কালিমা আসলে কয়টি এবং কি কি

কালিমা আসলে কয়টি এবং কি কি?

জেনে নিন, কালিমা আসলে কয়টি এবং কি কি? ‘কালিমা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কথা বা বাক্য। ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত ইসলামের মূল শিক্ষা সম্বলিত কতগুলো শব্দের সমন্বয়ে ছোট ছোট বাক্য, যা মুসলিমরা বিভিন্ন সময়ে বারবার পড়ে থাকে, সেইগুলোকে কালিমা বলা হয়। ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কিছু কালিমা বর্ণনা করা হলো। উল্লেখ্য এই কালিমাগুলো কখন কিভাবে পড়তে হয় সেইগুলো আমি আমার বিভিন্ন লেখাতে উল্লেখ করেছি, একারণে সেইগুলো উল্লেখ করে লেখাটাকে বড় করিনি। আপনারা ‘হিসনুল মুসলিম’ বই থেকে বিভিন্ন দুয়া কখন, কিভাবে পড়তে হয়, তা সুন্দরভাবে জানতে পারেবন। ইনশাআল্লাহ। (১) কালিমা তাইয়্যিবাঃ তাইয়্যিবা অর্থ পবিত্র। ‘কালিমা তাইয়্যিবা’ হচ্ছে ইসলামের সবচাইতে বড় শিক্ষা এবং ঈমানের সবচাইতে বড় দাবী। «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ». উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ। অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের ইলাহ (উপাস্য) নেই। যদিও আমাদের দেশের মানুষ কালিমা তাইয়্যিবা বলতে জানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। কিন্তু ক্বুরআন বা হাদীসে একে কালিমা তাইয়্যিবা বলা হয়নি। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “(হে নবী!) তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? ‘কালিমা তাইয়িবা’ (পবিত্র বাক্যের) উপমা হচ্ছে ‘উৎকৃষ্ট বৃক্ষ’; যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। যা তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অহরহ ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা বর্ণনা করে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।” সুরা ইব্রাহীমঃ ২৪-২৫। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে যেঃ এখানে ‘কালিমা তাইয়িবা’ বলতে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তাওহীদের এই বাক্যটিকে বুঝানো হয়েছে। তাফসীর ইবনু কাষীরঃ ২/৫৩১। তাফসীর আহসানুল বায়ানে লিখা হয়েছেঃ এর অর্থ এই যে, মুমিনদের উদাহরণ ঐ (বারমেসে ফলদার) গাছের ন্যায়, যে গাছ শীত-গ্রীষ্ম সব সময় ফল দান করে। অনুরূপ মুমিনদের সৎ কার্যাবলী দিবা-নিশির ক্ষণে ক্ষণে আকাশের দিকে (আল্লাহর কাছে) নিয়ে যাওয়া হয়। كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ (পবিত্রবাক্য) দ্বারা উদ্দেশ্যঃ ইসলাম অথবা কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এবং شَجَرَة طَيِّبَة (উৎকৃষ্ট বৃক্ষ) বলতে খেজুর বৃক্ষকে বুঝানো হয়েছে, যেমন সহীহ হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত। সহীহ বুখারীঃ কিতাবুল ইলম, মুসলিম, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ। (২) কালিমা শাহাদাতঃ শাহাদাত অর্থ সাক্ষ্য দেওয়া। এই কালিমা পড়ে আল্লাহকে ‘একমাত্র ইলাহ’ হিসেবে এবং নবী মুহা’ম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘আল্লাহর রাসুল’ হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া হয়, একারণে এই কালিমাকে ‘কালিমা শাহাদাত’ বলা হয়। উল্লেখ্য এই কালিমা পড়ে মানুষ কাফের থেকে মুসলিম হয়। أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ. উচ্চারণঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ’দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়া-আশহাদু আন্না মুহা’ম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহ। অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহা’ম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসুল। (৩) কালিমা তাওহীদঃ তাওহীদ অর্থ হলো কোন কিছুকে এক এ পরিবত করা, এক বলে সাব্যস্ত করা। এই কালিমা দ্বারা আল্লাহ তাআ’লা আমাদের একমাত্র ইলাহ, সমস্ত প্রশংসা, রাজত্ব, ক্ষমতার অধিকারী এবং সমস্ত কিছুর উপরে কর্তৃত্বশীল, এই সাক্ষ্য দেওয়া হয়। একারণে এই কালিমাকে ‘কালিমা তাওহীদ’ বলা হয়। « لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ» উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ’দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু, ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাই’ইন ক্বদীর। অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের উপাস্য নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (৪) “আল-বাকিয়াতুস সালিহা’ত” অর্থাৎ, চিরস্থায়ী নেক আমল হচ্ছেঃ «سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ». উচ্চারণঃ সুবহা’-নাল্লা-হি, ওয়ালহা’মদুলিল্লা-হি, ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হা’উলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ (প্রশংসা) আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচাইতে বড়। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। মুসনাদে আহমাদঃ ৫১৩, আহমাদ শাকেরের তারতীব অনুসারে, হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ। মাজমাউয যাওয়ায়িদঃ ১/২৯৭, ইবন হাজার বুলুগুল মারাম গ্রন্থে এটাকে আবু সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর বর্ণনায় ইমাম নাসাঈ (আস-সুনানুল কুবরাঃ ১০৬১৭) নিয়ে এসেছেন বলে ইঙ্গিত করেছেন এবং বলেছেন যে, হাদীসটিকে ইবন হিব্বান (৮৪০) ও হাকেম (১/৫৪১) সহীহ বলেছেন। মিরাজের রাত্রিতে নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহীম আ’লাইহিস সালামের দেখা হলে তিনি তাঁকে বলেন, “তোমার উম্মতের লোকদেরকে আমার সালাম জানাবে আর তাদেরকে বলবে জান্নাতের মাটি অত্যন্ত উর্বর, এর পানি খুবই মিষ্টি। আর এর গাছ হচ্ছে সুবহা’নাল্লাহি ওয়াল হা’মদুলিল্লাহি ওয়া লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।” (৫) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই কালেমা কি যিকির হিসেবে ১০ বার, ৩৩ বার, ৯৯ বার…এইভাবে যিকির হিসেবে পড়া যাবে? উত্তরঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” - এটি কালিমা (একচন) নয়, এটি একটি কালাম (বহুবচন), দুইটি আলাদা বাক্যকে একসাথে বলা হয়েছে। এটি তাওহীদের দুইটি মূল কথা। এটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের দুইটি মূল বাক্য। কালেমাটির অর্থ হচ্ছেঃ (১) আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তাই অন্য কাউকে কোনভাবে উপাসনা বা পূজা করা যাবেনা। (২) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী। তাই তাঁর আদর্শ ব্যতীত অন্য কারো আদর্শের অনুসরন করা চলবেনা। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” কোন যিকির-এর কালিমা নয়। এটি জীবনে একবার বুঝে শুনে উচ্চারণ করলেই তাওহীদবাদী হওয়া যায়। তবে মাঝে মাঝে ঈমান নবায়নের উদ্দেশ্যে পাঠ করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু জিকির বানিয়ে নিলেই সমস্যা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই যিকির করতে আমাদেরকে বলেন নি। সাহাবীদের কেউই এই বাক্য দুইটি এক সাথে বলে জিকির বা ‘তাসবীহ’ করেন নাই। তাসবীহ করেছেন শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির (আল্লাহর স্বরণ) হচ্ছে – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর সর্বশ্রেষ্ঠ দুয়া হচ্ছে আলহা’মদুলিল্লাহ।” তিরমিযীঃ ৩৩৮৩; ইবন মাজাহঃ ৩৮০০; হাদীসটি সহীহ। শায়খ আলবানী, সহীহুল জামিঃ ১/৩৬২। আল্লাহ আমাদেরকে জেনে বুঝে সহি শুদ্ধ আমল করার তউফিক দাণ করুক। আমিন।
source-islamic Media BD/youtube

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে