কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটা-তাজা করা হারাম

কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটা-তাজা করা হারাম

আহনাফ আবদুল কাদির
প্রতি বছরই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি গরুর সমারোহে কোরবানির হাটগুলো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সাধারণত কোরবানির পশু হিসেবে মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস ও বিশালদেহী গরুগুলোই ক্রেতা সাধারণের নজর কাড়ে।
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে উচ্চমূল্য হেঁকে চলতে থাকে দরদাম। তাই কাঙ্ক্ষিত দাম পেতে গরু ব্যবসায়ীরা বিক্রিতব্য গরুকে মোটাতাজাকরণে তৎপর হয়ে উঠে। সঠিক পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণ দোষণীয় কোনো বিষয় নয়।
এ প্রসঙ্গে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন ড.মোফাজ্জল হোসাইন জানান,মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া। তিন-চার মাসের মধ্যেই নিয়মতান্ত্রিক খাবারের মাধ্যমে পশু মোটাতাজা করা যায়।
তিনি জানান, স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা এ সব মোটাতাজা গরু স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়,বরং সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এমন কিছু অসাধু ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী আছে যারা নিয়মনীতি না মেনেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটা-তাজাকরণে।
এ জন্য তারা নিষিদ্ধ ডেক্সামেথাসন, ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন জাতীয় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। ক্ষতিকর এ সব ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে কোরবানির অনুপযোগী অল্পবয়স্ক, অস্বাস্থ্যবান ও চিকন গরুকে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যবান করে তোলা হয়। ফলে এটি শুধু পশুর জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং মানবদেহের জন্যও স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, যে কোনো স্টেরয়েড সুস্থ মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। এটা মানুষের কিডনি, লিভার, শ্বাসতন্ত্র, হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিষয়টি মানবিক ও ধর্মীয় উভয় দৃষ্টিকোন থেকেই খুবই অন্যায় ও গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচিত।
কারণ নিঃসন্দেহে এতে যেমন ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব। তাই ইসলাম জীবজন্তু ও মানবজাতির জন্য কষ্টদায়ক এমন যে কোনো প্রক্রিয়াই কঠোরভাবে নিষেধ করে।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, জমিনের বুকে বিচরণশীল যে কোনো জন্তু কিংবা বাতাসের বুকে নিজ ডানা দুটি দিয়ে উড়ে চলা যে কোনো পাখি তোমাদের মতোই (সূরা আনয়াম:৩৮)।
যারা কৃত্রিম উপায়ে কোরবানির পশু মোটাতাজা করে ক্রেতা সাধারণকে ধোঁকা দিতে চায়,তারা সবাই কিয়ামতের মাঠে শয়তানের দলভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কঠিন আজাবের মুখোমুখি হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের মনে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এরাই হচ্ছে সে সব ব্যক্তি; যাদের আবাসস্থল জাহান্নাম,যা থেকে মুক্তির কোনো পন্থাই তারা পাবে না (সূরা আন-নিসা: ১২০-১২১)।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে এবং মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে,সে আমাদের দলভুক্ত নয়’(মুসলিম,১০১)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘দীনার ও দিরহাম অর্থাৎ সম্পদের পূজারীরা ধ্বংস হোক (সহিহ বুখারি,২৭৩০)।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারক ও চালবাজ জাহান্নামে যাবে’(সহিহ ইবনে হিব্বান:৫৫৩৩,সহিহুল জা’মে; ৬৪০৮)।
অতএব কোরবানির জন্য পশু বাছাইয়ের আগে আপনার পশুটি আশংকামুক্ত কিনা যাচাই করে নিন। বর্জন করুন অতি মুনাফালোভী গরু ব্যবসায়ীদের। যাতে তারা উচ্চমূল্য হাঁকিয়ে,পকেটের টাকা নামিয়ে,আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে না পারে।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
SOURCE-WWW.JUGANTOR.COM

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট