দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা

 


আমি তোমার উপর কুরআন এ জন্য নাযিল করিনি যে তুমি দু:খ-কষ্ট ভোগ করবে। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১-২)

আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ্ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না...”[সূরা বাকারাহ্; ০২:১৮৫] আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ৬) “তিনি (আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি’ ”[সূরা হজ্ব; ২২:৭৮] ‘আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাজিল করেছি; সেটি এমন যে, প্রত্যেক বস্তুর সত্য ও সুস্পষ্ট বর্ণনা; হেদায়াত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ (সূরা নাহল, আয়াত ৮৯)। আল্লাহতালা সহজ করে দিলেও, গোমরাহীতে লিপ্ত লোকেরা কঠোরতার পথ বেছে নিয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দ্বীন সহজ এবং যে কেউ দ্বীনকে নিজের জন্যে কঠিন করে ফেললে সে তা আর পালন করতে পারবেনা। ” [সহীহ্ আল-বুখারী; ১:২:৩৮] আবহমান কাল ধরে আমাদের এই উপমহাদেশের আরবী শিক্ষিত কতিপয় আলেম-ওলামা নামধারী ব্যক্তিরা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার যে ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছেন, তা এক কথায় বড়ই জটিল এবং চরম কঠিনও বটে। ইসলামকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে খুবই কঠিন একটা ধর্ম হিসাবে। কঠিন বিধি নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কঠিন ও রসকস বিহীন এক জীবন ব্যবস্থা হিসেবে তারা ইসলামকে ব্যাখ্যা করে এসেছেন। তাদের ব্যাখ্যা মানলে মুসলমানের জীবনে আরাম আয়েশ বলে কিছুই থাকে না। চোখের সামনে ভাসতে থাকে টুপিওয়ালা খটখটে কোন এক গুরুগম্ভীর মানুষ। অনুমিত হয়, হিন্দুধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মের ছাঁচে তারা ইসলামকে টেনে এনেছেন নিজেদের অজান্তেই। সহজাতভাবে ভেবে নিয়েছেন, কঠোরতায় অনেক বেশী পূণ্য অর্জন করবেন। কঠোরতার জালে নিজেদের জড়াতে গিয়ে যুগে যুগে তারা ফরজের চাইতেও অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন নফল এবাদতের। নানা নফল এবাদতের বেড়াকলে নানা মনগড়া ব্যাখ্যায় মানুষকে কঠোর থেকে কঠোরতার দিকেই ঠেলে দিয়েছেন। ধর্মবেত্তারা সাধারণ মানুষজনের কাছে নফল এবাদতের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে করেই জীবন পার করে দিয়েছেন। সাথে পীর-দরবেশের নানা নফল মুস্তাহাবের রেফারেন্স তো আছেই, আছে তাদের কঠোর জীবন যাপনের চটকদার কাহিনীও। টুপি না হলে ধর্ম হবে না, ইংরেজদের মত প্যান্ট শার্ট পড়লে, বা ইংরেজী শিখলে মুসলমান থাকা যাবে না, ইত্যকার মনগড়া ফতোয়ায় তারা নিজেদের অজান্তেই ইসলাম ধর্মের বারটা বাজিয়েছেন। ধর্মবেত্তাদের এই কর্মযজ্ঞের ফলস্বরুপ এই উপমহাদেশের মানুষ টুপি পাওয়া না গেলে নামাজই পড়েন না। ফরজ নয়, কেবল নফল, সুন্নত, ওয়াজিব মোস্তাহাবের গুরুত্ব বর্ণনা্ করেই তারা ক্ষান্ত হয়েছেন। কোরআন নয়, দূর্বল আর জাল হাদীসগুলোকেও তিলকে তাল বানিয়ে সাধারণ মানুষের সামনে পেশ করেছেন। বেশীদিন আগের কথা নয়, প্যান্টশার্ট পরা থাকলে মসজিদে ঢোকা যেতো না। ফরজ নামাজ না পড়লেও, তারাবীর নামাজ তারা ঠিকই পড়েন। ফরজ নামাজ পড়েন না, কিন্তু শবে বরাতের রোজা, মহরমের রোজা. শাওয়াল মাসের রোজা ঠিকই রাখেন। কেউ কেউ আবার শির্ক মিশ্রিত এবাদতেও লিপ্ত হয়ে পড়েন। এসব মানসিকতায় সাধারণ মানুষের দোষ দেয়া যায় না। ধর্মবেত্তাদের যুগে যুগে কঠিন পরিশ্রমের (কু)ফল এটা। যার কারনে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ জীবনের সব কাজ শেষ করে বৃদ্ধ বয়সে ধর্মকর্ম করবেন বলে নিয়ত করে থাকেন। আল্লাহতালা সহজ করে দিলেও, গোমরাহীতে লিপ্ত লোকেরা কঠোরতার পথ বেছে নিয়েছে। আল্লাহপাক বলেন, ‘একদল লোককে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন, আর দ্বিতীয় দলটির উপর গোমরাহী ও বিদ্রোহ ভালোভাবেই চেপে বসেছে; এরাই (পরবর্তী পর্যায়ে) আল্লাহ তালাকে বাদ দিয়ে শয়তানদের নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, (এ সত্বেও) তারা নিজেদের হেদায়াতপ্রাপ্ত মনে করে। (সুরা আল আ’রাফ ৭: ৩০)

আশা করি বুঝতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন
collected

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট