স্বপ্নের প্রকারভেদ
স্বপ্নের প্রকারভেদ- শায়েখ ইয়াসির কাদি আমরা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে জানতে পারি যে, স্বপ্ন আসতে পারে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে, স্বপ্ন আসতে পারে শয়তানের কাছ থেকে এবং আপনি নিজের কল্পনা থেকেও স্বপ্ন দেখতে পারেন। সুতরাং স্বপ্নের তিনটি বিভাগ রয়েছে। আল্লাহর কাছ থেকে স্বপ্ন। নবীরা এ ধরনের স্বপ্ন দেখে থাকেন। তাঁরা অন্য দু'ধরনের স্বপ্ন দেখেন না। এটা নবীদের বেলায় ঘটে। নবীরা শুধু আল্লাহর কাছ থেকে স্বপ্ন দেখেন। আল্লাহ তাদের স্বপ্ন শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছেন। এবং আল্লাহ তাদের নিজেদের কল্পনা থেকেও তাদের স্বপ্নকে সংরক্ষিত করেছেন। আর তাই যখনই একজন নবী একটি স্বপ্ন দেখেন সেটা অহি হিসেবে গণ্য করা হয়। এটাকে আল্লাহর নিকট থেকে অহি হিসেবে দেখা হয়। একজন নবীর প্রতিটি স্বপ্ন হল আল্লাহর নিকট থেকে অহি। আমরা ব্যাপারটি ইব্রাহীম (আ) এর পরিবারের বেলায় দেখেছি। ইব্রাহীম (আ) এর কি ঘটেছিল? তিনি ইসমাইল (আ) এর ব্যাপারে একটি স্বপ্ন দেখেন। তিনি দেখেন যে, তিনি ইসমাইল (আ) কে কুরবানি করছেন। 'ইন্নি আরা ফিল মানামে আন্নি আজবাহুক' আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবেহ করছি। তাহলে নবী ইব্রাহীম (আ) আমাদেরকে স্বপ্নের বাস্তবতা সম্পর্কে বলেছেন। তাঁর পরবর্তী বংশধর ইউসুফ (আ)ও একটি স্বপ্ন দেখেন। সুতরাং স্বপ্ন এমন একটা বিষয় যা আল্লাহর নবীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু এটা একমাত্র নবীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। এটা সম্ভব যে, নবী নয় এমন মানুষও এ ধরনের স্বপ্ন দেখতে পারেন। তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে রাসূল (স) বলেন- নবুওতের অংশ থেকে শুধু 'মুবাশশিরাত' বা সুসংবাদ অবশিষ্ট রয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল - 'মুবাশশিরাত' কি? হে আল্লাহর রাসূল (স)। তিনি বলেন- "এমন স্বপ্ন যা তুমি দেখ বা অন্য কেউ দেখে যেখানে তুমি রয়েছ।" হয় তুমি দেখেছ বা অন্য কেউ দেখেছে আর সে এসে তোমাকে বলে যে, ভাই আমি আপনাকে একটি স্বপ্নে দেখেছি। আমি এরূপ এরূপ দেখেছি। এটাকে বলা হয় 'মুবাশশির'। 'মুবাশশির' শব্দের অর্থ কি? এর অর্থ হল - সুসংবাদ। সুতরাং এখান থেকে আমরা জানতে পারি যে, যখনি আল্লাহ কাউকে স্বপ্ন দেখান সেটা সবসময় ইতিবাচক কিছু। আপনার স্বপ্নের মাঝে একটি সুসংবাদ রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। স্বপ্ন সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলতে গেলে... আমরা বলেছি যে- স্বপ্ন তিন ধরনের। এক নাম্বারঃ এমন স্বপ্ন যা আপনার কল্পনা থেকে আসে। আরবিতে একে বলা হয় 'হাদিসুন নাফস'। এটা আপনার কল্পনাশক্তি থেকে আসে। উদাহরণ স্বরূপ - আমাদের কেউ একজন দামী একটি গাড়ি চাইছেন। তিনি জাগুয়ার, মার্সিডিজ বা এরকম লেটেস্ট মডেলের কোন গাড়ি কিনতে চান। আপনি সব সময় এটা নিয়ে চিন্তা করছেন। তারপর আপনি ঘুমাতে গেলেন আর স্বপ্নে দেখেন যে, আপনি সেই গাড়িটি চালাচ্ছেন। এটা আপনার 'হাদিসুন নাফস' বা কল্পনা শক্তি থেকে উদগত। বিজ্ঞানীরা বলেন - মুসলিম স্কলাররা না- বিজ্ঞানীরা বলেন... বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন অধ্যয়ন করেন। বিশেষ ধরনের বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন অধ্যয়ন করে। আমার কাছে এটা খুবই মজার মনে হয় যে তারাই একমাত্র মানুষ যারা ঘুমন্ত অবস্থায়ও চাকরি করেন। তো, বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন অধ্যয়ন করেন। এইসব বিজ্ঞানীরা আমাদের বলেন যে, এই ধরণের স্বপ্ন প্রতি রাতেই ঘটে। আমাদের ঘুমের একটা পর্যায় আছে যখন সবাই স্বপ্ন দেখে। এই ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ হল জেগে উঠার সাথে সাথে স্বপ্নের সবকিছু আপনার মনে থাকে। কিন্তু তারপর পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে আপনি সব ভুলে যান। এটাই এই ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ; আপনার কল্পনা শক্তি থেকে উৎসারিত স্বপ্ন। আপনার বাহ্যিক আবেগ অনুভূতি দ্বারা এই স্বপ্ন প্রভাবিত হয়। যেমন, কেউ যদি আপনাকে পানি নিক্ষেপ করে তখন আপনি হয়তো স্বপ্নে দেখবেন আপনি পানিতে ডুবে যাচ্ছেন। আপনার অ্যালার্ম বেজে উঠলে কোনভাবে এটাও আপনার স্বপ্নকে প্রভাবিত করতে পারে। ঠিক? কিছু একটা ঘটবে আপনার স্বপ্নের মাঝে। কেউ যদি ফজরের সময় আপনাকে এই বলে জাগায়- জেগে উঠো, জেগে উঠো। এটাও আপনার স্বপ্নে পরিবর্তিত কোন এক রূপে দেখা দেবে যে কেউ একজন আপনাকে জাগাচ্ছে। ঠিক না? এই ধরণের স্বপ্নের সাথে ভাল মন্দের কোন সম্পর্ক নেই। এসব আপনার নিজস্ব কল্পনা প্রসূত স্বপ্ন বা হাদিসুন নাফস। এই ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ হল আপনি এর কিছুই মনে রাখতে পারেন না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে বা দিনের অর্ধেক পার করতেই আপনি সব ভুলে যান। সুতরাং এটা হল হাদিসুন নাফস। দ্বিতীয় শ্রেণীর স্বপ্ন হল- আরবিতে একে বলা হয় 'আল হুলম'। আল হুলম হল অশুভ স্বপ্ন, যাকে আমরা দুঃস্বপ্ন বলি। এ ধরণের স্বপ্ন আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। এ ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ হল এটা দেখার পর আপনি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনি অশুভ, জঘন্য, ঘৃণ্য প্রকৃতির কিছু দেখতে পান। আপনি দেখেন আপনার নিকটতম কারো করুণ মৃত্যু, দেখেন যে আপনি নিজে গাড়ি দুর্ঘটনার কোলে পড়েছেন, দেখতে পান এলিয়েন বা কোন ভয়ংকর প্রাণী আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই ধরণের স্বপ্নের মানে হল - এই ধরণের স্বপ্নের মাধ্যমে শয়তানেরা আপনাকে জ্বালাতন করতে চায়। তারা আপনাকে নিয়ে শুধু কৌতুক করল। এই ধরণের স্বপ্ন কস্মিনকালেও সত্য নয়। কারোই এই ধরণের স্বপ্নে বিশ্বাস করা উচিত নয়। কারোই দুঃস্বপ্নে বিশ্বাস করা উচিত নয়। আমাদের রাসূল (স) বলেন- "দুঃস্বপ্নের কথা কাউকে বলা উচিত নয়।" আপনি কোন দুঃস্বপ্ন দেখলে মানুষকে বলবেন না। কেন? কারণ শয়তান আপনাকে বোকা বানাচ্ছে। একদা এক লোক রাসূল (স) এর কাছে এসে বললেন- ও আল্লাহর রাসূল (স)! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে এবং সেই কর্তিত মস্তক বলের মত ঘুরপাক খেতে লাগলো। আর একে তুলে নিতে আমি এর পিছে পিছে ছুটতে লাগলাম। রাসূল (সঃ) বললেন- "শয়তান গত রাতে তোমাকে নিয়ে কিভাবে মজা করেছে তা মানুষকে বলে বেড়িও না।" মানুষকে বলো না। সে এখন হাসছে কারণ তুমি সেটা বিশ্বাস করেছ। এই ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ কি? আপনি প্রচণ্ড ভীত হয়ে জেগে উঠেন। গভীর রাতে ঘর্মাক্ত অবস্থায় জেগে উঠেন। এটা কি ছিল? কি দেখলাম আমি? এ লক্ষণগুলো বলে দেয় যে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান ভবিষ্যৎ জানে না। রাতে যদি আপনি নিজেকে কোন গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তে দেখেন আর সকালে আপনার বসকে ফোন করে বলেন আমি আজ চাকরিতে আসতে পারবো না, কারণ আমি ড্রাইভ করতে চাই না। তখন শয়তান আপনাকে নিয়ে হাসা হাসি করে। কারণ আপনি তাকে বিশ্বাস করেছেন। দুঃস্বপ্নগুলোকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, কারণ এতে সত্যের কোন লেশমাত্র নেই। আপনি যদি তা অনুসরণ করেন বা বিশ্বাস করেন তবে শয়তানের জয় হল। আপনি যদি এ ধরণের কোন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠেন, আমাদের রাসূল (স) বলেন - আপনি আল্লাহর নিকট শয়তানের আক্রমণ থেকে আশ্রয় চাইবেন। বলবেন- আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম এবং আপনার বাম পার্শ্বে থুতু নিক্ষেপ করবেন। আমাদের রাসূল (স) এখানে এমনভাবে থুতু নিক্ষেপ করতে বলেছেন যাতে শুধু আওয়াজ হবে কিন্তু আপনার মুখ থেকে কোন লালা বের হবে না। এভাবে থু থু… একে বলা হয় 'নাফাস', যাতে আওয়াজ করা হয় কিন্তু সত্যিকারের কোন থুতু বের হয় না। এটা করা হয় শয়তানকে তাড়ানোর জন্য--আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম। আমাদের রাসূল (স) আরও বলেন আপনি যে পার্শ্বে থাকেন তা পরিবর্তন করে অন্য পার্শ্বে শয়ন করুন। কেন? কারণ শয়তান যখন আপনাকে বিরক্ত করছে সে হয়তো আপনার পাশে বা আপনার উপর বসে আছে; তাই আপনি যখন আউজুবিল্লাহ বলেন এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করেন তখন তাকে পালিয়ে যেতে হয়। রাসূল (সঃ) আরও বলেন স্বপ্ন যদি খুবই খারাপ হয়ে থাকে তাহলে উঠে দু'রাকাত নামাজ পড়ুন। এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চান এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করুন। আপনার এই স্বপ্নের কথা আপনার প্রিয় কাউকে, স্বামী/ স্ত্রীকে বা বন্ধু কাউকে জানাবেন না; কাউকে না। এই ধরণের স্বপ্নের কথা ভুলে যান। প্রসঙ্গতঃ স্বপ্নদোষ বা অশ্লীল স্বপ্ন এগুলোও শয়তানের পক্ষ থেকে। এ ধরণের স্বপ্ন দেখাতে একজন পুরুষ বা নারীর কোন দোষ নেই। যাইহোক, আপনারা সবাই এ বিষয়ে ফিকহ জানেন; এ রকম স্বপ্ন দেখলে এবং এটা হলে আপনাকে গোসল করতে হবে। এ স্বপ্ন শয়তানের নিকট থেকে, যদিও এতে আপনার কোন দোষ নেই কারণ আপনি আপনার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করেন না। এ কারণে নবীদের কখনো স্বপ্নদোষ হতো না। কোন নবীদের এটা হতো না। কারণ এ স্বপ্ন, এ রকম চরম নির্লজ্জতা শয়তানের নিকট থেকে। এটা প্রাকৃতিক, এতে আমাদের কোন অপরাধ বোধ করার প্রয়োজন নেই। একজন মানুষের জন্য এ পর্যায় অতিক্রম করা স্বাভাবিক। এর জন্য নিজের প্রতি কোন ঘৃণা অনুভব করার প্রয়োজন নেই। আমাদের উপলব্দি করা দরকার যে, শয়তানই এ রকম অশ্লীল দৃশ্য আমাদের দেখায় আর ভয়ংকর শীতের রাতে আমাদের গোসল করতে হয়। এটা আমাদের কাছ থেকে নয় বা আল্লাহর নিকট থেকেও নয়। এটা আসে শয়তানের কাছ থেকে। সুতরাং এটা আরেক রকম 'হুলম' বা অশুভ স্বপ্ন। এ ক্ষেত্রেও আমরা মানুষদের এসব বলে বেড়াই না। আমরা কাউকে বলি না, কিন্তু স্পষ্টতঃ যদি আমরা এরূপ অবস্থায় জেগে উঠি আমাদের গোসল করতে হবে। তো, এটা হল দ্বিতীয় প্রকারের স্বপ্ন। প্রথম প্রকার কি ছিল? 'হাদিসুন নাফস'। দ্বিতীয় প্রকারঃ শয়তানের পক্ষ থেকে দুঃস্বপ্ন। তারপর আছে তৃতীয় প্রকার। তৃতীয় প্রকার হল- মুবাশশিরাত। এটাকে আরবিতে আরও বলা হয়- রু'ইয়া। রু'ইয়া হল আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো স্বপ্ন। এটা একটা ইতিবাচক স্বপ্ন। আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন স্বপ্ন দেখলে আপনি ভীত হয়ে জেগে উঠবেন না। আপনি আতঙ্কিত হবেন না। যদি এমন হত তাহলে তো আর একে মুবাশশির (সুসংবাদ) বলা হত না। মুবাশশির শব্দটি বাশির, বাশারা থেকে আগত। মুবাশশির অর্থ কি? সুসংবাদ, ভাল সংবাদ, আশাব্যঞ্জক কিছু অথবা যদি এটা ইতিবাচক নাও হয় তবু এটা হবে প্রকৃত সত্য কোন স্বপ্ন, ভয়ংকর কিছু নয়।এখন এ ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ কি? আপনি স্বপ্নে কি দেখেছেন তা স্পষ্টভাবে মনে রেখে জেগে উঠবেন। তাহলে এটা হাদিসুন নাফস নয়। আপনি আতঙ্কিত অবস্থায় জেগে উঠবেন না। যদি এ দুইটি শর্ত পূরণ করা হয় তাহলে সম্ভবত এটা একটা 'মুবাশশির'। কখনো কখনো আপনি ইতিবাচক কিছু দেখে জেগে উঠেন আবার কখনো কখনো আপনি স্বাভাবিক পক্ষপাতহীন অবস্থায় জেগে উঠেন। আপনি ভীত নন আবার খুশিও নন। আপনি হয়তো কিছুটা দ্বিধান্বিত? কি দেখলাম আমি? কিন্তু এ ধরণের স্বপ্নে আপনি কখনো ভীত অবস্থায় জেগে উঠবেন না। যদি আপনি ভীত অবস্থায় জেগে উঠেন তাহলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। এটা কার কাছ থেকে? শয়তানের কাছ থেকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত স্বপ্ন দুই রকমের হতে পারে। প্রথম প্রকার- যেটা কম দেখা যায়- আপনি সরাসরি কোন ঘটনা দেখেন যেখানে আপনি নিজে রয়েছেন কোন ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যতীত। আপনি এমন কোন ঘটনা দেখেন যা ভবিষ্যতে ঘটবে। আর এতে কোন সাংকেতিক চিহ্ন নেই, সরাসরি কোন ঘটনা; সরাসরি ভবিষ্যতের কোন ঘটনার বাস্তবায়ন। ঠিক এটাই ঘটবে। যেমন - রাসূল (স) স্বপ্নে দেখেন যে তিনি কাবা ঘরের চার পাশে তাওয়াফ করছেন। কোন বছর তিনি এটা দেখেন? হিজরতের ষষ্ঠ বছর। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে তিনি কাবা তাওয়াফ করছেন। এ স্বপ্নে কোন সাংকেতিক চিহ্ন ছিল না। যখন তিনি এটা দেখেন তিনি বুঝতে পারেন যে এটা কোন সাংকেতিক স্বপ্ন নয়। তাই তিনি বলেন - ও মুসলিম! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি কাবার চারপাশে তাওয়াফ করছি, চল ওমরা করতে চল। সে বছর কি ঘটেছিল? কুরাইশরা তাঁকে বাধা দিল, ফলে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়। আশা করি আমরা এক বা দুই বছর পর এ বিষয়ে কথা বলব, ইনশাআল্লাহ। যদি প্রতি বুধবারে এভাবে আল্লাহ আমাদের আসার তৌফিক দান করেন। অনেক দীর্ঘ সময় পর হতে পারে তিন বা চার বছর পর। ইনশাআল্লাহ আমরা কোন এক সময় এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো কিভাবে রাসূল (স) কে মক্কা যেতে বাধা দেয়া হয়।তিনি সরাসরি একটি স্বপ্ন দেখেন যাতে কোন সাংকেতিক চিহ্ন ছিল না। আমি নিজেকে তাওয়াফ করতে এবং মাথা মুণ্ডন করতে দেখেছি। এটা অবশ্যই ঘটবে। আল্লাহ কুরআনে বলেন- যে স্বপ্ন আপনি দেখেছেন এটা একটা সত্য স্বপ্ন। আপনি অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবেন। এটা ঘটবে। এই বছর না, পরের বছর। তাহলে এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত দুই ধরণের স্বপ্নের প্রথম প্রকার। আপনি সত্যিকারের ঘটনার বাস্তবায়ন দেখবেন। এ ধরণের স্বপ্ন খুবই অপ্রতুল। কিন্তু এটা ঘটে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নবীদের বেলায় ঘটে। যেমন ইব্রাহীম (আ) দেখেন, কি দেখেন তিনি? 'ইন্নি আরা ফিল মানামে আন্নি আজবাহুক' আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবেহ করছি। এখানেও কোন সাংকেতিক চিহ্ন ছিল না। এটা স্পষ্ট, পরিষ্কার এক স্বপ্ন। এ ধরণের স্বপ্ন নবীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। এ ধরণের স্বপ্ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমাদের রাসূল (স) বর্ণনা করেন; আয়েশা (রা) আমাদের বলেন- কুরআন নাযিলের ছয় মাস পূর্ব থেকে রাসূল (স) প্রতি রাতে এ ধরণের স্বপ্নের কোনটা দেখতেন। ছয় মাস ক্রমাগত। রাসূল (স) ঘুমাতে গেলেই দেখতেন যে আগামী কাল কি ঘটবে। তিনি হয়তো স্বপ্নে দেখেন যে তিনি বাজার থেকে কিছু ক্রয় বিক্রয় করছেন। পরের দিন ঠিক তাই ঘটে। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে তিনি কোন এক লোকের সাথে দেখা করছেন। পরের দিন ঠিক সেই লোক এসে তাঁর সাথে সাক্ষাত করে। একেবারে ঠিক বার ঘণ্টার মাঝে, তিনি যা দেখেন পরের দিন ঠিক তাই ঘটে। ছয় মাস ক্রমাগত, কেন? আল্লাহ তাঁকে বলছেন যে বিশেষ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে ওহি নাযিলের জন্য প্রস্তুত করছেন। ছয় মাস যাবত এরূপ ঘটার পর 'ইকরা' অবতীর্ণ হয়। তাহলে এটা হল এ ধরণের স্বপ্নের একটা উদাহরণ। আমরা বলেছি, আল্লাহর পক্ষ থেকে দুই ধরণের স্বপ্ন দেখানো হতে পারে। প্রথম প্রকার- কোন ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া। আর দ্বিতীয় প্রকার হল- সাংকেতিক চিহ্নসহ স্বপ্ন। এ ধরণের স্বপ্ন বেশি কমন, এটা বেশি দেখা যায়। কোন কোন সময় নবীরা দেখেন। কিন্তু অধিকাংশ সময় এমনকি সাধারণ মানুষও এ ধরণের স্বপ্ন দেখেন। এ ধরণের স্বপ্নে আপনি যা দেখেন তা দ্বারা অন্য কিছু বুঝায়। যেমন - ইউসুফ (আ) এর স্বপ্নে শস্যের একটি পাতা এক বছরের পানি নির্দেশ করে। খুব মোটা গাভী নির্দেশ করে বাম্পার ফলন বা অতিরিক্ত ফলন। আর চিকন গাভী নির্দেশ করে কম ফলন। কেন? গাছ নির্দেশ করে এটা, বাছুর নির্দেশ করে ওটা, আলো অন্য কিছু নির্দেশ করে। এক হাদিসে রাসূল (স) বলেন আমি পুরুষদের বিভিন্ন সাইজের পোশাক পরিধান করে থাকতে দেখেছি। কারো পোশাক গলা পর্যন্ত, কারো পেট পর্যন্ত আর আমি উমার ইবনে খাত্তাবকে দেখেছি তার পোশাক (এত বড় যে তা) শরীর ছাড়িয়ে পেছনে ঝুলছে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন- কিভাবে আপনি এটা ব্যাখ্যা করবেন? তিনি বলেন- এর মানে হল ধর্ম। ধর্মের প্রতি মানুষের আনুগত্য বিভিন্ন সাইজের। কারো ছোট, কারো বড়। ধর্মের প্রতি উমর (রা) এর আনুগত্য এত শক্তিশালী যে তা তাঁর শরীর ছাড়িয়ে পেছনে ছড়িয়ে গেছে। সুতরাং এই স্বপ্নে পোশাক মানে ধর্ম। প্রসঙ্গত এর মানে এই নয় যে, সকল স্বপ্নে পোশাক মানে ধর্ম। কিন্ত এই স্বপ্নে এর মানে পোশাক। সুতরাং এই ধরণের স্বপ্ন হল সাংকেতিক স্বপ্ন। আমরা ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনায় এটা দেখেছি। কারণ তিনি এগারটি তারা দেখেন এবং চাঁদ ও সূর্যকে দেখেন। এটা সাংকেতিক। যা কিছু আপনি দেখেন- প্রতিটা রঙ, প্রতিটা প্রাণী, প্রতিটা ছবি, প্রতিটা গাছ, প্রতিটা বস্তু যা আপনি স্মরণে রাখেন এর দ্বারা অন্য কিছু বুঝায়। এই ধরণের সাংকেতিক স্বপ্ন সবাই ব্যাখ্যা করতে পারে না। (সমাপ্ত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন