মানুষের আত্মা যখন কবজ হয়


 মানুষের আত্মা যখন কবজ করার সময় হয়, তখন আল্লাহর নির্দেশে আকাশ থেকে মালাকুল মউত বা মৃত্যুর ফেরেশতারা সেই ব্যক্তির নিকটে আসে। নেককার লোকদের জন্যে রহমতের ফেরেশতা আসে, আর পাপাচারী ব্যক্তির জন্যে আজাবের ফেরেশতারা আসেন। আজাবের ফেরেশতাদের ভয়ংকর চেহারা ও রূপ দেখেই কাফের, মুশরেক ও পাপাচারী মুসলমানদের আত্মাটা ভয়ে শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগে পালানোর চেষ্টা করে। এমনকি পাপাচারী ব্যক্তির আত্মাটা তার নখের নীচে, পশমের নিচে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে। মালাকুল মউত পলায়নপর এই আত্মাকে পিটিয়ে পিটিয়ে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করেন। বের করার সময় আত্মাটার এমন কষ্ট হয়, যেনো একটা চটের বস্তার মধ্যে দিয়ে একটা লোহার আংটা ঢুকিয়ে দিয়ে টেনে বের করার সময় যেভাবে ছিড়েফুড়ে বের হয়ে আসে, ঐ আত্মাটাও সেইভাবে ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে বের হয়ে আসে। আর এইজন্যই ‘সাখারাতুল মউতের’ সময় পাপী লোকদের এতো কষ্ট হয়।

অপরদিকে নেককার বান্দাদের আত্মা মালাকুল মউতের আহবানে সাড়া দিয়ে এতো সহজে বের হয়ে আসে, যেইভাবে একটা পানির পাত্রকে কাত করলে একদম সহজেই পানি বের হয়ে আসে। আর শহীদদের মৃত্যু কষ্ট হয় সবচেয়ে কম। একটা পিপিলীকা কামড় দিলে যতটুকু কষ্ট হয়ে, ঠিক তেমনি কষ্ট হয় যখন একজন শহীদের শরীর থেকে তার আত্মাটা বের হয়ে যায়। মানুষের আত্মা কবজ করা শুরু হয় একেবারে তার পায়ের নখ থেকে। এইভাবে মৃত্যুর ফেরেশতারা আত্মাটাকে সমস্ত শরীর থেকে বের করে এনে গলার গরগরা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। গলার গরগরা পর্যন্ত নিয়ে আসলে তখন ঐ ব্যক্তি একটা শব্দ করে বা কাপুনি দেয়, আর এরপরেই তার দুনিয়ার হায়াত শেষ হয়ে যায়। এরপরে তার বারযাখী বা পর্দার জীবন শুরু হয়।

সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী। আমি কাবার প্রভু মহান আরশের মালিকের কাছে এই দুয়া করছিঃ হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে, আমাদের পরিবারের সকলকে আপনার প্রশস্ত রহমত ও খাস ভালোবাসা অর্জন করার তোওফিক দান করুন, আমিন।

মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের খেয়াল-খুশি, ইচ্ছা-আকাংখা বা কামনা-বাসনা বিসর্জন দেওয়া মুমিনদের জন্য সুখ ও সফলতার একটা মাধ্যম। মহান আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন, তোমরা কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, আল্লাহ তা ভালো জানেন। সুরা আলে-ইমরানঃ ৯২।

নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোন কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে তার চাইতে উত্তম কিছু দ্বারা প্রতিস্থাপন করবেন।” মুসনাদে আহমাদঃ ২২৫৬৫। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই দুনিয়ার পুরোটাই হচ্ছে ভোগ-বিলাস ও আনন্দ উল্লাসের সামগ্রী। তার মাঝে সবচাইতে উত্তম সম্পদ হচ্ছে নেক ও সৎ কর্মপরায়ণ (উপযুক্ত) স্ত্রী।” সহীহ মুসলিমঃ ১৪৬৭। এজন্যই একজন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আ'নহু বলেছেন, “ঈমানের পর মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচাইতে বড় নেয়ামত হচ্ছে অনুগতা, মিষ্ট ভাষী, কোমল হৃদয়ের মুমিনাহ স্ত্রী। আর শিরকের পরে বান্দার জন্য সবচাইতে বড় বিপদ হচ্ছে ধারালো জিহবার ও বদ চরিত্রের অবাধ্য স্ত্রী।” আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

***********************
❖ সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘুমিয়ে ফযরের নামায কাযা করে ফেললে, শয়তান তার সাথে কি করে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ শয়তান তার কানে পেশাব করে দেয়। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) বলেন, “কেউ সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে ফযরের নামায কাযা করে ফেললে, শয়তান তার কানে পেশাব করে দেয়।” (বুখারীঃ ৫৪/৪৯২)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে