কালিমা নিয়ে তিনটি প্রশ্নের উত্তর

 


কালিমা নিয়ে তিনটি প্রশ্নের উত্তর: (১) বর্তমান সময়ের একজন বক্তা বলেছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই দুইটি কালেমা একসাথে লেখা যাবেনা। এটা কি সত্যি? উত্তরঃ এটা বাজে একটা কথা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের খায়বার যুদ্ধের পতাকার মাঝে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই কালেমাটি লিখা ছিলো। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রাহি’মাহুল্লাহ তাঁর লিখিত “ফাতহুল বারী” তে খায়বার যুদ্ধ অধ্যায়ে এই হাদীসটিকে সহীহ সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন। বর্তমান সৌদি আরবের জাতীয় পতাকার মাঝেও “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এইভাবেই লেখা আছে। সমস্ত মক্কা মদীনার বিশ্ব বিখ্যাত আলেমরা, কাবা, মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম খতিবেরা কেউ-ই এর বিরুদ্ধে কোন আপত্তি তুলেন নাই। এমনিতেই উম্মতের মাঝে ইখতিলাফের শেষ নাই, তার মাঝে এইরকম নিত্য-নতুন ইখতেলাফ জন্ম দেওয়া হচ্ছে। এইগুলো বাজে কথা।

(২) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই কালেমা কি যিকির হিসেবে ১০ বার, ৩৩ বার, ৯৯ বার…এইভাবে যিকির হিসেবে পড়া যাবে? উত্তরঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” - এটি কালিমা (একবচন) নয়, এটি একটি কালাম (বহুবচন), দুইটি আলাদা বাক্যকে একসাথে বলা হয়েছে। এটি তাওহীদের দুইটি মূল কথা। এটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের দুইটি মূল বাক্য। কালেমাটির অর্থ হচ্ছেঃ (১) আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তাই অন্য কাউকে কোনভাবে উপাসনা বা পূজা করা যাবেনা। (২) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী। তাই তাঁর আদর্শ ব্যতীত অন্য কারো আদর্শের অনুসরন করা চলবেনা। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” কোন যিকির-এর কালিমা নয়। এটি জীবনে একবার বুঝে শুনে উচ্চারণ করলেই তাওহীদবাদী হওয়া যায়। তবে মাঝে মাঝে ঈমান নবায়নের উদ্দেশ্যে পাঠ করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু জিকির বানিয়ে নিলেই সমস্যা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই যিকির করতে আমাদেরকে বলেন নি। সাহাবীদের কেউই এই বাক্য দুইটি এক সাথে বলে জিকির বা ‘তাসবীহ’ করেন নাই। তাসবীহ করেছেন শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির (আল্লাহর স্বরণ) হচ্ছে – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর সর্বশ্রেষ্ঠ দুয়া হচ্ছে আলহা’মদুলিল্লাহ।” তিরমিযীঃ ৩৩৮৩; ইবন মাজাহঃ ৩৮০০; হাদীসটি সহীহ। শায়খ আলবানী, সহীহুল জামিঃ ১/৩৬২। (৩) ‘তাবলীগ জামাত’ নামক প্রচলিত একটি দলের শিরক, বিদআ’ত আর মিথ্যা কাহিনী দিয়ে ভরপুর একটি কিতাব ‘ফাজায়েলে আমলে’ লেখা আছে, কেউ যদি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ে তাহলে সে জান্নাতে যাবে। এনিয়ে আবু কুরতুবী নামক কথিত একজন আওলিয়ার আজগুবী একটি কাহিনী লিখে রেখেছেন ‘ফাজায়েলে আমলের’ লেখক মাওলানা জাকারিয়া সাহেব। এই কথাটি কি ঠিক? উত্তরঃ কোন ব্যক্তি যদি সত্তর হাজার বার ‘কালেমা’ পড়ে তাহলে সে জান্নাতে যাবে, এইরকম একটা কথা আমাদের সমাজে খুব বেশি প্রচলিত। অথচ এই কথাটি ‘বানোয়াট’ একটি ‘জাল হাদীস’, যার ‘সহীহ’ কোন দলিল নেই। এই জাল কথাটাকে প্রমান করার জন্যে দেওবন্দী সূফী মতবাদের অনুসারী, মাওলানা জাকারিয়া সাহেব ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ের ৪৪০-৪৪১ নম্বর পৃষ্ঠাতে একটা অদ্ভুত ও শিরকি কাহিনী লিখে রেখেছেন। আপনারা এমন জাল হাদীস এবং ইসলামী দাওয়াত এবং তাবলীগ নাম দিয়ে শিরকি বিদাতী কিচ্ছা-কাহিনী থেকে সতর্ক থাকবেন। সত্তর হাজার বার কালেমার জাল হাদীস নিয়ে ফাজায়েলে আমলে বর্ণিত শিরকি কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে আপনারা মুরাদ বিন আমজাদের লেখা বিশ্লেষণধর্মী “সহীহ আক্বীদার মানদন্ডে তাবলীগি নিসাব” বইয়ের এই লেখাটা পড়ুন, “একটি যুবকের কাশফের বয়ান ও সত্তর হাজার বার কালিমা পড়ার ফাযীলা।”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে