রূহ কি এবং নাফস কি ? আর এই দুটির মাঝে পার্থক্য কি ?

 


রূহ কি এবং নাফস কি ? আর এই দুটির মাঝে পার্থক্য কি ?

আমি এই বিষয়ে বেশ কিছু মতামত আলোচনা করবো, কিন্তু এর আগেই উপসংহারটি বলে দিচ্ছি; আর তা হলো— “আল্লাহই ভালো জানেন”। অনেক তত্ত্ব রয়েছে, অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে রূহ এবং নাফসের মাঝে সম্পর্কের ব্যাপারে। রূহ এবং এর অস্তিত্ব, রূহ এবং নাফস সম্পর্কিত এই আলোচনাটি আসলে ইসলামপূর্ব সময় থেকেই চলে আসছে। এটি ছিলো প্রাচীন দার্শনিকদের আলোচনার একটি বিষয়। এটা ছিলো ইসলামের বিভিন্ন দল-উপদলের আলোচনার বিষয়। আর এর অনেক ধরণের ব্যাখ্যাও বিদ্যমান; সুফীবাদীদের নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে, কালামশাস্ত্রবিদদের নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটা সম্পূর্ণরূপে গায়েবের বিষয়। তো আমরা যা করতে পারি তা হলো, রূহ এবং নাফসকে কুরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারি। আর অনেক এ্যাকাডেমিকরাই এমনটা করেছেন।  কিভাবে রূহ শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে ? উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ জিবরীল (আ)-এর জন্য কুরআনে রূহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তাই না ? قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ - ক্বুল নাযালাহু রূহুল ক্বুদুস। সাধারণত জিবরীল (আ)-কে রূহুল ক্বুদুস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—পবিত্র রূহ। তো আল্লাহ জিবরীলকে বলেছেন রূহ। অন্য আরেকটি ক্ষেত্রে আল্লাহ রূহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, আর তা হলো ওহী এবং কুরআন। কিছু আয়াতে আল্লাহ স্বয়ং কুরআনেকেই রূহ বলেছেন। وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا - ওয়া কাযালিকা আওহাইনা ইলাইকা রূহাম মিন আমরিনা, অর্থাৎ এভাবেই আমি আপনার প্রতি রূহ অবতীর্ণ করেছি। এখানে রূহ কি ? আল্লাহর নাযিলকৃত গ্রন্থ— কুরআন। আল্লাহ কুরআনকে বলেছেন রূহ। তো প্রথমত আমরা পেলাম—জিবরীল হলেন রূহ। দ্বিতীয়ত, কুরআন হলো রূহ।  তৃতীয়ত, মারিয়াম (আ)-এর মধ্যে আল্লাহ যে আত্মা ফুঁকে দিয়েছিলেন, তাকে বলা হয়েছে রূহ। فَنَفَخْنَا فِيهِ مِنْ رُوحِنَا - ফানাফাখনা ফিহি মিররূহিনা। তো আল্লাহ উল্লেখ করছেন যে, মারিয়ামের গর্ভে যা ফুঁকে দেয়া হয়েছিলো, তা হলো রূহ। একইসাথে, তৃতীয় পয়েন্টের খ অথবা চতুর্থ পয়েন্ট হিসেবে, ঈসা (আ)-কেও বলা হয়েছে রূহ। ঈসার উপাধি কি ছিলো ? রূহুল্লাহ। এটা কুরআনে এসেছে যে, আল্লাহ ঈসাকে রূহ বলেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, إنّمَا المَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللّهِ وكَلِمَتُهُ ألْقاها إلى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ - ইন্নামাল মাসিহু ‘ইসাবনু মারইয়াম রসূলুল্লাহি ওয়া কালিমাতুহু আলক্বাহা ইলা মারইয়ামা ওয়া রূহুম মিনহু, অর্থাৎ ঈসা হলেন মাসীহ এবং আল্লাহর কালিমা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরীত রূহ। এটা কুরআনেই এসেছে। তো ঈসাকেও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরীত রূহ বলা হয়েছে।  এছাড়া কুরআনে আল্লাহ রূহ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাঁর সাহায্যকে যা আকাশ থেকে নেমে আসে। আল্লাহ এটাকেও রূহ বলেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الإيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ - উলাইকা কাতাবা ফি ক্বুলুবিহিমুল ইমানা ওয়া আইয়্যাদাহুম বিরূহিম মিনহু, অর্থাৎ সাহাবীগণ হলেন তাঁরা যাদের হৃদয়ে আল্লাহ ইমানকে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন — كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الإيمَانَ - কাতাবা ফি ক্বুলুবিহিমুল ইমান। তারপর আল্লাহ বলেছেন, وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ - ওয়া আইয়্যাদাহুম বিরুহিম মিনহু, অর্থাৎ আল্লাহ সাহাবীদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরীত একটি রূহ দ্বারা সাহায্য করেছেন। এখানে রূহ দ্বারা কি বুঝাচ্ছে ? এটা ঐশী সাহায্য, ঐশী সহযোগীতা যা এসেছিলো বদর যুদ্ধে এবং অন্যান্য যুদ্ধে। আল্লাহ এটাকে রূহ বলেছেন। আর ষষ্ঠতম ক্ষেত্রে, দেহের ভিতরে অবস্থিত আত্মার জন্যও রূহ শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই না ? وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي - ওয়াইয়াসআলুনাকা ‘আনির রূহ, ক্বুলির রূহু মিন আমরি রব্বি। এটাই দেহের ভিতরে অবস্থিত রূহ। এখন, এই সবগুলো ক্ষেত্রে, আমরা লক্ষ করছি যে, রূহ এমন একটি জিনিস যার অবস্থান সাধারণত আমাদের দৃষ্টির বাইরে। একমাত্র ঈসা ছাড়া; তিনি ছিলেন অনুভূতিযোগ্য এবং স্পর্শযোগ্য। এছাড়া অন্যগুলো আমাদের দৃষ্টির বাইরে, এটা ভিন্ন জগতের ব্যাপার। এটা অন্তর্নিহিত কোনো শক্তি অথবা বল, যাকে আল্লাহ ব্যবহার করেন সাহায্য হিসেবে অথবা যা জীবন সঞ্চার করে। তাই কুরআনকে রূহ বলা হয়, কারণ কুরআন আত্মাকে জীবন্ত করে তোলে। ওহীকে বলা হয়েছে রূহ, ইমানকে বলা হয়েছে রূহ। আল্লাহ বলেছেন, আমি ইমানদারদেরকে রূহের মাধ্যমে সাহায্য করেছি। তো এই সবগুলোই ঐশী সাহায্য যা জীবন নিয়ে আসে। আর এজন্যই কুরআনকেও রূহ বলা হয়, কারণ এটা রূহকে জীবিত করে তোলার প্রধানতম মাধ্যম।  জিবরীলকে রূহ বলা হয়, কারণ জিবরীল সেই জীবনকে নিয়ে এসেছেন; আধ্যাত্মিক সেই জীবন। জিবরীল আল্লাহর সবগুলো ওহী নিয়ে এসেছেন। তো তিনি আলোক সঞ্চারণ করছেন, তিনি সৃষ্টির মাঝে জীবন নিয়ে এসেছেন— তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর এবং কুরআনের ওহীর মাধ্যমে। তাই তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত রূহ বলা হয়েছে। তো রূহের জন্য এই সকল অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে মূল অভিন্ন ধারণাটি হলো, এটা এমন জিনিস যা জীবন প্রদান করে, যা শক্তি সঞ্চার করে, যা আল্লাহর সাহায্য। নাফসের বিষয়ে বলতে গেলে, নাফস শব্দটি কুরআনে অনেক অনেক বেশী সংখ্যক-বার এসেছে। রূহ শব্দটির তুলণায় সম্ভবত আট বার বেশী এসেছে। নাফস শব্দটি কুরআনে অনেক বেশী সংখ্যক বার এসেছে। আর আপনি যদি সেই সবগুলো আয়াত লক্ষ করেন, এর ব্যবহারের বহুসংখ্যক শ্রেণীবিভাগ দেখতে পাবেন। কিন্তু খুবই কম সংখ্যক ক্ষেত্রে কখনো কখনো নাফস শব্দটি রূহের সমার্থক হিসেবে এসেছে। তাই এটা একটা ব্যতিক্রম। এরকমটাও পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে মাজাহ শরীফের বিখ্যাত একটি হাদিসে রাসূল (স) বলেছেন, তোমরা কি এমন মৃত ব্যক্তিকে দেখোনি যার চোখদুটো উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে ? তাঁরা বললেন, এটা কেনো ইয়া রসূলাল্লাহ ? তিনি বললেন, নাফস যখন দেহ ত্যাগ করে, দৃষ্টি তখন তার অনুসরণ করে। নাফস যখন দেহ ত্যাগ করে। হাদিসে তিনি রূহ শব্দটি বলেননি। যখন নাফস দেহ ত্যাগ করে, দৃষ্টি তখন তার অনুসরণ করে।  আর এজন্যই, যারাই জাগ্রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে; ঘুমন্ত অবস্থায় আপনার চোখ তো বন্ধই থাকে; যারাই জাগ্রত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, সবসময়ই আপনি দেখবেন যে তারা উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেনো ? রাসূল (স) এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। জীবন এবং মৃত্যুর মাঝে মিলিসেকেন্ডের মতো সময় থাকবে যখন আপনি আপনার নিজের রূহকে দেখতে পাবেন। আর স্পষ্টতই যখন আমরা নিজের রূহকে দেখতে পাবো, আমরা এর দিকে তাকিয়ে থাকবো। অন্য সবকিছু গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে; তাই না ? প্রত্যেকেই নিজের রূহকে দেখতে পাবে। শেষ যে জিনিস মানুষ দেখবে তা হলো তার নিজের রূহ দেহত্যাগ করছে। আর তারপর এটা চলে যাবে। তাই চোখ সেদিকে তাকিয়ে থাকবে। হাদিসটি একটি বিশুদ্ধ হাদিস, যেখানে রাসূল (স) বলেছেন, যখন নাফস দেহ ত্যাগ করবে, দৃষ্টি তার অনুসরণ করবে। তো তিনি এই হাদিসে নাফসকে রূহ অর্থে ব্যবহার করেছেন।  এছাড়া কুরআনেও এসেছে, اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا - আল্লাহু ইয়াতাওয়াফফাল আনফুসা হিনা মাউতিহা, অর্থাৎ আল্লাহ আনফুস গ্রহণ করেন, এটা নাফসের বহুবচন, আল্লাহ নাফস গ্রহণ করেন, যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়। তো, কখনো কখনো নাফস শব্দটি রূহ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এটা ব্যতিক্রম। সাধারণভাবে বলতে গেলে, কুরআনে নাফস শব্দটি কেবলমাত্র রূহ অর্থেই সীমাবদ্ধ নেই। আল্লাহ বলেছেন, كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ - কুল্লু নাফসিন বিমা কাসাবাত রহীনাহ, অর্থাৎ প্রতিটি নাফস নিজের কৃতকর্মের দায়ে দায়বদ্ধ। لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْساً إِلاَّ وُسْعَهَا - লা ইউকাল্লফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস’আহা, অর্থাৎ আল্লাহ কোনো নাফসকেই তার সামর্থের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। কুরআনে ঈসা বলেছেন, تَعلَمُ مَا في نَفسِى وُلَآ أعلَمُ مَافي نَفسِىكَ - তা’লামু মা ফি নাফসি ওয়ালা ‘আলামু মা ফি নাফসিক, অর্থাৎ ও আল্লাহ, আপনি জানেন আমার নাফসে কি রয়েছে, আমি জানি না আপনার নাফসে কি রয়েছে। তো নাফস শব্দটি অনেক বেশী পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে।  আর সাধারণভাবে বলতে গেলে, আমরা দেখতে পাই যে, নাফস শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যখন দেহ, রূহ এবং চিন্তাশক্তি একত্রে মিলিত অবস্থায় থাকে। যখন এটা চলাফের করা, কথা বলা, জীবন্ত একটি সত্ত্বা, তখন এটাকে বলা হয় নাফস। وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلا تُبْصِرُونَ - ওয়াফি আনফুসিকুম আফালা তুবছিরুন ? অর্থাৎ, এটা তোমাদের নিজেদের ভিতরে, তোমরা কি দেখতে পাও না ? আনফুস - তোমাদের নিজেদের মধ্যে। তো নাফসকে বলা যেতে পারে ‘নিজস্ব সত্ত্বা’। আর নিজস্ব সত্ত্বার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—দেহ, রূহ এবং চিন্তাশক্তি। এই সবগুলো একসাথে। আর সম্ভবত এটাই কুরআনে উল্লেখিত নাফস শব্দটির সবচেয়ে কমন ব্যবহার।কেউ কেউ বলেছেন যে, নাফস তিন ধরণের। নাফস আল-মুতমাইন্না (الْمُطْمَئِنَّةُ), নাফস আল-আম্মারাহ বিসসু (الْأَمَّارَةْ بِالسُّوءِ) এবং নাফস আল-লাওয়্যামাহ (اللَّوَّامَةْ)। নাফসুল মুতমাইন্না হলো সর্বোচ্চ শ্রেণী। আল্লাহর ইবাদাতের কারণে এটা পরিতৃপ্ত, এবং আখিরাতেও এটা সন্তুষ্ট থাকবে। আর সর্বনিম্ন শ্রেণী হলো নাফস আল-আম্মারা বিসসু (الْأَمَّارَةْ بِالسُّوءِ) — সেই নাফস যা সর্বদা খারাপ কাজের প্ররোচনা দেয়। মধ্যবর্তী শ্রেণী হলো পাপকারী মুসলিম— নাফস আল-লাওয়্যামাহ (اللَّوَّامَةْ)। কোনো ভালো কাজ করলে সে খুশী হয়, আবার যখন খারাপ কাজ করে তখন বলে, “কেনো খারাপ কাজটা করলাম ?” এটা নাফসুল লাওয়্যামাহ। লাওয়্যামাহ অর্থ এটা সর্বদা নিজের সমালোচনা করে। তো এটা হলো বিশেষ একটা ব্যাখ্যা।  এটা কেনো ? কারণ কুরআনে তিনটি ভিন্ন আয়াতে এই তিনটি বিশেষণের কথা এসেছে। إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ - ইন্নান্নাফসা লাআম্মারাতুন বিসসু — এটা সূরা ইউসুফের আয়াত। আর নাফসুল মুতমাইন্নার কথা এসেছে আমপারায়। এরপর নাফসুল লাওয়্যামার কথাও এসেছে আমপারায়। এজন্য কেউ কেউ বলেছেন, ভিন্ন তিনটি বিশেষণ এসেছে ভিন্ন তিন ধরণের নাফস সম্পর্কে। কিন্তু, অন্যরা বলেছেন, “না, এটা একটা ভুল। নাফস শুধু দুই ধরণের।” আর তা হলো, নাফসুল মুতমাইন্না এবং নাফসুল আম্মারাহ বিসসু (الْأَمَّارَةْ بِالسُّوءِ)।  নাফসুল লাওয়্যামার ক্ষেত্রে, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই এই অবস্থা প্রত্যেক নাফসের জন্যই প্রজোয্য। কারণ প্রত্যেক নাফসই নিজের সমালোচনা করে। ভালো অথবা খারাপ যেই জন্যই হোক, এটা নিজের সমালোচনা করে। প্রত্যেক নাফসই বলে, “কেনো আমি এটা করলাম, কেনো এটা করলাম না ? আমার এটা করা উচিৎ ছিলো।” এটাই লাওয়্যামাহ। ক্রিয়াপদ লামা-ইয়ালুমু (لَامَ - يَلُوْمُ) অর্থ সমালোচনা করা, দোষারোপ করা। প্রত্যেক নাফসই লাওয়্যামাহ। তো অন্য চিন্তাবিদগণ বলেছেন, “নাফস মূলত দুই ধরণের। নাফসুল মুতমাইন্না এবং নাফসুল আম্মারা বিসসু (الْأَمَّارَةْ بِالسُّوءِ)।”  আরো একদল চিন্তাবিদ বলেছেন, না, এই তিনটি বর্ণনা ইঙ্গিত করছে; কিসের প্রতি ? আপনারা মনোযোগ দিচ্ছেন ? প্রথমে ছিলো তিনটি শ্রেণী; তারপর আসলো দুইটি; এখন পরবর্তী বিকল্পটি কি হতে পারে ? মূলত নাফস এক ধরণের। তিনটি বিশেষণের সবগুলোই একইসাথে সকল নাফসের বর্ণনা দিচ্ছে। إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي - ইন্নাননাফসা লাআম্মারাতুন বিসসুই ইল্লা মা রহিমা রব্বি। প্রত্যেক নাফসের মধ্যেই অনিষ্টকর প্রবণতা রয়েছে, তবে আল্লাহ কিছু নাফসকে রক্ষা করেন। কিন্তু নাফস প্ররোচনা দিতে থাকে, নাফসের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা আসতে থাকে। আল্লাহ কিছু নাফসকে রক্ষা করেন, তবে নাফস খারাপ কাজের প্ররোচনা যোগায়। আর নাফসুল লাওয়্যামার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাফসই নিজেকে তিরষ্কার করে। নাফসুল মুতমাইন্না হলো যখন কেউ ভালো কাজ করে, সে প্রশান্তি অনুভব করে।  তো বাস্তবিক অর্থে এই তিন ধরণের মতামতই পাওয়া যায়। কিছু চিন্তাবিদ বলেছেন যে, নাফস এবং রূহ সমার্থক। অন্যরা এ প্রসঙ্গে আরবি ভাষার বিখ্যাত একটি মূলনীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন; আর মূলনীতিটি হলো, إِذَا اجْتَمَعَ افْتَرَقَ وَإِذَا افْتَرَقَ اجْتَمَعَ  - ইযাজতামা’আ ফতারাক্বা, ওয়াইযা ফতারাক্বা জতামা’আ, অর্থাৎ যখন একই প্রসঙ্গে দুটি শব্দ একসাথে আসে, তখন তারা ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। যখন তারা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসে, তারা সমার্থক হয়ে যায়। যাই হোক, আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। আপনি যদি কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে রূহের বর্ণনাগুলো একত্র করেন এবং কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে নাফসের বর্ণনাগুলো একত্র করেন, এই ধারণাটি পাওয়া যায় যে, রূহ বলতে মূলত আমাদের দেহের মাঝে অবস্থিত আত্মিক সত্ত্বাটিকে বুঝানোর হয়েছে, যা মৃত্যুর সময় আমাদেরকে ত্যাগ করে যাবে।  এটাই সাধারণ ধারণা—রূহ হলো আমাদের অন্তর্নিহিত আত্মিক সত্ত্বা। আর রূহ ছাড়া দেহ মৃত্যুবরণ করে এবং দেহটি লাশে পরিণত হয়। তো এটাই মৌলিক ধারণা। আর সাধারণত নাফস বলতে বুঝায়—যদিও কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে কুরআন এবং সুন্নায়— সাধারণত নাফস শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যখন রূহ এবং দেহ একত্রে মিলিত অবস্থায় থাকে, জাগ্রত অবস্থায় থাকে এবং চিন্তাশীল অবস্থায় থাকে। এটাই কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে পাওয়া সাধারণ ধারণা যে, নাফস হলো বৃহত্তর একটি শ্রেণীবিভাগ; কারণ এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রূহ এবং দেহ, যখন তা জাগ্রত অবস্থায় থাকে। এটাই সাধারণ ধারণা, আর মহান আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন। তো রূহ এবং নাফসের মাঝে পার্থক্য কি— প্রশ্নটির জবাব এটাই। আর আমি আগেই বলেছি যে, এই প্রশ্নের কোনো সুস্পষ্ট এবং দ্ব্যার্থহীন জবাব নেই, আমাদের সামনে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে মাত্র। —ডক্টর ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে