মাত্রা আছে। এরপর আর বাড়াতে পারবেন না। কিন্তু জান্নাতের আনন্দের উচ্চতর কোনো সীমা নেই। অনন্তকাল ধরে শুধু বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এতক্ষণ যা বর্ণনা করলাম কেউ যদি সত্যিই তা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে, তার পক্ষে দুনিয়ার ফিতনাগুলো অতিক্রম করা কোনো ব্যাপারই না। সে অনায়াসে তা অতিক্রম করতে পারবে। এই ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে সে ভালো থাকবে। চারদিকে যত ফিতনাই থাকুক না কেন তার কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, সে জান্নাতের অকল্পনীয় সেই আনন্দের প্রতীক্ষায় আছে। -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে -- bayyinah tv -- 17. Al-Kahf (Ayah 2d-3)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন