অস্থির মনকে কী দিয়ে শান্ত করবেন?

 অস্থির মনকে কী দিয়ে শান্ত করবেন?


------------- * ----------- মানুষের ডিফল্ট অবস্থা হলো, আপনাদের কেউ কেউ হয়তো টেকি(প্রযুক্তিতে খুব আগ্রহী। তাই ডিফল্টের অর্থ বুঝবেন), অনেক মানুষের ডিফল্ট অবস্থা হলো তাদের মাথায় সবসময় পাগলাটে কোনো চিন্তা-ভাবনার আনাগোনা চলতে থাকে। কিছু একটা সবসময় তাদের মাথায় থাকে, কখনোই এটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। আর তারা ভাবতে থাকে— কিভাবে এটা থেকে মুক্তি পাবো? এই চিন্তাটা কখনো কখনো খারাপ আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। খারাপ কাজের মাধ্যমে, উদ্বেগ, হতাশা...মাথা থেকে এটা কখনো যায় না। এখন, থেরাপিস্টরা বলবে, এটা একটা ব্যাধি। ঠিক কিনা? আর কুরআন বলছে- "ইন্নাল ইনসানা খুলিকা হালুউ'আ।" অর্থাৎ, "মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই অস্থির-মনা করে।" (৭০:১৯) তোমাদেরকে এমন করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাই তোমার স্বাভাবিক অবস্থা। আরেকটা কথা বলি— মানুষের শরীরকে মেরু ভালুকের (পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে যাদের বাস। তুষারে ঢাকা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় যারা বাস করে।) শরীরের সাথে তুলনা করে দেখি। খুবই চমৎকার একটা উদাহরণ, তাই না? মানুষের শরীরের তুলনায় মেরু ভালুকের শরীর... আমাদের শরীরকে প্রকৃতিগতভাবে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়নি যে, আমরা প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে জামা-কাপড় ছাড়া বাঁচতে পারব। আমাদের শরীর নকশাগতভাবেই বৈরী প্রকৃতি মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়। আর তাই নিজেদের রক্ষা করতে আমরা বিভিন্নরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। কারণ, আমাদের চামড়া এবং রক্তের তাপমাত্রা যথেষ্ট নয়। আমরা মারা যাবো। তাই, জামা-কাপড় পরিধান করা শুধু দ্বীনের ব্যাপার নয়, বেঁচে থাকার জন্যেও এর প্রয়োজন। ঠিক একইভাবে, আমাদের মনকেও ইতিবাচকতার দিকে অনুকূল করে তৈরী করা হয়নি। ব্যাপারটা প্রাকৃতিক নয়। তাই, আপনার আমার মন মানসিকতাকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শেষে গিয়ে আল্লাহ এর প্রতিকার প্রদান করেন। তিনি বলেন— "ইল্লাল মুসল্লিন" মানুষ হালুউ(অস্থির-মনা), খারাপ কিছু ঘটলে তারা হয়ে যায় জাজুউ(অতিমাত্রায় উৎকন্ঠিত), আর ভালো কিছু ঘটলে তারা হয়ে যায় মানুউ (অতিশয় কৃপণ)। একমাত্র তারা ব্যতীত যারা সালাত আদায় করে। এখন, নামাজ শুধু মাত্র ফরজ একটা কাজ আদায় করার নাম নয়। নামাজ শুধু এমন কিছু নয় যা আপনি আল্লাহর জন্য আদায় করেন। নামাজ এখন এমন কিছু যা আপনি কার জন্যেও আদায় করেন? নিজের জন্য। এটা আমাকে হালুউ হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটা আমাকে অতি আবেগী হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটা আমাকে একেবারে শান্ত করে দেয়। — নোমান আলী খান
******************************************************************

আল্লাহর কিছু কিছু নাম অর্থের দিক থেকে একটি আরেকটির প্রায় সম্পূর্ণ বিপরীত। আর এ নামগুলো সবসময় জোড়ায় জোড়ায় আসে। ব্যাপারটা যেহেতু এরকম, তাই আমাদেরও এ নামগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। কুরআনে এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হলো- "হুয়াল আউয়ালু ওয়াল আখিরু, ওয়াজ জহিরু ওয়াল বাতিন।" তাহলে আল্লাহর এ নামগুলো সবসময় একসাথে আসে। বস্তুত, অর্থের যথার্থতা কেবল তখনি আসে যখন আপনি উভয় নামকে একত্রে ব্যবহার করবেন। তাহলে, আল-আউয়াল হলো তিনি যিনি প্রাক-শাশ্বত(pre-eternal)। যার আগে কেউ নেই। আমাদের রাসূল (স) যেমন বর্ণনা করেছেন, "আন্তাল আওয়ালু ফালাইসা ক্বাবলাকা শাই- আপনিই প্রথম, আপনার আগে কেউ নেই।" তাহলে আল-আউয়াল মানে, কেউ থাকার আগে আল্লাহ ছিলেন। তো, আমরা এর অনুবাদ করি 'প্রথম।' কিন্তু, এখানে 'প্রথম' মানে অনন্তকাল থেকে। আল-আখের অর্থ শেষ। এর জন্য আলঙ্কারিক শব্দ হলো sempiternal বা ভবিষ্যতের দিক থেকে অনন্তকাল, চিরস্থায়ী। তাহলে প্রি-ইটারনাল এবং সেম্পিটারনাল। আল্লাহ উভয়টা। তিনি আউয়াল এবং আখির। এখন এ দুইটি অর্থ একত্রে এসে একটি পারফেক্ট অর্থ প্রদান করে। আল্লাহ হলেন আল-আউয়াল এবং আল-আখের। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এ দুইটি নাম সবসময় একত্রে ব্যবহার করে থাকেন। একই ব্যাপার রাসূল (স) এর হাদিসেও দেখা যায়। তিনিও ব্যবহার করেছেন, আন্তাল আওয়ালু ওয়াল আখিরু। একটি হাদিসে তিনি বলেন- "আন্তাল আওয়ালু ফালাইসা ক্বাবলাকা শাই, ওয়া আন্তাল আখিরু ফালাইসা বা'দাকা শাই।" (আপনিই প্রথম আপনার আগেই কেউ নেই, আর আপনিই শেষ আপনার পরে কেউ নেই।) অতএব, যখনই আমরা আল্লাহর নাম 'আল-আউয়াল' উল্লেখ করবো, সাথে সাথে আমাদের 'আল-আখির' নামটিও ব্যবহার করা উচিত। কারণ, এ দুইটি নামের অর্থ প্রায় পুরোপুরি বিপরীত। কিন্তু, আপনি যখন উভয়টিকে একত্রে রাখবেন তখন আপনি পরিপূর্ণ অর্থ পাবেন। - ড. ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট