রিযিক্ব বৃদ্ধির আমল

 


রিযিক্ব বৃদ্ধির আমলঃ (ক) ইলম অর্জন করা এবং ইলম অনুযায়ী আমল করাঃ (১) মহান আল্লাহ বলেন, “তিনি যাকে ইচ্ছা হেকমত (প্রজ্ঞা) দান করেন, আর যাকে হেকমত দান করা হয়, তাকে নিশ্চয় প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্তুতঃ শুধু জ্ঞানীরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২৬৯। আয়াতের তাফসীরঃ ‘হেকমত’ শব্দটি ক্বুরআনুল কারীমে বার বার ব্যবহৃত হয়েছে। প্রত্যেক জায়গায় এর ব্যাখ্যায় বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো প্রায় কাছাকাছি উক্তি। হেকমতের আসল অর্থ প্রত্যেক বস্তুকে যথাস্থানে স্থাপন করা। এর পূর্ণত্ব শুধুমাত্র নবুওয়াতের মাধ্যমেই সাধিত হতে পারে।

তাই এখানে হেকমত বলতে নবুওয়াতকে বোঝানো হয়েছে। ইমাম রাগেব ইস্পাহানী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “হেকমত শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা হলে এর অর্থ হবে, সমগ্র বিষয়াদির পূর্ণ জ্ঞান এবং নিখুঁত আবিস্কার। অন্য কারো জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা হলে এর অর্থ হয় সৃষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান এবং তদানুযায়ী কর্ম। এ অর্থটিই বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। কোথাও এর অর্থ নেয়া হয়েছে ক্বুরআন, কোথাও হাদীস, কোথাও বিশুদ্ধ জ্ঞান, কোথাও সৎকর্ম, কোথাও সত্যকথা, কোথাও সুস্থ বুদ্ধি, কোথাও দ্বীনের বোধ, কোথাও মতামতের নির্ভুলতা এবং কোথাও আল্লাহর ভয়। কেননা, আল্লাহর ভয়ই প্রকৃত হেকমত। আয়াতে হেকমতের ব্যাখ্যা সাহাবী ও তাবে-তাবেয়ীগণ কর্তৃক হাদীস ও সুন্নাহ বলে বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, আলোচ্য আয়াতে উপরোল্লেখিত সবগুলো অর্থই বোঝানো হয়েছে।” বাহরে মুহীত। (২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআ’লা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন।” সহীহ বুখারীঃ ৭৩১২, মুসলিমঃ ১০৩৭। (৩) মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উঁচু করবেন।” সুরা মুজাদালাহঃ ১১। শায়খ সালাউদ্দিন ইউসুফ রহি’মাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, “ঈমানদারদের মর্যাদা কাফিরদের উপরে এবং (ঈমানদার) শিক্ষিতদের মর্যাদা (অশিক্ষিত) সাধারণ ঈমানদারদের থেকে অনেক উঁচু করবেন। যার অর্থ হল, ঈমানের সাথে দ্বীনী জ্ঞান ও শিক্ষা থাকা অধিক মর্যাদা লাভের কারণ।” তাফসীর আহসানুল বায়ান। সুতরাং ইলম অর্জন করলে এবং সে অনুযায়ী আমল করলে দুনিয়া এবং আখিরাতে মর্যাদা পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইলম অর্জন করবে এর বিনিময়ে সে তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। আর তাক্বওয়া হচ্ছে রিযিক্ব ও মর্যাদা লাভের জন্য সবচেয়ে বড় একটা মাধ্যম। (৪) আনাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় দুই ভাই ছিল। তাদের একজন নবী সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সব সময় (দ্বীন শিখার জন্য) আসতো আর অন্যজন জীবিকা অর্জনের কাজে ব্যস্ত থাকত। জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত ভাইটি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে অপর ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল (যে, সে কাজ-কর্ম না করে আমার ওপর ভরসায় থাকে)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অভিযোগকারী ভাইটিকে বললেন, ‘‘সম্ভবত তোমাকে তার উসীলায় রিযিক্ব দেওয়া হচ্ছে।” তিরমিযীঃ ২৩৪৫। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাতঃ ৫৩০৮, সহীহাহঃ ২৭৬৯। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় শায়খ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী রহি’মাহুল্লাহ লিখেছেন, নবী সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে দুই ভাই ছিল। এক ভাই নবী সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট জ্ঞান শিক্ষার জন্য আসত আর অপর ভাই জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করত। সম্ভবত তারা উভয়েই একসাথে খেতেন। কর্মজীবি ভাই নবী সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, সে তার ভাইকে সাংসারিক কাজে এবং জীবিকা অর্জনের কাজে সহযোগিতা করে না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার মনে হয় তুমি তার ই’লম শিক্ষার বরকতে রিযিক্বপ্রাপ্ত হচ্ছ। শুধু তোমার পেশাগত কাজের জন্য রিযিক্বপ্রাপ্ত হচ্ছ না। অতএব তুমি তার প্রতি তোমার কাজের খোঁটা দিও না। এই হাদীস থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে, দুনিয়াবী কাজ-কর্ম পরিত্যাগ করে পরকালের পাথেয় হিসেবে ই’লম শিক্ষা ও তার আ’মল করা বৈধ। বিস্তারিত দেখুন তুহফাতুল আহওয়াযীঃ ৭/২৯৪০, মিরক্বাতুল মাফাতীহ, মিরআতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতুল মাসাবীহ (খ) বিবাহ করাঃ অনেক মুসলিম পুরুষ দরিদ্রতার ভয়ে বিয়ে করে না। অথচ বিয়ে মানুষের জন্য রিযিক্ব বয়ে আনে। মহান আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও বিবাহ করাও। তারা অভাবগ্রস্থ হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ্ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” সুরা আন-নূরঃ ৩২। এই আয়াত আল্লাহ তাআ’লা স্বাধীন ও দাস; সকল দরিদ্র দম্পতিকে প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন যে, তারা অভাবগ্রস্তহলে আল্লাহ তাআ’লা নিজ অনুগ্রহে তাঁদের অভাব মোচন করে দেবেন। তবে এই বিবাহের দ্বারা উদ্দেশ্য থাকতে হবে নিজেকে মন্দ কার্য-কলাপ, অশ্লীলতা, যৌন সংক্রান্ত পাপাচার থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা। শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, “এই আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ তাআ’লা যাদের স্বামী বা স্ত্রী নেই তাদেরকে এবং সৎ ও যোগ্য দাস-দাসীদেরকে বিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, বিবাহ গরীবদের সচ্ছলতার মাধ্যম; যাতে করে পাত্রী ও পাত্রীর অভিভাবকগণ নিশ্চিন্ত হতে পারে যে, দারিদ্র বিয়ের পথে বাধা হওয়া অনুচিত। বরং বিয়ে রিযিক্ব হাসিল ও স্বাবলম্বী হওয়ার একটি মাধ্যম।” ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাঃ ৩/২১৩। হাদীসেও এসেছেঃ আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম‎ বলেছেন, “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তাআ’লার ওপর আবশ্যক হয়ে যায়। (১) ঐ ব্যক্তি যে বিবাহের মাধ্যমে নিজেকে পূতঃপবিত্র রাখতে চায়। (২) ঐ মুকাতাব গোলাম, যে তার মালিকের সাথে চুক্তিকৃত টাকা আদায় করার ইচ্ছা রাখে এবং (৩) আল্লাহ তাআ’লার পথে মুজাহিদ।” তিরমিযীঃ ১৬৫৫, নাসায়ীঃ ৩১২০, হাদীসটি হাসান। আমাদের সম্মানিত সাহাবীগণ কোন ব্যক্তি দরিদ্র হলে তাকে বিয়ে করতে খুব উৎসাহ দিয়েছেনঃ আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর আদেশ মেনে চলো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের সাথে কৃত ওয়াদা পুরো করবেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “যদি তারা দরিদ্র হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন।” তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৬/৫১। উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আ’নহু বলতেন, “ঐ ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর, যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, “তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।” আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “বিবাহের মাধ্যমে তোমরা ঐশ্বর্য অনুসন্ধান করো। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “যদি তারা দরিদ্র হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন।” এটা ইবনে আবি হাতিম রহি’মাহুল্লাহ এবং ইমাম ইবনে জারীর রহি’মাহুল্লাহ ও বর্ণনা করেছেন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট