আল্লাহ তাআ’লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ

 


আল্লাহ তাআ’লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ: ক্বুরআন ও হাদীসে আল্লাহ তাআ’লা মানব জাতিকে বারংবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই উপদেশ দিয়েছেন তা হচ্ছে ‘তাক্বওয়া’, অর্থাৎ মানুষ যেন তার রব্বকে সর্বদা ভয় করে চলে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আমার মতে, যে ব্যক্তি বুঝে এবং (সত্য পথের) অনুসরণ করে তার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশের চেয়ে উত্তম কোন উপদেশ নেই।

আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার উপদেশঃ আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার উপদেশ বর্ণিত আছে এই আয়াতে - وَلَقَدۡ وَصَّيۡنَا ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَإِيَّاكُمۡ أَنِ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ “আর নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও আমি এই আদেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।” সুরা আন-নিসাঃ ১৩১। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশঃ আবু যার রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ “তুমি যখন যেইভাবে থাকবে, তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলবে। যদি তোমার দ্বারা কোন মন্দ কাজ হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথেই তুমি ভালো আমল করবে। কারণ ভালো কাজ মন্দ কাজকে মুছে ফেলে। আর তুমি মানুষের সাথে ভালো আচরণ করবে।” (আহমাদঃ ২১৩৫৪, তিরমিযীঃ ১৯৮৭, দারিমীঃ ২৭৯১। হাদীসটি হাসান, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবঃ ২৬৫৫, মুসনাদুল বাযযারঃ ৪০২২, হিলইয়াতুল আওলিয়াঃ ৪/৩৭৮।) ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীস সম্পর্কে বলেন, “এই উপদেশটির ব্যাপকতার কারণ, এই উপদেশে এই কথা আছে যে, প্রতিটা মানুষের ওপর দুই ধরণের দায়িত্ব থাকেঃ (১) সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব। (২) তাঁর বান্দাদের প্রতি দায়িত্ব। তা ছাড়া (উপদেশটিতে এই কথাও রয়েছে যে), এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রত্যেক মানুষের সর্বদাই কিছু ভুল-ত্রুটি থাকবে। উদাহরণস্বরূপ সে কোনো ফরয বা ওয়াজিব দায়িত্ব ছেড়ে দিবে অথবা, সে কোন হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলবে। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উপদেশ দিয়ে বলেছেন, “তুমি যখন যেইভাবে থাকবে, তুমি আল্লাহকে ভয় করবে।” এই হাদীসে “যেখানে থাক” অংশটি এটা নিশ্চিত করছে যে, একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, অর্থাৎ সর্বাবস্থায় তাক্বওয়া (আল্লাহভীতি বা পরহেযগারিতা) থাকা প্রয়োজন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমার দ্বারা কোন মন্দ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথেই তুমি ভালো আমল করবে। কারণ ভালো কাজ মন্দ কাজকে মুছে ফেলে।”

এর উদাহরণ হচ্ছে, যখন কোন রোগী ক্ষতিকর কিছু খেয়ে ফেলে, তখন চিকিৎসক তাকে এমন কিছু খেতে বলেন, যা তার অবস্থার উন্নতি ঘটাবে। (মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের কারণে, দুনিয়াতে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে অথবা শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়) মানুষ গুনাহ করে ফেলবে এটা যেহেতু নিশ্চিত, সুতরাং বুদ্ধিমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে নেক আমল করতে থাকে, যাতে করে তার খারাপ আমলগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব মুছে যায়।” উতসঃ ওসীয়ত (উপদেশ), ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহি’মাহুল্লাহ।

নিজ ঘরের নারীদের অশ্লীল কাজের জন্য যে পুরুষ জাহান্নামে যাবে। দাইয়ুস হচ্ছে যে ব্যক্তি নিজ পরিবারে যিনা-ব্যভিচার ও অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয়। যে পুরুষ ঘরের নারীদের সম্ভ্রম রক্ষায় আত্মসম্মানী নয়, সে মানবিকতাহীন, পৌরুষত্বহীন, অসুস্থ মস্তিষ্ক এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারী। তার তুলনা অনেকটা শূকরের মতো, যে নিজ সম্ভ্রম রক্ষা করে না। তাই সেই সব লোককে সতর্ক থাকা উচিত, যারা নিজ পরিবারে এবং তার দায়িত্বে থাকা লোকদের মাঝে অশ্লীলতা বা অশ্লীলতার উপকরণ প্রশ্রয় দেয়। যেমন বাড়িতে এমন টিভি চ্যানেল রাখা যা যৌনতা উস্কে দেয় এবং অশ্লীলতা বৃদ্ধি করে। অধিকাংশ নারী বেপর্দা চলাফেরা ও চরিত্রহীনা হওয়ার জন্যে তাদের পিতা, স্বামী বা পুরুষ গার্জিয়ানের উদাসীনতা দায়ী। এদের পরিণত হবে ভয়াবহ।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন তিনজন ব্যক্তি আছে, যাদের দিকে আল্লাহ আ’যযা ওয়া যাল কিয়ামাতের দিন তাকাবেন না। তারা হচ্ছে, (১) যে পিতামাতার অবাধ্য, (২) যে নারী বেশভূষায় পুরুষদের অনুকরণ করে এবং (৩) দাইয়ুস পুরুষ।” নাসায়ীঃ ২৫৬২, হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “দাইয়ুস হচ্ছে এমন পুরুষ যার কোন গীরাহ (Protective jealousy) নেই।” মাজমু আল-ফাতাওয়াঃ ৩২/১৪১। স্থায়ী কমিটির ফাতওয়াঃ “দাইয়ুস শব্দটি এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, যে তার অধিকারভুক্ত কোন নারীকেই, হোক তা তার স্ত্রী, কন্যা, বোন এবং অন্যদের যিনা করা থেকে বিরত রাখেনা, তা সরাসরি জিনাই হোক, আর এমন সব কাজ হোক যা জিনার দিকে নিয়ে যায়, যেমন গায়ের মাহরামের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে যেসব আওরা (শরীরের অংশ) ঢেকে রাখতে হয়, তা প্রকাশ করা, গায়ের মাহরাম এর সাথে একাকী অবস্থান করা, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দেহে সুগন্ধি লাগানো, আর অন্যান্য কাজ যা ফিতনা আর অপরাধ সৃষ্টি করতে পারে।

❖ ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কোনটি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে দেয়া। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, ঈমানের শাখা-প্রশাখা ৭০ এর চেয়ে বেশী, তন্মধ্যে প্রধান শাখা কালিমা ” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”এর সবচেয়ে ছোট শাখা ,রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু (ইট,পাটকেল,কাঁটা,নাপাক ইত্যাদি) সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি প্রধান শাখা (বুখারী ও মুসলিম)।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট