দেহ-মনের পবিত্রতায় গোসলের গুরুত্ব ও বিধান

 


আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং যারা পবিত্র থাকে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)। ‘সেথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ১০৮)। ইসলামি শরিয়াহমতে, তিনটি আমল সম্পাদনের জন্য পবিত্রতা ফরজ বা পূর্বশর্ত—নামাজ পড়া, কোরআন স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা।


গোসলের সুন্নাত পদ্ধতি

গোসলের আগে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করা। শরীরে বা কাপড়ে কোনো নাপাক লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করা। গোসলের আগে অজু করা। পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে গোসল করা। অতঃপর মাথায় পানি ঢালা, এরপর ডান কাঁধে পানি ঢালা, তারপর বাঁ কাঁধে। এভাবে পুরো শরীর ভালোভাবে তিনবার ধৌত করা। নারীদের কানে ও নাকে অলংকারাদি থাকলে তার ছিদ্রে পানি পৌঁছানো এবং আংটি, চুড়ি বা বালা ইত্যাদি নাড়াচাড়া করে ওই জায়গায় পানি পৌঁছে দেওয়া। শরীরের যেসব অঙ্গে সাধারণত স্বাভাবিকভাবে সহজে পানি পৌঁছায় না—যেমন কান, আঙুলের ফাঁকা, বগলের নিচ, চোখের কিনারা, চুলের গোড়া ইত্যাদি—ওই সব জায়গায় সযত্নেœ পানি পৌঁছানো। উল্লেখ্য, নখে নেইলপলিশ লাগানো থাকলে তা সম্পূর্ণ ওঠানো ব্যতীত অজু-গোসল শুদ্ধ হবে না, পানির স্পর্শ পরিপূর্ণভাবে থাকতে হবে। কাপড়ে নাপাক লেগে থাকলে তিনবার কচলে ধুতে হবে এবং প্রতিবার ধোয়ার পর এমনভাবে নিংড়াতে হবে, যাতে ঝুলিয়ে রেখে দিলে তা থেকে পানির ফোঁটা টপকে না পড়ে। স্মর্তব্য, গোসলের আগে অজু না করলেও পরে আর অজু করতে হবে না, তবে অজুভঙ্গের কারণ ঘটলে অবশ্যই অজু করতে হবে এবং গোসলের পর পবিত্রতা প্রয়োজন, এমন ইবাদত যথা ‘নামাজ পড়া, কাবাঘর তাওয়াফ করা ও কোরআন মাজিদ স্পর্শ করে পড়া’ যদি করে থাকেন, তবে চাইলে আবার অজু করতে পারবেন। অজু ও গোসলের পর ওই তিন আমলের কোনোটিই না করলে এবং অজুভঙ্গের কারণও সংঘটিত না হলে দ্বিতীয়বার অজু করা উচিত নয় এবং তা পানির অপচয় হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে হাতে–মুখে পানি দেওয়া বা হাত, পা ও মুখ ধৌত করা যাবে; অজু হিসেবে নয়।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

রতিক্রিয়া, শুক্রপাত হওয়া (স্বপ্নে বা জাগরণে) এবং নারীদের ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তর স্রাব সমাপ্ত হওয়া। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৭৮)। গোসল ফরজ হলে বিনা কারণে বিলম্ব করা উচিত নয়। একবার গোসল করার পর উপরিউক্ত কারণগুলোর কোনো একটি সংঘটিত হওয়ার আগপর্যন্ত গোসল ফরজ হবে না। তবে প্রতি শুক্রবার গোসল করা সুন্নাত, উভয় ঈদের দিনে গোসল করা সুন্নাত এবং বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। আমরা সাধারণত প্রতিদিন গোসল করে থাকি, এতে পবিত্রতার নিয়ত থাকলে সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

prothomalo

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট