নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীল
যখন বিশাল কিছু হয়, তার জন্য প্রস্তুতিটাও হয় বড় আকারের। কত যে আয়াতে, কত যে সূরায় আল্লাহ তাআলা হাশরের দিনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেছেন...শিঙ্গার আওয়াজ থেকে শুরু করে, আকাশ ছিঁড়ে ফেলা, চন্দ্র সূর্যের ধ্বংস হওয়া, পাহাড়গুলো তুলোর মতো উড়তে থাকা, সাগরগুলোকে বিস্ফোরিত করা, ফেরেশতাদের সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া, আল্লাহর সিংহাসনের আগমন, জান্নাত এবং জাহান্নাম কে নিয়ে আসা—এই যে এতো বিশাল আয়োজন, কোন সেই বৃহৎ ইভেন্টের জন্য? কখনো অন্তর দিয়ে তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন? শুধু আমার কৃত কর্মগুলো হিসাবের জন্য, শুধু আপনার কৃত কর্মগুলো হিসাবের জন্য। আল্লাহর কাছে আমাদের কর্মগুলো এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ!! অথচ আমরা মনে করি আমাদের কৃত কর্মগুলো ছোটখাটো বিষয়। এই জগতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো বড় কিছুর দিকে নিয়ে যায়। আর বিচার দিবসে কী হবে? সেদিন বিশাল বিশাল ব্যাপারগুলো ঘটবে আমার আপনার একেবারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমলগুলোর হিসাব নিকাশের জন্য। তাই, আমাদের মুখ থেকে নির্গত হওয়া কোনো শব্দকে আমরা ছোটো করে দেখি না। আমাদের কৃত কাজগুলোকেও আমরা হালকাভাবে দেখি না। আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজগুলো আল্লাহর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এজন্য আমাদের দুই কাঁধে তিনি দুইজন ফেরেশতা রেখেছেন যারা আমাদের ২৪ ঘন্টার কাজকর্মগুলো লিপিবদ্ধ করছেন। আমাদের আমলগুলো—কাউকে দেখে একটু মুচকি করে হাসা, রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক তিনি জিনিস সরিয়ে দেওয়া, একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানো থেকে শুরু করে এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজগুলোও আল্লাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বড় বড় আমলগুলো—পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, পিতা-মাতার খেদমত করা, গরীব-দুঃখীদের দান করা, মুসলিম উম্মার কল্যাণে কিছু করা, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া, ফরজ রোজা এবং নফল রোজা রাখা, মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করা, গীবত অশ্লীলতা পরিহার করা, টাকা-পয়সা উপার্জন এবং ব্যয় উভয় ক্ষেত্রে সততা ধরে রাখা, নিজের জিহ্বাকে সর্বক্ষণ আল্লাহর জিকিরে মগ্ন রাখা...এই কাজগুলো যে আল্লাহর কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই আমলগুলোর কারণে তিনি আপনাকে অসংখ্য অগণিত পুরস্কার দান করবেন। তিনি আমাদের জন্যই তৈরি করেছেন অসংখ্য নেয়ামতে পরিপূর্ণ চিরস্থায়ী জান্নাত। আমরা যদি একটু প্রচেষ্টা দেখাতে পারি তিনি আমাদের অগণিত পাপ ক্ষমা করে দিতে রাজি। এছাড়া আরো রয়েছে মহা এক পুরুষ্কার! তাঁকে দেখার সৌভাগ্য! তাই নিজের আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হোন। প্রতিদিন জান্নাতের কথা স্মরণে আনুন। প্রতিদিন বিচারের সম্মুখীন হওয়ার কথা মাথায় রাখুন। প্রতিদিন জাহান্নামের ভয় অন্তরে পোষণ করুন। যদি আমরা এগুলো করতে পারি, ইনশাআল্লাহ আল-গাফুর (অতি ক্ষমাশীল) আমাদের অগণিত পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আস-শাকুর (চরম গুণগ্রাহী) আমাদের অতি নগণ্য আমলগুলোর বিনিময়ে আমাদেরকে মহা পুরস্কার দিয়ে ধন্য করবেন। কারণ এই সমগ্র আয়োজনটা তিনি করেছেন এজন্যই, আমাদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য, আমাদের জান্নাত দেয়ার জন্য, যদি আমরা শুধু একটু প্রচেষ্টা দেখাই। আমরা তখন বলতে পারব—الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ ۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ—সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের থেকে সকল দুঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। (৩৫:৩৪) আর যদি আমরা আল্লাহর অনুগত না হই, আল্লাহর কথা না শুনি, তাহলে অবাধ্যদের জন্যও তিনি একটি ঠিকানা ঠিক করে রেখেছেন। আগুনে পোড়ার আজাব। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা ওই জায়গায় যেতে চাই না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন