শীতে মোজা পরে অজু করার বিধান ও পদ্ধতি
শীতে মোজা পরে অজু করার বিধান ও পদ্ধতি
মাসেহর জন্য মোজা পরিধানের নিয়ম
পা ধোয়াসহ পূর্ণ অজু করার পর মোজা পরলে তারপর থেকে পায়ের মাসেহ দুরস্ত হবে। (বুখারি: ১৯৯)।
মাসেহ করার পদ্ধতি
দুই হাতের ভেজা আঙুলগুলো দুই পায়ের আঙুলের ওপর রাখবে। এরপর হাত দুটি পায়ের পাতার ওপর দিয়ে টেনে আনবে। ডান পা ডান হাত দিয়ে মাসেহ করবে, বাঁ পা বাঁ হাত দিয়ে মাসেহ করবে। একত্রে দুই হাত দিয়ে দুই পা মাসেহ করবে। যেমনটি দুই কান মাসেহ করার ক্ষেত্রেও করা হয়। মাসেহ করার সময় হাতের আঙুলগুলো ফাঁকা ফাঁকা করে রাখবে। একাধিকবার মাসেহ করবে না। (আল মুলাখ্খাস আল ফিকহি: ১/৪৩)।
মাসেহর সুন্নাত
পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাকনু পর্যন্ত মাসেহ করা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৮৫, কিতাবুল আসার: ১/৭২)।
মাসেহর পরিমাণ
হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবুদাউদ: ১৪০, সুনানে কুবরা, বায়হাকি: ১৪৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৮৫)।
মোজার ওপর মাসেহর নির্ধারিত সময়সীমা
মুকিম বা নিজ এলাকায় থাকা অবস্থায় এক দিন এক রাত অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মোজার ওপর মাসেহ করা যায় এবং মুসাফির বা পরবাসে তথা সফরে (কোনো ব্যক্তি নিজ বাড়ি বা কর্মস্থল থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৭ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার পথে এবং সেখানে পৌঁছে ১৫ দিনের কম থাকার ইচ্ছা করলে তাঁকে মুসাফির হিসেবে ধরা হয়) থাকাকালীন তিন দিন তিন রাত তথা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত মোজার ওপর মাসেহ করা যায় (আবুদাউদ: ১৩৫)। এই হিসাব শুরু হবে প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৮০)।
মাসেহ ভঙ্গের কারণসমূহ
যেসব কারণে অজু ভঙ্গ হয়, সেসব কারণে মাসেহও ভঙ্গ হয় (তিরমিজি: ৬৯)। মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায় (সুনানুল কুবরা, বায়হাকি: ১৪২২)। মোজা যদি পায়ের টাকনুসহ বেশির ভাগ অংশ বের হয়ে যায় (সুনানুল কুবরা, বায়হাকি: ১৩৯৬)। উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশির ভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায় (মুআত্তা মুহাম্মদ: ২/৫৮৭)।
উল্লেখ্য, পাগড়ি, টুপি, বোরকা ও নিকাবের ওপর মাসেহ করা জায়েজ নেই। হাতমোজার ওপরও মাসেহ করা জায়েজ নেই (আবুদাউদ: ১৪০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/২৩)।
মোজার ওপর মাসেহ কখন বাতিল হবে
নির্ধারিত সময় (২৪ ঘণ্টা বা ৭২ ঘণ্টা) শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ বাতিল হয়ে যায় (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৪৬)। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে অজু ভঙ্গের কারণ না ঘটে থাকলে আবার মাসেহ করা যাবে না বা মাসেহ ‘রিনিউ’ বা নবায়ন করা যাবে না। কিন্তু তখনো যদি অজু ভঙ্গের কোনো কারণ না ঘটে, তাহলে ওই অজুতেই সব ইবাদত করা যাবে। মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে, তবে মুসাফিরের সময়সীমা পূর্ণ করতে পারবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত সময়ে তা সমাপ্ত হবে (মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক: ১/২২১)।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন