ঈমানদার ব্যক্তিও আঁধারে পড়ে যেতে পারে
বহু মানুষ নিজের ভেতর বহু অশ্রু জমা করে আছে। বহু গভীর অশ্রু তাদের জমা হয়ে আছে। সে শুধু শুনতে চায়, আল্লাহ তাকে ভুলে যাননি। আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। আল্লাহ তাকে জাহান্নামে ফেলতে চান না। যদি সে ভুল করে থাকে, আল্লাহর অত্যন্ত যত্ন এবং ভালোবাসাসহ বলার পদ্ধতি আছে যে, তার কাজটা কতটা ভুল ছিল। এখন, তার পথ পরিবর্তন করার সময়। তাকে শুধু কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে, শক্তি জোগাড় করে আল্লাহর পথে হাঁটা শুরু করতে হবে। এমনকি সে যদি ঈমানদারও হয়ে থেকে এবং কোনো কারণে শয়তানের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে তার জীবনটা আজ দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এমন অন্ধকার গর্তে পড়ে গেছে যে জীবনে কোনোদিন কল্পনা করেনি সে এমন কাজ করবে। তার আশে পাশের মানুষজন তার নাম মুছে ফেলেছে। তারা তাকে পরিত্যাগ করেছে। সেদিন ফজরের সময় এক যুবকের সাথে কথা হলো। সে শুধু আমার সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে চেয়েছিল। সে বলল, আমি কি আপনার দশটা মিনিট সময় পেতে পারি? আমি বললাম, কোথা থেকে এসেছ তুমি? সে ত্রিশ মাইল দূর থেকে এখানে ফজর পড়তে এসেছে। আমি বললাম, আচ্ছা বসো। আর সে আমার কাছে সময় চেয়েই লজ্জিত হয়ে পড়েছিল। আমাদের অডিটোরিয়ামে আমি তার সাথে বসলাম। আমার মনে হয়, প্রথম পাঁচ মিনিট সময় তার ব্যয় হলো শুধু চিন্তাগুলো জড়ো করতে। কারণ, তার চোখ দিয়ে ক্রমাগত অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। তার বুকের মধ্যে কিছু কথা আটকে আছে। কারো নিকট কথাগুলো বলে সে কিছুটা হালকা হতে চাইছিল। কিন্তু, কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। আমি জানি না, যদি কাউকে বলি সে আমাকে কী মনে করবে। সুবহানাল্লাহ! সে কী বলেছিল তা আমি আপনাদের বলতে যাচ্ছি না। সেটা আমার আর তার মাঝে। ব্যাপারটা হলো, এমনকি একজন ঈমানদার ব্যক্তিও আঁধারে পড়ে যেতে পারে। এমনকি ঈমান আনার পরেও কোনো একটি অন্ধকার আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারে। আর এটা শুধু একটা অন্ধকার নয়। হতে পারে বিভিন্ন ধরণের ঘোর তমসায় আপনি আটকে গেছেন। মানুষ নীরবে বিভিন্ন ধরণের সংগ্রাম করে যায়। আর তারা এগুলোর কথা কখনো কাউকে বলে না। কারো কাছে এগুলো প্রকাশ করা তাদের নিকট খুবই বিব্রতকর। তাই, তারা নিজের মাথায় এগুলো নিয়ে ঘুরে ফিরে। এমন মানুষদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক একটি আয়াত। আল্লাহ তায়ালা বলেন- اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ - "আল্লাহ মু’মিনদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।" (২:২৫৭) তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আপনাদের মনে হতে পারে, এ আয়াতে বলা হচ্ছে- সাহাবারা আগে কাফের ছিল তিনি তাদের কুফুরি থেকে ইসলামে নিয়ে আসলেন। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসলেন। কিন্তু, আয়াত তো শুরু হয়েছে- "আল্লাহু ওয়ালিউল্লাজিনা আমানু" দিয়ে। আয়াতের সিইগা, কালের দিকে লক্ষ্য করুন। আল্লাহ তাদের অভিভাবক যাদের ইতোমধ্যে ঈমান রয়েছে। তাহলে যে মানুষদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে তাদের ইতোমধ্যে ঈমান রয়েছে। এরপর তিনি বর্তমান কাল ব্যবহার করেন। "ইউখরুজুহুম মিনাজ জুলুমাতি ইলান নূর"। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসতে থাকেন। তাই, আপনার জন্য এখনো আশা আছে। আপনাকে জাস্ট কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে, শক্তি জোগাড় করে আল্লাহর পথে হাঁটা শুরু করতে হবে। তিনিই আপনাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসবেন। -- নোমান আলী খান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন