সামাজিক নিরাপত্তায় প্রয়োজন ‘তাকওয়া’

 


তাকওয়া অর্থ আল্লাহভীতি, আত্মসংযম ও সৎপথ অনুসরণ করা। ইসলামি পরিভাষায় তাকওয়া হলো আল্লাহকে ভয় করে তাঁর আদেশ মেনে চলা এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা। এটি একজন মানুষের অন্তরের একটি অবস্থা, যা তাকে ন্যায়পরায়ণতা, সংযম ও ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।

‘তাকওয়া’ শব্দের মূল অর্থের মধ্যে সতর্কতা, সাবধানতা ও আত্মরক্ষাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি মূলত ‘ওয়াক্বা’ ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘রক্ষা করা’ বা ‘বাঁচানো’। তাই তাকওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আল্লাহর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করা এবং গুনাহ থেকে সাবধান থাকা।

কলব বা অন্তরের রোজা হলো তাকওয়া। পবিত্র রমজানে রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় রোজাদার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সব ধরনের বৈধ পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকেন। নির্জন নিরালায়, দরজা–জানালা বন্ধ ঘরে, গোপন স্থানে ও পানাহার তথা রোজার বিপরীত কোনো কাজ করেন না। এর মধ্য দিয়ে মুমিন জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করেন।

আর গুনাহ বর্জনের জন্য মানসিক দৃঢ়তা ও মনোবল অর্জনই রোজার বাস্তব শিক্ষা তথা তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।

মুমিনের জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইখলাস ও তাকওয়া সফলতার অবলম্বন। তাকওয়া হলো আল্লাহর অসন্তোষের ভয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যারা ইমান এনেছ, তারা তাকওয়া অর্জন করো।’ (সুরা–৩৩ আহযাব, আয়াত: ৭০)। ‘যারা ইমান আনল এবং তাকওয়া অর্জন করল, তারা আল্লাহর বন্ধু; তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা–১০ ইউনুস, আয়াত: ৬২)

মুত্তাকি অর্থ পরহেজগার, সতর্ক, সচেতন বা তাকওয়াবান ব্যক্তি, যার বহুবচন হলো মুত্তাকুন ও মুত্তাকিন। তাকওয়া শব্দের একটি প্রতিশব্দ হলো ‘খওফ’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তার রবের সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে দুটি করে জান্নাত।’ (সুরা–৫৫ রহমান, আয়াত: ৪৬) তাকওয়া শব্দের আরেকটি প্রতিশব্দ হলো ‘খাশিয়াত’। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তাআলা বলেন, ‘তুমি শুধু তাকেই সতর্ক করতে পারো, যে উপদেশ (কোরআন) মেনে চলে এবং না দেখেও দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে। তুমি তাকে ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা–৩৬ ইয়াছিন, আয়াত: ১১)

পবিত্র রমজানে ক্ষুধায় রোজাদারের উদর পোড়ে, তৃষ্ণায় বক্ষ জ্বলে। ক্ষুধা ও পিপাসার দহন জ্বালায় নফসকে দাহ করে পরিশুদ্ধ ও পাপতাপ দগ্ধ হয়ে, ভস্মীভূত হয়ে আত্মা পবিত্র হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনেরা! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতিও; যাতে তোমরা তাকওয়া (খোদাভীতি) লাভ করতে পারো।’ (সুরা–২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান নিয়ামত হলো হিদায়াত। আল্লাহ তাআলা মানুষকে হিদায়াতের প্রার্থনা শিখিয়েছেন, ‘আমাদের সঠিক সরল পথ দেখান।’ (সুরা–১ ফাতিহা, আয়াত: ৪)

হিদায়াত প্রাপ্তির পূর্বশর্ত তাকওয়া। ‘এই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত।’ (সুরা–২ বাকারা, আয়াত: ২)

নফসে আম্মারা বা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রবৃত্তি (নফস) সর্বদা মন্দের দিকে আহ্বান করে, তবে আমার প্রতিপালক যার প্রতি দয়া করে, সে ব্যতিক্রম।’ (সুরা ইউসুফ–১২, আয়াত: ৫৩)

নফসে আম্মারা হলো সেই মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ তার কামনা–বাসনা, লোভ, হিংসা, ক্রোধ ও অন্য নেতিবাচক প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। পবিত্র রমজান তথা তাকওয়ার উদ্দেশ্য হলো এসব রিপুর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের নৈতিক শক্তি অর্জন করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা এভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তোমরা তাকে দেখছ; যদি তোমরা তাঁকে দেখতে না পাও, তবে নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) তোমাদের দেখছেন।’ (বুখারি: ৪৮)

মানুষের ইন্দ্রিয় লালসা থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো রোজা। দেহ ও মনকে অন্যায় ও নিষিদ্ধ কাজ ও বস্তু থেকে বিরত রাখাই রোজার উদ্দেশ্য। সারা জীবন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা অর্জন করাই হলো রোজার সফলতা।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিরিলিসের আরতুগ্রুলের সকল পর্ব কিভাবে দেখবেন?

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে

ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বই Pdf Download