পুরুষদের পোশাক সংক্রান্ত


 পুরুষদের পোশাক সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু দিক নির্দেশনাঃ (১) সালাতের বাইরে পুরুষদের জন্য সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর সালাতের ভেতরে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত আর দুই কাঁধ ঢাকা থাকতে হবে। অনেকে গোসলের পরে বা গরমে খালি গায়ে সতর উন্মুক্ত করে রাখে, যা সম্পূর্ণ হারাম। আর অনেকে মনে করে পুরুষ মানুষের লজ্জা-শরম কিসের? পুরুষদের মাঝে সতর ঢাকা জরুরী না! এইগুলো অজ্ঞ লোকদের কথা, এইগুলো ভুলেও করবেন না।

(২) থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট টাইট না হলে ও হাঁটুর নীচে পর্যন্ত ঢাকা থাকলে তা পড়া জায়েজ আছে, তবে মসজিদে এটা না পড়াই ভালো। কারণ অনেক থ্রি কোয়ার্টার আসলে বাসায় পরার জন্য বা পরে ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত, যেটা মানুষ জমায়েত হয় এমন জায়গায় পরার জন্য উপযোগী নয়। যেমন ধরুন, পুরুষদের জন্য লুংগি পড়া জায়েজ আছে, কিন্তু তাই বলে কেউ কোনদিন গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল মিটিং-এ লুংগি পরে যাবে? অবশ্যই না। তবে এমন থ্রি কোয়ার্টার যা ঢিলেঢালা, শালীন পর্যায়ের লম্বা এবং খুব বেশি রংচং বা ডিজাইনের না, সেইগুলো আশা করি মসজিদে পড়লে দূষণীয় হবেনা। (৩) হাঁটুর উপরে উঠে থাকে এমন পোশাক পরা সম্পূর্ণ হারাম, কেউ এমন পোশাক পড়ে থাকলে তাঁর সতরের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হারাম। উল্লেখ করা ভালো যে, ফুটবল খেলা দেখার অন্য অনেক হারামের সাথে এটাও একটা অনৈসলামিক বিষয়। (৪) খবরদার! কখনো টাখনুর নিচে প্যান্ট পরবেন না। এটা একটা মারত্মক কবীরা গুনাহ। টাখনুর নিচে যায় এমন প্যান্ট কাটিয়ে সাইজ করে নেওয়া ভালো, যে যা ভাবে ভাবুক, আল্লাহর আইন সবার আগে। আর কোনো প্যান্ট লম্বা হলে তা অবশ্যই ভাজ করে টাখনুর উপরে রাখতে হবে। (৫) মেয়েদের ব্লাউজের মতো ছোট ও টাইট শার্ট/গেঞ্জি পড়বেন না। অনেক মুসলিম পুরুষ মেয়েদের ব্লাউজের মতো ছোট ও টাইট শার্ট, গেঞ্জি পড়ে নামায পড়ে, রুকু সেজদা করতে গেলে পিঠ বা সতর বেড়িয়ে পড়ে। সাবধান! নামাযে সতর ঢেকে রাখা ফরয। ফরয তরক করলে নামায ভেঙ্গে যাবে। (৬) দাঁড়ি চেছে ফেল দেবেন না, দাঁড়ি আল্লাহ দিয়েছেন রাখার জন্য যাতে করে পুরুষদের চেহারা নারীদের সাথে আলাদা থাকে। দাঁড়ি চেছে নারীদের মতো চেহারা বানাবেন না। দাঁড়ি চাছা জঘন্য একটা স্বভাব। (৭) হিন্দুদের ধুতির স্টাইলে পায়জামা পড়বেন না, ফ্যাশানের কারণে জাহান্নামে যাবেন না। (৮) রেশমী বা সিল্কের কাপড় আর স্বর্ণ পরা সম্পূর্ণ হারাম। রেশম বা সিল্কের কাপড় থাকলে আপনার স্ত্রী বা নারীদেরকে অথবা হিন্দু/কাফেরকে গিফট দিয়ে দিতে পারেন। আর স্বর্ণ থাকলে আপনার স্ত্রী বা ঘরের নারীদেরকে দিয়ে দিন। (৯) চুল বড় ছোট রাখতে পারেন ইচ্ছা, কিন্তু কাফেরদের মতো করে অথবা উদ্ভট কার্টুনের, নায়কদের অভদ্র কাট দেবেন না। শালীন ও ভদ্রভাবে চুল গুছিয়ে রাখবেন, কাকের বাসা বানাবেন না। আর ব্যন্ডের গায়কদের অনুকরণ করে লম্বা চুল রাখবেন না। ফাসেক বা বেদ্বীন লোকদের অনুকরণ করা নিষিদ্ধ। (১০) হাফ শার্ট পড়ে নামায পড়া যাবে, নামায মাকরুহ হবেনা। তবে ফুল শার্ট বা প্যান্ট ভাজ করে রাখলে সেটা মাকরুহ। নামাযে কাপড় ভাজ করে রাখা মাকরুহ। তবে ছেলেদের প্যান্ট টাখনুর নিচে গেলে ভাজ করে রাখবে, কারণ টাখনুর নিচে কাপড় পড়া বড় হারাম, তাই মাকরুহ হলেও সেটা করতে হবে। উল্লেখ্য এটা করলে সে একটা মাকরুহ কাজ করলো কিন্তু তার নামায পুরোটাই মকরুহ হবেনা। (১১) জিন্স পড়া জায়েজ তবে, শর্ত সাপেক্ষ। এতো টাইট হবেনা যে শরীরের গঠন বের হয়ে পড়ে, অথবা নামাযে রুকু সেজদা করতে অস্বস্তি লাগে। পোশাক ঢিলেঢালা আরামদায়ক হবে। তবে এটা বাদ দেওয়া ভালো, কারণ এই পোশাকটা আরামদায়ক না। (১২) কার্টুন, শয়তানের মাথা বা প্রাণীর ছবি, কাফেরদের নাম, ছবি দেওয়া, অশ্লীল, অভদ্র কথা লিখা এমন কাপড় পড়বেন না। এইগুলো হারাম। (১৩) পুরুষেরা শুধু চুল দাড়িতে মেহেদী দিতে পারবেন। হাতে পায়ে মেহেদী দেওয়ার সাজ নারীদের জন্য, পুরুষদের জন্য নয়। (১৪) ফ্যাশানের নাম করে কানে দুল, হাতে চুড়ি, গলায় মোটা চেইন, হাতে ব্রেসলেট, এইগুলো পড়ে নারীদের অনুকরণ করবেন না। কি আশ্চর্য মা বোনদের গয়নাগাটি পড়ে আপনি নিজেকে বীর পুরুষ মনে করেন? সুবহা’নাল্লাহ। আজকালকার পুরুষদের মাঝে হিজড়াদের মন্দ স্বভাব ঢুকে গেছে। এইগুলো আল্লাহর লানত পাওয়ার কাজ। (১৫) বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে মেয়েদের নাম্বার নিয়ে মিসকল দেবেন না, মেয়েদের ডিস্টার্ব করবেন না। মেয়ে দেখেই প্রেম করার জন্য উঠে পড়ে লাগবেন না। এইগুলো হারাম তাতে কোনো সন্দেহই নাই, তার উপরে এইগুলো চরিত্রহীন, ব্যক্তিত্বহীন থার্ডক্লাস পুরুষদের কাজ। সম্ভব হলে বিয়ে করুন, না পারলে ধৈর্য ধরুন, বেশি কঠিন মনে হলে রোযা রাখুন। (১৬) কাফের, ব্যভিচারী নায়কদের পোশাক, স্টাইল ফ্যাশান অনুকরণ করা সম্পূর্ণ হারাম। তাদের মতো চুল দাঁড়ি কাটা যাবেনা, ইয়াহুদী খ্রীস্টানদের মতো ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি রাখা যাবেনা। দাঁড়ি রাখতে হবে সুন্নতি স্টাইলে। এখানে বর্ণিত বেশিরভাগ বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে এবং এইগুলোর ব্যপারে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আসলে বললে আরো অনেক অনেক বলা যাবে যে, সারাদিনেও শেষ হবেনা। আপনারা ইন শা’ আল্লাহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো পড়াশোনা করে নিজেরাও কিছু জানার ও বোঝার চেষ্টা করবেন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট