আল্লাহর পরিকল্পনায় আস্থা রাখুন

 আল্লাহর পরিকল্পনায় আস্থা রাখুন


—নোমান আলী খান বাস্তবতা হলো দুই রকম। একটা আপনি চোখে দেখতে পান আর অন্যটা চোখে দেখা যায় না। এই মুহুতে আমি আপনাদের দেখতে পারছি। আপনাদের দুই কাঁধের ফেরেশতাদের আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমি উনাদের দেখতে পাচ্ছি না। বুঝতে পারছেন? কিন্তু, উনারা বাস্তব। উনারা এখানেই আছেন। তাহলে এক ধরণের বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই আর অন্য বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই না। লাইলাতুল কদরে আকাশের দিকে তাকালে আপনি শুধু আকাশই দেখতে পান। কিন্তু অদৃশ্য বাস্তবতা হলো— সমগ্র আকাশ অবতরণরত ফেরেশতাদের দ্বারা ছেয়ে থাকে।" تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ۚ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍ" - “সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে।” (৯৭:৪) এটা হলো একটি অদৃশ্য বাস্তবতা। বুঝতে পারছেন? তাহলে বাস্তবতা দুই ধরণের। একটা হলো দৃশ্যমান বাস্তবতা এবং অপরটা হলো অদৃশ্যমান বাস্তবতা। এখন, এই জ্ঞান আমরা যা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি— আমাদের সকল মতামতগুলো, সকল অনুভূতিগুলো এবং সকল চিন্তা-ভাবনাগুলো সবসময় দৃশ্যমান বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। কারণ আমাদের নিকট বাস্তবতা এটাই। খবরে যা দেখতে পান, নিজে যার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যখন কেউ আপনাকে কিছু বলে, যখন কিছু অনুভব করেন এগুলো হলো আপনার জীবনের বাস্তবতা। কিন্তু, এই বাস্তবতার বাহিরেও আছে আরেক ধরণের বাস্তবতা। সোর্স কোডের মত। যেমন, আপনি শুধু অ্যাপের সামনের দিকটাই দেখতে পান, এর পেছনে যে প্রোগ্রামিং কোড রয়েছে তা দেখতে পান না। জগতের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর মাঝেও আল্লাহ একটা পর্দা, একটা অন্তরাল রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলেন- فَکَشَفۡنَا عَنۡکَ غِطَآءَکَ فَبَصَرُکَ الۡیَوۡمَ حَدِیۡدٌ - "তোমার সামনে যে পর্দা ছিল তা আমি সরিয়ে দিয়েছি। (সে কারণে) তোমার দৃষ্টি আজ খুব তীক্ষ্ম।" (৫০:২২) তুমি খুব পরিষ্কারভাবে সব দেখতে পাচ্ছ। অন্য কথায়, আল্লাহ এখন পর্দা সরিয়ে ফেলেছেন। তাই, তুমি এখন অদৃশ্য বাস্তবতাও দেখতে পাচ্ছ। ব্যাপারটা হলো, আমাদের জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে... আসলে আমাদের জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে আমরা কখনোই জানতে পারি না আল্লাহ যা যা করেন তা কেন করেন। আমরা জানি না। আমরা জানি না কেন আপনি গাড়ি এক্সিডেন্টের কবলে পড়লেন। আমরা জানি না। আমরা জানি না কেন আপনি চাকরি হারালেন। আমরা জানি না কেন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা জানি না কেন এই সমস্যা ঘটলো, কেন ঐ সমস্যা দেখা দিলো। আমরা জানি না কেন আপনার ভাই স্কুলে ভালো রেজাল্ট করলো আর আপনি ফেল করলেন। আমরা জানি না। আমরা জানি না কেন আপনি বেঁটে আর আপনার সকল ভাই-বোনেরা যথেষ্ট লম্বা। আপনি তখন ভাবতে শুরু করেন, আল্লাহ কেন এমনটা করলেন। তিনি কেন আমাকে বলেন না যে, তিনি আমার কাছ থেকে কী চান। কেন তিনি অদৃশ্য জগতের পর্দা একটুখানি সরিয়ে দেন না যেন আমি দেখতে পারি আসল রহস্য কী। বড় পরিকল্পনাটি আসলে কী। আমি যদি জানতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার অস্থিরতা দূর হত। কারণ, যদি না জেনে থাকেন...যদি কোনো বিচারক আপনার সম্পর্কে কোনো রায় দিয়ে থাকে... ধরুন, বিচারক বলল, "আপনাকে এতো টাকা জরিমানা দিতে হবে।" আপনি তখন স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করবেন কেন আমাকে জরিমানা দিতে হবে? বিচারক উত্তরে বললেন- "সেটা অদৃশ্য জগতের জ্ঞান। আমি আপনাকে তা বলতে যাচ্ছি না।" কোনো বিচারক যখন আপনার সম্পর্কে কোনো রায় দিয়ে থাকে আর আপনি জানেন না কেন এই রায়। আপনি তখন অশান্ত হয়ে উঠেন। "আমি এটা মেনে নিতে পারি না। আমি এর একটা ব্যাখ্যা চাই। আপনি তো এর ব্যাখ্যা আমার কাছ থেকে গোপন রাখতে পারেন না।" খিজির (আ) এর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ মূসা (আ) কে দেখালেন সবকিছুর সবসময় ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন— وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُطۡلِعَکُمۡ عَلَی الۡغَیۡبِ - আর আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি তোমাদেরকে অদৃশ্য জগতের খবর জানাবেন না। (৩:১৭৯) সকল দৃশ্যমান বিষয়ের পেছনে রয়েছে আরেকটি অদৃশ্য জগত। আর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনাদেরকে সেটা জানাবেন না। কিন্তু, এই ঘটনায় আল্লাহ মূসা (আ) এর শিক্ষকের মাধ্যমে অদৃশ্য জগতের পর্দাটা সামান্য একটু তুলে ধরলেন যেন আমরা কিছুটা ধারণা পেতে পারি, কী ঘটছে ঘটনার অন্তরালে। যেন আমরা বুঝতে পারি দৃশ্যমান ঘটনার পেছনে অদৃশ্য কারণও রয়েছে। কিন্তু, তিনি সেই পর্দা সবসময় উন্মোচন করেন না। এটা বিশেষ ধরণের জ্ঞান যা খিজির (আ)-কে দেওয়া হয়েছে। যা ছিল তাঁর প্রতি বিশেষ ধরণের দয়া। আল্লাহ সেই জ্ঞান সবাইকে দান করেন না। তিনি এমনকি সেটা মূসা (আ) কেও দান করেন নি। অর্থাৎ, এটা এমন এক বাস্তবতা যা এমনকি তিনি তাঁর রাসূলদের নিকটেও উন্মোচিত করেন না। আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম। আমরা এখান থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শিখছি। তাই, মূসা (আ) যখন দেখলেন এক ব্যক্তি বৈধভাবে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করছে, তার জীবিকা উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হলো তার নৌকাটি। আর সেই নৌকাটি কিনা ফুটো করে দেওয়া হলো!! তার শিক্ষকই এই কাজ করলেন!! "কী করছেন আপনি!! এটা তো পুরাই একটা জঘন্য কাজ!! কিভাবে আপনি এটা করতে পারলেন!! কিভাবে আপনি এই কাজের বৈধতা দিবেন!!" খিজির (আ) বললেন, আগেই বলেছি আপনি এটা হ্যান্ডল করতে পারবেন না। এটা এমন কোর্স নয় যেটা করে আপনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেন। এটা করার জন্য যে ধৈর্য লাগে সেটা আপনার নেই। অর্থাৎ, মূসা (আ) অন্যায় অবিচার দেখলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তিনি অন্যায় দেখলে রাগান্বিত হয়ে পড়েন। যখন দুই ব্যক্তিকে মারামারি করতে দেখলেন, তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন না, নিজে গিয়ে এটার সমাধান করতে চাইলেন। তিনি যখন দেখলেন দুইটি মেয়ে নিজেদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারছে না, তিনি এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সাহায্য করলেন। এখন, তিনি যখন দেখলেন এক নির্দোষ বাচ্চাকে হত্যা করে ফেলা হচ্ছে, একটি নৌকাকে কোনো কারণ ছাড়াই ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে— অবশ্যই তিনি এগুলো মেনে নিবেন না। আর এখানেই ছিল তাঁর ধৈর্যের পরীক্ষা। অন্য কথায়, যখন আপনি আমি কোনো অন্যায় হতে দেখব নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে, নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে, যখন দেখবেন কেউ আপনার নিজের প্রতি অন্যায় করছে বা অন্য কারো প্রতি অন্যায় করছে— আপনি তখন প্রশ্ন করতে শুরু করেন এই অন্যায় অবিচারের কারণ কী। এটা তো ঠিক না। এটাতো কোনো ভালো কাজ হতে পারে না। ব্যাপারটা আপনাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। নিজের ভেতরে খুব অশান্তি অনুভব করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে খিজির (আ) এর ঐ কথাগুলো, যেগুলো তিনি মূসা (আ)-কে বলেছিলেন— اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکَ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا - আমি কি আপনাকে বলিনি যে, এই শিক্ষা অর্জন করা সহজ নয়। আপনি এর জন্য ধৈর্য ধরতে পারবেন না। এ কারণে এই জ্ঞান সবাইকে দেওয়া হয়নি। আপনি এটা হ্যান্ডল করতে পারবেন না। তিনি এমনকি এ কথাও বলেছিলেন— وَ کَیۡفَ تَصۡبِرُ عَلٰی مَا لَمۡ تُحِطۡ بِهٖ خُبۡرًا - আপনি কীভাবে সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করবেন যা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা নেই। (১৮:৬৮) অদৃশ্য জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করার একটা ব্যাপার আছে। আল্লাহ আমাদের জন্য সেই অভিজ্ঞতার দরজা উন্মুক্ত করেন নি। আমাদের পক্ষে সে জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করা সম্ভব নয়। আমাদেরকে বিনয়ী হতে হবে এবং একটু পেছনে সরে এসে বলতে হবে— আল্লাহ জানেন আর আমরা জানি না। " ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ" বস্তুতঃ আল্লাহ্ই জানেন, তোমরা জান না। (2:216) পরিশেষে, মূসা (আ)-কে যখন শেখানো হলো— "আপনি তো এই এই ব্যাপারগুলোতে ধৈর্য ধরতে পারেন নি। এখন শুনুন, ঘটনার অন্তরালে ঠিক অমুক অমুক কারণগুলো জড়িত ছিল। এটাই ছিল আল্লাহর পরিকল্পনা, প্রত্যেকটি ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনে।" যখন কারণগুলো বিস্তারিত বলে দেওয়া হলো তখন আমরা আসলে উপলব্ধি করলাম— এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জ্ঞান, যে জ্ঞানের কাছে আমরা সত্যিকার অর্থে নিজেদের বিনয়ী না করলে নিজেদেরকে আল্লাহর দ্বীনের ছাত্র হিসেবে গণ্য করার কোনো মানেই হয় না। অন্যভাবে আবার বলছি— যখন আমরা আল্লাহর পরিকল্পনার কাছে নিজেদের সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে দেই, তার মানে আমরা আল্লাহর সামনে নিজেদের বিনয়ী করে দিয়েছি। আমাদের শিক্ষকের উপর আমাদের ভরসা আছে, মানে আল্লাহর উপর, এবং যে পথে তিনি আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন তাতেও আমাদের আস্থা আছে যদিও সে পথটা কষ্টকর মনে হয়, তবু তাঁর উপর আমাদের বিশ্বাস একটুও কমবে না। আর এমনটা করা সহজ নয়। যদি এটা মূসা (আ) এর মত একজন রাসূলের জন্য সহজ না হয়, وَ کَلَّمَ اللّٰهُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا - যিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন। (৪:১৬৪) এমনটা করা এমনকি তাঁর জন্যেও সহজ ছিল না। তার মানে, আপনার আমার জন্যেও এটা সহজ হবে না। এটা জীবনের অন্যতম একটা কঠিন কাজ যা আমাদের করতে হবে। আর তা হলো, সত্যিকার অর্থে মন থেকে আল্লাহর পরিকল্পনা মেনে নিতে সক্ষম হওয়া। এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়া যে, নিশ্চয়ই এর পেছনে আরও বড় কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। প্লিজ, এই খুতবায় আমি যে ব্যাপারটা তুলে ধরতে চাচ্ছি তা বুঝতে ভুল করবেন না। আমি বলছি না যে, মানুষ যখন আপনার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে বা অন্যায় আচরণ করে, অথবা কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখেন— আপনার তখন কিছু বলা উচিত না কারণ এটা আল্লাহর প্ল্যান। 'আমি এখানে ধৈর্য অবলম্বন করবো, কিছু বলবো না।' এখানে এটা বলা হয়নি। এখানে এমনসব ঘটনাবলী সম্পর্কে বলা হচ্ছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। যখন এমন কিছু ঘটে যা আমাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না— মনে রাখবেন, তার জন্যেও একটা পরিকল্পনা আছে। তখনো আল্লাহর একটা পরিকল্পনা কাজ করে। আমাদেরকে তো ন্যায় বিচারের জন্য দাবী জানাতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে— এই বাধ্যবাধকতা আমাদের উপর আছে। কিন্তু এটা এর বাহিরের একটা বিষয়। ঐটা তো সুস্পষ্ট, কমন সেন্সের ব্যাপার। যা নিয়ে কুরআনের সর্বত্র আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার সামনে একটি মনোভাব পোষণ করার ব্যাপার আছে। তাঁর সামনে আমাদেরকে বিনয়ী হতে হবে। আমার নিজেকে সত্যিকার ভাবে মেনে নিতে হবে যে, আমি আল্লাহর সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করবো না। আমি এভাবে বলবো না—"ইয়া আল্লাহ! আমি তো এই পরিকল্পনার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমি বুঝতেছি না। যদি আমি প্ল্যান করতাম আরও ভালভাবে করতে পারতাম।" ("মা'আজাল্লাহ")। এমন ধরণের চিন্তা কারো কারো মাথায় এসে পড়ে। এই চিন্তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। কারণ, আমার পরিকল্পনার চেতনা, আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সবসময় দুর্বল। আপনি কি ভাবছেন আপনি আল্লাহর চেয়ে বেশি দয়ালু? আপনি কি ভাবছেন আপনি আল্লাহর চেয়ে আরও বড় ন্যায় বিচারক? আমি কি ভাবছি আমি আল্লাহর চেয়ে ভালো পরিকল্পনাকারী? আমি আল্লাহর চেয়ে বেশি জানি? আল্লাহর চেয়ে বেশি প্রজ্ঞা আমার আছে? এটাই কি আমি ভাবছি? (আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।) তাহলে, আমি যখন তাঁর সিদ্ধান্তকে এভাবে প্রশ্ন করি, সুস্পষ্টরূপে আমি কোনো ভুল করছি।
source-nak in bangla/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট