সূরা আস-সেজদা

 


সূরা আস-সেজদার ১৬তম আয়াতে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা মুমিনদের একটি গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, تَتَجَافٰی جُنُوۡبُهُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ۫ وَّ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ - "তারা তাদের (দেহের) পার্শ্বগুলো বিছানা থেকে আলাদা করে (জাহান্নামের) ভীতি ও (জান্নাতের) আশা নিয়ে তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাত্থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।"

'তাতাজাফা' এসেছে 'জাফু' থেকে। আর 'জাফু' অর্থ, এক স্থানে শান্ত হয়ে অবস্থান না করা। মানে--আপনি স্থান পরিবর্তন করেন কারণ অস্থির ফিল করছেন। বিশ্রাম নিতে পারছেন না। যেমন, বিছানায় শুয়ে বার বার এদিক ওদিক পার্শ্ব পরিবর্তন করা। تَتَجَافٰی جُنُوۡبُهُمۡ তাদের (দেহের) পার্শ্বগুলো সদা অস্থির। عَنِ الۡمَضَاجِعِ --বিছানা থেকে আলাদা হয়ে। তারা ঘুমাতে পারছে না। চিত্তটা তাদের অস্থির। ধরুন, কারো সন্তান বিদেশ থাকে। তারা খবর পেল সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তখন তার পিতা-মাতার কী অবস্থা হবে? তারা বার বার ফোন করে খবর নিচ্ছেন। কিছু আপডেট তারা জানলেন। তবু রাতে কি তারা ঘুমাতে পারেন? তার মা বিছানায় শুয়ে আছেন এবং বার বার পার্শ্ব পরিবর্তন করছেন কিন্তু ঘুম আসছে না। তার অন্তরটা আজ দারুণ অস্থির। তখন দুটি বিষয় ঘটে। একদিকে, তার অন্তরে থাকে প্রচণ্ড ভয় আর অন্যদিকে থাকে শক্তিশালী একটি আশা যে, আল্লাহ ছেলেটাকে সুস্থ করে দিবেন। এখন আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করুন, تَتَجَافٰی جُنُوۡبُهُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ -- তারা বিছানা থেকে আলাদা হয়ে বার বার এদিক ওদিক পার্শ্ব পরিবর্তন করে। یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ -- তাদের প্রতিপালককে ডাকে خَوۡفًا وَّ طَمَعًا - ভয় ও আশা নিয়ে। তারা ভয় এবং আশা নিয়ে আল্লাহর নিকট দোআ করে। এই চিত্রটি কেবল তখনি দেখা যায় যখন কেউ বড় কোনো বিপদে পড়ে। আল্লাহ বলছেন এ চিত্রটি তার যে সত্যিকার অর্থে আখিরাতে বিশ্বাস করে। তাদের ঈমান যখন ইয়াকীনের (দৃঢ় বিশ্বাস) পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন তারা এ ধরণের অস্থিরতা অনুভব করে। রাতের বেলা তারা আখিরাত নিয়ে এতোটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এ বুঝি তা এসে পড়লো। এ বুঝি আমার হিসেব নিকেশ শুরু হয়ে গেলো। এরপর তারা পরিপূর্ণ ভয় এবং পরিপূর্ণ আশা নিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়, কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোআ করতে থাকে। -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

আল্লাহ তায়ালা সূরা আস-সেজদার ১৭ তম আয়াতে বলেন--فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٌ مَّاۤ اُخۡفِیَ لَهُمۡ مِّنۡ قُرَّۃِ اَعۡیُنٍ ۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ -- "অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।" হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমি এমনসব জিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না।” [বুখারী: ৪৭৭৯; মুসলিম: ১৮৯, ২৪২৪] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌কে বললেন, জান্নাতে কার অবস্থানগত মর্যাদা সবচেয়ে সামান্য হবে? তিনি বললেন, সে এক ব্যক্তি, তাকে সমস্ত জান্নাতীরা জান্নাতে প্ৰবেশ করার পরে জান্নাতের নিকট নিয়ে আসা হবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্ৰবেশ কর। সে বলবে, হে রব! সবাই তাদের স্থান নিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের যা নেবার তা নিয়েছে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি কি সন্তুষ্ট হবে, যদি তোমাকে দুনিয়ার বাদশাদের রাজত্বের মত রাজত্ব দেয়া হয়? সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তা-ই রইল, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ। পঞ্চম বারে আল্লাহ বলবেন, তুমি কি সন্তুষ্ট হয়েছ? সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। তখন তিনি বলবেন, এটা তোমার জন্য, তাছাড়া অনুরূপ দশগুণ। আর তোমার জন্য থাকবে তাতে যা তোমার মন চায়, তোমার চোখ শান্তি করে, সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। সে বলবে, হে রব! (এই যদি আমার অবস্থা হয়) তবে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারীর কি অবস্থা? তিনি বলবেন, তাদের জন্য আমি নিজ হাতে তাদের সম্মানের বীজ বপন করেছি, আর তাতে আমার মোহর মেরে দিয়েছি। সুতরাং কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি, আর কোন মানুষের মনে তা উদিত হয়নি। তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [মুসলিম: ১৮৯] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ জান্নাতে যাবে নেয়ামত প্রাপ্ত হবে, সে কোনদিন নিরাশ হবে না, তার কাপড় পুরনো হবে না, আর তার যৌবন নিঃশেষ হবে না।” [মুসলিম: ২৮৩৬] এত সুন্দর সুন্দর বর্ণনা শোনার পরেও কি নামাজগুলো ঠিকমত আদায় করবেন না? পাপ ছাড়বেন না? আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-- وَ اللّٰهُ یَدۡعُوۡۤا اِلٰی دَارِ السَّلٰمِ -- আর আল্লাহ তোমাদেরকে শান্তির নিবাসের দিকে দাওয়াত করেন। (১০:২৫) শান্তির নিবাস মানে জান্নাত। রাসূলুল্লাহ (স) একদিন স্বপ্নে দেখেন। দুইজন ফেরেশতা উনাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন--"আপনার এবং আপনার উম্মতের উদাহরণ হলো এমন বাদশাহর মত যিনি একটি বাড়ী নির্মাণ করে তাতে একটি ঘর বানালেন, তারপর সেখানে তিনি মেহমানদারীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন, তারপর সেখানে খাবার খাওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে দূত প্রেরণ করলেন। দাওয়াতকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ তার দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ তা বর্জন করল। এখানে আল্লাহ হলেন বাদশাহ, তার বাড়ী হলো ইসলাম, তার ঘর হলো জান্নাত আর হে মুহাম্মাদ! আপনি হলেন দূত। যে আপনার দাওয়াত কবুল করল সে ইসলামে প্রবেশ করল, আর যে ইসলামে প্রবেশ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে জান্নাতে প্রবেশ করল সে তা থেকে খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করল।" [তাবারীঃ ১৭৬২৪, মুসতাদরাকঃ ৩/৩৩৮-৩৩৯] চলুন, এই দাওয়াতে সাড়া দিয়ে আবার তাওবা করি। বেশি বেশি আমল করি। পাপ থেকে বিরত থাকি। নামাজগুলো আদায় করি। অপরের কোনো ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকি।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে