------------------------------------------------
নিজের পাপের কারণে আল্লাহর শাস্তির ভয় করবেন, কাঁদবেন, বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন কিন্তু কখনোই একদম হতাশ হয়ে যাবেন না। আশার আলোটা সবসময় অন্তরে প্রজ্বলিত রাখবেন। কারণ, আমাদের ধর্মে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার আশা থেকে একদম হতাশ হয়ে পড়ার অনুমতি নেই। আপনি যদি তাওবা করেন, অনুতপ্ত হোন, নিজেকে শুধরে নেন আপনিও জান্নাতের স্বপ্ন দেখতে পারেন।
খুবই বিস্ময়কর এবং চরম আশাব্যঞ্জক একটি ব্যাপার জানাচ্ছি। জানেন? মানব জাতির প্রতি আল্লাহর নাযিলকৃত সর্বশেষ শব্দ কী? আল্লাহর নাম তাউওয়াব। অর্থাৎ, যিনি বারবার তাওবা কবুল করেন। কুরআনের সমাপ্তি হয়েছে আল্লাহর নাম তাউওয়াব বলার মাধ্যেম।
এটা খুবই খুবই গভীর একটি ইঙ্গিত বহন করে। চিন্তা করে দেখুন। সর্বশেষ যে শব্দ আল্লাহ মানবজাতির প্রতি প্রেরণ করেছেন তা ছিল তাঁর নাম তাউওয়াব। আমরা কীভাবে এটা জানি? কারণ, সবার শেষে কোন সূরাটি নাযিল হয়? "ইজা জায়া নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ। ওয়া রাআইতান নাসা ইয়াদখুলুওনা ফিই দিই নিল্লাহি আফওয়াজা, ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস তাগফিরহু, ইন্নাহু কা-না তাউওয়াবা।"
এই সূরা নাযিল হওয়ার সপ্তাহ খানেক পর রাসূলুল্লাহ (স) ইন্তেকাল করেন। সর্বশেষ যে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় তা ছিল সূরা আন-নাসর। এরপর রাসূলুল্লাহ (স) মৃত্যুবরণ করেন।
এখন, চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ সর্বশেষ যে তথ্যটি আমাদের জানাতে চেয়েছেন তা হল, আমি সবসময় তাওবা কবুল করে থাকি। اِنَّہٗ کَانَ تَوَّابًا নিশ্চয়ই তিনি বার বার তাওবা কবুলকারী।
আবার কখনো চিন্তা করে দেখেছেন যে, আল্লাহর অধিকাংশ নাম ও গুণাবলী দয়া-মায়া এবং ক্ষমাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত? ব্যাপারটা নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন? আর-রাহমান, আর-রহিম, আর-হামুর রাহিমীন, আর-রউফ, আল-গাফুর, আল-গাফ্ফার, আত-তাউয়াব এরকম আরো অনেক নাম।
আল্লাহ আমাদের ফেরেশতা হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি। ফেরেশতারা তো ইতোমধ্যেই বর্তমান আছেন। আল্লাহ পাপ এবং পাপীকে পছন্দ করেন না। কিন্তু, আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন। "ওয়াল্লাহু ইউহিব্বুত তাওয়াবীন।" আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।
রাসূল (স) বলেছেন- তোমাদের কেউ যদি মরুভূমিতে পানির অভাবে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাও এবং এরপর পানির সন্ধান পাও। তখন তুমি যে পরিমাণে খুশি হও, আল্লাহ একজন তাওবাকারীর জন্য এরচেয়েও বেশি খুশি হোন। আক্ষরিক অর্থেই লোকটি ভেবেছিল সে মারা যাবে এরপর সে পানি পেলো। আল্লাহ একজন তাওবাকারীর জন্য এর চাইতেও বেশি খুশি হোন। আমাদের ধর্মে আশাবাদ বিষয়ক জ্ঞানের একটি শাখাই আছে।
যদি আপনার কঠিন কোনো পাপ থাকে, এমনকি যদি অভ্যাসগত পাপও থাকে, তাহলে আল্লাহর কাছে অভ্যাসগত তাওবাকারী হয়ে যান। বার বার, প্রতিবার আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন। (আল্লাহর কাছে মাফ চান, নামাজ পড়ুন)
আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা পারফেকশন দাবি করেন না। আপনার পক্ষে পারফেক্ট হওয়া সম্ভব হবে না।
আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আপনার পাপের পরিমাণের দিকে তাকান না। তিনি দেখেন আপনার তাওবাটা কেমন কোয়ালিটি সম্পন্ন। যদি আবারো পাপে জড়িয়ে পড়েন আবার তাওবা করুন। আবার করলে আবার তাওবা করুন। এভাবে যতক্ষণ না আল্লাহর সাথে আপনার সাক্ষাৎ হচ্ছে। এ সংগ্রামের মাঝেই আপনার মুক্তি।
হ্যাঁ, আদর্শ অবস্থা হলো সকল কবিরা গুনাহ বর্জন করা। হ্যাঁ, আদর্শ অবস্থা হলো কোনো অভ্যাসগত পাপ না থাকা। আর সেটা হলো সৎকর্মশীলদের অবস্থা। সৎকর্মশীল, আওলিয়া, আম্বিয়া তারা কবিরা গুনাহ করেন না। এবং তাদের অভ্যাসগত কোনো পাপও নেই।
কিন্তু, আপনি যদি সে অবস্থায় পৌঁছতে সক্ষম না হোন, আপনার অভ্যাসগত পাপ আছে, আপনার যদি কবিরা গুনাহ করার অভ্যাস থাকে— সকল ধর্ম কর্ম বাদ দিয়ে নিজেকে ব্যর্থ হিসেবে মেনে নিবেন না। তথাপি, চেষ্টা করুন; ভালো হতে চেষ্টা চালিয়ে যান।
এ চেষ্টার মাঝেই আপনার মুক্তি।
- শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন