হালাল জীবিকা অর্জন অতীব গুরুত্ব পূর্ণ ফরয।

 

হালাল জীবিকা অর্জন অতীব গুরুত্ব পূর্ণ ফরয।


Mushahid Ali12

 সূচনাঃ হালাল জীবিকা অর্জন করা একজন মুমিনের জন্য ফরজ।আর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য।ইবাদত করতে হলে সুস্থ শরিরের প্রয়োজন।সুস্থ শরিরের জন্য সুষম খদ্যের দরকার।খাদ্যার্জন পূরণ করার জন্য সম্পদের প্রয়োজন।এসম্পদ অর্জনের উপায় বৈধ ভাবে হওয়া চাই।তাই বলা হয়েছে- طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة অর্থাৎ ফরয ইবাদাত আদায়ের পর হালাল রুজি রোজগার হচ্ছে ফরয।

বৈধ আয় রোজগারঃআয় রোজগার বৈধ ভাবে করার জন্য ইসলাম জোর তাকিদ প্রদান করেছে।আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদীছ হযরত নোমান ইবনে বশীর থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন,দয়াল নবী এরশাদ করেন- الحلال بين والحرام بين و بينهما مشتبهات لا يعلمهن كثير من الناس فمن اتقي الشبهات استبرا لدينه و عرضه ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام كا الراعي يرعي حول الحمي يوشك ان يرتع فيه الا وان لملك حمي الا وان حمي الله محارمه الا وان في الجسد مضغة اذا صلح صلحت الجسد كله واذا فسدت فسد الجسد الجسد كله الا و هي القب (متفق عليه)অর্থাত-হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট,আর এদের মাঝে আছে সন্দেহপূর্ণ বিষয়,যা অনেক মানুষ ই জানে না।যে ব্যক্তি সন্দেহ পূর্ণ বিষয় হতে বেঁচে থাকল সে তার দ্বীন ও ইজ্জতের সংরক্ষণ করল।আর যে ব্যক্তি সন্দেহের মধ্যে নিপতিত হল; সে মূলত হারামের মধ্যেই পতিত হল।যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত এলাকার পার্শ্বে পশু চারণ করলে তার পশু সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার আশংকা থাকে।সাবধান!প্রত্যেক বাদশাহের একটি সংরক্ষিত এলাকা থাকে। সাবধান!আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তার হারামকৃত বস্তুসমূহ। সাবধান! নিশ্চয় শরিরের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে,যখন উহা পরিশুদ্ধ হয় তখন সমস্থ শরির পরিশুদ্ধ হয়। আর যখন উহা বিনষ্ট হয় তখন সমস্থ শরির বিনষ্ট হয়।সাবধান!উহা হল ক্বলব।(বুখারী ও মুসলিম)

যে চারটি হাদীছের উপর শরীয়তের ভীত প্রতিষ্ঠিত,অত্র হাদীছ খানা তার একটি।এতে আল্লাহর নবী চার বার সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে উদাহরণ সহকারে হালাল হারামের অনুপম দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।এবং ক্বালব বা অন্তঃকরনের পরিশুদ্ধতার সাথে দেহের পরিশুদ্ধতার যে চিত্র রূপায়িত করেছেন তা অবশ্য ই হালাল জীবিকা অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট।সুতরাং শতভাগ হালাল উপার্জন নিশ্চিত করা এবং হারামকে কঠোর ভাবে বর্জন করাই অত্র হাদীছের মর্ম।

হারামের অপকারীতাঃ হারামের অপকারীতা বিষয়ে ইসলামের নবী এক হাদীছে এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন,যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে ধূলামলিন চেহারা ও পোষাক নিয়ে আসমানের দিকে হাত তুলে ইয়া রব! ইয়া রব! বলে দোয়া করে।অথচ তার খাদ্য হারাম পানীয় হারাম,পোষাক হারাম,জীবিকাও হারাম।তাহলে কিভাবে তার দোয়া ক্ববুল হতে পারে?হাদীছ খানা বুখারী ওমুসলিম দুজনই বর্ণনা করেছেন।

পরিশষে বলতে পারি আল্লাহর দেয়া রিযিক আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে অর্জন করলে তার পরিনাম যে কত ভয়াবহ আমাদের কে তা মাথায় রাখা  উচিত।

**************************

পানাহারের সামগ্রিক উপকরণকে রিযক্ব বা জীবিকা বলা হয়। এ রিযক বান্দার জন্য আল্লাহর মহান দান বা অনুগ্রহ।আল্লাহ পাক ফরমান-"আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযক্ব দান করেছেন তা থেকে পানাহার কর।"ইল্মুল বালাগাতের কিতাবে আছে উক্ত আয়াতে রিযক্ব কে আল্লাহর ইমতেনান বা নিয়ামত বলা হয়েছে।তাই এরিযক্ব অর্জন ও ভোগ ভক্ষনের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে।

রিযক্বের মালিক আল্লাহ:-আকাশ ও জমিনের মধ্যবর্তি যা কিছু রয়েছে সব কিছুর স্রষ্টা ও ইলাহ হচ্ছেন আল্লাহ।বিশেষত খানা পিনার উপায় উপকরণ তো বটেই।সুরা ওয়াক্বিয়ার এক আয়াতে আল্লাহ ফরমান"-তোমরা যে ফসল ফলাও তা লক্ষ্য করেছ কি?এ ফসল কি তোমরা উতপন্ন কর না আমি উতপন্ন করি?অপর এক আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন-"লক্ষ্য করেছকি? তোমরা যে পানি পান কর তা তোমরা বর্ষণ কর? নাকি আমি মেঘমালা থেকে বর্ষণ করি?

যার দেয়া রিযক্ব'তার তরে কৃতজ্ঞতা:-গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে-"যার খাই তার গাই"।প্রবাদটি অবশ্য ই চিন্তা প্রসূত অনেক অভিজ্ঞতার নির্যাস।আমরা বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই সরকারী চাকুরেগন সাধারনত সরকারের নির্দেশনা আক্ষরিক ভাবে ই পালন করে থাকেন।এ জন্য যে, তারা সরকারের খায়।এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্থি অবধারিত।সুতরাং ইসলাম ও বিবেকের দাবী হল,জীবন জীবিকার যিনি স্রষ্টা ও মালিক কৃতজ্ঞতা হবে তার।"সাবধান! আমি তোমাদের মত জাতি বদলিয়ে দিয়ে নতুন ভাবে তোমাদেরকে পূন:সৃষ্টি করতে পারি,যে ব্যাপারে তোমরা জান না।"সূরা ওয়াকিয়া থেকে।সুতরাং ইবাদাত ও কৃতজ্ঞতার সর্বাধিক হক্ব আল্লাহর।

শুক্রিয়া দ্বারা নিয়ামত বাড়ে:-আল্লাহ পাক ফরমান-"অবশ্য যদি তোমরা  নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর,তাহলে আমি তোমাদের জন্য তা বাড়িয়ে দেব।আর  যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্থি অবশ্যই ভয়াবহ।আল ক্বোরা'ন।

আল্লাহর প্রশংংসা কৃতজ্ঞতার ফলাফল নিয়ে দয়াল নবীজি এক হাদীছে ফরমান-যে ব্যক্তি খানা পিনার পরে বলল-"তামাম প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে সামর্থ না থাকা সত্ত্বে ও খাওয়ালেন,পান করালেন।"আল্লাহ পাক তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।

তাই খানা পিনার আদব ও শিষ্টাচার সম্পর্কিত ইসলামের দিক নির্দেশনা গুলো পালন করা আমাদের জন্য অপরিহার্য্য।যেমন-আল্লাহর নামের সাথে খানা পিনা শুরু করব।ডান হাত দিয়ে নিজের পার্শ্ববর্তি দিক হতে খাবার শুরু করব।অপচয় করব না।পড়ে গেলে খবার তুলে পরিস্কার করে খাব।খাবারের সময় কথা বলবনা।বসে খাবার গ্রহন করব।জুতা পায়ে রেখে অবশ্যই দাঁড়িয়ে খাবনা।পরিশেষে আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করব।আল্লাহ তাওওফিক্ব দাতা।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট