মুক্তো দিয়ে তৈরি এক বাড়ি

 


আমাদের মা বোনেরা বাসার কাজ-কর্ম করতে করতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। রান্না-বান্না, ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, ছেলে-মেয়েদের যত্ন নেয়াসহ বিভিন্ন কাজে সারাদিন আপনাদের ব্যস্ততায় কাটাতে হয়। আপনাদের এই কষ্টগুলো আল্লাহ তায়ালা দেখেন। তাইতো তিনি রাসূলুল্লাহর সিরাতে আপনাদের জন্য খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক একটি ঘটনা সংরক্ষিত করে রেখেছেন। যেন কিয়ামত পর্যন্ত যত ইমানদার মা-বোনেরা দুনিয়াতে আসবেন সবাই এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।

জান্নাতে হযরত খাদিজা (রা) এর জন্য বিশেষ প্রাসাদ (সকল কর্মক্লান্ত মা বোনেরা এখান থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন) — ড. ইয়াসির কাদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা খাদিজা (রা)কেও একটি বিশেষ প্রাসাদ প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সহিহ বুখারির একটি বিখ্যাত হাদিস। আমি সিরাতের আলোচনায় এটি নিয়ে কয়েকবার আলোচনা করেছি। আমাদের রাসূল (স) তখন মক্কায় ছিলেন, খাদিজা (রা) এর বাড়িতে। খাদিজা (রা) কোনো কাজে বাড়ির বাহিরে ছিলেন। জিব্রিল (আ) বাড়িতে এলেন। জিব্রিল (আ) রাসূল (স) এর সাথে কথা বলছিলেন। জিব্রিল রাসূল (স)কে বললেন, "ও আল্লাহর রাসূল! খাদিজা আসছে।" খাদিজা তখন বাড়ির ভেতরে ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাড়ির বাহিরে। তো জিব্রিল রাসূল (স) কে জানাচ্ছেন যে, কিছুক্ষণের মধ্যে খাদিজা বাড়িতে এসে পৌঁছবেন। তাঁর সাথে ছিল কিছু খাদ্য এবং সেই খাদ্য চুবিয়ে আহার করার জন্য কিছু একটা। মানে, রুটি এবং সসের মত কিছু একটা। তো জিবরীল (আ) বললেন—"তিনি এসে পৌঁছালে তাকে তার রবের সালাম প্রদান করুন এবং তাকে আমার সালামও প্রদান করুন।" জিব্রিল (আ) কে পাঠানো হয়েছিল খাদিজা (রা)কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সালাম পৌঁছানোর জন্য এবং জিব্রিল (আ) এর সালামও। এরপর জিব্রিল (আ) রাসূল (স) কে বললেন— তাঁকে জান্নাতের একটি বিশেষ প্রাসাদের সুসংবাদ প্রদান করুন। যা মুক্তোর তৈরি। 'কাসাব' মানে মুক্তো। কেউ কেউ বলেছেন, বিশাল মুক্তোর ভেতরটা ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে। তো, প্রাসাদের বাহিরের দিকটা হবে মুক্তোর তৈরি। সুতরাং, তাঁকে এমন এক বাড়ির সুসংবাদ প্রদান করুন যা মুক্তো দিয়ে তৈরি। "লা সাখাব ফিইহি ওয়া লা নাসাব- সেখানে থাকবে না কোনো কোলাহল, থাকবে না কোনো ক্লান্তি।" খাদিজা (রা) মক্কার খুব জনাকীর্ণ অংশে বাস করতেন। বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব বেশি ছিল না। তাই গোলমাল, হট্টগোল, চিৎকার, হই হুল্লোড় মোটকথা শহরের সব কোলাহল রাসূল (স) এর বাড়ি বা খাদিজার বাড়ি থেকে শোনা যেত। সুতরাং, জিব্রিল আকাশ থেকে নেমে এলেন এবং রাসূল (স)কে বললেন আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন খাদিজাকে সালাম প্রদানের জন্য। আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে সুসংবাদ জানানোর জন্য যে, পরকালে তাঁকে একটি বিশেষ বাড়ি প্রদান করা হবে যা তৈরি করা হবে মুক্তো দিয়ে। আর সেই বাড়িতে কোনো 'সাখব এবং নাসব' থাকবে না। সাখব মানে কোলাহল বা ঠাস-ঠুস বিরক্তিকর আওয়াজ। আর 'নাসব' মানে ক্লান্তি। কারণ, আমাদের মা খাদিজা (রা) কাজ করতে করতে খুবই ক্লান্ত হয়ে যেতেন। তিনি রাসূল (স) এর সন্তানদের মাতা ছিলেন। তিনি রাসূল (স)এরও সেবা করতেন। এর উপরে তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী নারী। তো, তাঁকে খুবই কর্মক্লান্ত সময় কাটাতে হত। আর তাইতো জিব্রিল (আ) এসে তাঁকে জানালেন এই কষ্টটা শুধু অল্প কিছু সময়ের জন্য। ইনশাআল্লাহ, যে ভবিষ্যৎ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে আপনি ঐশ্বর্যশালী এক বিশেষ প্রাসাদ পাবেন। যা তৈরি করা হবে মুক্তো দিয়ে। আর সেই প্রাসাদে থাকবে না কোনো বিরক্তিকর কোলাহল। এটা হবে প্রশান্তময় এবং তৃপ্তিকর। এবং সেখানে আপনি কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না। জান্নাতে কোনো ঘরের কাজ নেই। জান্নাতে আপনাকে কোনো কাজই করতে হবে না। ------------------- দুনিয়ার জীবনটি খুবই সংক্ষিপ্ত। আপনাদের কষ্টকর সময়টারও একদিন সমাপ্তি আসবে। আর ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে আপনাদেরকেও ক্লান্তি এবং কোলাহলমুক্ত বিলাসবহুল এক প্রাসাদ দিয়ে ধন্য করবেন। হযরত আসিয়া (আ) এর এ দোয়াটির কথা তো জানেন। তিনি আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন-- رَبِّ ابۡنِ لِیۡ عِنۡدَکَ بَیۡتًا فِی الۡجَنَّۃِ-- ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি জান্নাতে আপনার নিকটে আমার জন্য একটি ঘর বানিয়ে দিন।" (৬৬:১১)

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে