ভ্রান্তি ও বাড়াবাড়ি


সন্দেহ নেই, মধ্য শাবানে রাত জেগে ইবাদতের হাদীস নিয়ে আপত্তি আছে। দিনে রোযা রাখাও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এই রাতে ভাগ্য নির্ধারণের বর্ণনাও বিশুদ্ধ নয়। কবর যিয়ারতে হাদীসটি আরো বেশি অগ্রহণযোগ্য। তবে এই রাতে মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কিত একটি হাসান তথা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেজন্য ইবনে তাইমিয়া (রহ:)সহ অনেক স্কলারগন মধ্য শা'বানের ফজীলতকে স্বীকার করেছেন।

কিন্তু এর ওপর ভিত্তি করে একদিকে দেশব্যপি যা হয় তা যেমন বাড়াবাড়ি-অপর দিকে 'শবে বরাতের একটি রোযা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ', কোনো মুসলিম শবে বরাত পালন করতে পারে না' ইত্যাদি মন্তব্যও সুস্পষ্ট সীমালঙ্ঘন। আজকাল দ্বিনী বিষয়ে মন্তব্যে সাধারণ মানুষ প্রচুর পরিমাণ সীমালঙ্ঘন করে চলেছেন। এর দু'টি কারণ দেখি আমি। এক.উলামায়ে কেরাম ও দাঈগন, দায়িত্বশীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ মন্তব্য থেকে এক ইঞ্চি বিচ্যুত হলে, সাধারণ মানুষ ও উৎসাহী অনুসারীদের মন্তব্যে এক হাত বিচ্যুতি ঘটবে-এটাই স্বাভাবিক। আর হচ্ছেও তাই। দুই. কোন্ বিষয়ে কোন্ মাত্রায় মন্তব্য করতে হবে তার জন্য প্রয়োজন শাস্ত্রীয় জ্ঞান। শাস্ত্রীয় জ্ঞান ছাড়াই এখন আশংকা জনক হারে মন্তব্য ও ফতোয়ার প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এজন্য সীমালঙ্ঘনও হচ্ছে প্রচুর পরিমানে। যার পরিণাম ব্যক্তি ও সমাজ-উভয়ের জন্য ভয়াবহ। যে কোনো আমলের পেছনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ভিত্তি থাকে, হোক সেটা দূর্বল বা কারো মতে অগ্রহণযোগ্য-তবু তার ওপর আমলকারী ব্যক্তিকে জাহান্নামে পাঠানো কিংবা সরাসরি বিদআতী বলার কোনো সুযোগ নেই। পূর্বসুরী কোনো মনিষীর এরকম কোনো মানহাজ বা কর্মপন্থা আমার জানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চোখে খড়কুটো পড়লে যেমন আলতোভাবে যত্নসহকারে তা পরিস্কার করতে হয়, সমাজে প্রতিষ্ঠিত কোনো ভ্রান্তি ও বাড়াবাড়ি সংশোধনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে শুধু ফতোয়া ও তীর্যক মন্তব্যে, নিজস্ব বলয়ের বাহবা অর্জন হয়, সমাজ সংস্কার হয় না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে