ভয় এবং আশা

 


আমরা যদি আল্লাহর রাসূলের শ্রেষ্ঠতম সাহাবাদের দিকে তাকাই— হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান (রা) যাদেরকে রাসূল (স) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আর তাই তাঁদের এখন এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, তাঁদের কোনো শাস্তি হবে না। কিন্তু তারপরেও তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল। তারপরেও তারা রাত জেগে ইবাদাত করতেন। তারপরেও তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করতেন।

আবু বকর (রা) কে রাসূল (স) বলেন—"হে আবু বকর! জান্নাতের আটটি দরজা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশের আহবান জানাবে।" একবার ধারণা করুন, জান্নাতের আটটি দরজা আপনাকে জান্নাতে নেয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। হযরত ওমর সম্পর্কে রাসূল (স) বলেন—হে ওমর! তুমি যখন কোনো পথ দিয়ে হাট, শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আর হজরত ওসমানের নিকট রাসূল (স) তার দুই কন্যাকে বিয়ে দেন। (একজনের মৃত্যুর পর অন্য জনকে) একবার কল্পনা করুন, আল্লাহর রাসূল আপনার শ্বশুর। হজরত আলী (রাঃ) সহ এরকম দশ জন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়। তারপরেও তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল। এখন আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করছি, তাহলে কেন আমাদের এ ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নেই। তাহলে আমাদের অন্তরে কোনো ভয় নেই কেন? মানুষ চালাকি করে বলে, আমার আল্লাহর রহমতের উপর বিশ্বাস আছে। আমি আপনার মত নই। আমার আল্লাহর রহমত এবং দয়ার উপর বিশ্বাস আছে। আমি তাদের বলি— তাহলে আবু বকর ওমরের কী ছিল? আল্লাহর দয়ার উপর সন্দেহ?? না, এটা হতে পারে না। আপনি যদি আসলেই ধার্মিক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি তাদের পথে থাকবেন। আপনার অন্তর যদি প্রশান্ত হয়, তাহলে আপনার অন্তরেও তাদের মত সবসময় একটি সাংঘর্ষিক অনুভূতি বিরাজমান থাকবে। ভয় এবং আশা, ভয় এবং আশা। কিন্তু আমাদের আছে আশা, আশা, আশা এবং আশা। আল্লাহর ভয়? মাঝে মধ্যে আপনার অন্তরে অনুভূত হয়। কোনো লেকচার শুনলে হয়তো কিছুটা অনুভূত হয়। তারপর আবার মানুষের সাথে মিশলে তা হারিয়ে যায়। আমরা দিন রাত সারাক্ষণ হাসি আনন্দে মেতে থাকি। অথচ আল্লাহ বলেন— أَفَمِنْ هَٰذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُون - وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ - "তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ? এবং হাসি- ঠাট্টা করছ! ক্রন্দন করছ না?" (53:59-60) সত্যিকারের প্রশান্ত অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকতে হবে। আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে হবে। আমাদের এই অনুভূতিগুলো থাকতে হবে। এগুলো হলো সঠিক ঈমানের লক্ষণ। এখন এই সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হলো, অনেক সময় আমরা জানি না যে কেন ভয় করবো। এই জন্য আল্লাহর শাস্তির বিস্তারিত বর্ণনা জানাটা জরুরি। আল্লাহ কুরআনে তাঁর শাস্তির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আর রাসূল (স) জাহান্নামের শাস্তির কথা আরো সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। রাসূল (স) জাহান্নামের কঠোর আজাবের এমন বর্ণনা দিয়েছেন যে, আপনি যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করেন তাহলে এসব বর্ণনা শুনার পর ঘুমাতে পারবেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তির ভয়ে আপনি সবসময় ভীত থাকবেন। প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমরা যতই ভয়ঙ্কররূপে দোজখের শাস্তির কথা বর্ণনা করি না কেন, এটা কখনোই যথেষ্ট হবে না। কারণ, শব্দ কখনই বাস্তবতার মত হবে না। আর কখনো দেখেননি এমন কিছুর বর্ণনা শুনে তার প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করা আসলেই কঠিন। আল্লাহ কুরআনে জাহান্নামের আগুনের আজাবের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ এবং তার রাসূল আমাদের সতর্ক করেছেন। শুধু আমাদের বুঝার জন্য বলছি, কখনো কখনো কোন কিছু উপলব্ধি করার জন্য যুক্তি একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। কিছু একটা হয়তো আমার দেখার সাধ্যের বাইরে। যেমন আমি বললাম—এখান থেকে বিমানে করে সিডনি যেতে চার ঘন্টা লাগে। তখন আপনার ব্রেইন নিজের মতো করে দূরত্বটা সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে নেয়। কারণ আপনি এরকম দূরত্বে পূর্বে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু যখন আমি বলি—এখান থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার। এই বড় বড় নাম্বারগুলো আমাদের কাছে একটু বেমানান। আপনি তখন ভাবেন, ও! অনেক দূরে। কারণ এই দূরত্ব আপনার উপলব্ধি ক্ষমতার বাইরে। আবার আমি যদি বলি, আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে নিকটবর্তী নক্ষত্রের দূরত্ব ৪.৩ আলোকবর্ষ। আলোকবর্ষ মানে— আলোর গতিতে এক বছর গেলে যতদূর যাওয়া যাবে ততটুকু হলো এক আলোকবর্ষ। এইরকম চার আলোকবর্ষ দূরে। এখন বিষয়টা আসলেই হাস্যকর। আপনার পক্ষে এই দূরত্ব বোঝা আরো কঠিন। ঠিক একইভাবে, আমি যত ভয়ংকরভাবেই জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণনা করি না কেন, বিশ্বাস করুন, এটা তার চেয়েও ভয়ংকর। আমার আপনার ধারণা কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর। আপনার ব্রেইনকে যতটুকু বোঝার যোগ্যতা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, এটা তার থেকেও ভয়ংকর। শুধুই শাস্তি আর শাস্তি। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা নিখুঁত। যখন তিনি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, জান্নাতে তাঁর পুরস্কার হবে নিখুঁত। আবার যখন তিনি শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর শাস্তিও নিখুঁত। নিখুঁত শাস্তি। এর চেয়ে বেদনাদায়ক কোনো শাস্তি হতে পারে না, এর চেয়ে কষ্টকর কোনো শাস্তি হতে পারে না। কারণ তিনিই আমাদের এই শরীর তৈরী করেছেন। তিনিই আপনার রূহ তৈরী করেছেন। আর তিনিই সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনার শরীর এবং আত্মার জন্য শাস্তি তৈরী করেছেন, যদি আপনি ভুল পথ গ্রহণ করে থাকেন। —ওমর আল বান্না
source-nak in bangla/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট