তারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে আছে
সূরা কাফ পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন— بَلۡ كَذَّبُوۡا بِالۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمۡ فَهُمۡ فِیۡۤ اَمۡرٍ مَّرِیۡجٍ -"তাদের কাছে সত্য আসার পর তারা তা অস্বীকার করেছে, কাজেই এখন তারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে আছে।" এখানে মারিজ শব্দের অর্থ সংশয়। এর আরেকটি অর্থ হলো disturbance. বিরক্তিকর অবস্থা, অস্থির অবস্থা, অশান্তি। আপনি হয়তো ভাবছেন, তারা তো মন যা চায় তাই করতে পারে। তাদেরকে তো কোন বিধি-নিষেধ মানতে হয় না। আর এটা তো তাদেরকে সুখী করার কথা। তারা কেন অস্থির অবস্থায় থাকবে? জানেন কী হয় তখন, যখন আপনার মন যা চায় তাই করতে পারেন? ডিস্টারবেন্স। অস্থিরতা। যখন আপনার সামনে অনেকগুলো চয়েস থাকে, অনেকগুলো বিকল্প থাকে—এটা ভালো জিনিস না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আপনাদের অনেকের বাসায় টিভি আছে, ডিস এন্টেনার কানেকশন আছে, হয়তো কয়েকশো চ্যানেল আছে। রিমোটটা হাতে নিয়ে মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা কী করে? একটার পর একটা চ্যানেল খালি পাল্টাতে থাকেন, আচ্ছা এখানে কিছু দেখি, না ওইখানে মনে হয় আরও ভালো কিছু হচ্ছে, কিছুক্ষণ খেলা দেখি, না একটা মুভি দেখি... না দেখি ওই চ্যানেলে কি হচ্ছে—এভাবে কয়েক ঘন্টা পার হয়ে যায়। আপনি আসলে কিছুই দেখতে পারেননি। এর নাম মারাজ। অস্থিরতা। কিন্তু যদি আপনার একটি goal থাকে, একটি উদ্দেশ্য থাকে—আপনি শুধু একটা বিষয় নিয়ে ফোকাসড থাকেন। এটা তখন আপনাকে প্রশান্তি দেয়। আপনাকে মানসিক পরিপূর্ণতা দেয়। শান্তি দেয়। অন্তরটাকে সন্তুষ্টিতে পূর্ণ করে তোলে। আপনি যদি ইসলাম অনুসরণ করেন, সত্য মেনে চলেন তখন আপনার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। দৈনিক সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ আছে। নির্ধারিত সীমানা আছে এর বাইরে আপনি যেতে পারবেন না। আপনি তখন ফোকাসড থাকতে পারেন। জান্নাত আমার লক্ষ্য, আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হবে। আমাকে আমার রবের সন্তুষ্টির পথে থাকতে হবে। আমি কিয়ামতের দিন অপমানিত হতে চাই না। আমার হাতে বেশি সময় নেই, আমি যত বেশি সম্ভব ভালো কাজ করে যেতে চাই। এভাবে আপনার মন মানসিকতা কাজকর্ম সবকিছু একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ফোকাসড থাকে। তখন মনে একটি প্রশান্তি বিরাজ করে। অস্থিরতা থাকে না। আল্লাহ বলছেন সত্য অস্বীকারকারীরা এটা চায় না। তারা মারিজ অবস্থায় থাকে। তারা ভাবে, ফ্রি হয়ে যা ইচ্ছা তা-ই করার মাঝে শান্তি আছে। কিন্তু তারা শান্তি পায় না। জানেন? কোন জায়গায় আমরা ফ্রি হয়েও প্রশান্তি পাব? সেটা জান্নাতে। জান্নাতে আমাদের মন যা চায় আমরা তাই করতে পারব, আর তাতে আমরা পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাবো, পরিপূর্ণ প্রশান্তি পাবো। কারণ আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে ওইভাবে ডিজাইন করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—وَ لَكُمۡ فِیۡهَا مَا تَشۡتَهِیۡۤ اَنۡفُسُكُمۡ وَ لَكُمۡ فِیۡهَا مَا تَدَّعُوۡنَ—"সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা দাবী করবে।" (৪১:৩১) আর সূরা কাফে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের জীবন সম্পর্কে বলেন—فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ – সে এমন এক জীবন অতিবাহিত করবে যেখানে প্রত্যেকটি জিনিস, একদম সবকিছু তাকে আনন্দিত করবে। আল্লাহ জান্নাতের জীবনটাকে যে কতটা মুবালাগা সহকারে বর্ণনা করেছেন, কতটা অতিরঞ্জন সহকারে বর্ণনা করেছেন…তিনি বলেনেনি মানুষটা সুখী হবে। বরং তিনি বলেছেন--জীবনটা নিজেই তৃপ্তিকর হবে। তিনি বলেননি, فَهُوَ رَاضِِ فِيْ عِيْشَةِ الْجَنَّةْ - ফাহুয়া রা-দিন ফিই 'ইইশাতিল জান্নাহ, সে জান্নাতের জীবনে পরিতৃপ্ত হবে। বরং তিনি বলেছেন, ফাহুয়া ফিই ইইশাতিন রাদিয়া। যা খুবই অদ্ভুত ধরণের اِسْتِعَارَةْ - ইস্তি’আরাহ। যা ইঙ্গিত করছে জান্নাতের প্রতিটি অংশ, জান্নাতের প্রতিটি অভিজ্ঞতা আপনাকে একেবারে সম্পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত করে দিবে। সম্পূর্ণরূপে সুখী করে দিবে। প্রতিবার শতভাগ তৃপ্তি এনে দিবে। পক্ষান্তরে, দুনিয়াকে কিন্তু এভাবে ডিজাইন করা হয়নি। দুনিয়াতে আপনি মন মত চললে, আল্লাহর বিধি নিষেধের পরোয়া না করলে—অবশ্য অবশ্যই ঝামেলায় পড়বেন। শয়তান আপনাকে প্রতারিত করে বলবে, মন যা চায় তাই কর, তুমি মজা পাবে। কিন্তু এই সামান্য মজার সাথে হাজারো রকমের ঝামেলা আপনাকে জড়িয়ে ধরবে, মানসিক অস্থিরতা তৈরি হবে, কখনোই শতভাগ তৃপ্তি পাবেন না। তাহলে কেন ইসলামের সীমার ভিতরে থাকবেন না? শরীয়তের সীমার ভিতরে থাকুন। দুনিয়াতে প্রশান্তির জীবন যাপন করুন, আর অনন্তকালের শতভাগ তৃপ্তির জীবন, শতভাগ আনন্দের জীবন, সম্পূর্ণ মুক্ত এক জীবন আপনার অপেক্ষায় আছে। —নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন