আগুনের তৈরি জামা



 প্রিয় ভাইয়েরা, জাহান্নামের তীব্র শাস্তিতে বেপরোয়া হয়ে জাহান্নামীরা জাহান্নামের রক্ষীদের ডাকতে থাকবে।

আমি আগুনের তৈরি জামা পরে আছি, আমি আগুনের শিকল দিয়ে বন্দি, আমার খাবার জাক্কুম, আমার পানীয় হলো পঁচা গলা পূঁজ আর তীব্র গরম পানি, আমি তীব্র অন্ধকারে, আমি কিছুই দেখতে পাই না, কথা বলার কেউ নেই, অভিযোগ করার মত কোনো বন্ধু নেই, কোনো সাথী নেই।  আমার বিছানা দোজখের আগুনের, কোনো বিশ্রাম নেই, কোনো আরাম নেই, কোনো বিরতি নেই। মানুষ চিৎকার করে জাহান্নামের গার্ডদের ডাকতে থাকবে। মানুষ অসহনীয় যন্ত্রণায় মূর্ছা যাচ্ছে, একটা উপায় তো থাকতে হবে। দিনের পর দিন আমি শাস্তি ভোগ করছি। আমি কিছুই দেখতে পাই না, আমি খুবই সংকীর্ণ এক স্থানে। সমস্ত, সব ধরণের শাস্তি আজ একত্রিত হয়েছে। মানসিক, শারীরিক সব ধরণের। আমি সকল দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছি। এক আয়াতে আল্লাহ যেমন বলেছেন,  وَ یَاۡتِیۡهِ الۡمَوۡتُ مِنۡ كُلِّ مَكَانٍ وَّ مَا هُوَ بِمَیِّتٍ তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। (১৪:১৭) মানুষ কাকুতি মিনতি করতে থাকবে, দয়া ভিক্ষা চাইবে, অনুনয় করবে এই গার্ডদের কাছে—বের হয়ে যাওয়ার জন্য নয় বা শাস্তি বন্ধ করার জন্য নয়—তাদের চরম আশা হলো, তাদের সর্বোচ্চ আশা হলো শুধু একদিনের জন্য একটু বিরতি। ''আমাকে শুধু একটু বিরতি দিন, একটু নিঃশ্বাস নিতে দিন।" وَقَالَ الَّذِينَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ - "যারা জাহান্নামে আছে, তারা জাহান্নামের রক্ষীদেরকে বলবে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে একদিনের আযাব লাঘব করে দেন।" (40-49) এভাবে কতকাল পরে—একমাত্র আল্লাহ জানেন— অবশেষে জাহান্নামের ফেরেশতারা জবাব দিবে - أَوَلَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُم بِالْبَيِّنَاتِ - " তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রসূল আসেননি?  قَالُوا بَلَىٰ - "তারা বলবে হ্যাঁ।" আল্লাহর শপথ! রাসুলরা সুস্পষ্ট প্রমাণাদি সহ আমাদের কাছে এসেছিলো। আলেম ওলামারা আমাদের এই বিষয়ে জ্ঞান দিয়েছিলেন। আমরা উপেক্ষা করেছি। আমরা এই দুনিয়া দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলাম। দুনিয়ার ভোগ বিলাস আর অলীক উপকরণ দ্বারা আমরা বোকা বনে গিয়েছিলাম।  আমরা শয়তান এবং আমাদের প্রবৃত্তির ধোঁকায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম।  হ্যাঁ, তারা এসেছিলো। কিন্তু প্লিজ আমাদেরকে একটু আশা দেখান। قَالُوا فَادْعُوا ۗ - জাহান্নামের রক্ষীরা বলবে—যত বেশি পারো দোয়া করতে থাকো। যত সময় ধরে পারো কাকুতি মিনতি করতে থাকো। তোমাদের সকল দোয়াই আজ ব্যর্থ। সব দোয়াই আজ বিলুপ্ত। শুধু অপচয়। কোনো দয়া প্রদর্শন করা হবে না। وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ - "বস্তুতঃ কাফেরদের দোয়া নিস্ফলই হয়।" এমন কোনো জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারেন, যেখানে কোনো দয়া দেখানো হয় না? কোনো রাহমাহ নেই, কোনো আশা নেই।  নিজেকে এই অবস্থায় কল্পনা করুন, তারপর তুলনা করুন এরসাথে—যে স্টুপিড, তুচ্ছ মজা অথবা খুবই সামান্য সুখ বা আনন্দ পেয়ে থাকেন আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ, কারো মাথায় যদি আধা ইঞ্চি পরিমাণ বুদ্ধিও থেকে থাকে সে কখনো এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মজাকে প্রাধান্য দিবে না। যে মজা অল্পতেই শেষ হয়ে যায়। সেখানকার এক সেকেন্ডের শাস্তির তুলনায়। ঐ পরিস্থিতিতে থাকার তুলনায়।  কোন কারণে দ্বীনের পথ ছাড়বেন? কেন আল্লাহর পথ পরিত্যাগ করবেন? কোন কারণে শয়তানকে অনুসরণ করবেন এবং শয়তানের ওয়াদাকে বিশ্বাস করবেন? কোন কারণে এমন দুনিয়ার অনুসরণ করবেন যা অস্থায়ী এবং চিরস্থায়ী আখেরাতকে হারিয়ে ফেলবেন? কেন দুনিয়ার এ খুবই তুচ্ছ সামান্য সুখ, আনন্দের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তি জাহান্নামের আগুনে যাওয়ার রিস্ক নিচ্ছেন? আল্লাহর শপথ! আল্লাহর শপথ আমার প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহর শপথ! আল্লাহর শপথ! যদি জানতেন আপনি কীসের রিস্ক নিচ্ছেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যদি আমাদেরকে শুধু একটিবার দোজখ দেখার সুযোগ দিতেন আমাদের মৃত্যুর পূর্বে, আপনি এক সেকেন্ডের জন্যেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অবাধ্য হতেন না। এটি খুবই সিরিয়াস একটি ব্যাপার। তাই, আমাদের অন্তরে আল্লাহর সেই ভয় থাকতে হবে। আপনাকে বোকা বানানোর সুযোগ কাউকে দিবেন না। সবসময় নিজেকে দোজখের আগুনের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নিজেকে আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিন। প্রতিটি দিন জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করুন। মৃত্যুর কথা স্মরণ করুন। এভাবেই আপনি দ্বীনের পথে নিজের অন্তরকে ঘুরিয়ে দিবেন। এভাবেই নিজেকে ধৈর্য ধরা শেখাবেন। আখিরাতে এগিয়ে আসছে। অতি সত্তর আমি সব ধরণের আনন্দ উপভোগ করবো। এই দুনিয়া আনন্দ ফুর্তির জন্য নয়। আনন্দ ফুর্তির সময় মৃত্যুর পরে ইনশাআল্লাহ। যদি নিজের অন্তরে এই অনুভূতি জাগ্রত করতে পারেন, আল্লাহর ওয়াদায় সত্যিই বিশ্বাস রাখেন, ওয়াল্লাহি! আপনার অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। আল্লাহর শপথ! আমরা ভিন্ন মানুষে পরিণত হবো। —শায়খ ওমর আল বান্না





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে