জীবনের সুরক্ষা ইসলামি বিধিবিধানের প্রধান উদ্দেশ্য

 

জীবনের সুরক্ষা ইসলামি বিধিবিধানের প্রধান উদ্দেশ্য



‘আবদুল্লাহ’ ও ‘খলিফাতুল্লাহ’র দায়িত্বগুলো পালন করে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’–এর মর্যাদায় সমুন্নত হতে পারলে আল্লাহ তাআলা তাকে বন্ধুরূপে বরণ করবেন। এ বিবরণ এভাবে এসেছে, ‘আল্লাহ তাঁদের বন্ধুরূপে বরণ করেন, যাঁরা প্রকৃত বিশ্বাসী। তিনি তাঁদেরকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসেন। আর যারা অকৃতজ্ঞ, অবিশ্বাসী, কাফির; তাদের বন্ধু ও অভিভাবক হলো তাগুত (অশুভ শক্তি)। ওরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারাই নরকবাসী, তারা সেথায় চিরকাল থাকবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৭)।

মানুষ তার জীবন ও সম্পদের রক্ষক। মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো জীবনের লক্ষ্য অর্জনে শরিয়তের উদ্দেশ্য অনুসারে আল্লাহর দেওয়া জীবন, আল্লাহর দেওয়া সময় বা আয়ু, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ তথা জীবনোপকরণ, আল্লাহর দেওয়া মেধা ও যোগ্যতা, আল্লাহর দেওয়া সুযোগ-সুবিধা ও শক্তি–সামর্থ্য আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় পরিচালনা, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা বা পরিচালনা করা। কোরআন মজিদের ভাষায়, ‘অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদিগকে সব নিয়ামত (প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা-১০২ তাকাসুর, আয়াত: ৮)।

ইসলামের বিধিবিধানকে শরিয়ত বলা হয়। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান, তাই শরিয়তের বিধান জীবনব্যাপী। শরিয়তের সব বিধানের দর্শন বা অন্তর্নিহিত রহস্য মৌলিকভাবে পাঁচটি, যাকে পরিভাষায় মাকাসিদুশ শরিয়াহ বা শরিয়তের উদ্দেশ্যাবলি বলা হয়। তা হলো জীবন সুরক্ষা, সম্পদ বা জীবিকা তথা জীবনোপকরণ সুরক্ষা, জ্ঞান সুরক্ষা, বংশ বা প্রজন্মধারা সুরক্ষা, ধর্ম-কর্ম বিশ্বাসের সুরক্ষা। এর প্রথমটি সুরক্ষিত না হলে অবশিষ্টগুলো অকার্যকর ও অর্থহীন। (মাকাসিদুশ শরিয়াহ)।

মুমিন ব্যক্তি সজ্ঞানে এমন কোনো কাজ করবে না, যে কাজে প্রাণহানি ঘটতে পারে বা কারও জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল সা.) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদিগকে তাদের বিষয়ে সংবাদ জানাব? যারা কর্মে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত! (তারা হলো) যারা দুনিয়ার জীবনে কর্মপ্রচেষ্টায় বিপথগামী হয়েছে; তথাপি তারা মনে করেছে তারা ভালো কাজ করছে।’ (সুরা-১৮ কাহাফ, আয়াত: ১০৩-১০৪)। ‘(তোমরা তোমাদের জীবন, সময়, সম্পদ, মেধা, যোগ্যতা, সুযোগ ও সামর্থ্য) আল্লাহর পথে ব্যয় করো, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের মাঝে ঠেলে দিয়ো না।’ আর উত্তম কর্ম ও দয়া করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সৎ কর্মী ও দয়াশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৫)।

সব সংকট উত্তরণে আমাদের মূল নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। যেকোনো ঘটনার পেছনে যে যতটুকু প্রভাবক ও উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করে অথবা দায়িত্ব এড়িয়ে থাকে, সে ততটুকু দায়ী হবে। এ জন্য রোজ হাশরে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ‘(কিয়ামতের দিন) অকৃতজ্ঞ অবিশ্বাসীরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যেসব জিন ও ইনসান আমাদের বিপথগামী করেছে, তাদের আমাদের সম্মুখে আনয়ন করে প্রকাশ করুন। আমরা তাদেরকে আমাদের পদতলে পিষ্ট করব, যাতে তারা হীন লাঞ্ছিত অপমানিত হয়।’ (সুরা-৪১ হা-মি-ম সাজদাহ, আয়াত: ২৯)। ‘তারা আরও বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দ ও প্রভাবশালীদের আনুগত্য করেছিলাম। তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের অভিশাপ ও অভিশম্পাত দিন।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৬৭)।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগপর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থানে নিরাপদে থাকুন, অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম পরিহার করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই সঠিকভাবে মাস্ক পরুন। বাইরে থেকে এলে সাবান–পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। স্থানীয় উদ্যোগে মসজিদগুলোর সামনে সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়ার আয়োজন ও ফ্রি মাস্ক প্রদানের ব্যবস্থা রাখুন। নিয়ম মেনে সবাই টিকা নিতে সচেষ্ট হোন। নামাজের আগে–পরে মসজিদগুলো থেকে মাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্যসচেতনতা প্রচারের ব্যবস্থা করুন।

অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমprothomalo

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট