অনুতপ্ত অন্তর

 অনুতপ্ত অন্তর কীভাবে আপনাকে আরও ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা দিয়ে যায়।


আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা মানুষের অন্তরে যত ধরণের মানবীয় আবেগ অনুভূতি দিয়েছেন যেমন রাগ, ভয়, উদ্বেগ, অপরাধবোধ .... এই সবগুলো অনুভূতি আমাদেরকে আরো উত্তম মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এমনকি নেতিবাচক অনুভূতিরও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। যদি ভয়ের অনুভূতি না থাকতো তাহলে আমরা পরকালের ভয়টা উপলব্ধি করতে পারতাম না। যদি দুঃখের অনুভূতি না থাকতো তাহলে আমরা অন্য মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারতাম না এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতাম না। অপরাধবোধ খুবই শক্তিশালী একটি অনুভূতি। অনেক সৈন্য অপরাধবোধের কারণে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। যেমন, অনেকে অন্য দেশে যুদ্ধ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিজ দেশে ফিরে অপরাধবোধের কারণে ভেতরে ভেতর জ্বলতে থাকে। কোন একসময় এই জ্বালা আর সহ্য করতে না পেরে গুলি করে আত্মহত্যা করে বা মাদক দ্রব্যের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। মূসা (আ) ভুলক্রমে একজনকে খুন করে ফেলেন। তখন তিনি কেমন অনুভব করছিলেন? তিনি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করেন। এখন, এই অপরাধবোধ আপনাকে উত্তম মানুষে রূপান্তরিত করার কথা। কিভাবে? একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, দুইজন ছাত্র একটি পরীক্ষায় ৫০ নম্বর করে পেল। একজন মন খারাপ করে বসে বসে কাঁদতে লাগল। তার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। "আমি কেন ভালো করে পড়ালেখা করিনি ? কেন আমি সময় নষ্ট করেছি? কেন আমি বাড়ির কাজগুলো করিনি...ইত্যাদি ইত্যাদি।" এভাবে নিজেকে দোষ দিতে থাকলো আর বসে বসে কাঁদতে লাগলো। আর অন্যজন ৫০ নম্বর পেয়ে একটু কাঁদলো তারপর চোখ মুছে শিক্ষকের কাছে এসে বললো - '' স্যার, আমাকে এরকম আরো চারটি পরীক্ষা দিন। আমি ভালো নম্বর না পাওয়া পর্যন্ত থামবো না। আমি ভুলটাকে শুদ্ধ করতে চাই।" তারা উভয়ে নিজেকে অপরাধী মনে করলো। এই অনুভূতি একজনকে পুরোপুরি অসাড় করে ফেললো। আর অন্যজন তার এই অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আরো ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হলো। তারা উভয়ে সমান নয়। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাও মানুষের কাছ থেকে এমন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই আশা করেন। মূসা আলাইহিস সালাম একজনকে হত্যা করেন এবং নিজেকে খুবই অপরাধী মনে করেন। কিন্তু মূসা (আ) জানতেন, আমাকে আমার এই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই তিনি আল্লাহর কাছে কী দোয়া করেন? তিনি দোয়া করেন - رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ - "হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ-ই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।" (২৮:২৪) আপনি এখন আমাকে যে ভালো কাজ করারই সুযোগ দিবেন আমি তা করবো। আমি এখন ভালো কাজ করার জন্য চরম বেপরোয়া। কারণ আমি একটি খারাপ কাজ করে ফেলেছি, আর এর ক্ষতিপূরণের জন্য আমি এখন প্রতিজ্ঞ। তাই এই ক্ষতিপূরণের জন্য আপনি যে কাজই আমার সামনে প্রেরণ করবেন আমি তা জানপ্রাণ দিয়ে করে যাবো। এই দোয়ার এটাও একটা অর্থ। এভাবে 'নাফসে লাওয়ামা' (অপরাধবোধ) আপনাকে আমাকে উত্তম মানুষে পরিণত হওয়ার জন্য ক্রমাগত প্রেরণা দিয়ে যায়। আমাদেরকে এই প্রেরণাটা খুঁজে পেতে হবে এবং নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে কাজে লাগিয়ে আরও ভাল মানুষ হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে হবে। --- উস্তাদ নোমান আলী খান।source-nakinbangla/youtube --- বায়্যিনাহ টিভি, সূরা আল কিয়ামাহ।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট