তিনি কতইনা দয়াময়!

 


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার চেয়ে কে মানুষের পরিণতি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন? আপনার বাবা মা কোনো একটি বিষয় আপনাকে দুইবার তিনবার বুঝানোর পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আল-কুরআনে একই বিষয় অসংখ্যবার বিভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন, যেন মানুষ তাঁর দিকে ফিরে আসে। তিনি কতইনা দয়াময়!

মানুষ তাঁর দিকে ফিরে আসলে তিনি দারুণ খুশি হয়ে যান। শুধু যে খুশি হোন তাই নয়, তিনি সে ব্যক্তিকে অগণিত পুরস্কার দান করেন। কেউ যদি আল্লাহর কাছে তার জীবনের ৬০ বছরের পাপ নিয়ে আসে, ৮০ বছরের পাপ নিয়ে আসে, বড় বড় পাপ নিয়েও ধর্ণা দেয় এবং তাওবা করে, অনুতপ্ত হয়, আন্তরিকভাবে ক্ষমা চায় আর তাওবা অবস্থায় মারা যায় তখন তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সবকিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ইমাম মুসলিম কিতাবুল ঈমানে খুবই সুন্দর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এক ঈমানদারকে ডাক দিবেন যে এই দুনিয়াতে অসংখ্য অগণিত পাপ করেছে। ছোট বড় সব ধরণের গুনাহ আছে তার। আল্লাহ তাকে কাছে নিবেন এবং এমনভাবে ঢেকে ফেলবেন যেন অন্য কেউ দেখতে না পায় আল্লাহ তাকে কী কী জিজ্ঞেস করছেন। এরপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার ছোট ছোট গুনাহগুলো তাকে দেখাবেন। সে ব্যক্তির বড় বড় গুনাহগুলো গোপন থাকবে। কিন্তু আল্লাহ তাকে ছোট ছোট গুনাহগুলো দেখাবেন। এবং আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন- তুমি কি এটা করেছো? ওটা করেছো? লোকটা কোনো কিছু অস্বীকার করতে পারবে না। সে তখন ভাবতে থাকবে- এগুলো তো আমার ছোট পাপ। যখন বড়গুলো দেখানো হবে তখন আমার কী হবে? এগুলো আমাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ছাড়বে। এরপর সে যখন তার সমস্ত ছোট ছোট পাপগুলোর কথা স্বীকার করে নিবে, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে বলবেন, ও আমার বান্দা! চিন্তা করো না। আমি তোমার এ সমস্ত পাপগুলোকে পুণ্যে রূপান্তরিত করে দিলাম। সে তখন দারুণ খুশি হয়ে যাবে। তারপর সে বলবে, হে আমার রব! আমি তো আরো গুনাহ করেছি সেগুলো তো এখানে দেখতে পাচ্ছি না। আমার বড় বড় গুনাহগুলো। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার বড় গুনাহ্গুলোকে নিয়ে আসবেন এবং সেগুলোকেও পুণ্যে রূপান্তরিত করে দিবেন। এজন্য ফার্সিতে একটি কথা আছে। "তোমার রবের দয়া শুধু তোমাকে ক্ষমা করার অজুহাত খোঁজে।" এটা তোমার কাছ থেকে কোনো মূল্য চায় না। সত্যিই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শুধু মানুষকে ক্ষমা করে দিতে চান। তিনি কত দয়ালু! তিনি কত ক্ষমাশীল! অথচ তবু আমরা তাঁর দিকে ফিরতে চাই না। শুধু চিন্তা করে দেখুন। একজন সন্তান যত খারাপ কাজই করুক না কেন সে সর্বদা বিশ্বাস করবে এই পৃথিবীতে আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো আমার মায়ের ঘর। অন্য কেউ আমাকে আমার পাপের কারণে অবাধ্যতার কারণে গ্রহণ করবে না। কিন্তু, আমি যা কিছুই করি না কেন আমার বিশ্বাস আমার মা তবু আমাকে গ্রহণ করে নিবেন। আমাদের রবের রয়েছে এর চেয়েও অনেক অনেক বেশি দয়া। আমাদের মায়ের চেয়েও তিনি আমাদের বেশি ভালোবাসেন। যা কিছুই আপনি করেন না কেন, যদি তাঁর কাছে ফিরে আসেন তিনি সবসময় আপনাকে গ্রহণ করে নিবেন। ক্ষমা করা তাঁর নিকট খুবই খুবই সহজ। এমনকি হাদিসে এসেছে, আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা যদি সমুদ্র পরিমাণ পাপ নিয়ে আমার কাছে আসে, আমি তার কাছ সমুদ্র পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে আসবো। - ড. আকরাম নদভীর আলোচনা থেকে

আপনার জীবনের সকল সমস্যা এবং সমস্যাগুলোর সাথে আপনার সম্পর্ক আসলে আপনার জন্য উত্তম। কারণ, এ সমস্যাগুলো আসে আপনার স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তার উন্নতি সাধন কল্পে। সাহসিকতার প্রয়োজনে যদি সাহসিকতা প্রদর্শন করতে পারেন, তখন আপনি যে একজন সাহসী মানুষ তা জানা যাবে। দানশীল হওয়ার প্রয়োজনে দানশীল হতে পারলে আপনার দানশীলতার কথা জানা যাবে। দয়ালু হওয়ার প্রয়োজনে দয়ালু হতে পারলে আল্লাহর নিকট আপনি একজন দয়ালু মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। ফলশ্রুতিতে, শেষ বিচারের দিন আপনি সাহসী, দানশীল, দয়ালু, ধৈর্যশীল, সহনশীল এবং যে সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতো এমন একজন মানুষের পরিচয়ে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবেন। যদি নম্রতা দেখানোর পরিবেশ না পান, কিভাবে আপনি একজন বিনম্র মানুষ হবেন। যদি ধৈর্যের পরীক্ষা না দেন, কিভাবে আপনার ধৈর্য্যের কথা জানা যাবে। যদি এমন পরিস্থিতিতে না পড়েন যেখানে আপনাকে সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হয়, তবে কিভাবে আপনার সহনশীলতার কথা জানা যাবে। আপনার পরিবেশ পরিস্থিতি আল্লাহর দান। এগুলো নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করুন। যে সময় এবং পরিবেশ আপনি পেয়েছেন এগুলো আল্লাহর দান। আপনি এগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা, সমাজ, পাড়া-প্রতিবেশী সব আল্লাহর দান। এগুলো ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তি সত্তার উন্নতি সাধন করুন। এ বিষয়টা আপনার নিজের উপর নির্ভরশীল। কিছু জিনিস আল্লাহ প্রদান করেন আর কিছু কাজ আমাদের করতে হবে। আল্লাহ পরিবেশ এবং আমার জীবনে কিছু মানুষ দিয়েছেন। এখন, আমার কাজ হলো এগুলোর সদ্ব্যবহার করে নিজ চরিত্রের উন্নতি সাধন করা। আপনার পরিবেশ যখন বেশি প্রতিকূল হয়, এর মানে হলো আপনার চ্যালেঞ্জ এখন অনেক বড়। আর এই বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যদি সফল হতে পারেন, আপনি তখন আরো ভালো মানুষে পরিণত হবেন। আপনাকে এই জীবন দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য। এ পরীক্ষা যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন আপনাকে মারা যেতে হবে। একটি ব্যক্তিসত্তা বিনির্মাণের জন্য আপনাকে এ জীবন দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আপনাকে এ দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে। এ দুনিয়া আনন্দ ফুর্তির জন্য নয়। এটা শুধুই পরীক্ষা করার জন্য। এ জন্য ইউসুফ (আ) যখন সকল পরীক্ষা সমাপ্ত করলেন তিনি বুঝতে পারলেন তিনি মারা যাবেন। সূরা ইউসুফ পড়লে দেখবেন সবার শেষে তিনি বলেন- হে আমার রব! আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন। কেন তিনি শুরুতে এ দোয়া করেননি? কারণ, তিনি দেখছেন তাঁকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যখন তিনি মিশরের শাসক হয়ে গেলেন তখন বুঝতে পারলেন পরীক্ষা শেষ। এখন আমাকে মারা যেতে হবে। তাই, তাঁর শেষ বক্তব্য হলো তিনি মুসলিম হিসেবে মারা যেতে চান। তাই, জেনে রাখুন, এই কুরআন শুধু একটি উদ্দেশ্যে এসেছে- আপনাকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যক্তিতে পরিণত করার জন্য। - ড. আকরাম নদভির আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট