আতিথেয়তা ও আপ্যায়ন করা সুন্নত
- Get link
- Other Apps
আতিথেয়তা ও আপ্যায়ন করা সুন্নত
শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
কোনো ব্যক্তি যখন কারও বাড়িতে উপস্থিত হন, তখন তিনি সেই বাড়ির মেহমান। আর যাঁর বাড়িতে মেহমান গেছেন, তিনি মেজবান বা মাহরাম। অতিথিকে সম্মান করা একজন মুসলমানের ইমানি কর্তব্য। মানবতার ধর্ম ইসলামে অতিথি আপ্যায়ন সওয়াবের কাজ বলে বিবেচিত। যেসব ভালো গুণের সম্মিলন একজন মানুষকে সামাজিকভাবে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, অতিথিপরায়ণতা এর অন্যতম। অতিথিপরায়ণতা ইসলামের অন্যতম একটি বিধানও বটে। এই গুণটির কারণে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তৎকালীন সময়ে কাফের-মুশরিকদের কাছেও সমাদৃত ছিলেন।
মেহমানদারি একটি মহৎ গুণ, যা আত্মীয়তার বন্ধনকে মজবুত করে, বন্ধুত্বকে করে সুদৃঢ় এবং সামাজিক সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।
আমাদের সব নবী ও রাসুল অতিথিপরায়ণ ছিলেন। মেহমানদারি ছিল আমাদের নবীজি (সা.)–এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিশেষত মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) আতিথেয়তায় ছিলেন অনন্য ও অসাধারণ। তিনি দিনে অন্তত এক বেলা মেহমান ছাড়া আহার করতেন না।
আল্লাহ তাআলা হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর কাছে পুত্র হজরত ইসহাক (আ.)–এর জন্মের সুসংবাদ ও তাঁর বংশে হজরত ইয়াকুব (আ.)–এর আগমনের বার্তা নিয়ে কয়েকজন ফেরেশতাকে মেহমানরূপে পাঠিয়েছিলেন। এবং তিনি গরু জবাই করে তাঁদের জন্য মেহমানদারির আয়োজন করেছিলেন। এই বিষয় কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আমার ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীম (আ.)–এর নিকট গেল। তারা বলল “সালাম”। তিনিও বললেন “সালাম”। তিনি অবিলম্বে একটি কাবাবকৃত গো-বত্স পরিবেশন করলেন।’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ৬৯)।
কেউ যদি বাড়ি নির্মাণ করে, তাহলে সেখানে মেহমানের জন্য বিশেষ ঘর বা কক্ষের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ হাদিস শরিফে রয়েছে। একজন মেহমান এক গৃহে একবারে তিন দিন থাকার হক বা অধিকার রাখেন।
মেহমানদারিতে রিজিক বৃদ্ধি হয়, উপার্জনে বরকত হয়, ঘরে শান্তি আসে, জীবন সুখের হয়। অতিথি প্রধানত মা–বাবা, ভাই–বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজন বা অপরিচিত লোক এবং মুসাফির ও পথিক। এরা প্রত্যেকেই নৈকট্যের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রাপ্য। অতিথি আল্লাহর রহমত নিয়ে আসেন। অতিথির সঙ্গে বরকত আসে। অতিথি মাহরামের দস্তরখানে তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত রিজিকই আহার করেন। অতিথির অছিলায় আল্লাহ তাআলা আমাদের রিজিক বৃদ্ধি করে দেন, বিপদ-আপদ দূর করেন।
মেজবানের আদব ও করণীয়
মেহমান পেয়ে মেজবানকে খুশি হতে হবে ও মেহমানকে আল্লাহপাকের নিয়ামত জেনে তাঁর শোকর গুজারি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। মেহমানকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে হবে ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মেহমানের পরিচয় জানিয়ে দিতে হবে। মেহমানের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো জায়গায় থাকার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সাধ্যমতো উত্তম পানাহারের আয়োজন করতে হবে। ঠিক খাবারের সময়ে বা খাবারের আগে–পরে নিকটতম সময়ে মেহমান এলে তখন উপস্থিত যা আছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট খাবারটি দিয়ে আপ্যায়ন করতে হবে। মেহমানের অজু-গোসলের ব্যবস্থা ও ইবাদতের সুযোগ করে দিতে হবে। মেহমানের সঙ্গে মাহরাম একত্রে খাওয়াদাওয়া করবেন। বিশেষত পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মেহমানের আগে বা মেহমানকে রেখে আহার না করাই ভালো।
মেহমান যদি এলাকায় নতুন বা অপরিচিত হন, তাহলে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় তথ্য মেহমানকে জানাতে হবে। মেহমানের সুবিধা–অসুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। নিজেদের অভাব–অভিযোগ ও সমস্যার কথা মেহমানকে বুঝতে না দেওয়াই ভালো। মেহমানের সামনে নিজেদের মধ্যেও এসব বিষয়ে আলোচনা করা উচিত হবে না। এতে মেহমান বিব্রত বোধ করতে পারেন। এ বিষয়ে কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আর তারা তাদের (মেহমানদের) নিজেদের ওপর প্রাধান্য বা অগ্রাধিকার দেয়, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৯)।
বিদায়কালে মেহমানকে কিছু হাদিয়া বা উপঢৌকন দেওয়া যেতে পারে। মেহমানের পথের জন্য পাথেয় বা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য খাবারদাবার বা অন্য কোনো সামগ্রী উপহার দেওয়া যেতে পারে। যে ঘরে মেহমানের আগমন বেশি হয়, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের বর্ষণ বেশি হয়। কারও এটা ভাবা উচিত নয় যে মেহমান আসার কারণে মেজবানের রিজিক কমে যায়। রিজিক কমে যায় না বরং তাদের ভাগ্যে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির আগেই এই রিজিক লিখে রেখেছিলেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের অতিথির যথাযথ প্রাপ্য প্রদান করো। মেহমানদের সেবা করা অবশ্যকর্তব্য। এটা আল্লাহ তাআলার আদেশ ও নবীর সুন্নত। (বুখারি ও মুসলিম)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
- Get link
- Other Apps
Comments
Post a Comment