যিলহজ্জ মাসের ১ম দশকে করণীয়

যিলহজ্জ মাসের ১ম দশকে করণীয় ________________________________

______ যিলহজ্জ মাসের ১ম দশকের ফযীলত : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هذِهِ الْاَيَّامِ الْعَشَرَةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَلاَ الْجِهَادُ فِى سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَ مَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْئٍ، رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ- ‘যিলহজ্জ মাসের ১ম দশকের সৎকর্মের চাইতে প্রিয়তর কোন সৎকর্ম আল্লাহ্র নিকটে নেই। ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদও কি নয়? তিনি বললেন, জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তি, যে তার জান ও মাল নিয়ে বেরিয়েছে, আর ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)’ (বুখারী হা/৯৬৯; মিশকাত হা/১৪৬০ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ)। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, যিলহজ্জের প্রথম দশক এত তাৎপর্যমন্ডিত হওয়ার কারণ হ’ল, ছালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ, হজ্জসহ শরী‘আতের মূল ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে এই দশকে’ (ফাৎহুল বারী ২/৫৩৪)। ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যিলহজ্জের প্রথম দশক উত্তম নাকি রামাযানের শেষ দশকের আমল উত্তম। তিনি জবাবে বললেন, ‘রামাযানের শেষ দশ দিনের চেয়ে যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল শ্রেষ্ঠ। আর যিলহজ্জের দশ রাতের চেয়ে রামাযানের শেষ দশ রাতের ইবাদত শ্রেষ্ঠ’। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৫/১৫৪)। করণীয় : ১ থেকে ৯ যিলহজ্জ পর্যন্ত ছিয়াম পালন : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন অধিক ফযীলতের বলে ছিয়াম কিংবা অন্যান্য নেকীর কাজ করা যেতে পারে (বুখারী, মিশকাত হা/১৪৬০)। সে হিসাব ১ম থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ছিয়াম রাখা যায়। হাফছা (রাঃ) বলেন, كَانَ يَصُومُ تِسْعًا مِنْ ذِى الْحِجَّةِ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ وَثَلاَثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوَّلَ اثْنَيْنِ مِنَ الشَّهْرِ وَخَمِيسَيْنِ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশুরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন সাওম পালন করতেন-মাসের সোমবার এবং দুই বৃহ¯পতিবার (আবুদাউদ হা/২৪৩৭; নাসাঈ হা/২৪১৭, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ মুসলিমের হাদীছে এসেছে যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে যিলহজ্জের ১ম দশকে কোন ছিয়াম পালন করতে দেখিনি’ (মুসলিম হা/২৭৮১-৮২)। এর ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন, বর্ণনাকারী আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট থাকাকালীন হয়ত তিনি ছিয়াম পালন করেননি (মিরকাত ৪/১৪১৩; মির‘আত ৫/৮৯)। ইমাম নববী বলেন, সফর বা অন্য কোন কারণে হয়ত আয়েশা (রাঃ) এটা দেখেননি। তবে এর দ্বারা এ সময় ছিয়াম পালন অসিদ্ধ প্রমাণিত হয় না (ঐ ব্যাখ্যা)। বেশী বেশী তাসবীহ, তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করা : এই দশদিনে ইবাদত উত্তম হওয়াই অধিকহারে তাসবীহ, তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمَ عِنْدَ اللَّهِ وَلاَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الْعَمَلِ فِيهِنَّ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ الْعَشْرِ فَأَكْثِرُوا فِيهِنَّ مِنَ التَّهْلِيلِ وَالتَّكْبِيرِ وَالتَّحْمِيدِ ‘এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলো আল্লাহর নিকট মহান ও প্রিয় এই দশদিন অপেক্ষা। অতএব এই দিনগুলোতে তোমরা অধিকহারে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহ আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ ) পাঠ কর (আহমাদ হা/৬১৫৪, ৫৪৪৬, যঈফ তারগীব হা/৭৩৩,৭৩৫; আরনাঊত্ব, সনদ ছহীহ, আলবানী, সনদ যঈফ)। (খ) আরাফার দিনের ছিয়াম আরাফার দিনের ছিয়ামের পৃথক মর্যাদা রয়েছে। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِىْ بَعْدَهُ- ‘আরাফার দিনের ছিয়াম (যারা আরাফা ময়দানের বাইরে থাকেন তাদের জন্য) আমি আল্লাহ্র নিকট আশা করি যে, তা বিগত এক বছরের ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে’ (মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৪ ‘ছওম’ অধ্যায়, ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ)। (গ) আরাফার ছিয়াম রাখার দিন কোনটি? হাদীছে ছিয়াম পালনের জন্য যেমন কোন তারিখ উল্লেখ করা হয়নি, তেমন দেশ অনুপাতে চাঁদ দেখারও হিসাব করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে ‘আরাফার দিন’ ছিয়াম রাখতে। সেকারণ মক্কায় যেদিন আরাফার দিন হবে, সেদিন আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করতে হবে। অর্থাৎ আরাফার দিবস সঊদী আরবে ৯ তারিখে হ’লে অন্যান্য দেশে তা ৯ তারিখে হবে, এই ধারণা সঠিক নয়। বরং পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে তারিখের ভিন্নতা হওয়াই স্বাভাবিক। তবে সঊদী আরবে যেদিন আরাফা হবে সেদিনই ছিয়াম পালন করতে হবে, অন্য দেশের তারিখ যাই হোক না কেন। এরপরেও যদি কেউ সন্দেহমুক্ত থাকতে চান, তিনি যিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি অথবা ৮ ও ৯ তারিখে ২ টি ছিয়াম রাখবেন। (ঘ) আরাফার দিন দিবাগত রাতে বিশেষ কোন ইবাদত আছে কি? 

একটি বর্ণনায় এসেছে যে, পাঁচটি রাত জেগে ইবাদত করলে তার জন্য জান্নাত যরূরী হয়ে যাবে। (১) তারবিয়ার রাত (২) আরাফার রাত (৩) কুরবানীর রাত (৪) ঈদুল ফিতরের রাত (৫) ১৫ শা‘বানের রাত। তবে হাদীছটি জাল (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব হা/১৫৬০, সনদ জাল)

***********************

BANGLADESH  নব্বই শতাংশ মুসলিমের দেশে গোটা সংবিধানই ইসলামের অলোকে গঠন করার ঈমানী দাবী জানাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (الأنعام: 162). “বল আমার নামায, কুরবানী তথা জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য” [সূরা আল-আন‘আম: ১৬২]। অতএব, সেই আল্লাহর দেয়া বিধানের বাহিরে অন্য কোন বিধান একজন মুমিন মানতে পারে না। কারণ, আল্লাহর বিধান বিরোধী যা কিছু আছে দুনিয়ায় সবই কুরআনের ভাষায় জাহিলিয়্যাত, অজ্ঞতা, মূর্খতা, তথা ধ্বংসের পথ। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলছেনঃ أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ (المائدة: 50). “তারা কি জাহিলিয়্যাতের শাসনব্যবস্থা চাচ্ছে? আল্লাহ ব্যতীত বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম বিধান আর কে দিতে পারে?” [আল-মাইদাহ: ৫০]। লেখাঃ ড. বিএম মফিজুর রহমান আল-আযহারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট