"তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে?"

 


দুনিয়াতে যেহেতু ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না, তাহলে তোমরা কিভাবে বিচার দিবসকে অস্বীকার করো? আর আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা অন্যায় অবিচারকে বিনা শাস্তিতে পার পেতে দিবেন না। তাই, কুরআন বিচার দিবসের অস্তিত্বের স্বপক্ষে এভাবে নৈতিক যুক্তি তুলে ধরে।

আল্লাহ কুরআনে বলেন - أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ - "যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে কি আমি ওদের মত করব যারা দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে? আমি মুত্তাক্বীদের কি অপরাধীদের মত গণ্য করব?" (৩৮:২৮) যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে কি আমি ওদের মত করব যারা দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে? যারা দুনিয়াতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, যারা গণহত্যা চালায়, যে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক? তোমরা কি মনে করো যে নির্যাতন চালায় আর যারা নির্যাতিত হয় উভয়ের ফলাফল সমান হবে? অন্য আয়াতে বলেন - سَوَاءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ - "তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে?" سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ - কতই না মন্দ তাদের ফয়সালা! (৪৫: ২১) কতই না মন্দ তাদের ফয়সালা! তোমরা কি মনে করো একজন গণহত্যাকারীর কিছুই হবে না, সে পার পেয়ে যাবে? এই দুনিয়াতে যদি তার বিচারও হয় তাকে শুধু একবারই মৃত্যু দন্ড দয়া যাবে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার তুলনায় এই শাস্তি তো কিছুই না। ২০-৩০ বছরের জেল খাটার কাছে একটি দেশ ধ্বংস করে দেয়ার কি কোনো তুলনা হয়? বহু নৃশংস স্বৈরশাসক যা করেছে। তাই, আল্লাহ বলেছেন তোমাদের কী হল? তোমরা কিভাবে বিচার দিবসকে অস্বীকার কর? আল্লাহ বলছেন - أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ - "তবে কি আমি মুসলিমদেরকে (অনুগতদেরকে) অবাধ্যদের মতই গণ্য করব?" مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ - "তোমাদের কী হল? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?" (৬৮: ৩৫-৩৬) আল্লাহ মানুষকে চিন্তা করতে বলছেন, মাথা খাটাতে বলছেন। তোমরা কি মনে করো একজন ভালো মানুষ এবং একজন খারাপ মানুষ জীবন যাপন করবে তারপর মরে যাবে, তাদের কিছুই হবে না? এটা তো ন্যায়ানুগ নয়। তাই, আল্লাহ পরকাল অস্বীকারকারীদের বলছেন - سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ - কতই না মন্দ তাদের ফয়সালা! (৪৫: ২১) مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ - "তোমাদের কী হল? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?" (৬৮: ৩৫-৩৬) পৃথিবীর নৈতিক বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে কিভাবে তোমরা এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছ! কিভাবে তোমরা রায় দিচ্ছ যে কোনো বিচার দিবস নেই! এমন একটি জায়গা থাকতে হবে যেখানে নিখুঁত ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে। যে ভালো কাজ করে বা খারাপ কাজ করে, তার কাজের জন্য সে পুরস্কার বা শাস্তি পাবে। - ইয়াসির কাদি যেসব মুসলমানদের নির্যাতন করা হচ্ছে তারা যেন কক্ষনো এমন ধারণা না করে যে, তাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ করা হচ্ছে কোনোদিন তার কোনো শাস্তি হবে না। আল্লাহ একদিকে নির্যাতিত মুসলমানদের বলেন ধৈর্য ধারণ করো। কিন্তু, প্রশ্ন হলো ওদের কি কিছু হবে না? তারা যে আমাদের উপর এভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে। আমাদের নারী শিশুদের গণহারে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের মসজিদগুলো, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বোমা মেরে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এই জুলুমবাজদের কি কোনই শাস্তি হবে না? যদি জানতে পারতাম তাদের কী হবে তাহলে এটা আমাকে ধৈর্য ধরতে সহায়তা করবে। ১৪ নাম্বার সূরা, সূরা ইব্রাহিমের শেষ অংশ আল্লাহ এর জবাব দিয়েছেন। সূরা ইব্রাহিমের এই শেষ অংশে আল্লাহ বলেন- "যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কক্ষনো উদাসীন মনে কর না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে। কাজেই মানুষকে সতর্ক কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর ‘আযাব আসবে। যারা যুলম করেছিল তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব আর রসূলদের কথা মেনে চলব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে, তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না? অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও তাদের ষড়যন্ত্র এমন ছিল যা দ্বারা পাহাড়ও অপসারিত হয়ে যায়। (অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলগণকে দেয়া ওয়া‘দা খেলাপ করবেন, আল্লাহ মহা প্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী। যেদিন এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে), আর মানুষ সমুস্থাপিত হবে এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সম্মুখে। সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শিকলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন করবে। (এটা করা হবে এজন্য) যাতে আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দিতে পারেন। আল্লাহ তো হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। এটা মানুষদের জন্য একটা বার্তা যার দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে। যাতে তারা জানতে পারে যে, তিনি এক ইলাহ আর যাতে বুদ্ধিমান মানুষেরা উপদেশ লাভ করে।" ১৪:৪২-৫২ - নোমান আলী খানের বক্তব্য থেকে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

দিরিলিসের আরতুগ্রুলের সকল পর্ব কিভাবে দেখবেন?

❝সূরা হুজুরাত❞