মানুষের হিসাব গ্রহণের সময় সন্নিকটে

 


মানুষের হিসাব গ্রহণের সময় সন্নিকটে; অথচ মানব জাতি এখনো উদাসীন হয়ে আছে। (১) ক্বিয়ামত অতি নিকটেঃ আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” সুরা আল-আম্বিয়াঃ ১। মানুষের হিসাবের সময় অর্থাৎ ক্বিয়ামত প্রতি সেকেন্ডে আমাদের নিকটবর্তী হচ্ছে। অথচ মানুষ দুনিয়ার চাকচিক্য নিয়ে এতোটাই মগ্ন যে, তারা আখেরাতের কথা ভুলে গেছে। আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে যে আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হয়, তাঁর বেঁধে দেওয়া ফরয কাজগুলো আদায় করতে হয়, নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে হয়; মানুষ তার জন্য কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করছেনা। (ফাতহুল ক্বাদীর)।

মক্কার কাফির-মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর রাসুল হিসেবে বিশ্বাস না করে তাঁকে চাঁদ দুই খন্ড করার মতো আশ্চর্জনক কোন মুজিজাহ দেখানোর দাবী করেছিল। মক্কাবাসীদের দাবীর প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদের দিকে আংগুলি হেলনে তা দুই টুকরো হয়ে গিয়েছিল। এমনকি লোকেরা দুইখন্ড চাঁদের মাঝখান দিয়ে হেরা পাহাড়কে দেখতে পেয়েছিলো। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম। চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ বিশ্ববাসীকে পুনরায় সতর্ক করে বলেন, “কিয়ামত কাছাকাছি হয়েছে, আর চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।” সুরা আল-ক্বামারঃ ১। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে দুনিয়াতে তাঁর নবী হিসেবে আগমন এবং ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় কত কাছাকাছি তা বুঝানোর জন্য তিনি নিজের হাতের দুইটি আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে বলেন, “আমার আগমন এমন সময়ে ঘটেছে যখন আমি ও ক্বিয়ামত এই দুইটি ঘটনা আঙ্গুলের মতো পাশাপাশি অবস্থান করছি।” সহীহ বুখারীঃ ৪৯৯৫। হে মুসলমান ভাই ও বোনেরা তাহলে একবার চিন্তা করুন, আজ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের ১৪০০ বছর পরে ক্বিয়ামতের কত নিকটে! (২) মানুষের হিসাব গ্রহণ একটি ভয়াবহ বিষয়ঃ আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “অতএব যদি তোমরা কুফুরী (অস্বীকার) কর, তাহলে তোমরা কিভাবে সেইদিন নিজেদেরকে রক্ষা করবে, যেইদিনের (পেরেশানি) একটা কিশোরকে বৃদ্ধে পরিণত করে দেবে?” সুরা মুযযাম্মিলঃ ১৭। মানুষ যদি খুব বেশি চিন্তা-ভাবনার মাঝে পড়ে তাহলে শরীর ও মনের দিক থেকে বয়ষ্ক বা বুড়ো হয়ে যায়, অনেকের চুল দাঁড়ি পেকে অল্প বয়সেই বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে। বিচারের দিনে মানুষ জাহান্নামের ভয়াবহতা নিজ চোখে দেখার পর তার কৃতকর্মের কারণে সে জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে এই চিন্তায় এতো বেশি ভীত হবে যে, সেই চিন্তা একটা কিশোরকে বৃদ্ধে পরিণত করে দিবে। (৩) বিচার দিবস কেনো এতো ভয়াবহ? আবু সাঈ’দ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ আযযা ওয়া যাল বলবেন, “হে আদম!” আদম আ’লাইহিস সালাম তখন বলবেন, “হে আমার পালনকর্তা! আমার সৌভাগ্য, আমি হাজির।” তারপর আদম আ’লাইহিস সালামকে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বলা হবে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আপনার বংশধর থেকে একদল লোককে বের করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে আসুন।” আদম আ’লাইহিস সালাম বলবেন, “হে আমার পালনকর্তা! জাহান্নামী দলের পরিমাণ কী?” আল্লাহ বলবেন, “প্রতি এক হাজার থেকে ৯৯৯ জন।” অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি পাঠ করলেন, يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ ٢ “সেই দিন তুমি দেখবে প্রতিটি দুগ্ধদায়িনী মা ভুলে যাবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে, আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে)।” সুরা হাজ্জঃ ২। (নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের) এই কথা লোকদের (অর্থাৎ সাহাবাদের) কাছে খুব ভয়ানক মনে হল, এমনকি তাঁদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।” সহীহ বুখারীঃ ৪৭৪১। সুবহা’নাল্লাহ! মানব জাতির মধ্যে এক হাজার জনের মাঝে মাত্র একজন জান্নাতে যাবে, বাকী ৯৯৯ জন-ই জাহান্নামে যাবে। এই সংবাদের বিপদ কতটুকু সেটা আমাদের বুঝে না আসলে একবার চিন্তা করে দেখুন, এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষ সাহাবাদের কাছেই এই সংবাদ এতোটা ভয়ানক মনে হয়েছিলো যে, তাঁদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। সবচাইতে বিশুদ্ধ অন্তরের সম্মানিত মানুষ সাহাবারা যদি এই সংবাদ শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন, তাহলে আজকের যুগে আমাদের মতো দুর্বল ঈমানওয়ালা এবং পাপে আসক্ত মুমিনদের জন্য এটা কত বড় একটা ভয়ের সংবাদ হতে পারে? আল্লাহু মুস্তাআ’ন! (৪) আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বান্দাদেরকে হিসাব গ্রহণের ভয় দেখিয়েছেনঃ আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, “মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনিই ছেড়ে দেওয়া হবে?” সুরা আল-ক্বিয়ামাহঃ ৩৬। অর্থাৎ তাকে পুনর্জীবিত করা হবে না, এবং বিচারের জন্য হাজির করাও হবে না? আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেন, “তারা কি চিন্তা করে না যে (তাদের মৃত্যুর পর) তাদেরকে আবার উঠানো হবে, এক মহান দিনে। যেই দিন মানুষ বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।” সুরা মুতাফফিফীনঃ ৪-৬। আল্লাহ তাআ’লা বিচারের দিন ক্ষতিগ্রস্থ লোকদেরকে দুনিয়ার জীবনে হিসাব গ্রহণের কথা ভুলে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, “তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না?” সুরা মুমিনুনঃ ১১৫।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট