পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ঈমানদারদের সালাত

ছবি
  সুরাতুল মু'মিনুনের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিয়েছেন। একটি বৈশিষ্ট্য হলো— তারা তাদের নামাজে খুশু বজায় রাখে। এখানে একটি ব্যাপার লক্ষ্য করুন। আল্লাহ খুশু বর্ণনা করতে ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেননি। তিনি নাউন বা বিশেষ্য ব্যবহার করেছেন। নাউন দ্বারা কী বুঝানো হয়? স্থায়িত্ব। তারা তাদের ঈমানের ক্ষেত্রে এমন একটি পরিপক্কতায় পৌঁছে গেছে যে, প্রতিবারই যখনি তারা নামাজ আদায় করে, তখন খুশু সেই নামাজের একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হয়। এখন, আমার আপনার জন্য হয়তো আমাদের নামাজের সমগ্র সময়টাতে ওযু একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য, কিবলার দিকে মুখ করে থাকাটা একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য। সম্ভবত খুশু একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য নয়। আমার প্রতিটি নামাজে। এখন চলুন, খুশু কী তা জানার চেষ্টা করি। আরবি 'খাসাআ'—যেখান থেকে খুশু শব্দটি এসেছে—মানে, যখন আপনি এতটাই ভীত হয়ে পড়েন, যে ভয় আপনাকে এতোটাই অভিভূত করে ফেলে যে, আপনার পেশীগুলো অসাড় হয়ে পড়ে। একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টা বুঝি। মনে করুন, কেউ একজন একদিকে তাকিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে আর সে বুঝতে পারেনি যে, অন্যদিক থেকে দ্রুত গতিতে একটি ট্রাক তার দিকে ছুটে আসছে...

আপনার জীবনটা যদি এমন হয়

ছবি
  আপনার জীবনটা যদি এমন হয়—প্রচুর পাপ করেন তবু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে প্রচুর নেয়ামত দান করে যাচ্ছেন, তবে সাবধান হোন! এটা খুবই আতঙ্কজনক। আপনার রবের অবাধ্যতা এবং পাপ করা সত্ত্বেও যদি তাঁর কাছ থেকে শুধু নেয়ামতের পর নেয়ামত পেয়ে থাকেন, এটা মোটেও ভালো সাইন নয়। এর মানে হলো, আল্লাহ আপনার উপর সন্তুষ্ট নন। তিনি আপনাকে আপনার অবাধ্যতার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। যত খুশি পাপ করুন। আর যত বেশি পাপ করবেন তত বেশি শাস্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ মানুষকে তার কৃত পাপ অনুপাতে শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু যদি এমন হয়—আপনি তাঁর বাধ্য, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন তবু তাঁর কাছ থেকে তেমন কোনো অনুগ্রহ পাচ্ছেন না, এটা একটা ভালো সাইন। কারণ, তিনি চান আপনি যেন অহংকারী হয়ে না পড়েন। তাঁর আনুগত্য করতে থাকুন। যখন কোনো বিপদ-আপদ বা দুঃখ-দুর্দশা আসবে, তিনি আপনার পুরস্কার আরো বৃদ্ধি করতে থাকবেন এবং আপনার পাপগুলো মুছে দিতে থাকবেন। কিন্তু মিথ্যা, ছলচাতুরি, প্রতারণা, চুরি, সবধরণের অপকর্ম সত্ত্বেও যদি দেখেন আল্লাহর কাছ থেকে শুধু ধন-সম্পদ পেয়ে যাচ্ছেন, অনুগ্রহ পেয়ে যাচ্ছেন— ব্যাপারটা খুবই ভয়ঙ্কর। এর মানে তিনি আপনাকে ছাড়...

ইসলামের 'দ্ব্বীন' বনাম 'ইনসাফ'

ছবি
  ⚖️ "আমার নিজেরই বুঝতে কষ্ট হতো!" - ইসলামের 'দ্ব্বীন' বনাম 'ইনসাফ' - নোমান আলী খানের উপলব্ধি ইসলামের ইতিহাস, বিশেষ করে সাহাবাদের বিজয়ের প্রেক্ষাপট বোঝা বেশ জটিল। অনেক আলেমই এটাকে সরল ব্যাখ্যার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতে প্রায়ই আরও বিভ্রান্তি বাড়ে। ওস্তাদ নোমান আলী খান নিজেই এই ভাষ্যে স্বীকার করেছেন যে, এই বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে পড়াশুনা করেছেন কোনো ধারণায় পৌঁছাতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, "এই ইতিহাসটাকে সহজ-সরলভাবে বোঝানোর জন্য সবাই একটা সরলরেখা টানার চেষ্টা করে। আসল সত্য হলো, এটা জটিল।" তিনি জানান, এই বিষয়ে ড. জুলফিকারের একটি বিশ্লেষণ তাকে গভীরভাবে সাহায্য করেছে, যা পুরো চিত্রটি পরিষ্কার করে দেয়। সেই বিশ্লেষণটি কী? তা হলো ইসলামের দুটি ধারণাকে আলাদা করে বোঝা: ১. ইসলামের 'দ্ব্বীন' (Religion): এটা হলো আমাদের ব্যক্তিগত ইবাদত। যেমন: - নামাজ পড়া 🕌 - রোজা রাখা 🌙 - শুকরের মাংস বা অ্যালকোহল বর্জন করা। এই 'দ্ব্বীন' বা ধর্মীয় আচারগুলো কাদের জন্য? এগুলো একচেটিয়াভাবে মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। ২. ইসলামের 'ইনসাফ' (Justic...

আপনার আমলই আপনার মুক্তি

ছবি
  আপনার আমলই আপনার মুক্তি || Your Actions, Your Salvation ------------------------------------------------------ জান্নাতকে আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু জান্নাত পাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলোকে অনাকর্ষণীয় করে ডিজাইন করা হয়েছে। আবার জাহান্নামকে অনাকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যে কাজগুলো মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে সেগুলোকে আকর্ষণীয় করে ডিজাইন করা হয়েছে। যেটা আমরা জিব্রাইল (আ)কে জান্নাত জাহান্নাম দেখানোর হাদিস থেকে জানি। মানুষের দুনিয়াবী কাজগুলোই শেষ পর্যন্ত হয় জান্নাতের নেয়ামত অথবা জাহান্নামের শাস্তিতে পরিণত হবে। এ আয়াতগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। وَذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡخُلۡدِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ‏ - তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করতে থাক, তোমরা যা করতে তার জন্য। (৩২:১৪) وَتِلۡكَ الۡجَنَّةُ الَّتِىۡۤ اُوۡرِثۡتُمُوۡهَا بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ‏ - এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কর্মের ফল স্বরূপ। (৪৩:৭২) كُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا هَـنِٓـيـْئًا ۢ بِمَا كُنۡـتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَۙ‏ - "তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানা...

রোমান ব্যবসায়ীর ইসলাম গ্রহণ

ছবি
  একদিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) মসজিদে নববিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ এক রোমান ব্যবসায়ী এসে ঠিক তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ’। ওমর ফারুক (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, কী হলো তোমার?’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলমান হয়েছি।’ ওমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার ইসলাম গ্রহণের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! আমি তাওরাত, বাইবেল, জাবুরসহ আগের নবীদের অনেক কিতাব পড়েছি। সম্প্রতি একজন মুসলিম বন্দী কোরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন। তা শুনে আমি বুঝতে পারলাম যে, এই ছোট্ট একটি আয়াতে সব প্রাচীন কিতাবের সারবস্তু চলে এসেছে। নিশ্চিত হলাম যে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। বলা যায় আয়াতের বরকতেই ইসলাম গ্রহণ করেছি।’ওমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন আয়াত সেটি?’ রোমান ব্যবসায়ী আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে সাবধান থাকে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৫২) আয়াতটি পড়ার পর রোমান ব্যবসায়ী আয়াতের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যে বিষয়টি তার মনে দারুণভাবে রেখাপ...

ইসলামে বন্ধুত্বের গুরুত্ব কতটা

ছবি
  স্বভাবতই আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তা আমরা অন্তর্মুখী হই বা বহির্মুখী। বন্ধুত্ব আমাদের ঈমান, জীবনের পরীক্ষা মোকাবিলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোরআন ও হাদিসে বন্ধুত্বের গুরুত্ব এবং ভালো বন্ধু নির্বাচনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০) ইসলামে বন্ধুত্বের মাত্রা ইসলামে বন্ধুত্ব কেবল একটি সামাজিক সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। তাই তোমরা কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছ, তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪,৮৩৩) অর্থাৎ, ভালো বন্ধু নির্বাচন আমাদের ঈমান ও জীবনধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। তাকওয়া বা আল্লাহভীতিসম্পন্ন বন্ধু আমাদের আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যতটা সম্ভব সত্যিকারের বন্ধু তৈরি করো। কারণ, তারা সুখের সময়ে সঙ্গী এবং দুঃখের সময়ে আশ্রয়।’ (নাহজুল বালাগাহ...

ইসলাম সহজ, কঠিন করবেন না

ছবি
  ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য মধ্যপন্থা। কোরআন স্পষ্টভাবে বলছে, ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসুল সাক্ষী হন তোমাদের ওপর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৩) আরবি শব্দ ‘ওসাত’ কয়েকটিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এর মানে হলো ন্যায়পরায়ণ, সঠিক, মধ্যপন্থী, পরিমিত ও শ্রেষ্ঠ। এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে যে মুসলিমদের বিশ্বাস হলো যে আল্লাহ তাদেরকে একটি পরিমিত এবং মধ্যপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছেন, যাতে তারা মানবতার জন্য একটি আদর্শ (সাক্ষী) হতে পারে। তাহলে ইসলামে মধ্যপন্থা আসলে কেমন? তিনজন ব্যক্তি নবীজি (সা.)–এর স্ত্রীর কাছে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে তারা রাতভর নামাজ পড়বেন, প্রতিদিন রোজা রাখবেন অথবা বিয়ে করবেন না। তখন নবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের মধ্যে আমি তাঁকে সবচেয়ে ভালো জানি; আমি প্রতিদিন রোজা রাখি না, রাতভর নামাজ পড়ি না এবং আমি স্ত্রীসঙ্গ গ্রহণ করি; যে আমার পথ অনুসরণ করতে চায় না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৬৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৪০১)নবীজ...

নবীজির মসজিদে শিশুদের অপূর্ব অধিকার

ছবি
  নবীজি (সা.)-এর মসজিদ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে যেমন পুরুষেরা যেতেন, তেমনি যেতেন নারী ও শিশুরাও। তারা নবীজির পেছনে নামাজ আদায় করতেন, বক্তৃতা শুনতেন এবং ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা করতেন। সাহাবিরা তাঁদের শিশুদের নিয়ে মসজিদে যেতেন। নবীজি (সা.) স্বয়ং তার দৌহিত্রদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে গিয়েছেন। পাশে রেখে নামাজ আদায় করেছেন, কখনও কাঁধে তুলে নিয়েছেন। শিশুদের কাতার নির্ধারণ মসজিদে নববিতে পুরুষের জন্য যেমন কাতার ছিল, তেমনি ছিল নারী ও শিশুদের কাতার। পুরুষদের কাতার ছিল সর্বাগ্রে, তাদের পেছনে শিশুদের এবং সর্বশেষ ছিল নারীদের কাতার। মসজিদে নববিতে পুরুষের জন্য যেমন কাতার ছিল, তেমনি ছিল নারী ও শিশুদের কাতার। পুরুষদের কাতার ছিল সর্বাগ্রে, তাদের পেছনে শিশুদের এবং সর্বশেষ ছিল নারীদের কাতার। আবু মালিক আশয়ারি (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) চার রাকাত নামাজের মধ্যে কিরাত ও কিয়ামের (দাঁড়ানোর) ক্ষেত্রে সমতা রাখতেন। তবে প্রথম রাকাত একটু লম্বা করতেন যাতে বেশি মানুষ নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। পুরুষদের বালকদের আগে দাঁড় করাতেন, আর বালকদের তাদের পেছনে দা...

নবীজির (সা.) আচরণ পরীক্ষা

ছবি
  একবার এক লোক হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, ‘নবীজি (সা.)–এর আখলাক (চরিত্র) কেমন ছিল?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁর আখলাক ছিল কোরআন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫,৮১৩) অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে যেমন বলা হয়েছে, তাঁর আচার-ব্যবহার ঠিক তেমনই ছিল। আর পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সুরা কলম, আয়াত: ৪) কিন্তু এখন আমরা যে গল্পটা পড়ব, এই গল্পটা বলেছেন এক ইহুদি। যিনি পরে নবীজি (সা.)–এর আচরণ দেখে ইসলাম গ্রহণ না করে পারেননি, আল্লাহ তাঁকে হেদায়েত দিয়ে ধন্য করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইহুদিধর্মের একজন মস্ত বড় আলেম। তাঁদের ভাষায় যাকে বলে ‘রাবাই’। নবীজি (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন, তিনি তাঁকে দেখতে যান। তাঁর নাম জায়িদ ইবনে সা’নাহ। তিনি ছিলেন ইহুদিধর্মের একজন মস্ত বড় আলেম। তাঁদের ভাষায় যাকে বলে ‘রাবাই’। নবীজি (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন, তিনি তাঁকে দেখতে যান। অবাক হয়ে দেখেন—ইহুদিধর্মের কিতাবে একজন নবীর যেসব গুণ লেখা আছে, সবই নবীজি (সা.)-এর মধ্যে আছে। তবে দুটো গুণ দেখা সম্ভব হয়নি। সেই দুটো গুণ হলো: তিনি রাগ উঠলে নিজে সংযত করবেন। কেউ মূর্খের মতো আচরণ করলে তিনি ধৈর্য ধরব...

মুসলিম বিবাহে ‘কুফু’ অর্থ কী

ছবি
  ‘কুফু’ আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো সমমর্যাদা, সমপর্যায়ের ব্যক্তি বা যোগ্য সঙ্গী। ইসলামি শরিয়তের ভাষায়, বিবাহে উভয় পক্ষের সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক সামঞ্জস্য বোঝাতে ‘কুফু’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ইসলামে বিবাহ শুধু আকস্মিক বন্ধন নয়—এটি একধরনের মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সামঞ্জস্যের সম্পর্ক, যেখানে উভয়ের বিশ্বাস, চরিত্র এবং জীবনযাপনের ভিত্তি কাছাকাছি হওয়া কাম্য। (ইবনে মানজুর,  লিসানুল আরব , ৯/৮০, দারুস সদর, বৈরুত, ১৯৯০) কোরআনে কুফু কোরআনে সরাসরি ‘কুফু’ শব্দটি এসেছে সুরা ইখলাসে, ‘ওয়ালাম ইয়াকুন লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’ অর্থ: ‘তাঁর সমতুল্য (কুফু) কেউ নেই।’ (সুরা ইখলাস, আয়াত: ৪) এখানে ‘কুফু’ শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে, আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই, অর্থাৎ তিনি তুলনাহীন। তবে সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয় সমতার অর্থে, যেমন ধর্ম, বংশ, চরিত্র, পেশা ও আর্থিক অবস্থায় মিল থাকা। নারীকে চার কারণে বিবাহ করা হয় তার সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য এবং ধর্ম; তুমি ধর্মভীরু নারীকে বেছে নাও, তুমি সফল হবে। সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৯০ ইসলামি শরিয়তে কুফু ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, কুফু মূলত বিবাহে সমমর্যাদা বজায় র...

কালিজিরা খেতে কেন বলেছেন নবীজি (সা.)

ছবি
  নবীজির (সা.) হাদিসে কালিজিরাকে বলা হয়েছে ‘সব রোগের ওষুধ’। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম Nigella sativa, আরবিতে হাব্বাতুস সাওদা (الحَبَّةُ السَّوْدَاءُ)। এটি একাধারে খাদ্য, ওষুধ ও প্রতিষেধক। নবীজির বাণী আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কালিজিরা খাও, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২১৫) যদিও কোরআনে সরাসরি কালিজিরার নাম উল্লেখ নেই, তবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি রোগের জন্য নিরাময় সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮০) প্রাকৃতিক উপাদানে আল্লাহ নিরাময়ের গুণ রেখেছেন, কালিজিরা সেই নিরাময়ের এক অনন্য উদাহরণ। নবীজির (সা.) খাদ্যাভ্যাসে কালিজিরার স্থান নবীজি (সা.) সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তিনি খেজুর, যব, মধু, দুধ, কালিজিরা ও অলিভ তেল নিয়মিত ব্যবহার করতেন। কালিজিরা ছিল তাঁর ঘরোয়া চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, কালিজিরায় মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮) এই হাদিসে ‘মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য’ কথাটি বোঝায়...

দারিদ্র্যের ক্ষতিকর প্রভাব, ইসলামের সমাধান

ছবি
  দারিদ্র্য বলতে যদিও পকেট শূন্য থাকা বোঝায়, কিন্তু এটা জীবনের মান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুখের ওপরও গভীর ছাপ ফেলে। ইসলামি পরিভাষায় দারিদ্র্যকে বলা হয়, যার কাছে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বা উপার্জন নেই। কিন্তু এই দারিদ্র্য কীভাবে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে? এটি কি শৈশব থেকেই শুরু হয়? এটি কি মানুষের মস্তিষ্কের ওপরও প্রভাব ফেলে? ইসলাম এ সমস্যার সমাধান কীভাবে দিয়েছে? আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজব। দারিদ্র্যের প্রভাব বহুমুখী। দরিদ্র পরিবারে জন্মানো শিশুরা স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি ভোগে। তাদের জন্মের সময় ওজন কম হয়, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। দারিদ্র্য: স্থায়ী গুণ নাকি অবস্থা দারিদ্র্য কোনো স্থায়ী বিষয় নয়; বরং এটি একটি অবস্থা, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে দারিদ্র্য হলো জীবনযাত্রার মান এমন একটি পর্যায়ে নেমে যাওয়া, যেখানে মৌলিক চাহিদা, যেমন খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, পোশাক, শিক্ষা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিকভাবে চরম দারিদ্র্য বলা হয়, যখন কেউ দিনে এক ডলারের কম আয় করেন। এটি পরিবারের আয়ের ওপর নির্ভর করে, যা পরিবা...